সাধনা
অনুরাগে করলে নাম
আপনিই আসে প্রাণায়াম। ১।
অনুরাগ যদি নাই থাকে তোর
হিতী বুদ্ধি নিয়ে,
ধ্যান-ধারণা লাখ করিস্ না
ছাই ঢালা তোর ঘিয়ে। ২।
নাম আর ধ্যানে উচ্চ চিন্তা
করণ-কারণ যেমন,
জীব-জীবনের গতিমুক্তি
হওয়া-পাওয়াও তেমন। ৩।
নাম-নিরতি ভালো যেই
বাড়লো মনের ডাবাজি,
বৃত্তিরোচক যা’ পেল তা’য়
অমনি সোজা হ’ল রাজী। ৪।
সৃষ্টিধারা উল্টে নিয়ে
স্বামীর সাথে মিল ক’রে,
অর্থ ভেবে ঐ জ’পে যা’
সদ্গুরুতে ধ্যান ধ’রে। ৫।
নামীর প্রতি আনতি রেখে
করিস্ নাম তুই মনে-মনে
সঙ্গে-সঙ্গে করিস্ চিন্তা-
নামীর যা’ সব আছে গুণে। ৬।
নামীর গুণকে চিন্তা-চলায়
অনুশীলনে ফুটিয়ে তুলিস্,
তোর স্বভাবে নামীর যা’ গুণ
উৎসর্জ্জনায় জাগিয়ে রাখিস্;
সিদ্ধ হ’বি অমনি ক’রে
মত্ত কৃতি-ভক্তি-ভাবে
চিন্তা-চলায় অধিষ্ঠানে-
যা’তে সে-সব নিটোল র’বে। ৭।
নামের ধুয়োয় শুধু যদি
অবিশ্রান্ত করিস্ নাম,
নামীর মহিমা বরবাদ ক’রে,-
পূরবে কি তোর তাপস-কাম? ৮।
নাম কর
আর মনন কর
ইষ্টের যত গুণাবলী,
ভাবে-কাজে মকস কর-
গুণে-জ্ঞানে হবে বলী। ৯।
নামের মতো নাইকো জিনিস,
শিষ্টাচারে করলে নাম,
নাম ও নামী আর গুণব্যঞ্জনা
সাধলে সিদ্ধি হয় না বাম। ১০।
নাম করলেই হয় নাকো সব
নতি-প্রণিধান না থাকে যদি,
প্রণিধানই নিষ্ঠা জাগায়
প্রণতি কাজে দেয় সঙ্গতি। ১১।
দীক্ষা তবে কেমন?
অনুশীলনে প্রাজ্ঞ হ’য়ে
দক্ষতা যেমন। ১২।
আচার্য্যনিষ্ঠ কে?
স্বর্গ-নরক তুচ্ছ ক’রে
সেবাপটু যে। ১৩।
যোগের ভূমি কী?
ইষ্টনিষ্ঠায় এমনি নিনড়-
ব্রহ্মত্বটা হাতে দিলেও
তা’কেও বলে ছি। ১৪।
দীক্ষা সেধে দক্ষ হ’ তুই
দীর্ণ যা’ সব দূর ক’রে
ধৃতি সেধে সত্তাটাকে
স্বস্তি পথে রাখ ধ’রে। ১৫।
কৃতিস্রোতা নদীর মতন
তত্তরে হ’য়ে চল্ ওরে!
তরতরানি সবে ঢুকে
ঊর্জ্জে’ উঠুক সব ধীরে। ১৬।
সন্দেহ যা’ ভাসিয়ে দিয়ে
গুরুর কাছে আয়,
নিদেশ-পালন চর্য্যা-সেবায়
উছল কর তাঁয়। ১৭।
যুক্ত হোস্ তুই গুরুর সাথে
তপঃক্রিয়-চর্য্যা নিয়ে,
সেই যোগেতে সার্থকতায়
উঠিস্ স্বতঃসিদ্ধ হ’য়ে। ১৮।
যোগ মানেই তো ইষ্টেতে যোগ
ধ্যান মানে তাঁর নিদেশ ধ্যান,
নিদেশগুলির কৃতিচর্য্যায়
নিষ্পাদনে আসেই জ্ঞান। ১৯।
যোগ মানেই তো ইষ্টেতে যোগ
নিদেশপালী কৃতিদীপনায়,
নিদেশ-অনুশীলন সার্থকতায়
যেমন যোগে বোধ জন্মায়। ২০।
বুদ্ধ হয় তো যোগ-তপনায়
সুবিন্যাসী কৃতির জ্ঞানে,
যা’র ফলে সে হয় ফলবান্
সার্থকতায় বোধির দানে। ২১।
ব্যক্তিত্বটা অভিষিক্ত
প্রীতি-যোগেই হয়,
ইষ্টচলন-নিষ্ঠা আনে
ভর-জীবনে জয়। ২২।
কৰ্ম্মযোগী না হ’লে তুই
জ্ঞানযোগ তোর র’বে কোথায়?
