[ P - 22 ] 🎗️ হকসাহেব প্রশ্ন করলেন পুনর্জন্ম জিনিসটা কি আছে ? 🎗️ হকসাহেব — মুসলমানের মধ্যে যদি এমন সিদ্ধ - পুরুষ না পাই , তিনি যদি অন্য সম্প্রদায়ের হন , তাহ'লে তাঁকে কি গ্রহণ করা চলে ? 🎗️দীক্ষা এক জিনিস আর ধর্মান্তর - গ্রহণ অন্য জিনিস....

 

📚 আলোচনা প্রসঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ড,

 ⭐ হকসাহেব প্রশ্ন করলেন পুনর্জন্ম জিনিসটা কি আছে ? 

 ⭐ হকসাহেব — মুসলমানের মধ্যে যদি এমন সিদ্ধ - পুরুষ না পাই , তিনি যদি অন্য সম্প্রদায়ের হন , তাহ'লে তাঁকে কি গ্রহণ করা চলে ?

 ⭐দীক্ষা এক জিনিস আর ধর্মান্তর - গ্রহণ অন্য জিনিস ।

 ⭐কোরাণের মতে রসুল তাে শেষ নবী ? 

[P 220-224]

        স্তব্ধতা ভঙ্গ করে হকসাহেব প্রশ্ন করলেন পুনর্জন্ম জিনিসটা কি আছে ?

       শ্রীশ্রীঠাকুর — আপনারা রােজ - কিয়ামৎ যেটাকে কন , আমার মনে হয় , সেটা পুনর্জন্মেরই নামান্তর । মানুষ যেমনতর ভাব নিয়ে যায় , তেমনতর ভাব নিয়ে স্ত্রী - পুরুষ যেখানে যখন মিলিত হয় , সেখানে তখন তার পুনরাগমনের সম্ভাবনা হয় । পুনরায় শরীরে কায়াম হওয়ার এই যে রীতি , একেই বােধ হয় বলা হয়েছে রোজ - কিয়ামৎ । আমি অবশ্য কোরাণ - টোরাণ পড়িনি , মুখ্যু মানুষ , কী বলতি কী কই। তবে আমার যেমন মাথায় আসে তা এই । শুনেছি পুনর্জন্মের কথা কোরাণেও আছে ।

        হকসাহেব — শুনতে পাই আপনি নাকি নুর ও আওয়াজ অনুভব করেছেন , আমাদের পক্ষেও কি তা অনুভব করা সম্ভব ? আর , ঐ অনুভূতিতে লাভ কী হয় ?

       শ্রীশ্রীঠাকুর — লাভ - লােকসানের ধারণা নিয়ে আমি কোনদিন কিছু করিনি । নাম করতে খুব ভালই লাগতাে , আর আপন আনন্দে নাম করতাম । নাম না করেই যেন পারি না । কী পাব , কী হবে এসব কোন ভাবনা ছিল না । কিন্তু একটা আকুল নেশা ছিল । গভীরে , আরাে গভীরে চলে যেতাম । এই অনুশীলনের পথে কত কী - ই দেখা যায় , শােনা যায় , সে এক অপরূপ জগৎ । তবে অনুরাগই এর মূল বস্তু । অনুরাগযুক্ত অনুশীলনে আমাদের মস্তিষ্ককোষ গুলির মধ্যে যতই দহনতাপের সৃষ্টি হয় , ততই শব্দ ও আলাে অনুভব করা যায় , এর মধ্যদিয়ে আমাদের সাড়াশীলতা ও গ্রহণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । জগৎ - এর যা’-কীছুকে তখন তীক্ষ্মভাবে বােধ করা যায় । এই বােধগুলি যতই আবার ইষ্টসুত্রে গ্রথিত ও সমাহিত হয়ে ওঠে , ততই সমাহারী প্রজ্ঞার আবির্ভাব হয় । আমি যা - কিছু বলি তা কিন্তু আমার প্রত্যক্ষ বোধের উপর দাঁড়িয়ে । আমি কোন বই - টই পড়িনি । কিন্তু নিজের জীবনে যা অনুভব করেছি , সেই দাঁড়ায় ফেলে সব - কিছুর মূল স্পন্দনটা যেন ঠাহর করতে পারি ।

