আর্য্যকৃষ্টি :-
ঠিক জানিস্ তুই ঠিক বুঝিস্
ভেবে-চিন্তে আরো দেখিস্-
সঙ্গতিশীল সম্বন্ধটা
ভাঙ্গেই যখন থাকিস্ না,
ভজনশীল সঙ্গতিটা
সংহত হওয়ার অনুভূতিটা
জাত-সমাজে থাক্ না যেই
জীবন বেঁচে থাক্ না তোর-
তা' বুঝিস্। ১।
অমৃতেরই সন্ততি তুই
অমৃতই তোর জীবন-ধারা,
মরণ ভ'জে মরণ খুঁজে
হ'বি কেন সর্ব্বহারা? ২।
উজ্জী নতি দীপ্ত প্রবীণ
সঙ্গতিশীল যতই দেশ,
জীবন-বৃদ্ধির কৃষ্টি নিয়ে
দক্ষ চলার নাইকো শেষ। ৩।
জীবনটাকে ফেল্লি কেন
শুধুই কেবল কোলাহলে,-
ব্যতিক্রমে থাকি কেন
পিয়ে দুষ্ট হলাহলে? ৪।
জীবনবেদী সত্তা যে তোর
ঐতিহ্যটা তা’রই বেদী,
কৃষ্টি-পথে ওঠ না হেঁকে
অজান যা’ তা’র মর্ম্ম ভেদি’। ৫।
ঐতিহ্যকে যেই তাড়ালে
নষ্ট করলে কৃষ্টি-গোলা,
প্রাচীন-পর্য্যায়ী সংস্কার যা’
হ’লে তা’তে বেভুল-ভোলা। ৬।
প্রত্যুৎপন্নমতি তোমার
প্রাচীনেরই আবেগ-দীপ,
তা’তে আঘাত হালে পরে
জ্বলবে কি তোর প্রাণ-প্রদীপ? ৭।
দেখলি কত করলি কত
সংস্কারকে ক’রে আঘাত,
হ’ল কি তোর উচ্ছলতা
থামল কি রে জীবন-ব্যাঘাত? ৮।
ঐতিহ্যেরই উৎক্রমণে
যে সংস্কার উঠ্ল বেঁধে,
তা’র বিনাশে হয় না শুভ
ব্যতিক্রমই আসে সেধে। ৯।
ঐতিহ্যেরই আঘাত-ব্যাঘাত
সংস্কার যা’ করল সৃজন,
তাই তো সবার জীবন-সম্বল
উৎসারণী জীবন-গঠন। ১০।
এখনও তুই ওঠ রে জেগে
বেচাল চলায় চলবি কত,
তালহারা ঐ বেতাল নেশা
করল কত জীবন ক্ষত। ১১।
ঐতিহ্যেরই অবদান যা’
সুসমৃদ্ধ সংস্কার,
সেই বেদীতে দাঁড়িয়ে ও-তুই
কৃষ্টিতে কর্ অভিসার। ১২।
ক’র্ষে নিয়ে মেধাটি তোর
প্রীতি-বিভব কৃষ্টিতে,
ফুলিয়ে তোল প্রজ্ঞা-বিভব
অমর জীবন-সৃষ্টিতে। ১৩।
জীবনটা তোর বেড়ে উঠুক
তৃপ্তিভরা বৃষ্টি নিয়ে,
ধৃতি চলুক কৃষ্টি-পথে
সৎ-করণে জ্ঞান বিনিয়ে। ১৪।
বোধ-বিকাশী প্রীতির রাগে
শুভ যা’ তা’ক্* আল্পে ধর্,
সংস্কারের সন্দীপনায়
কৃষ্টিটাকে মুখর কর্। ১৫।
(* তা’কে)
লাঙলা হ’বি মনে-প্রাণে
কৃষ্টি নিয়ে বাস্তবে,
যে-বিষয়ের করবি রে চাষ
ফসলও পাবি সেই ভাবে। ১৬।
ঐতিহ্য হ’তে পাওয়া যা’ সব
সংস্কার কিন্তু জানিস্ তা’ই,
ঐতিহ্য আর সংস্কার ছাড়া
কৃষ্টিপূজার ভিত্তি নাই। ১৭।
ভিত্তি যেই তোর বলে গেল
পূর্ব্ব-পুরুষ-সংস্কৃতির,
সঙ্গতিহীন অমন কৃষ্টি
করেই সৃষ্টি বিকৃতির,
স্বাস্থ্য-সত্তা সন্দীপনায়
ভাববৃত্তির আবেগ-তূৃণ,
ব্যর্থ হবে নিষ্ঠ-তেষ্টা
ব্যক্তিত্বতে ধ’রেই ঘুণ। ১৮।
কেমন আছিস্, কোথায় যাবি,
কী আবেগে চলতে র’বি,
ব্যক্তিত্বটা বৃদ্ধি পাবে
সংস্কৃতির কী ধ’রে ছবি!