জ্ঞান-বিজ্ঞান কর্ম্মেরই দান,
স্বর্গটাকে মর্ত্যে নামায়। ২৩।
সমত্ব দেখাই যোগচর্য্যা
যুক্তি বিনিয়ে ধরতে হয়,
সমত্বটা না জানলে কি
বাস্তবতা দেখা হয়? ২৪।
সব যোগেরই প্রথম প্রধান
ভক্তিযোগীর সামের গান,
ভজন যা’তে উচে ওঠে-
কৃতিই আনে যাহার ত্রাণ। ২৫।
দীক্ষা বাড়ায় দক্ষতাকে
নিষ্ঠা যেমন যা’র,
মন্ত্র হ’ল তপস্যার তুক
সাধনা যেমন তা’র। ২৬।
নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি তোমার
একনিষ্ঠ ক’রে তোল,
সঙ্গতিশীল তৎপরতায়
তা’তেই তুমি হও উচ্ছল। ২৭।
বোধ-বিন্যাস সব যা’-কিছুর
নিটোল নিষ্ঠায় বিনিয়ে নিস্,
যেথায় যেমন করতে হবে
সেথায়ও তুই তেমনি করিস্। ২৮।
অনুচলন আর অনুসেবনে
ভজনদীপ্ত নিষ্ঠা যা’র,
প্রাণন-বিকাশ ইষ্টমুখী
বুঝে রাখিস্ নেহাত তা’র। ২৯।
ইষ্টে যা’দের জীবন ন্যস্ত
চর্য্যা-বিশাল বুকটি নিয়ে,
সন্ন্যাসী যে সেই রে আসল
জ্ঞানকে সাধে মত্ত হ’য়ে। ৩০।
ইষ্টনিদেশ চলার সময়
তোলাপাড়া মনে করিস্,
সুবিধা পেলে যেটা যখন
তখন কাজে মূর্ত্ত করিস্। ৩১।
বিদ্যমানতায় সমীচীন নেয়
কর্মে ভাবে বুঝে-সুঝে-
সন্ন্যাসী তো সেই রে আসল,
রাখে না জ্ঞান ফাঁকায় বুঝে। ৩২।
অদল-বদল হো’ক্ না যত
ইষ্টে অটুট থাকবি নেহাত,
ইষ্টনিষ্ঠায় ধরলে ভাঙ্গন
তুই যে হ’বি তোরই বেহাত। ৩৩।
ইষ্টনেশার প্রদীপ জ্বালি’
জীবনটাতে রেখে আলো,
ধী-চক্ষুতে দেখে-শুনে
শুভ যা’ হয় তা’তে চ’লো। ৩৪।
বৃদ্ধ হ’য়েও থাকবি যুবা
অটুট থেকে জীবন নিয়ে,
অনন্তেরই সলিল বেয়ে
জীবন-সুধা সবে বিলিয়ে। ৩৫।
জীবনটা তো কোলাহলই
হলাহল তো পেছন ধায়,
কুড়িয়ে নে তুই অমর চলন
চল্ ভেসে চল মলয় বায়। ৩৬।
স্তবস্তুতি ও গুণকীর্ত্তন
যেমনই যাঁ’র করিস্,
হাতে-কলমে অভ্যাস ক’রে
সেগুলিকে তুই ধরিস্;
বুঝে-সুঝে ধীইয়ে নিয়ে
তেমনি ক’রে চলতে থাক,
খোঁজ-খবরে উদ্যম নিয়ে
নিষ্পন্নতায় অটুট রাখ। ৩৭।
হাতে-কলমে অভ্যাস ছাড়া
স্তবস্তুতির কী দাম?