       আপনি করুন , আপনারও হবে । আমান দেখেছেন , আমান অনুভব করেছেন , রসুল - সেবী , আল্লা - অনুরক্ত এমন একজন পুরুষকে যদি পান তার শরণাপন্ন হন , তাঁকে কেন্দ্র করে রসুল আপনার জীবনে জীবন্ত হয়ে উঠবেন । আপনাদেরও তাে শুনেছি , মারেফতী সাধনার কথা আছে । 

      হকসাহেব — মুসলমানের মধ্যে যদি এমন সিদ্ধ - পুরুষ না পাই , তিনি যদি অন্য সম্প্রদায়ের হন , তাহ'লে তাঁকে কি গ্রহণ করা চলে ?

      শ্রীশ্রীঠাকুর — তিনি যে - সম্প্রদায়ের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন , তার যদি রসুলে অনুরাগ থাকে এবং রসুলের প্রতি আপনার অনুরাগকে সঞ্জীবিত করে তুলতে পারেন , আপনার ভাবে তিনি যদি ব্যাঘাত না করেন , তাহ'লে আপনার অসুবিধা কোথায় ? দীক্ষা এক জিনিস আর ধর্মান্তর - গ্রহণ অন্য জিনিস । ধৰ্ম্মজীবন যাপন করতে যেয়ে পিতৃপুরুষকে ও পিতৃকৃষ্টিকে যদি অস্বীকার করতে হয় , তবে সে তো এক রকমের বিশ্বাসঘাতকতা । শুনেছি , বিদায় - হজে রসুল এর বিরুদ্ধে তীব্রভাবে বলেছেন ।

        হকসাহেব — কোরাণের মতে রসুল তাে শেষ নবী ? 

        শ্রীশ্রীঠাকুর — তদানীন্তন কালের মত তাে তিনি সর্বশেষ নবী , সে বিষয়ে আর সন্দেহ কি ? হাদীসে তাে শুনেছি , পরবর্তীকে মানার কথা বিশেষভাবে লেখা আছে , এমনকি তিনি যদি হাবসী ক্রীতদাসও হন । আবার , হাদীসে নাকি এই ধরণের কথা আছে , “ প্রেরিত এসেছিলেন , প্রেরিত আসবেন , প্রেরিত জয়যুক্ত হবেন — ইহাই ঈশ্বরের নিয়ম ও বিধি । কোরণে এমনতর কথা আছে যে , ঈশ্বরের নিয়ম ও নীতির পরিবর্তন হয় না । যে - নিয়মের ভিতর - দিয়ে যে প্রয়ােজনে একদিন রসুলের আবির্ভাব হয়েছিল , সেই নিয়মের ভিতর - দিয়ে অনুরুপ প্রয়ােজনে আবার যে অনুরূপ আবির্ভাব হতে পারে না , তা মনে হয় না । এগুলি আমার মোটাবুদ্ধির কথা । আমি তাে আরবী - টারবী জানি না , যাঁরা আরবী জানেন , তাঁদের কারও - কারও মুখে শুনেছি , আরবী ভাষার যে কথাটির অর্থ করা হয় শেষ নবী বলে , তার আর - একটা পাঠ হ'তে পারে , এবং তাঁর মানে নাকি দাঁড়ায় , তিনি নবীদের মধ্যে মণিস্বরূপ । সে কথা তাে ঠিক কথা , রসুলের যে অপূর্ব জীবন , তাতে তিনি নবীদের মধ্যে মণিস্বরূপ , সে বিষয়ে আর সন্দেহ কী ? আবার , এও যেন শুনেছি মনে হয় , তিনি নবীদের শীলমােহর - স্বরূপ । অর্থাৎ , তিনি হলেন একজন আদর্শ নবী , তাঁর মানদণ্ডে আমরা বিচার করতে পারি , কেউ প্রকৃত নবী কিনা । এ - সব কিন্তু আমার শােনা কথা , আমি ভুলও শুনে থাকতে পারি । যা ’ - যা ’ শুনেছি , তা যদি সত্য হয় , তার সঙ্গতি কোথায় , যেমনটা ভেবেছি তাই বলছি । যাই কন , রসুল আমাদের অতি প্রিয় এবং রসুল - প্রেমী যে সেও আমাদের অত্যন্ত প্রিয় । মানুষ যুগে - যুগে এই প্রেমী মানুষকেই খোঁজে । তাঁকে না পেলে মানুষের পেট ভরে না। বই - পুঁথিপত্রে তাে কত কথা আছে , কিন্তু তা তো আমাদের তেমনভাবে নাড়া দিতে পারে না , যেমন ক’রে দেয় ঐ প্রেমীর ব্যক্ত জীবন । 