সংস্কার যদি না থাকে তোর
নিজ সংস্কারে গাঁথবি কী!
নিজস্বহারা পরগৌরব
শৃঙ্খলহারা হবে ধী;
প্রাচীনতম কাল থেকে তুই
পিতৃপুরুষের ধারা নিয়ে
গজিয়ে উঠলি এখানে তুই-
তা’য় বাড়াবি কী দিয়ে? ১৯।
ঐতিহ্য যা’ বীজ-বহনে
তো’তে হ’ল আবির্ভাব,
সেই বেদীতে অটল থেকে
উচ্ছলে কর্ কৃষ্টিলাভ। ২০।
বীজকোষেতে বিদ্ধ থেকে
সংস্কারের সন্দীপনা,
বিধান হ’তে পুষ্টি নিয়ে
বাঁচায় আপদ্ উদ্বেজনা। ২১।
জীবন তোদের দাঁড়িয়ে আছে
কৃষি-শিল্প-সন্দীপনায়,
সুবিবাহ, সুপ্রজনন-
দেশটা জাগে যে উজ্জ্বলায়। ২২।
ঐতিহ্যেরই উদার স্রোতে
সংস্কৃতির সন্দীপনা,
কৃষ্টি-চলন তা’রই চাষে
করেই যে দূর কি লাঞ্ছনা! ২৩।
কৃষ্টি জানিস্ সৃষ্টি খুঁজে
সাত্বত সঙ্গতে আসা,
ঐতিহ্যেরই বেদীমূলে
বাঁচাবাড়ার তপে বসা। ২৪।
কৃষ্টি যা’তে ধর্ষিত হয়
তপ-দ্যোতনার বর্জ্জনায়,
ঐতিহ্যকে হেলা করে
কু-কৃতিরই কুসর্জ্জনায়। ২৫।
ঐতিহ্য কিংবা সংস্কারের
প্রথা কিংবা কুলগৌরব,
নাই যেখানে, অপাত্র সে,
গর্ব্বে ফোলেই তা’দের রৌরব। ২৬।
ঐতিহ্যকে ডাঙ্গস মেরে
কৃষ্টিসেবা যে-জন করে,
কৃষ্টি তাহার সৃষ্টি নিয়ে
জাত-জীবনকে সাবাড় করে। ২৭।
ঐতিহ্যেতে দাঁড়িয়ে ও-তুই
কৃষ্টি-পথে আরো চল্,
ঐ বাদের তুই বাদী হ’য়ে
বাড়া বুকে সবার বল;
অমন বাদে বাদ নাই তো কেউ
সত্তায় কিন্তু জীবন-ঢেউ,
সত্তার ধৃতি সবার ধৃতি
ঐ ধৃতি বাদ নাই রে কেউ। ২৮।
ঐতিহ্যেরই সমাহারে
বৈশিষ্ট্যেতে শিষ্ট যেমন,
কৃষ্টি-ব্যাকুল তৎপরতায়
তুর্য্য-প্রাজ্ঞ যেমন চলন,
কৃতিদীপ্ত জীবনটা তোর
উঠবে ফুটে তেমনিতর,
বড় ক’রে সবায় তুমি
তেমনিতরই হবে বড়। ২৯।
বাঁচার সাথে মৃত্যু-নিরোধ
চলন যেমন স্বাভাবিক,
ইষ্টনিষ্ঠ অনুচর্য্যায়
কৃষ্টিও তেমনি মাঙ্গলিক। ৩০।
ঐতিহ্য আর প্রথা-রীতি
কৃষ্টি-সহচর-
সার্থকতায় সবকে নিয়ে
উৎসারণায় ধর্। ৩১।
শুক্রকীটেই সংস্কৃতি রয়
সংস্কারও বয় তা’ই জানিস্,
যেমনতর ঐটি হবে
জন্মও তা’র তা’ই-ই মানিস্। ৩২।