অভ্যাসে না আয়ত্তে হ’লে
তা’ পুরে কি মনস্কাম? ৩৮।
জীবন তো চায় জীবনীয় যা’
খরদ্যুতির সোহাগভরে,
এই জীবনকে বেঁধে রাখ তুই
ধৃতিকুশল কৰ্ম্মডোরে। ৩৯।
জীবন তো চায় অমৃত লাভ
পারবি নাকি তা’রে দিতে,
তপশ্চর্য্যায় অমৃত এনে
সত্তা-সলীল সংস্থিতিতে? ৪০।
একনিষ্ঠ আগ্রহ আর
অনুশীলনী তৎপরতা,
কুশল-কৌশলী অনুচলন
করেই বরণ দক্ষতা। ৪১।
সাধুসঙ্গ পারিস্ করিস্-
ইষ্টনেশা যদি না ভাঙ্গে,
নয়তো কঠোর পাল্লা হাওয়ায়
উঠবি গিয়ে কোন্ সে টোঙ্গে। ৪২।
ইষ্টনিষ্ঠায় তেজাল নেশা
যা’র বুকেতেই ফুটে রয়,
বোধ-বিচারে জ্ঞান-দীপনা
হাতে-কলমে তা’রই হয়। ৪৩।
অটুট-উছল ইষ্টনিষ্ঠায়
যা’রাই তাঁ’তে সংস্থ রয়,
ইষ্টচর্য্যায় যা সমীচীন
দেখে-বুঝে ক’রেই যায়। ৪৪।
ইষ্টনেশার দড়ি ধ’রে
ডুব দিয়ে চল্ অতল-তলে,
অমর রতন সংগ্রহ কর্
সত্তা দুলুক স্বস্তি-দোলে। ৪৫।
ইষ্ট-আচার্য্য পরম শিক্ষক
জীবনধৃতি সেই তো তোর,
হাবড়-জাবড় কুড়িয়ে কেবল
ভাঙ্গিস্ নে তোর ধৃতির ডোর। ৪৬।
নিষ্ঠা, ভক্তি, অনুচর্য্যা,
আলোচনা, দর্শন, জ্ঞান,-
জীবনের তো ঐ ঐশ্বর্য্য,
সম্বর্দ্ধনাই জীবন-ধ্যান। ৪৭।
শ্রদ্ধার আসনে নিষ্ঠা-আলিম্পনে
ইষ্ট স্থাপিত ক’রে,
কৃতি-তপা তুই, নিখুঁত নিবেশে-
হ’য়ে চল্ তাঁ’রে ধ’রে। ৪৮।
ইষ্ট তোমার দাঁড়িয়ে আছেন
জীবনভূমির পারে--ওপারে,
আপন ক’রে নে তাঁ’রে তুই
কৰ্ম্ম-আচার-ব্যবহারে। ৪৯।
মূর্ত্তি নিয়ে থাকলে যদি
স্ফূর্ত্ত না হয় হৃদয়-রাগ,
মাটির গড়া সে মূর্তিটি
জাগায় কি তোর জীবন-যাগ? ৫০।
ইষ্টনিষ্ঠায় আসন বেঁধে
ঊর্জ্জী আবেগ নিয়ে যা’রা,
পূজাবিভোর দীপ্ত পরাণ
সাধুতপা প্রায়ই তা’রা। ৫১।
ইষ্টনিদেশ যা’ই পাও না
দেখে-বুঝে সকল দিক্,
ঐ নিদেশের সাথে মিলিয়ে
ফলিয়ে তুলো কৰ্ম্মে ঠিক্। ৫২।
নিষ্ঠাচারে শিষ্ট হ’য়ে
অভ্যস্ত হ’বি যেমনতর,
স্বতঃশিষ্ট প্রতিফলন
হবেও তোমার তেমনতর। ৫৩।
নিষ্ঠা এঁটে বসবে যতই
ভাববৃত্তির দ্যোতন নিয়ে,
ছুটবে আঁধার, পাবি আলোক,
তমসটাকে বিদায় দিয়ে। ৫৪।
সিদ্ধ হওয়া মানেই কিন্তু
সক্রিয়তায় বিদ্ধ হওয়া,
যা’র ফলেতে চরিত্রটা
অভ্যাসেতে যায়ই পাওয়া। ৫৫।
গুণবিভূতি ব্যাপ্ত যাঁহার
প্রীতিভরা দীপন-তেজে,
অনুশীলনে আয়ত্ত ক’রে
সার্থক হ’ না তাঁ’রে ভ’জে। ৫৬।
রূপ না দেখে গুণের চিন্তা
হয় কি কোন কালে?
