🎗️বিবাহ কতপ্রকার..?
🎗️বিয়ের initiative-টা কা’র হওয়া উচিত—পুরুষের, না নারীর ?
🎗️নীচ পুরুষ নারীকে offer দেয়—নারীর তাহা প্রত্যাখ্যান করাই ধৰ্ম্ম... বিবাহে অভিভাবকের কর্ত্তব্য কী ?
১৫ই এপ্রিল, ১৯৩৪
[P 41- 49]
প্রশ্ন । সংহিতাকারকগণ রকমারি বিবাহের কথা বলেছেন কেন ? মনু তো আট রকমের কথা বলেছেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর। বিবাহ সব দেশেই আট প্রকারেরই আছে। আট রকম বিবাহ মানে—যত রকমের স্ত্রী-পুরুষের মিলন হইতে পারে বা হয়, তাহাদের নানা রকম হইতে আট রকমে ভাগ করা হইয়াছে। ইহার কতকগুলি উৎকৃষ্ট, কতকগুলি মধ্যম, আর কতকগুলি হীন । যেগুলি হীন তাহাদেরও আর্য্য-ঋষিরা সমাজে স্থান দিয়া তাহার ফলের উৎকর্ষ-সাধনের জন্য বিধিনিষেধ প্ৰণয়ন করিয়াছেন,—ফলকথা, তাঁহারা কাহাকেও সমাজ হইতে নির্বাসিত করেন নাই ।
প্রশ্ন । কেন ? Eliminate না করায়—বাদ না দেওয়ায়—সমাজ পুষ্ট না হইয়া অবনতই হয় না কি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । নির্বাসন না করায় পুষ্টির হানি হয় নাই—বিধিগুলিকে অমান্য করিয়াই অবনত হইয়াছি ! মানুষ কোনরকমে হীন হইতে চায় না—becoming (উন্নয়ন বা বৃদ্ধি) তাহার একটা জীবনের লক্ষণ। যে-বিধি অবলম্বন করিলে তাহার becoming intact and continued থাকে—অর্থাৎ, বৃদ্ধি অটুট এবং ক্রমবর্দ্ধনশীল থাকে, তাহা না করিয়া উন্নতির জন্য হাত বাড়াইলে অবনতিকেই আলিঙ্গন করা হয় । তাই, eliminate করিতে হইলে বাদ দিতে হইলে যাহা আমরা চাই না, যাহা মানুষ চায় না, তাহাকেই বাদ দিতে হয়—যাহা চাই তাহাকে ধরিয়া ।
প্রশ্ন । বিবাহের চাড় তো দেখি বাপ-মায়ের সাধারণতঃ । কখনও-কখনও বরও হয়তো নিজের initiative-এ (ইচ্ছায়) বিয়ে করে,—এটা কেমন unnatural (অস্বাভাবিক) মনে হয়। সত্যি-সত্যি বিয়ের initiative-টা কা’র হওয়া উচিত—পুরুষের, না নারীর ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। নারীর প্রধানতঃ
(pcrimarily ) — পরোক্ষে
( secondarily, indirectly) পুরুষের * ।
প্রশ্ন । তাহ'লে বিবাহে অভিভাবকের কর্ত্তব্য কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। বিবাহে অভিভাবকের কৰ্ত্তব্য—যা’তে ছেলেমেয়ে কোন রকমে misled না হয়, বিপথগামী না হয় তাই দেখা, আর misled হওয়ার সম্ভাবনা দেখলে তা' restrict করা (নিয়ন্ত্রিত করা) এবং যাতে বুঝতে পারে তাই করা।
প্রশ্ন। পুরুষত্বের সব চেয়ে বড় অবমাননা মনে হয় নারীকে বিয়ের জন্য offer দেওয়া বা প্রস্তাব দেওয়া । সে তো থাকবে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হ'য়ে, আর নারী-সাধারণের প্রতি একটা সহজ মাতৃবুদ্ধি নিয়ে !
