🔲 কর্মীদের অপারগতার কারণ-বিশ্লেষণ-৫৯
🔲 পাতিব্রত্যের মহিমা ব্যাখ্যান-৬০
🔲 বিবাহের গুরুত্ব ৬০
🔲 ভক্তি ৬০
🔲 গুরুভক্তির ফলে সর্বশাস্ত্রবেত্তা কিভাবে হয় ৬১
🔲 পরীক্ষায় অকৃতকার্য্য ছাত্রের প্রতি-৬২
[P 59-62]
প্রকাশদাকে ( বসু ) দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন - কি রে ! কী খবর ?
প্রকাশদা-- যেখানে যেতে বলেছিলেন , সেখানে গিয়েছিলাম , কাজ হ'য়ে গেছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - দেখলি তো ? বুদ্ধি করে , সাহস করে মাথা খাটিয়ে কাজ করলি কি হয় ? প্রকাশদা হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন — ঠাকুর ! আমি তাে মাথা খাটাইনি , আপনি যা ' ব'লেছেন বেকুবের মতাে তাই করেছি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর-- আমি যা বলি সেইটুকু যথাযথভাবে করতে মাথাটা যতটুকু খাটান লাগে , তাই যে অনেকে পারে না । অনেকে কথাগুলিই ঠিকমতো শুনতে পায় না , নিজের পেয়ে - বসা ধারণা - অনুযায়ী শােনে , পেয়ে - বসা ধারণা - অনুযায়ী বােঝে । পরে বলে , আপনি তাে তাই বলেছিলেন । আবার , কেউ - কেউ এমন নিরেট , তার হয়তাে ঝগড়া হয়েছে কারও সঙ্গে , সে এসে আমাকে জানাল , ‘ এখন কী করব বলেন । আমি তাকে বলে দিলাম , “ এইভাবে - এইভাবে তার সঙ্গে কথা ক ’ , ব্যবহার কর , তাহ'লে ঠিক হয়ে যাবে । ” সে তাই করল , ক'রে আবার বলল — ঠাকুর আমাকে বলে দিয়েছেন , তােমাকে এই কথাগুলি বলতে তাই বললাম । ( ব'লেই শ্রীশ্রীঠাকুর একটুখানি হাসলেন । )
অন্যসকলেও হাসতে লাগলেন ।
স্বামীভক্তি ও গুরুভক্তি সম্বন্ধে আবার কথা উঠলাে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - পাতিব্রত্যের মহিমা অশেষ । তা’তে যােগৈশ্বৰ্য্য পৰ্য্যন্ত লাভ হয় । এ - বিষয়ে একটা গল্প আছে খুব সুন্দর । এক ব্রাহ্মণ একদিন একটি গাছতলায় বসে বেদপাঠ করছিলেন , এমন সময় একটি বক উপর থেকে তার শরীরে মলত্যাগ করে , তা'তে ব্রাহ্মণ কুদ্ধ হ'য়ে বকটিকে শাপ দিতেই বকটি ভস্ম হ'য়ে গেল । আর একদিন তিনি এক গৃহস্থের বৃড়ীতে ভিক্ষা করতে গেছেন । গৃহস্বামী তখন ক্ষুধার্ত ও পীড়িত । তাঁর স্ত্রী তখন স্বামী - সেবায় রত । তিনি তখন ব্রাহ্মণকে একটু অপেক্ষা করতে বললেন । এদিকে ব্রাহ্মণ তাে রেগে অগ্নিশর্মা । হাতের কাজ সেরে গৃহকর্ত্রী ভিক্ষা দিতে এসে সবিনয়ে তার বিলম্বের কারণ বলে ব্রাহ্মণের কাছে ক্ষমা চাইলেন । কিন্তু ব্রাহ্মণ তা'তে শান্ত না হ'য়ে আরাে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন । অনন্যোপায় হয়ে পতিব্রতা বললেন , ‘ আমি তাে আর কাক - বক নই যে , আমাকে ভস্ম ক'রে দেবেন । অতাে রাগ করা বৃথা। আমি কোন অন্যায় করিনি , স্বামীর পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলাম , তাই একটু দেরী হয়েছে । ব্রাহ্মণ পতিব্রতার অলৌকিক শক্তির পরিচয় পেয়ে স্তম্ভিত হ'য়ে গেলেন , এবং তাঁর উপদেশ - অনুসারে শাতত্ত্ব জানবার জন্য মিথিলার পিতৃমাতৃ - ভক্ত ধর্ম্মব্যাধের কাছে গেলেন । বিদ্যা ও কুলের জোর যতই থাক না কেন , ভক্তি ছাড়া যে শাস্ত্রতত্ত্বে অনুপ্রবেশ লাভ হয় না , এখানে এই কথাটিই বােঝান হয়েছে । আবার , নিম্নকুলোদ্ভূত কোন লোকও যদি প্রকৃত ভক্তিমান হয় , তারও যে প্রভূত জ্ঞানের বিকাশ হতে পারে , সে - জিনিসটিও এখানে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে । তবে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে- শুদ্র ব্রহ্মজ্ঞান লাভ ক'রে বিপ্রের গুরু , পৰ্য্যন্ত হতে পারে , কিন্তু তাই ব'লে উচ্চবর্ণের মেয়ে বিয়ে করতে পারে না । বিয়ের বেলায় পুরুষের বীজবৈভব বিচার করতে হবে । পুরুষের জীবববৈভ যদি নারী যে - বীজোৎপন্না তার থেকে সমদ্ধতর না হয় , সমৃদ্ধত তর না হলেও অন্ততঃ তার সমান যদি না হয় , তাহলে প্রজননক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দেয় । বীও নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে মাটিকে আয়ত্তে এনে তার থেকে নিজের উপযোগী পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে না , বরং মাটিই তা'কে আত্মসাৎ করে তার বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করে তােলে ।
বীরেনদা ( বিশ্বাস ) -গুরুভক্তির ভিতরদিয়ে যে সমস্ত শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভের কথা আছে , সে কেমন করে সম্ভব হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর - আরুণির কথা , উপমন্যু্র কথা শােনা আছে তাে ? এসবের তাৎপৰ্য্যটা ভাল করে বুঝতে হবে । আচাৰ্য ধৌম্য তাঁর শিষ্য আরণিকে পাঠালেন ক্ষেতের আল বাঁধবার জন্য । আরুণি যখন কোনমতেই আল বাঁধতে পারল না , তখন নিজেই অলের মধ্যে শুয়ে প'ড়ে জল ঠেকাল । দিনান্তে আচার্য্য আরুণিকে দেখতে না পেয়ে শিষ্যগণ সহ বেরিয়ে পড়লেন আরুণির খোঁজে । ক্ষেতের কাছে গিয়ে ডাকতে লাগলেন , ‘ আরুণি , ও আরুণি ! আরুণি আলের পাশে শুয়ে থেকেই উত্তর দেয় — প্রভু ! এই যে আমি । ” ধৌম্য তাকে উঠে আসতে বলেন । আরুণি তখন সব কথা খুলে বলে । গুরু , প্রীত হ'য়ে আশীর্বাদ করেন- “ আমি খুব খুশি হয়েছি । সৰ্ব্বশাস্ত্র তােমার অধিগত হবে । শিষ্য উপাধ্যায়কে প্রণাম ক'রে বিদায় নেয় । এর মানে হলাে , গরুতে যার মন একাগ্র , গুরুর স্বার্থের জন্য যে সবরকম কষ্ট স্বীকারে অভ্যস্ত , তার প্রবৃত্তির বিক্ষেপ ও বিক্ষোভ স্বতঃই প্রশমিত হ'য়ে আসে । অমনতর একনিষ্ঠ তপস্যা যার , আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মপরিচিতি ক্রমশঃই পূর্ণতা লাভ করতে থাকে । যে