রূপেরই সাথে গুণচিন্তন
ধ্যান তো তা’কেই বলে। ৫৭।
রূপের মাঝে গুণের বিকাশ
গুণের রূপটি সেই,
কৃতিযোগে সেধে নেবার
ও ছাড়া পথ নেই। ৫৮।
গুণান্বিত হ’ তুই আগে
কৃষ্টিপথে তপাচারে,
সত্তাতে তা’ উঠুক জেগে
গুণান্বয়ে তোর আধারে। ৫৯।
ঈশ্বরীয় গুণ যেখানে
বিভূতিতে উল্লে ওঠে,
তেমনতরই কৃতি নিয়ে
ঈশ্বরেরই মূর্ত্তি ফোটে। ৬০।
উদ্বোধনী উন্মাদনায়
ভক্তি-প্রীতি উথলে উঠে
কথাবার্ত্তা করণ-কারণ-
যা’তে সে-সব থাকে ফুটে। ৬১।
ভাবের ভজন ছাড়লি যখন
অভাব এলো সেইক্ষণে,
মঞ্জুরিত কেন্দ্রিকতায়
শান্তি কা’রো রয় মনে? ৬২।
ভজন আনে অনুশীলন
অনুশীলনে অধিকৃতি,
এমনি ক’রেই সেধে-সুধে
হয়ই সার্থক জীবন-স্থিতি। ৬৩।
দক্ষ-নিপুণ ত্বরিত কৰ্ম্ম
সমীচীন সুন্দর কৃতি-দীপনা,
নাই যদি হয়, লাখ বিভূতি
সত্ত্বেও হবে তেল-ম্রক্ষণা। ৬৪।
ব্যক্তিত্ব তোর কৃতি-নেশায়
উঠলো যেমন মেতে,
কর্ষণ, দর্শন, অনুভূতি
তেমনি উঠলো চেতে। ৬৫।
কোথায় এলি, কোথায় যাবি-
এ সব ভেবে লাভ কী তোর?
শ্রেয়চর্য্যা চল্ ক’রে তুই
থাকুক জীবন মত্ত-ভোর। ৬৬।
প্রিয়ের চাওয়ায় চল যদি
তাঁ’রই চাওয়ায় বল,
তাঁ’র চাহিদায় কর তুমি
স্বার্থে তাঁ’র অটল;
ভাবে, বোধে, ধরায়, করায়
থেকে অজচ্ছল,
চর্য্যামুখর এমন চলায়
হ’বিই তো উজ্জ্বল;
সব যা’-কিছু তাঁ’রই চাওয়ায়
তাঁ’কে পাওয়াই সব,
এমন চাওয়া-চলায় তোমার
শুভই সম্ভব। ৬৭।
ভগবানের ধার ধারিস কি
চলিস্ কি তাঁ’র চাহিদায়?
ঠ্যাঁসের কথায় সে কি ভোলে?