শ্রীশ্রীঠাকুর। হ্যাঁ। ঐ রকম আদর্শে অনুপ্রাণিত হ'য়ে, তাঁরই প্রতিষ্ঠায় সর্ব্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করাতেই পুরুষের পুরুষত্ব। আর, ঐ রকম হ’লে নারী-সাধারণের উপর সহজ মাতৃবুদ্ধি থাকেই ।
__________________________________
* Cf. “Man should run after glory and woman after man." -Napoleon পুরুষ ছুটিবে গৌরব লক্ষ্য করিয়া, আর নারী ছুটিবে পুরুষের পশ্চাতে—পুরুষকেই লক্ষ্য করিয়া । – নেপোলিয়ান
“Man's power is active, progressive, defensive. He is eminently the doer, the creator, the discoverer, the defender. His intellect is for speculation and invention, his energy for adventure, for conquest." -Ruskin পুরুষের শক্তি কর্ম্মলিঙ্গু, উন্নয়নমুখী ও রক্ষণধর্মী । পুরুষ প্রধানতঃ কর্তা, স্রষ্টা, আবিষ্কারক এবং রক্ষক । তাহার ধীশক্তি গবেষণা ও উদ্ভাবনে নিয়োজিত, ইত্যাদি । —রাস্কিন
"The thoughts of men are mainfold,
Their callings are of diverse kinds."
-Translation of the Rig-Veda, See page 128
Macdonell's 'History of Sanskrit Literature. '
ঋগবেদের একটি স্তোত্রে আছে— পুরুষের চিন্তা বহুমুখী, অধ্যবসায় ও কর্ম্মও নানাবিধ । সংহিতায় আছে—যে-সমস্ত কন্যার যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পর এবং ঋতুত্রয় অতিবাহিত হইলে বিবাহ হয় তাহাদের স্বয়ংবরই বিধি; ঋতুত্রয় অতিক্রম করিলে কন্যার নিজের এই সম্বন্ধে স্বাতন্ত্র্য জন্মে বলিয়া এই অবস্থায় কন্যাদান শাস্ত্রবিগর্হিত ।
তাই বিষ্ণু-সংহিতায় আছে—
“ঋতুত্রয়মুপাস্যৈব কন্যা কুর্যাৎ স্বয়ংবরম্ ।
ঋতুত্রয়ে ব্যতীতে তু প্রভবত্যাত্মনঃ সদা ।” ২৪/৪০
প্রশ্ন । অথচ কত-কত পুরুষ তো নারীকে offer দিচ্ছে (বরণ করছে)।
শ্রীশ্রীঠাকুর। নীচ পুরুষ নারীকে offer দেয়—নারীর তাহা প্রত্যাখ্যান করাই ধৰ্ম্ম !
প্রশ্ন। কথাটা ঠিক বুঝলাম না। পুরুষই তো সব দেশে নারীকে offer দিচ্ছে ; নারী তা' প্রত্যাখ্যান করা দূরের কথা, সে যে পুরুষের নিকট হ’তে ঐ-রকমটা পেয়ে নিজেকে flattered-ই (কৃতার্থ-ই) মনে করে—এমনই বরং বোধ হয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ তা'তে নিজেকেও ক্ষয় করে,—নারীত্বকেও করে ক্ষুণ্ণ, সঙ্কুচিত । পুরুষ ও নারী উভয়ের being (জীবন) যাতে অক্ষুণ্ণ ও পরিবর্ধিত হয় তাই-ই উভয়ের স্বাভাবিক সম্বন্ধ। সত্যিকারের নারী যে, সে কখনও পুরুষকে বলে না ‘তুমি ভালোবাসিলে তবে আমি ভালোবাসিব' । ভালোবাসাই যে তার প্রকৃতি, আর, ভালোবাসা ও রকমেরই নয় । নারী করে পরিবর্দ্ধিত, দেয় প্রেরণা, আর