      এই ব'লে শ্রীশ্রীঠাকুর গান ধরলেন — ‘ মনের মানুষ হয় যে জনা , ও তার চোখ দেখলে যায় চেনা । শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখ - মুখের অভিব্যক্তি এবং কণ্ঠস্বরের মধ্যদিয়ে এমন একটা তীব্র আকুলতা ঝ'রে পড়তে লাগলো যে , অনেকেরই চোখ অশ্রুসিক্ত হ’য়ে উঠলো । 

      হকসাহেব — ব্যক্তিত্বের প্রভাব যে কতখানি , তা আপনার সান্নিধ্যে এসে বুঝতে পারছি। কত লােকের মুখেই তাে কত কথা শুনি , কিন্তু মানুষের কথায় যে এত প্রাণ থাকে , মানুষের কাছে এসে বসে যে এত শান্তি পাওয়া যায় , তা আমি এর আগে কখনও বােধ করিনি । আপনাদের মতন মানুষ আছেন বলেই তাে দুনিয়া টিকে আছে , নইলে মানুষের বুদ্ধি - বিবেচনা , চাল - চলন যেমন তা’তে দুনিয়া রসাতলে যাবার কথা । 

       শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখেন , আমি কিছু না , আমি একটা ঢাকের বায়া । পরমপিতা যেভাবে চালান সেইভাবে চলি । বিদ্যেবুদ্ধিও নেই যে ভেঙ্গে - গ'ড়ে একটা - কিছু করব। তবে পারিপার্শ্বিকের অবস্থা - সম্বন্ধে আপনারা যে সচেতন , সেইটেই খুব ভরসার কথা । আপনারা যদি লাগেন , দেখতে - দেখতে এ - হাওয়া ফিরে যেতে পারে । 

       হকসাহেব — ছা - পোষা মানুষ , পরের গােলামী করি , আমরা আর কী করতে পারি ?  

      শ্রীশ্রীঠাকুর — পরমপিতা কাকে দিয়ে যে কী করান , তার কি ঠিক আছে ? ' তাঁর জন্য প্রাণ যদি একবার কেঁদে ওঠে , তখন মানুষ সব পারে । চাকরী করেন , বাকরী করেন , যাই করেন , জীবনটা তাকে দেন , তার কাজে লাগান । টাকা পয়সা , নাম - যশের পায়ে জীবনটা বলি না দিয়ে ঈশ্বরের পায়ে বলি দেন । তার হয়ে সব করেন ।

      হকসাহেব — পেটের ব্যবস্থা করতেই তাে সব শক্তি ক্ষয় হয়ে যায় , তার জন্য করব কখন ? 