বাঁচতে হয় তো তাঁ’র কৃপায়। ৬৮।
ভজন প্রভযুক্ত যে-জন
সেবা-চৰ্য্যা অনুরাগে,
মূর্ত্তপ্রতীক তা’র হৃদয়ে
ভগবান তো নিত্য জাগে। ৬৯।
নিষ্ঠা-সেবার কৃতি-তপে
উন্নতি তোর হবে,
ঐশ্বর্য্য সব বন্দনায় তোর
সজাগ হ’য়ে র’বে। ৭০।
জপ করবি অন্তরে তুই
রাগ-আনতি নিয়ে,
কৃতি-দীপন গুণের স্তবন
ব্যক্তিত্বটির ক’রে স্ফুরণ
সত্তাকে তোর সিদ্ধিপথে
তুলবে উপচিয়ে। ৭১।
ইষ্টপ্রীতিমুগ্ধ যে-জন
সেই তো যোগী বটে,
গুণ-গরিমার চিন্তা-সেবায়
দীপ্ত স্মৃতি ঘটে। ৭২।
মুগ্ধ যোগেই ব্যক্তিত্বটা
ফুটন্ত হ’য়ে ওঠে,
বোধ-কথায় কৃতি-চলায়
ধ্যেয়র দীপ্তি ফোটে। ৭৩।
ঠিক চলিস তুই তেমন তালে
প্রেষ্ঠ যা’তে র’ন খুশি,
তাঁ’র চাহিদায় সব ফেলে দে
কী লাভ হবে বৃত্তি পুষি’? ৭৪।
পাছটানে যে মুহ্যমান,
চলার পথে নাইকো ত্রাণ। ৭৫।
কথায় অটল, কাজে টলে,
যুক্ত সে নয়, সে টলমলে। ৭৬।
অমরত্ব-স্বাস্থ্য-দীপ্তি
যা’তে সবার জীবন আসে,
তপশ্চর্য্যায় জান তা’কে
অমৃতত্ব যা’র বিকাশে। ৭৭।
তপের পথে চলবি না তুই
হাতে-কলমে করবি না,
তপের ধাপ্পায় থাকলে নিষ্ঠা
‘না’ ছাড়া কিছু পাবি না। ৭৮।
তপেই জনম, তপেই জীবন
তপেই বিধান-বিধৃতি,
তপশ্চর্য্যায় হও আগুয়ান
অমৃতত্বে কর স্থিতি। ৭৯।
নিপুণ-নেশার উৎসারণায়
তপ-নিরতি নিয়ে চল্,
আগ্রহটা অটুট রাখিস
শ্রদ্ধাটাকে ক’রে সবল। ৮০।
অধিগম্য যা’-কিছু তোর
তপশ্চর্য্যার দৃষ্টিতে,
দেখে-শুনে ক’রে চলবি,
সার্থকতা পাবি তা’তে। ৮১।
তপ মানেই তো তপশ্চরণ
যা’কে বলে সাধনা,
সুতপা তুই না হ’লে কি
সার্থক হবে তপনা? ৮২।
তপ মানেই তো তাতিয়ে রাখা
অভ্যাসটাকে আদর্শেতে,
আদর্শচর্য্যী গুণানুশীলনে
স্থাপিত করা স্বসত্তাতে। ৮৩।
শুভসুন্দর প্রীতিদীপন
নিষ্ঠায় অটল থেকে,
কাজে তা’রে ফলিয়ে তুলিস্
শ্রদ্ধা অটুট রেখে। ৮৪।
শুভ-সুন্দর চিন্তা দিয়ে
চিত্ত রঙিল ক’রে,
ভাবের আবেগ বাড়িয়ে তুলিস্
কর্ম্মে-ব্যবহারে। ৮৫।
জীবন পেলি মর্ত্ত্যে এলি
পিতামাতার নন্দনায়,
সুস্থি-শুভর বিশদ চর্য্যায়
শৌর্য্য আনিস্ সাধনায়। ৮৬।
ভাব-আবেগে ধারণ ক’রে
জ্ঞানন-চিন্তায় রাখিস্ টান,
চিন্তা-চয়ন ধ্যানের ধরণ
তাইতে বলে তা’কে ধেয়ান। ৮৭।
ক্ষিপ্র জোগান না দিস্ যদি
আবেগ-জোয়ার ভাঁটায় যাবে,
ধরার নেশা ভাঁটিয়ে গিয়ে
উদ্যমও তোর শুকিয়ে যাবে। ৮৮।
যা’ই কিছু তুই করিস্ না ক্যান্
ইষ্টার্থেতে লক্ষ্য রাখিস,
ভাব-বোধনা রঙিল হ’য়ে