তাতে পুরুষ হয় nourished (পুষ্ট) ; পিতা, ভ্রাতা, স্বামী, পুত্র—এদের mental ও physical wealth (মানসিক ও শারীরিক সম্পদ) বাড়ায় তাদের service (সেবা) দিয়ে। তবে পুরুষ যখন নিজেকে ক্ষয় করে, যদি সে মুগ্ধ না হয় নারীর অভাবপূরণে, নারী বলে—'আমায় দিয়ে যদি তুষ্ট না হও, উৎফুল্ল না হও–তোমার দান আমার কাছে যন্ত্রণাময়'; কারণ, নারীর লক্ষ্যই হচ্ছে সম্বৰ্দ্ধনা। তাহ'লেই নারী যদি পুরুষ হ'তে চায়, সে সর্ব্বনাশ করবে তার জীবনের। আর, পুরুষ যদি নারী হ'তে চায়, সেও সর্ব্বনাশ করবে তার জীবনের * ।
প্রশ্ন । আচ্ছা, বিয়ে করবার জন্য বর যে স্বয়ং গিয়ে মেয়ে দেখে—কথাবার্তা, আলোচনাও হয়তো আগে থেকেই খুবই হয় ; এইরূপে যৌবনপ্রাপ্তা নারী বহু বিবাহেচ্ছু যুবকের সংস্পর্শে আসে—তাতে নারীর পক্ষেও তো বিশেষ অনিষ্ট হ'তে পারে বলে মনে হয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর । নিশ্চয়ই ! এ-নিয়ম অতিশয় নিন্দনীয় ! এতে নারীর মনে বহু যুবকের সঙ্গে বিবাহের কল্পনা আসতে পারে—মাথায় কা'রও ছাপ পড়বার বিশেষ
_____________________________________
* 'নানা প্রসঙ্গে' (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র -কথিত) হইতে উদ্ধৃত।
সম্ভাবনা; ফলে issue affected হ'তে পারে অর্থাৎ সন্তানের ক্ষতি হ’তে পারে ।
প্রশ্ন । তাই যদি হয়, তাহ'লে বাগদত্তা কন্যার সেই স্থানেই বিয়ে না-হলে তো মহাদোষ !
শ্রীশ্রীঠাকুর। নিশ্চয়ই ! বাক্যদানই বিবাহ ; তা' ছাড়া আর করণীয় যা’-কিছু
তা' সব sacrament (ধৰ্ম্মচুক্তি), declaration
( ঘোষণা );— environment-কেও (পারিপার্শ্বিককেও—সমাজকেও তা accept করানো (মানানো) – যা'তে সমাজও সাড়া দেয়,—তারা স্বামী-স্ত্রী।
প্রশ্ন। ‘বাগদত্তা' কথার মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। ‘বাক্যদান' মানে বুঝিতে হইবে মেয়ের নিজের বাক্যদান, অর্থাৎ সে যাহাকে পূর্ব্বেই স্বামীরূপে কল্পনা করিয়াছে তাহার নিকটে তাহার নিজেকে গ্রহণ করিবার আবেদন। যদি সে নিজে কাহাকেও স্বামীরূপে কল্পনা না-করিয়া থাকে বা মনে-মনে গ্রহণ না করিয়া থাকে, অথচ অন্যে তাহার সম্বন্ধে বাক্যদান করে,—তাহা হইলে সে কোনক্রমেই দূষিত হইতে পারে না। আর, মেয়ে যদি কাহাকেও স্বামীরূপে কল্পনা করিয়া থাকে, কাহাকেও বাক্যদান করিয়া থাকে,—এমনস্থলে অভিভাবক যদি জিদ্ করিয়া অন্যস্থানে তাহাকে সমর্পণ করে (অবশ্য সেই বাক্যদান বিধিমত হওয়া সত্ত্বেও), অভিভাবকের মহাপাতক—তাহার কোন সন্দেহ নাই * ।
প্রশ্ন। তবে বাগদত্তা কন্যার অন্যস্থানে বিবাহ হ'লে সেটা কি-রকমের বিবাহ
হ'ল ?