সব যা’-কিছু উড়িয়ে দিয়ে
সংস্কারে মারলে লাথি,
হ’বি পরপদলেহী
দুর্ভোগই তোর হবে সাথী। ৩৩।
সংস্কারে জন্মে সবাই
ঐতিহ্যও ঐ সংস্কার,
প্রাচীন হ’তে আসছে চ’লে
জীবন-গতির ব’য়ে ভার;
সংস্কার যা’র যেমন শুভ
বিনায়িত যেমন তালে,
শিক্ষা-দীক্ষাও তদনুগ
প্রতিষ্ঠাও হয় তেমনি ভালে;
উড়িয়ে দিয়ে ঐ সংস্কার
বৃদ্ধিপর-বিন্যাসহীন
করলে জানিস্ গোল্লায় যাবি,
হবেই জাতটা নিত্য দীন। ৩৪।
সংস্কার আর প্রথা যখন
মিলন-প্রভায় যতই চলে,
সত্তা-আসন তেমনি নিরেট
তেমনতরই আরোয় বলে *। ৩৫।
ইষ্ট-ঐতিহ্য-প্রথানিষ্ঠা,
কুলনিষ্ঠায় অটুট থেকে,
সমবেদনী নিয়মনায়
চলিস্ কিন্তু বুঝে-দেখে। ৩৬।
ঐতিহ্য আর প্রথা যেমন
সংস্কারও হয় সেই মতন,
অন্তরবিদ্ধ যা’ হ’য়ে রয়
উদ্দ্গতির হয় সেই ধরণ। ৩৭।
(*বৃদ্ধি পায়।)
অন্তরবিদ্ধ সংস্কার যা’
বিশেষ ক’রে পোষণ দিয়ে,
দক্ষদীপ্ত কৃতিপটু
করবি তা’কে সুবিনিয়ে। ৩৮।
সংস্কার গোঁড়ামি নয়কো
বুঝে ক’রে সাজিয়ে নেওয়া,
কৃষ্টির অর্ঘ্যই ঐ সংস্কার
ঠকাই যে তা’য় ডুবিয়ে দেওয়া। ৩৯।
নিষ্ঠারাগে শিষ্টাচারে
আগ্রহেরই উচ্ছলা-
গড়তে শুভ যে ক্ষতি হোক
হয়ই কিন্তু সচ্ছলা। ৪০।
যা’ই না কিছু কর তুমি
সুসংরক্ষী গোঁড়া হবেই,
সমীক্ষিত সব যা’-কিছু
সংসাধিত হয়ই তবেই। ৪১।
সুসংস্কৃত কুলের আচার
রীতি-নীতি-ব্যবহার,
সব যা’-কিছুর পরিচর্য্যায়
উচ্ছলতা আন্ সবার। ৪২।
কোন্ বংশেতে জন্ম তোমার
সম্ভব করা কী তোমার,
অতিক্রমি’ সেই গরিমা
আনিস্ নাকো অশিষ্টাচার। ৪৩।
সংস্কারে সাত্বত আধান
বর্ণ গড়া তাইই দিয়ে,
সংস্কার-অনুগ সংস্কৃতি
সৃষ্টি করা তাই-ই নিয়ে। ৪৪।
জাতক যেথায় সৎ-সুনিষ্ঠ
তপস্যাতে সুনিরত,
(সেথায়) কৃষ্টি নামে বৃষ্টিধারায়
উন্নতিও অবাধ তত। ৪৫।
জন্মবিদ্ধ সহজ বোধে
যে-বৈশিষ্ট্যে সৃষ্ট তুই,
সেটা ভেঙ্গে বেচাল চলায়
সত্তা-ধৃতি পড়েই নুই’। ৪৬।
বিশেষিত সংস্কার যা’
সত্তাটিকে তুললো গ’ড়ে,
বৈশিষ্ট্য মানে তাই-ই কিন্তু