ঐ পথে তুই চলিস্-ফিরিস্। ৮৯।
অজ্ঞতাকেই তম জানিস্,
বিজ্ঞতাকে আলো ধ’রে
কৃতি-পথে চল্ এগিয়ে
ইন্দ্রিয়দের সামাল ক’রে। ৯০।
বিধির পথে চ’লে-চ’লে
বৃদ্ধিটাকে বাড়িয়ে তোল,
সিদ্ধ হ’য়ে সৎপথে তুই
চুকিয়ে দে সব ডামাডোল। ৯১।
আছাড় খেয়েই হাঁটতে হবে
উঠতে হবে উদ্যমে,
এমনি অটুট চলায় জীবন
হবেই জয়ী সংগ্রামে। ৯২।
সাধবি যা’ তুই সাধলি না তা’
যাচ্ছে জীবন ব’য়ে,
উন্নতি তোর অবশ হ’লো
জনম-মরণ স’য়ে। ৯৩।
অনুশীলনে ইষ্টনিদেশ
স্বভাবসিদ্ধ নে ক’রে,
অটুট চলায় উদাম হ’য়ে
নিষ্ঠাকে তুই রাখ ধ’রে। ৯৪।
নিদেশ ব’য়ে চললি না তুই
অনুশীলন তো করলি না,
চর্য্যাক্রিয়া মর্জ্জিহারা
সুফল তা’তে ফলল না। ৯৫।
ইষ্টার্থ মনন কর
বিবেচনার সূত্র ধ’রে,
শুভ যা’ তা’ মূর্ত্ত কর
আগ্রহশীল কৃতিভরে,
ধ্যান-পূজা সেই তো আসল
কুশল-শিল্পী-আবেগ নিয়ে,
নিষ্পন্নতায় দক্ষ হ’য়ে
ইষ্টভরণ বেড়াও ব’য়ে। ৯৬।
আচরণ আর অনুশীলন
কৃতিকুশল তৎপরতায়,
মন্ত্র তোমার সিদ্ধ হ’লে
সার্থকতা তবেই তো পায়। ৯৭।
ভক্তিভরে সেবার রাগে
নিদেশ পালন করবি যেমন,
ভজন তোমার উছল হ’য়ে
আগলে ধরবে জানিস্ তেমন। ৯৮।
হাতে-কলমে না-ভজলে কেউ
ভগবানকে পায় কি?
সেবানিপুণ কৰ্ম্মে ফাঁকি
তেমন ভক্তি হয় মেকী। ৯৯।
ভজনরূপী ভগবানের
স্বতঃসম্বেগ ফুটলে তো’তে,
ধরা-করায় উচ্ছলতায়
করবি যেমন, পারবি হ’তে। ১০০।
ভগবানকে খুঁজতে গেলে
পাবি না মূর্ত্ত কোনখানে,
ভক্তজনে মূর্ত্ত তিনি-
ধৃতিচর্য্যী ভজনাসনে। ১০১।
বৈকুণ্ঠে শুধু র’ন না বিষ্ণু
যোগী-হৃদয়েও তেমনতর,
ভজনদীপ্ত ধৃতিচর্য্যী
ভক্ত-বুকেই থাকেন দড়। ১০২।
লাখ দেবতায় কর না পূজা,
সঙ্গতিশীল তৎপরতায়
মহিমাসিদ্ধ বিভূতি না হ’লে
ভজন-পূজন যাবে বৃথায়। ১০৩।
নারায়ণকে উপেক্ষা ক’রে
লক্ষ্মীপূজার লাখ বাহানা,
লক্ষ্মীকে কি বাঁধতে পারে?
যম-জাঙ্গাল তা’য় দেয়ই হানা। ১০৪।
বাগদেবীকে করিস্ পূজা
বোধ-বিবেককে জাগিয়ে নিতে,
কৃতিদেবীর করিস্ পূজা
অনুশীলনে মূর্ত্তি দিতে। ১০৫।
উচ্চ যা’ তা’ নতির সাথে
বিহিত চর্যা ক’রে,
উন্নতি তোর করতে হবে
উন্নতকে ধ’রে। ১০৬।
উজ্জীতেজা শ্রদ্ধা যদিই
তৃপ্ত হ’য়ে মহিমায়,
নিষ্ঠানিপুণ দীপ্ত রাগে
কৃতি-বিভব নাই-ই হয়,
সার্থকতা কোথায় রে তোর
পাবি কোথায় তৃপ্তি জ্ঞানে,
অলস নেশায় থাকবি প’ড়ে
স্বস্তি কি আর পাবি প্রাণে? ১০৭।
ভাবের ঘুঘু হওয়াই কিন্তু
ব্রহ্মানন্দ নয়,
বোধ ও ক্রিয়ার পরিচর্য্যায়
