🎗️স্বামী-স্ত্রীর ভিতর বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত ?
🎗️সন্তান দীর্ঘজীবী, সুবুদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যবান কি করে হয় ?
🎗️কেমন বিবাহে পুরুষের আয়ু বাড়ে ?
🎗️বিধবা হওয়াটা এত দুর্ভাগ্যের কেন ?
[P 50-52]
১৬ই এপ্রিল, ১৯৩৪
প্রশ্ন। কেহ বাল্যবিবাহের পক্ষপাতী, কেহ-বা বেশী বয়সে বিবাহের পক্ষপাতী। নারীর কত বয়সে বিবাহ হওয়া উচিত ? শ্রীশ্রীঠাকুর । কমপক্ষে বারো হইতে চৌদ্দ বছরের ভিতর বিবাহ মন্দ নয় । প্রশ্ন । বিবাহে পুরুষ ও নারীর বয়সের পার্থক্য কি দেখিবার নয়—কত বৎসরহ ইলে ঠিক হয়
শ্রীশ্রীঠাকুর। স্বামী-স্ত্রীর ভিতর পনের হইতে কুড়ি বৎসরের পার্থক্য মঙ্গলপ্রদ* ।
প্রশ্ন । এ তো বাপ আর মেয়ের বয়সের দূরত্বের মতন । তা'তে সুবিধা কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । তা’তে তাদের ভিতর একটা honourable distance—সম্মানজনক দূরত্ব থাকে, তাই ভক্তিও থাকে, অনুবর্তিনীও হয়। স্ত্রী-পুরুষ ইয়ার হওয়ার ফলও বিষবৎ।
প্রশ্ন । সমবয়সী হ'লেই তো সহধৰ্ম্মিণী ঠিক-ঠিক হ'তে পারে,— ইয়ার হবে কেন ? আর ইয়ার হ'লেই বা দোষ কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। তাহাতে প্রায়শঃ পুরুষকে নারী ইতরের মত ব্যবহার করে—পুরুষ সম্মান হারায়, স্ত্রীর নিকট contemptible হয় অর্থাৎ তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়। অতএব, সে-রকম পুরুষকে বরণ করিয়া কোন স্ত্রীর উৎকর্ষ হওয়া সম্ভবপর নহে । সমবয়সী হইলে knowledge-এর equality থাকে (জ্ঞানের সমতা থাকে),—সাধারণতঃ স্বামী তার অনুসরণীয় হয় না। স্ত্রীর যাহা পছন্দ নয় এমনতর ব্যাপারগুলিতে চিন্তা বা অনুধাবন না করিয়াই নিজের জ্ঞানকে মুখর
____________________________________________
★ ভগবান্ মনু বলিয়াছেন :—
“ত্রিংশদ্বর্ষোদ্বহেৎ কন্যাং হৃদ্যাং দ্বাদশবার্ষিকীম্ ।
ত্র্যষ্টবর্ষোঽষ্টবর্ষাং বা ধর্ম্মে সীদতি সত্বরঃ ।।”
—মনু ৯/৯৪
অর্থাৎ, ত্রিশ বৎসরের পুরুষ দ্বাদশবর্ষীয়া হৃদ্যা (বৃত্ত্যনুসারিণী, চিত্তজ্ঞা) কন্যা বিবাহ করিবে এবং ২৪ বৎসরের পুরুষ অষ্টমবর্ষীয়া কন্যাকে বিবাহ করিবে । ইহা হইতে সত্বর হইলে ধর্ম্ম (অর্থাৎ জীবন ও বৃদ্ধি) অবসন্ন হয়।
করিয়া ধরিয়া তাহাতে দোষ দর্শায় ; এই-প্রকারে তাহার (স্ত্রীর) চরিত্রে স্বামীর দোষদৃষ্টি আসিয়া অধিকার করে, — যাহার ফলে অনুবর্তিনী না হইয়া বিপরীতবর্তিনী হয়—সংসারে এমন সাধারণতঃই দেখা যায়।
প্রশ্ন । সাধারণতঃ মেয়েদের আঠারো-কুড়ি বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে না । তার সঙ্গে কুড়ি বছর যোগ করলে আটত্রিশ-চল্লিশ বছরের আগে ছেলের বিয়েই হবে না। এত aged (বেশী-বয়সী) হ'লে তাদের যে সন্তান হবে, তাদের কি দুর্ব্বল হবার সম্ভাবনা নয় ? আর, সন্তানের সংখ্যাও তো ক’মে যাবে।