তা’ ছাড়া আর নয়কো ওরে। ৪৭।
সত্তাচর্য্যা, কৃষ্টিচর্য্যা
চর্য্যা সমাজ-দেশের,
সঙ্গতিশীল এমন চর্য্যা
স্বতশ্চর্য্যা ধরমের। ৪৮।
ব্যক্তি-স্বাধীনতা মানেই বুঝিস্-
ঐতিহ্য আর কুলের প্রথায়
যে-ব্যক্তিত্ব জেগে ওঠে
স্বাধীনভাবে অটুট থাকায়;
ব্যতিক্রমদুষ্ট যখনই যে হয়
ঐ স্ব-কে ভাসিয়ে দিয়ে,
বিকৃতিতে তা’রাই চলে
স্বাধীনতার নামটি নিয়ে। ৪৯।
চলার পথে ধাপে-ধাপে
সত্তাটাকে ক’র্ষে নিয়ে,
ব্যক্তিত্বটাকে রাখ না স্বাধীন
নিষ্ঠানিপুণ চলন দিয়ে;
নয়তো যাবি অধঃপাতে
সংক্রমণে মরবে সব,
ব্যক্তি-মেরুদণ্ড ভেঙ্গে
জাহান্নমের হবে উদ্ভব। ৫০।
আমার কৃষ্টির সব অধ্যায়ের
সকল বিষয় জেনে,
ধৃতিপোষণায় কীই যে কেমন,
তেমনি সেটায় মেনে,
সত্তাপোষণ সৎ-দীপনায়
লাগালে সেটা কাজে,
ধৃতিচর্য্যা তখনই হয়
এড়িয়ে যা’-সব বাজে। ৫১।
কৃষ্টির ধৃতি-ধী যাহাদের
আচার-বিদ্যায় তীক্ষ্ণ যেমন,
বাস্তব সুবিনিয়োগে
ধী ও স্বভাব উছল তেমন। ৫২।
ভজনচর্য্যা নিষ্ঠারতি
কৃতি-দীপন তেষ্টা নিয়ে,
না চললে তোর কৃষ্টি কোথায়?
জীবনটা যে যাবেই ব’য়ে। ৫৩।
কৃষ্টিতপে ধৃতি জাগাও
চ্যানিপুণ সুচলনে,
ইষ্টনিষ্ঠায় অটুট হ’য়ে
উঠবে ফুটে সুবলনে। ৫৪।
প্রাণে প্রতিষ্ঠ থাকতে হ’লেই
সৎ-প্রতিষ্ঠ আগে হ’,
ব্যতিক্রমহীন সতে দাঁড়িয়ে
সত্তাকে তুই তেমনি ব’। ৫৫।
সৎ আচার্য্য, গঙ্গাজল
অন্নপূর্ণার ধান-
তিনেই লোকের চলন-ফেরন
তিনেই বাঁচে প্রাণ। ৫৬।
প্রণামের অর্থ কী?-
প্রবীণের চলন মাথায় রেখো
বাড়বে তা’তে ধী। ৫৭।
শ্রেয়োজনে রাখলে নতি
থাকলে তোমাতে সুপ্রবৃত্তি,
চিত্তে সেটা জাগিয়ে তুলে
সু-তে তোমার বাড়ায় রতি। ৫৮।
খাস্ নে কিন্তু এমন জিনিস
চলিস্ নে তুই এমন পথে,
কাজ করিস্ নে এমন কিন্তু
কৃষ্টি-সাধায় ব্যাঘাত যা’তে। ৫৯।
অমোঘ সুরে উদাম চলায়
মিটির-মিটির করছে যা’,
ঊর্জ্জী বেগে নে সেধে নে
জীবন-পোষায় লাগা তা’। ৬০।
ধৃতিচর্য্যা বৃদ্ধি আনে,
বৃদ্ধি চলে আরোর দিকে,