___________________________________
+ Cf. “Great daily initimacy between the sexes... tends to rub off the bloom and delicacy which can develop in each. Girls suffer in this respect far more than boys." -Youth', page 307-G. S. Hall
নর-নারীর দৈনন্দিন ঘনিষ্ঠতার ফলে উভয়ের মনের সূক্ষ্ম অনুভূতি-প্রবণতা ও তারুণ্যের দীপ্তি লোপ পাইতে চাহে । এবং এই ব্যাপারে বালকদের চেয়ে মেয়েদেরই ক্ষতি হয় বেশী।
—জি. এস্ হল
* “ন দত্ত্বা কস্যচিৎ কন্যাং পুনর্দদ্যাদ্বিচক্ষণঃ ।
দত্ত্বা পুনঃ প্রযচ্ছন্ হি প্রাপ্নোতি পুরুষানৃতম্ ।।” ১/৭১– মনু
কন্যা একবার বাগদত্তা হইলে আবার দ্বিতীয়বারে তাহাকে দান করিলে পুরুষ অনৃতের ভাগী হয়। সুতরাং বিচক্ষণ ব্যক্তি এমন কাজ করিবেন না।
শ্রীশ্রীঠাকুর। নিঃসন্তানা বিধবাদের মত । অদত্তবাক্ কন্যার বা অবিবাহিতা কুমারীর তুল্য নয় । তাই বলিয়া তাহারা প্রশংসনীয়া না-হ'লেও নিন্দনীয়া নয় ।
প্রশ্ন । ইংরাজদের মধ্যে নিয়ম আছে কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে engaged হ'লে অর্থাৎ বাগদত্তা হ'লে পরস্পর অঙ্গুরী-বিনিময় হয় । আমাদের দেশে নারী ঐরূপ কাহাকেও বরণ করিলে তাহার একটা চিহ্ন ধারণ করিলে ভাল হয় না কি—যাহা নাকি একটা declaration-এর (ঘোষণার) মত হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। কপালে সিন্দূর পরা বোধহয় মেয়ের কাহাকেও স্বামী-কল্পনা করার চিহ্ন—আর এটা বোধহয় মন্দ নয়। সিঁতেয় সিন্দূর মানে স্বামী তাহাকে গ্রহণ করিয়াছে—এ-রকম তো হ'তে পারে ।
প্রশ্ন । কোনো নারী পুরুষকে বরণ করিলে পুরুষের করণীয় কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। প্রথমতঃ বিচার্য্য—তাহার (পুরুষের) যোগ্যতা, অর্থাৎ, প্রথমে দেখিতে হইবে পুরুষের সেই নারীকে বহন করিবার যোগ্যতা আছে কিনা । দ্বিতীয়তঃ–বর্ণ, বংশ, বিদ্যা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা ইত্যাদি হিসাবে সে-নারীগ্রহণ শ্রেয়ঃ কিনা। শ্রেয়ঃ যদি হয় এবং স্ত্রী যদি মনোবৃত্তি-অনুসারিণী হইবে বলিয়া বোঝা যায়, তবে গ্রহণীয়া ।
প্রশ্ন । কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ব্যতীত কোন নারীকে গ্রহণ না করলে দোষ কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। ইহা-সত্ত্বেও — সর্বপ্রকারে গ্রহণযোগ্য হইলেও যদি গ্রহণ নাক রা যায়, তবে নারী প্রায়শঃ উচ্ছৃঙ্খল, বিকৃত ও সমাজঘাতিনী হইয়া থাকে ; তাই, সেই পুরুষই ঐ উৎপাতের স্রষ্টা হয়-অতএব তাহা অধৰ্ম্ম ।
প্রশ্ন । কোন্ অবস্থায় পুরুষ বরণ করছে এমন নারীকে অগ্রাহ্য করতে পারে?