শ্রীশ্রীঠাকুর। দুর্ব্বল তো হবেই না—বরং সবল হওয়াই স্বাভাবিক । Matured seed (পূর্ণতাপ্রাপ্ত—পরিণত বীজ) যদি উপযুক্ত সারসমন্বিত জমিতে পড়ে, তবে তা-হ'তে যা' জন্মে তা' কি খারাপ হ'তে দেখা যায় ? তাই, পঁয়ত্রিশ হতে চল্লিশ বৎসর বয়সই বিবাহের উপযুক্ত বললে অত্যুক্তি হয় না । শাস্ত্রে আছে—প্রজাপতির নিকট দশটি সন্তানের প্রার্থনা। তাহ'লে এ বয়সে বিবাহ করলে কি দশটি সন্তান হ'তে পারে না ? অল্পবয়সে সন্তান জন্মিলে অল্পায়ু ও অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া তো সম্ভবই—আর সংখ্যায় অধিক হ'লে তো কথাই নাই। তাই, আজকাল average (গড়ে, সাধারণ) বাঙ্গালীর আয়ু নাকি ২২ বৎসর । আমার মনে হয়, এই আয়ুহীনতার একটা প্রধান কারণই এই । অল্পায়ু, অল্প-স্বাস্থ্যের বহু সন্তান অপেক্ষা পাঁচ-সাতটি দীর্ঘজীবী, সুবুদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যবান সন্তান ঢের ভাল, তা কি নয় ?
প্রশ্ন । তা' তো বুঝলাম, কিন্তু পুরুষের বয়স অত বেশী হ'লে নারীর প্রায়শঃ বৈধব্যের সম্ভাবনা ।
শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রী যদি পুরুষের অমনতর ছোট হয়, তাহা হইলে সে-স্ত্রীর সংসর্গ তাহাকে জীবনে উদ্দীপ্ত করিয়া তোলে অর্থাৎ দীর্ঘজীবী করিয়া তোলে,—আয়ুর্বেদেও ইহার উল্লেখ আছে*। কারণ, স্বামীতে স্ত্রীর vital power
_______________________________________
★ “সদ্যো মাংসং ঘৃতং বা বালা স্ত্রী ক্ষীরভোজনম্ ।
ঘৃতমুষ্ণোদকঞ্চৈব সদ্যঃ প্রাণকরাণি ষট্ ॥”
তথা, “শুষ্কং মাংসং স্ত্রিয়ো বৃদ্ধা বালার্কস্তরুণং দধি ।
প্রভাতে মৈথুনং নিদ্রা সদ্যঃ প্রাণহরাণি ষট্ ।।”
—বালা-স্ত্রী সদ্য-প্ৰাণকরা ও বৃদ্ধা-স্ত্রী প্রাণহরা ।
—আয়ুর্বেদশাস্ত্র
(জীবনীশক্তি) induced (উদ্দীপ্ত) হইয়া weak (দুর্বল) পুরুষেরও vitality-কে (প্রাণশক্তিকে) সমতায় আনয়ন করে ; আর, সমবয়স্কা হইলে উভয়ের ভিতর equal deterioration অর্থাৎ তুল্য-পরিমাণ অপচয় ঘটে, উভয়ের vital induction-এ—জীবনের উদ্দীপনায়—কেহই পরিপুষ্ট হয় না । তাই বোধহয়, ঋষিরা বয়সের এত difference-এর (পার্থক্যের) পক্ষপাতী ছিলেন । পুরুষের পিতৃত্বের উদ্বোধনযোগ্য বয়স না হইলে সে যদি স্ত্রী গ্রহণ করে, তাহা হইলে অপুষ্ট, অসুস্থ সন্তান জন্মানো সম্ভব ।
প্রশ্ন । আচ্ছা, বিধবা হওয়াটা স্ত্রীর পক্ষে এত দোষের—এত দুর্ভাগ্যের কেন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । বিধবা হওয়াটা এত দুর্ভাগ্যের হইয়াছে—কারণ, স্ত্রীর বৈশিষ্ট্যই স্বামীকে স্ব-স্থ, সুস্থ ও উন্নত করা ও রাখা । বিধবা হইলে স্ত্রীর সেই বৈশিষ্ট্যের অবমাননা হয়,—আর, সেই বৈশিষ্ট্যের অবমাননাই স্ত্রীকে অবসন্ন করিয়া তোলে ; তাই, তাহারা না মরিলেও নিজেদের মৃত-তুল্যই বিবেচনা করে।
10