অভ্যস্ততা অভ্যাসে হয়
প্রবুদ্ধ করে জীবনটাকে। ৬১।
নিষ্ঠা মানেই লেগে থাকা,
শ্রদ্ধা মানে সত্তা-ধারণ,
নিষ্ঠা-শ্রদ্ধার আবেগ-গতি
সুসম্বোধের সুষ্ঠু কারণ। ৬২।
দীর্ণি’ তমোয় আলোককে আন্
যাক্ চ’লে যাক্ নিরেট আঁধার,
সার্থকতায় সবাই দাঁড়াক্
আলোক-দোলায় সকল ব্যাপার। ৬৩।
দেখে-শুনে ক’রে-বুঝে
মরণে প্রাণ সৃষ্টি কর্,
প্রাণন-সম্বেগ বৈধী চলায়
অমন ক’রে-পারিস্ ধর্। ৬৪।
ভিটামাটি বাড়ীর যেটা
পূর্ব্বপুরুষ করেছে বাস,
শ্রদ্ধাভরে রাখবি তা’রে
ছাড়িস্ নে তা’ গেলেও শ্বাস। ৬৫।
ভবন-মন্দির যেখানে তোর
কুলের আবাস যেইখানে,
তীর্থক্ষেত্র তোর যে সেরে
শ্রদ্ধা রাখিস্ সেই টানে। ৬৬।
যে-কুলেতে জন্ম তোমার
উদ্ভবও সেই উপাদানে,
তোমার স্ব-এর বিশেষত্ব-
সত্তারক্ষী সেই চলনে। ৬৭।
কুল-টা জানিস্ জীবনধারা
সৃষ্টি-স্থিতি নিয়ে সাথে,
যে-কুল থেকে উদ্ভাবনা
স্ব-এর উদ্ভব সেইটি হ’তে। ৬৮।
নষ্ট হ’লেও তোমার কিংবা
তোমার কুলের মর্য্যাদা,
অন্যের কুল-মর্য্যাদাটি
রক্ষা ক’রো সর্ব্বদা। ৬৯।
অন্যের কুল-মর্য্যাদা রক্ষায়
কৃতি-বিজ্ঞ হ’বি যেমন,
কুলবৈশিষ্ট্য বিশেষত্বে
সম্মানিত হবে তেমন। ৭০।
প্রেষ্ঠগৃহে থাকলে যেমন
প্রিয়-অনুগ চিত্ত থাকে,
চলায়-বলায়-করায় যেমনি
উচ্ছ্বসিত প্রিয়ই জাগে,
জীবনটাকে তেমনি ক’রে
প্রেয়-উচ্ছল ক’রে রাখা,
প্রিয়পন্থী হ’য়ে চ’লে
স্বাধীনতায় তেমনি থাকা। ৭১।
ভজনদুষ্টিই স্থৈর্য্য ভাঙ্গে
ভাঙ্গেই বুকের উৎস ধারা,
ব্রহ্মচর্য্য তাইতো সাধ্য
নিষ্ঠানিপুণ সুযোগ-দ্বারা। ৭২।
খণ্ড-টু্করো যা’ই না হোক
ধৃতিধারা রাখিস্ ঠিক্,
ব্যক্তি-পরিবার সবাই যেন
ধ’রে চলে এই নিরীখ। ৭৩।
ধৃতি-উদ্যম এমনি রাখিস্
ঐ সৌষ্ঠবে দিতে প্রাণ
ব্যত্যয়ী যা’ করবে নিরোধ-
তা’তে কিন্তু নাহি আন্। ৭৪।
শিখবি ওরে সবার কাছে
বৈশিষ্ট্যটি রেখে ঠিক,-
পারস্পরিক এই চলনে
ফুটবে জ্ঞানে সকল দিক্। ৭৫।
দেশের ভাষা ভুলে তোরা
আন্ ব্যবহার করবি কেন?