     শ্রীশ্রীঠাকুর - সংসার , চাকরী , পেট সব যদি তাঁর জন্য হয় , তখন দেখবেন রং বদলে যাবে । আপনার সংস্পর্শে এসে কত মানুষ প্রভাবিত হয়ে যাবে । যেমন নিজে করতে হয় , তেমনি অন্যকে দিয়েও করাতে হয় । নিজে করাটা হ’লাে যজন , অন্যকে দিয়ে করানটা হ’লাে যাজন । দুটো একসঙ্গে চালালে ভাব তাড়াতাড়ি পুষ্ট হয়ে ওঠে । আর , নিজের ও সমাজের কল্যাণের দিকে চেয়েও এটা করা লাগে । 

      কথা হচ্ছে , এমন সময় কলকাতা থেকে একটি নবদীক্ষিত দাদা আসলেন । তিনি আসতেই শ্রীশ্রীঠাকুর আগ্রহভরে জিজ্ঞাসা করলেন — কি রে , কখন আসলি ? 

      দাদাটি বললেন — এই আসাম-মেলে আসছি । আমি কয়েকদিন হলাে হীরালালদার কাছথেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছি । 

     শ্রীশ্রীঠাকুর — তা ’ বেশ ।

     দাদাটি একটা ফুলের তােড়া ও প্রণামী - সহ প্রণাম করলেন । 

      ফুলের তােড়াটি শ্রীশ্রীঠাকুর হাত পেতে নিলেন । পরক্ষণে ঐ দাদাকে জিজ্ঞাসা করলেন — এটা ওঁকে ( হকসাহেবকে দেখিয়ে) দিই ?

       দাদাটি বললেন - হ্যাঁ , আপনার যেমন খুশি । 

      শ্রীশ্রীঠাকুর ফুলের তােড়াটি হকসাহেবের হাতে দিয়ে বললেন - আপনার হাতে মানাবে ভাল ।

      হকসাহেব বিনীতভাবে নমস্কার করে বললেন — আপনার আশীর্বাদ ।

      কলকাতা থেকে দাদাটি কিছু মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন । দেবীভাইকে ইঙ্গিত করতেই তিনি তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে শ্রীশ্রীবড়মার কাছে মিষ্টি দিয়ে এলেন । 

       তারপর শ্রীশ্রীঠাকুর কলকাতার দাদাদের খবরাখবর জিজ্ঞাসা করলেন । দাদাটি অনেককেই চেনেন না । 

      এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর দেবীভাইকে সঙ্গে দিয়ে দাদাটিকে অতিথিশালায় পাঠিয়ে দিলেন । বললেন — সব দেখিয়ে - শুনিয়ে হাওলা ক’রে দিয়ে আসিস্ । 

     দেবী ( চক্রবর্তী ) —আচ্ছা । 

      হক সাহেব এবং তার সঙ্গে যারা এসেছিলেন , তারাও যাবার অনুমতি চাইলেন ।

     শ্রীশ্রীঠাকুর — আবার সুযােগ পেলে আসেন যেন । হকসাহেব — পাবনায় আসলে আপনার এখানে আসবার আগ্রহ রইলাে , আজ বড় আনন্দ পেয়ে গেলাম । ( হাত জোড় করে করুণভাবে বললেন ) —একটু দয়া রাখবেন আমার প্রতি , যেন জীবনটা বিফলে না যায় । 

     শ্রীশ্রীঠাকুরও স্নেহপূর্ণ কণ্ঠে বললেন — পরমপিতার দয়া আছেই । 

     ওঁরা যাবার সময় শ্রীশ্রীঠাকুর আবার টর্চ ধরতে বললেন । 

     চলে যাবার পর জিজ্ঞাসা করলেন — বেফাঁস কিছু বলিনি তো ? ওঁরা দুঃখিত হয়নি তো ? 

      সকলে একবাক্যে বললেন — না , ভরপুর হয়ে গেছে । ✅ 

#Alochona_prosonge_part_2
#আলোচনা_প্রসঙ্গে_দ্বিতীয়_খণ্ড 

#চতুর্থ_সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
www.facebook.com/Amritokatha.in1