ব্রহ্মনন্দ হয়। ১০৮।
জপ-ধ্যান-পূজা যা’ই করিস্ না
যেমন যা’ হয় কর,
অনুশীলন-অভ্যাস না করলে তা’র
পাবি কি তা’র বর? ১০৯।
কৃতিরাগে ডগমগ
নিষ্ঠারাতুল নন্দনায়,
থাকিস্ সদাই ইষ্টপ্রীতির
অনুশীলনী বন্দনায়। ১১০।
বিভুকৃপা ততই পাবি
কৃতি-মাতাল থাকি যত,
চর্য্যারত আলিঙ্গনে
জীবনটাকে রাখলে রত;
অমৃতেরই ঐ তো পথ
সেই পথেরই যাত্রী হও,
ক’রে পেয়ে কৃপার আলোয়
বিভু-বিভবে অবাধ রও। ১১১।
কাজ বেড়ে যায় ব্যাপৃতির কোলে
তা’ও ভালো তা’ও ভালো,
সাত্বত যা’ চর্যায় তা’র
বোধে যেন ফোটে আলো। ১১২।
অস্তিত্বে যা’র প্রীতিপূজা
সব অস্তিত্বের পূজারী সে,
পূজা-আচার সেই তো জানে
সেই তো বাতায় তা’র দিশে। ১১৩।
অস্তিত্বতে অটুট থাকা
স্বতঃ-চাহিদা জীবনটার,
সুখতৃপ্তি নিয়ে সে চায়
আত্মপ্রসাদ বর্দ্ধনার,-
প্রতিষ্ঠাতে আসীন থেকে
পারস্পরিক পরিচর্য্যায়,
স্মৃতিবাহী চেতনা নিয়ে
আত্মোন্নতির নন্দনায়। ১১৪।
সত্তাতে তোর যা’-কিছু রয়
দান ক’রে দে সব,
প্রেষ্ঠ তোমার সব রকমে
থাক্ হ’য়ে বিভব;
সুখে-দুঃখে তবেই শান্তি
ভ্রান্তিও কাটতে থাকবে,
সৎ-চাতুর্য্য আসবে হেঁটে
তবে তো চলতে পারবে। ১১৫।
ইষ্টনিদেশ চল্ পেলে তুই
দেখ না ক্রমে কীই যে হয়,
বোধের চোখটি সজাগ রেখে
নিষ্পাদনে আন্ রে জয়,
দীপন-সুরে উর্জ্জী নেশায়
দক্ষ-নিপুণ ক্ষিপ্রতায়
নিয়ন্ত্রণী নিষ্পাদনা
গাহুক সার্থকতার জয়। ১১৬।
নাম-অনুরাগ শ্রদ্ধা বাড়ায়,
শ্রদ্ধা আনে ইষ্টনেশা,
ইষ্টনেশায় আসেই জেনো
নিদেশপালী রুচির তৃষা,
ঐ রুচি করে অনুশীলন,
অনুশীলনে কৃষ্টি জাগে,
কৃষ্টি বাড়ায় তপ-চলন
সমীচীনতার অনুরাগে,
আবেগনিষ্ঠ চর্য্যা নিয়ে
সমীচীনে সম্যক্ করা,
ভজনদীপ্ত হৃদয়ে অমনি
তপ-বিভূতি দেয়ই ধরা। ১১৭।
ঈশ্বরীয় গুণ যেখানে
ধারণ-পালন-পোষণ-রাগে,
বিভূতিতে ব্যক্ত হ’য়ে
ভক্তজনার সত্তায় জাগে,
যেমন যুগে যেমনতর
কৃতি-যাগের প্রয়োজন,
অসৎ-নিরোধ তপটি নিয়ে
তা’তেই তিনি মগ্ন র’ন;
চলন-বলন কেমনতর
ধরণ-ধারণ তাঁ’র যে কী?
প্রয়োজনের মতন করেন,
তেমনতরই চলে ধী। ১১৮।
যাঁ’র বরণে বৃদ্ধিমুখর
চলছ হ’য়ে নিত্যদিন,
খাইয়ে-পুষে না চললে তা’য়
চৌর্য্য-বৃত্তির নও অধীন?
তাঁ’রই নিদেশ বহন কর
শরীর, মন আর হৃদয় নিয়ে,
এক লহমাও ন’ড়ো নাকো
সেবা কর তাঁয় চিত্ত দিয়ে;
তাঁ’রই পথে চলতে থাক
তাঁ’রই দিকে রেখে মুখ,
চল-বল তাঁ’র চলনে
অমনি ক’রেই ভুঞ্জ সুখ। ১১৯।
10