শ্রীশ্রীঠাকুর। যদি পূর্ব্বোক্ত বিধি উল্লঙ্ঘন করিয়া কোনো স্ত্রী কোনো পুরুষকে বরণ করে, তবে পুরুষের উচিত তাহাকে অগ্রাহ্য করা এবং সাদরে তাকে নিবৃত্ত করা ।
প্রশ্ন। সাদরে কেন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। দুর্ব্যবহারে উত্তেজিত ক'রে দিলে শূর্পণখার মত হ'য়ে উঠতে
পারে । তাই চেষ্টা করা উচিত—অন্ততঃ যাতে সে সমাজঘাতিনী হ'য়ে লোকের বা সমাজের অমঙ্গলকারিণী না হয় এবং বিক্ষুব্ধ হ'য়েও restrained (সংযত ) থেকে, জীবকল্যাণে আত্মনিয়োগ ক'রে উৎকর্ষে নিজের অবসান আনতে পারে ।
প্রশ্ন । সে তো হ'ল, কিন্তু ঠিক-ঠিক অনুরক্তা অথচ সর্ব্বপ্রকারে গ্রহণীয়া কোনো স্ত্রী বরণ করলেই, তা'কে গ্রহণ করা-ই যদি পুরুষের ধর্ম্ম ও কর্তব্য হয়, তাহলে অনেক সময়, polygamy (একজন পুরুষের বহুনারী-গ্রহণ) অপরিহার্য্য হ'য়ে পড়তে পারে ; polygamy নিন্দনীয় নয় কি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রী monogamous by natural instinct, পুরুষ polygamous naturally. অর্থাৎ, স্ত্রীর সহজ সংস্কার একজনকে স্বামী করা, পুরুষের বহুবিবাহ স্বাভাবিক * ।
_________________________________
* Cf. “Man's love is of man's life a thing apart. It's woman's whole existence." -Byron
পুরুষের (স্ত্রীর প্রতি) ভালবাসা তার জীবন ও সত্তা হইতে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু নারীর ভালবাসা অন্য
প্রকৃতির—ইহা যেন তার অস্তিত্বের সবটা । —বায়রণ
"Men are oversexed, they are by nature polygamous and promiscuous, while woman is monogamous......No matter what our moralists...may say, the fact remains that man is a strongly polygamous or varietist animal.
"A man may love a woman deeply and sincerely and at the same time make love to another woman or have sexual relations with her. It is quite a common thing with men. It is quite a rare thing with women...... The rule is that in her sex and love-life, woman is much more single-affectioned than is her lord master-man.
"Is she on account of it better than, superior to men? It is futile to speak of better or worse, of superior or inferior. This is the way they are. It is the way man and woman have been made by nature. The diffrences lie in biological roots."
—Woman, Her Sex and Love'-Dr. William J. Robinson
অর্থাৎ, পুরুষ স্বভাবতঃই বহুবিবাহ-পরায়ণ, কিন্তু নারীর প্রকৃতিই একজনকে স্বামীরূপে গ্রহণ করা । নীতিবাদিগণ যাহাই বলুন—পুরুষ ও নারী ঐরূপই । পুরুষ একজন স্ত্রীতে গভীরভাবে আসক্ত হওয়া সত্ত্বেও আর-একজনকে ভালবাসতে পারে। পুরুষমাত্রেই সাধারণতঃই এমন, আর নারীমাত্রেই সাধারণতঃ তার বিপরীত । কিন্তু তাই বলিয়া নারী পুরুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট নহে । পুরুষ শ্রেষ্ঠ কি নারী শ্রেষ্ঠ, পুরুষ উৎকৃষ্ট কি নারী নিকৃষ্ট—এ প্রশ্ন তোলা বৃথা । পুরুষ অমনই—আর নারী অমনই। প্রকৃতিই পুরুষ ও নারীকে অমন করিয়াছে। —উইলিয়ম জে. রবিনসন্
পুরুষ যদি আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকে, তবে বহুবিবাহ তাহার অল্পই ক্ষতি আনিতে পারে—ঐরকম polygamy-কে ঋষিরা নিন্দনীয় বলেন নাই, বরং কোথাও-কোথাও উদাহরণ দিয়া encourage-ই করিয়াছেন, অর্থাৎ সমর্থন করিয়াছেন । সমাজ চায় সুসন্তান। সুপুরুষে অর্থাৎ, শক্তিমান যোগ্য পুরুষে সম্যক্ আকৃষ্ট স্ত্রীগণ প্রায়ই সুসন্তান প্রসবিনী হয় । তাই, ঋষিরা অন্ততঃ সমাজের দিকে চাহিয়া বোধহয় উহাকে encourage করিয়াছেন ।