নিজেকে অধিগত করতে পারে , সে সেই দাঁড়ায় ফেলে বিশ্বের যা - কিছুকেই অধিগত ক'রে ফেলে । উপমন্যুরও ঐ ব্যাপার । ধৌম্যের আর এক শিষ্যের নাম ছিল উপমন্যু । তিনি তাকে গাে - পালনে নিযুক্ত করলেন । গুরু , তাকে হৃষ্টপুষ্ট দেখে জিজ্ঞাসা করলেন , তােমাকে বেশ নাদুস - নুদুস দেখছি , তুমি কী খাও ? শিষ্য বলল — ' ভিক্ষা করে যা পাই , আমি তাই দিয়েই জীবন - ধারণ করি । গুরু , বললেন , “ ভিক্ষা করে যা পাবে , তা ' আমাকে দেবে । শিয্যের ভিক্ষালব্ধ জিনিসপত্র গুরুরই প্রাপ্য । আবার কিছুদিন পরে গর , শিষ্যকে খাদ্য - সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন । শিষ্য বলল— “ আমি প্রথমবার ভিক্ষা করে যা পাই , তা আপনাকে দিই , তারপর ভিক্ষা করে যা পাই , তাই খেয়ে থাকি । ' গুরু , বললেন , ' তাও ঠিক নয় । এতে অন্য ভিক্ষুকের অসুবিধা সষ্টি করা হয় এবং তোমারও লােভকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় । এরপর উপমন্যু গরুর দুধ খেয়ে বেচে থাকে । গুরু , আবার একদিন ঐ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন । উপমন বলে ‘ গরুর দুধ খাই । উপাধ্যায় বলেন- “ তুমি দুধ খেলে বাছুরের অসুবিধা হ'তে পারে , এভাবে দুধ খেও না । ' আবার কিছুদিন পরে গুরুর সেই প্রশ্ন । শিষ্য উত্তর দেয় — ‘ বছুরগুলির মুখে বা গরুর বাটে যে ফেনা লেগে থাকে , তাই খাই আমি । ' গুরু , বলেন -'বাছুরগুলি তোমার প্রতি অনুকম্পায় হয়তাে বেশী ফেনা নিষ্কাশন করে , এতেও তাদের অসুবিধা হতে পারে , তুমি ঐ ফেনা খেও না । এবার আহারের সব পথ রুদ্ধ । তব , শিষ্য ভাবে - আচার্য্য খেতে নিষেধ করেছেন , কিন্তু গরু , চরাতে তাে নিষেধ করেননি , তাই খালি পেটে সানন্দে গরু , চরায় । একদিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সে কয়েকটা আকন্দপাতা চিবিয়ে খেল । আকন্দপাতা খাওয়ায় অন্ধ হ'য়ে এদিক - ওদিক ঘুরতে - ঘুরতে এক কুয়াের মধ্যে পড়ে গেল । গুরু , তাকে যথাসময় আশ্রমে আসতে না দেখে শিষ্যদের নিয়ে বনে গেলেন । বনে গিয়ে তাকে ডাকতে লাগলেন । উপমন্যু কুয়োর মধ্য থেকে সব বৃত্তান্ত বলল । সবাই মিলে ধরাধরি করে তাকে উপরে টেনে তুললেন । তারপর গল্পের উপদেশমতো দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারের আরাধনায় উপমন্যু , দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল সুস্থ হয়ে গুরুকে প্রণাম করতেই গুরু , আশীর্বাদ ক'রে বললেন , ' বৎস , তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ । সমস্ত বেদ ও ধর্মশাস্ত্র তােমার কাছে প্রতিভাত হবে । ' এতখানি চোট স'য়েও ভক্তি বিশ্বাস যার অটল থাকে , সে তাে অকম্পজ্ঞানের রাজ্যেই অধিষ্ঠান লাভ ক'রে যায় , তার কি আর জ্ঞানের কিছু বাকী থাকে ?✅



10