ঐতিহ্যটা বজায় রেখে
যত ইচ্ছা শিখিস্ যেন। ৭৬!
গুণ-অনুগ কুলের আচার
থাকবে যেথায় যেমনি,
নিষ্ঠা-ব্যবহার-খাদ্য-আচার
রাখবেই ধ’রে তেমনি। ৭৭।
নিষ্ঠাবিহীন আচার-ব্যাভার
কুলকে করে হীনতম,
বিপর্য্যয়ী যৌন-চলা
কুলের ধারা করে খতম। ৭৮।
সৃষ্টিগঠন জান্ আগে তোর
ঐ তুলনায় জান্ সকল,
সেই জানাটার বিনায়নে
ধৃতি-বিদ্যা কর্ কুশল। ৭৯।
উজ্জী-তেজা হৃদয় নিয়ে
নিষ্ঠানিপুণ উচ্ছলায়
চল্ ওরে তুই অসীম তেজে
সেবা রাগের মূর্ছনায়,
তৃপ্তি পাবি, শক্তি পাবি
ক্রমেই বেড়ে চলবে হৃদয়,
তোমার সঙ্গে পরিবেশের
ভাগ্যদেবীর হবে উদয়। ৮০।
উর্জ্জীনতি দীপ্ত প্রবীণ
সঙ্গতিশীল যতই দেশ,
জীবনবৃদ্ধির কৃষ্টি নিয়ে
দক্ষ চলার নাইকো শেষ। ৮১।
জীবন-বৃদ্ধি সিদ্ধি লভুক
অমর তালে ওঠ রে নেচে,
জীবনীয় তুই বুঝবি যেটা
সামঞ্জস্যে নিস্ রে বেছে। ৮২।
অন্তরেতে কৃতিধারা
তপনেশাতে হোক্ রে পাগল,
বৃত্তি-বাঁধন দে ভেঙ্গে দে-
স্বস্তি উঠুক ভেঙ্গে আগল। ৮৩।
ব্যতিক্রমকে এড়িয়ে ফেলে
অনুক্রমে আয় রে আয়,
যে ক্রমেতে জীবন বাড়ে
সেই ক্রমই তো প্রাণের আয়। ৮৪।
তৃপ্তি আসুক, দীপ্তি আসুক
শান্তি নিয়ে কৃতি-পায়ে,
জীবনীয় সুপ্তি আসুক
আশিস্-ধারার মলয় বায়ে। ৮৫।
কৃতি-পথে চল এগিয়ে
ধৃতি তোমার অটুট থাকুক,
সম্বর্দ্ধনী স্বস্তি-চালে
তোমায় সবাই সুখে বহুক। ৮৬।
অস্তিবৃদ্ধির পোষণ-রোলে
ধারণ-পালন-সম্বেগে,
ওঠ তো নেচে তাথৈ-তাথৈ
কৃতিদীপন সম্ভোগে। ৮৭।
ঊর্জ্জী বুকে ধৈর্য্য নিয়ে
দক্ষ-নেশায় কৃতি-মাতাল,
চল্ রে হ’য়ে সম্বোধী তুই
প্রবুদ্ধতায় হ’য়ে বিশাল। ৮৮।
কৃতিরাগে দীপ্ত ব্যাভার,
উর্জ্জীতেজা শ্রদ্ধা নিয়ে,
আগলে ধ’রে অর্থ-বিভায়
দাঁড়া ওরে হৃদয় দিয়ে। ৮৯।
ইষ্টনেশায় শিষ্ট থেকে
অনুশীলনে ক’র্ষে নিয়ে,
সার্থকতার সুসম্পদে
চল্ চ’লে চল্ জীবন বেয়ে। ৯০।
সাত্বত যা’ সিদ্ধতম
সেই দিকেতে ঝোঁক রাখিস্,
পূর্ব্বতনের সংস্কারের-
সিদ্ধ দাঁড়ায় পা ফেলিস্। ৯১।