প্রশ্ন । Monogamous by natural instinct -ই যদি নারী হয়—একজনকে স্বামী করাই যদি নারীর সহজ সংস্কার হয়, তবে দ্রৌপদী পাঁচ স্বামী থাকতেও কর্ণকে নাকি ষষ্ঠ স্বামীরূপে পেতে চেয়েছিল—এমন কথা আছে শুনতে পাই। তা ছাড়া আজকের দিনেও নাকি কোথাও-কোথাও নারীর বহুপুরুষ-বিবাহ বা polyandry প্রচলিত রয়েছে। আর, অনেক পুরুষও, বিশেষতঃ বিলাতে, বহু বিবাহ করা instinctively atrocious (স্বতঃই ভয়ঙ্কর) মনে করেন । নারী ও নরের instinct-ই যদি অমন হয়, তবে ঐ-রকম হয় কি ক'রে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। দ্রৌপদী eugenic aspect-এ (সুপ্রজনন হিসাবে) অন্ততঃ quite unsuccessful (সম্পূর্ণ অকৃতকাৰ্য্য) ; আর কর্ণকে ষষ্ঠ স্বামীরূপে আশা করিয়াই যদি থাকেন, তাহা হইলে তাহা স্বাভাবিকই । কোনো-একে যদি কাহারো বৃত্তি সার্থক না হয়, তবে সে শান্তির অধিকারী তো হয়ই না,—সে বিক্ষুব্ধ এবং বিক্ষিপ্তমনা হইবেই । অতএব, এটা সমাজের দিক-দিয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়—কারণ, সে হীন এবং হীনতায় দুর্ব্বল এবং দুর্ব্বলতার প্রসবকারিণী হয় ।
তাই, পুরুষের বেলাও স্ত্রী-রত এবং আদর্শহীন পুরুষ নিতান্ত নিন্দনীয় ।
এমনতর পুরুষ বিবাহের মোটেই যোগ্য নয়—বহুবিবাহ তো দূরের কথা।
প্রশ্ন । স্ত্রী যদি monogamous by natural instinct-ই হয়, তবে শাস্ত্রে বিধবা-বিবাহের বা বিধি কেন ? আপনি কি তাহ'লে বিধবা-বিবাহের পক্ষপাতী নন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। যদি কোন বিধবা নিঃসন্তানা হয় আর বিবাহে ইচ্ছুক হয়, বুঝিতে হইবে–সে তাহার স্বামীকে গ্রহণ করে নাই, তাহার বৃত্তিগুলি কাহাতেও সার্থক হয় নাই ; তাই তার ঐ ক্ষুধা অতৃপ্ত । তাহাকে এমনতর অবস্থায় উপযুক্ত পুরুষে ন্যস্ত করাই সমীচীন, নতুবা তাহার দ্বারা সমাজ কলঙ্কিত হইতে পারে । বিবাহ করিলে সে নিজে এবং সমাজ দুই-ই অবনতির হাত হইতে পরিত্রাণ পাইতে পারে। আর, মানুষের যখন ঐ ক্ষুধা প্রখর হয়, সে যখন কোনো-কিছুতে দাঁড়াইতে না পারে—তাহার কাছে শত নিয়ম, শত সৎ-কথা, শত বিভীষিকা নিষ্ফল ; অতএব তাহাকে পরিণীত না করিয়া নিয়ন্ত্রিত করা এক-রকম দুঃসাধ্য—তাহার বিবাহই বাঞ্ছনীয় ।
প্রশ্ন । ঐ রকম polygamy যদি morally (নীতির দিক্ দিয়া), socially (সমাজের দিক্-দিয়া) সুতরাং legally (আইনের দিক্ দিয়া) শ্রেয়ঃই হয়— তবে কোনো এক-এক জন শক্তিমান্ পুরুষকেই বহু নারী আশ্রয় করবে, অথবা best women (উৎকৃষ্ট স্ত্রীসমূহ) দুই-চার জনকেই বরণ করবে ; তবে তো অধিকাংশ পুরুষকেই বরণ করবার কেহ থাকবে না এবং দুর্বল ও অযোগ্য অনেকের বিয়ে হওয়াই অসম্ভব হবে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর। ঋষিরা ইহাই চাহিয়াছিলেন, – তাই, বিধিও সেইরূপ দিয়াছেন* ।
প্রশ্ন। তার মানে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। উৎকৃষ্ট পুরুষকে বহু স্ত্রী বরণ করিলে সেই পুরুষের বহু উৎকৃষ্ট সন্ততি জন্মিতে পারে। এবং সমাজের ভিতর যাহারা নিকৃষ্ট আছে তাহারা যাহাদের নিকট উৎকৃষ্ট, তেমনতর অন্য স্ত্রী তাহাদের খোঁজ করিবে ও বিবাহ করিবে । এবং যাহারা তেমন উৎকৃষ্ট নয় তাহারা উৎকৃষ্টের পূজক হইয়া উৎকর্ষ
______________________________________________
"Polygamy when tried under modern democratic conditions is wrecked by the revolt of the mass of inferior men who are condemmed to celibacy by it, for the maternal instinct leads a woman to prefer a tenth share in a first rate man to the exclusive possession of a thirdrate one."
-Bernard Shaw আধুনিক যুগে সাধারণতন্ত্রের দিনে বহুবিবাহের প্রচলন করিতে গেলে বহু নিকৃষ্ট লোক তাহাতে বিবাহ করিতে পারিবে না বলিয়া বিদ্রোহ করিবে। কারণ, নারীর সহজ মাতৃবুদ্ধি শ্রেষ্ঠ পুরুষের দশমাংশকে বরং শ্রেয় জ্ঞান করে তৃতীয় শ্রেণীর একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে পুরোপুরি পাওয়া অপেক্ষা । –বার্নাড'শ
লাভ করিবে ;—ইহাই বোধহয় জীবের স্বাভাবিক উৎকৃষ্টে inclined (অভিমুখী ) হইবার সহজ এবং সাধারণ উপায়।
প্রশ্ন। অনেকের যে বিয়েই হবে না তার কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । দুর্বল ও অযোগ্যের বৃদ্ধি (multiplication) নিরস্ত হওয়াই
উচিত ।
প্রশ্ন । এমনি গৃহসুখ হ'তে বঞ্চিত হয়ে তা'রা করবে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। তাহাদের অবসান হবে উৎকর্ষের চেষ্টায়— তাই, মোটের
উপরে ভালই হবে ।
প্রশ্ন । Race culture-এর (জাতির উৎকর্ষ সাধনের) ইহাই কি একমাত্র উপায়—অনুন্নত জাতিকে উন্নত করিতে হইলে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। হাঁ—প্রধানতঃ ।
____________________________________
"Satistics show further that the birth-rate varies widely among the different social classes. ... The greatest rates of reproduction are too often shown by the less fit elements in society, and it is noteworthy that the birth-rate of the feeble-minded is 50 percent higher than that of normal persons, and that feeble-mindedness is a hereditary defect. It is the object of the science of Eugenics, founded by Francis Galton, to combat this evil, and to ensure as far as possible, that future generations should be recruited from those members of the community who are the healthiest and most vigorous both mentally and physically."
'Introduction to Sexual Physiology'-Marshall
লোকতথ্য-গণনায় দেখা যায়, বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণীর ভিতরে সন্তুতি-সংখ্যা কম-বেশী হয় । যারা সমাজে যত অযোগ্য, তাদেরই সন্তান-সংখ্যা সব চাইতে বেশী হয়— সুস্থদেহ ব্যক্তির চেয়ে শতকরা ৫০ হিসাবে বেশী। দুর্ব্বলচিত্ততা পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত দোষ। গ্যালটন-প্রতিষ্ঠিত সুপ্রজনন-বিজ্ঞানের লক্ষ্যই সমাজ হইতে এই দোষের নিরাকরণ এবং যাহাতে সমাজের ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা—যারা শরীর ও মনের দিক্ দিয়া সর্ব্বাপেক্ষা সুস্থ ও সক্ষম—তাদেরই মধ্য হইতে জন্মান যাইতে পারে।
10