প্রাচীনেতে পা রেখে তোর
নবীন যা’ তা’ হাতে আন্,
এই চলনে চলৎ থেকে
বৃদ্ধিতে হ’ সিদ্ধ-প্রাণ। ৯২।
অনুকম্পায় ইষ্টনিদেশ
যা’রাই করে ব্যতিক্রম,
তা’রাই জানিস্ যমের দালাল
শত্রু নাইকো তাদের সম;
ইষ্টনিষ্ঠা-প্রতিষ্ঠাটি
হৃদয় হ’তে নেয় কেড়ে,
নিদেশ-পালন-প্রবৃত্তিটি
যম-জীবনে দেয় ভ’রে;
কানে-কানে গোপন কথায়
দিয়ে বেড়ায় অসৎ-ঢেউ,
শয়তানেরই সেবক তা’রা
বুঝতে বাকী রয় কি কেউ?
তাই বলি রে অলল চলায়
এখনো তোরা বিরত হ’,
মাথায় নিয়ে ইষ্ট-বোঝা
জীবন চালা প্রত্যহ;
কথায় ফোটে কথার মালা
কান ছাড়া আর শোনে কেউ?
কৰ্ম্মে ফোটে কৃতী জীবন
ওঠেই যা’তে বৃদ্ধি-ঢেউ;
ইষ্টে যদি থাকেই নেশা
অসৎ-নিরোধ তর্পণায়,
এখনই ওঠ মাভৈঃ-রবে
জেগে জাগা সব জনায়;
হৃদয়টি তোর ওতলায়ে তোল
শ্রদ্ধাপূত অর্চ্চনায়,
মরণ-সাগর দে রে পাড়ি
সংস্থিত হ’ বর্দ্ধনায়,
ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা’য়
বুঝবি তা’কে অসৎ ব’লে,
তা’র নিরোধই অসৎ-নিরোধ
করাই ভাল ছলে-বলে;
নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ
অন্যের চলন-বলন বুঝে,
অসৎ যদি থাকে কোথাও
করিস্ নিরোধ বুঝে-সুঝে;
কেউটে সাপের বাচ্চা তোরা
কেঁচো হ’বি সে কী পাপ!
স্বর্গ-মর্ত্য-রসাতলে
ফুটুক রে তোর মাভৈঃ-দাপ;
আমার কথা শুনবি কি রে-
লাগবে ভাল এমন চলা?
যদি লাগে তৃপ্তি পাবে
মূর্খ ‘আমি’-র এমন বলা। ৯৩।
বজ্রতেজা নিষ্ঠা নিয়ে
উজ্জী রাগ-গৌরবে,
ত্বরিত দীপক বোধ-বিবেকের
শিব-সুন্দর সৌরভে,
নিখুঁত কৃষ্টির সমাহারে
ক্ষিপ্র কৃতি-দ্যোতনায়,
বিপদ-আপদ ব্যর্থ ক’রে
পারিস্, দাঁড়া, এগিয়ে আয়;
জীবন-মরণ মথন ক’রে
অমৃতেরই তপস্যায়,
দুঃখ-আঘাত-ব্যাঘাত সবই
ব্যর্থ ক’রে চ’লে আয়;
সার্থকতা চাই-ই যে তোর
সম্বর্দ্ধনার ব্যাপ্তি নিয়ে,
ইষ্ট-নেশার সঙ্গতিতে
চল্ চ’লে চল্, হৃদয় দিয়ে;
কৰ্ম্মরণের নাচন-পায়ে
ডগমগ হৃদয়-তেজে,
দৃষ্টিও তোর জ্ব’লে উঠুক
সাত্বত সুর উঠুক বেজে। ৯৪।
10