📚 আলোচনা প্রসঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ড,
🔷 অবসন্নতা কী করে কাটানো যায়...
🔷 স্বামীর দুর্ব্যবহার করে তখন কী করা উচিৎ...
🔷 স্বামীর বিরােধী চলন যদি দেখি , তাহলেও কি সমর্থন করতে হবে ?
![]() |
(P 204-207)
দোখলকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন — লেবু খাবা নাকি পরামাণিক ?
দোখল–তা ’ খাবার পারি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর একটি মাকে বললেন - বড়বৌয়ের কাছ থেকে চারটে কমলা নিয়ে আয় তো ।
কমলা নিয়ে আসার পর শ্রীশ্রীঠাকুর সেগুলি হরিপদদার হাতে দিতে বললেন । হরিপদদাকে ইঙ্গিত করতেই তিনি সেগুলি দোখলকে দিলেন । ধীরেনদা ( চক্রবত্তী ) এসেছেন কলকাতা থেকে , শ্রীশ্রীঠাকুর যুদ্ধের খবর শুনছেন । শ্রীশ্রীঠাকুর ধীরেনদাকে বললেন — তুই আজকাল গানটান করিস্ না ? ধীরেনদা — বিশেষ না । শ্রীশ্রীঠাকুর — গানটান করা ভাল । ধীরেনদা — প্রাণের থেকে গান না আসলে , গাইতে ভাল লাগে না । শ্রীশ্রীঠাকুর — গাইতে - গাইতে আবার প্রাণ খুলে যায় ।
ধীরেনদা — মাঝে - মাঝে অবসন্নতা চেপে ধরে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — অবসন্নতা যতই আসুক , ওকে আমল দিতে নেই । আমাদের কোন স্বার্থ নেই । জোর করে ওকে ঝেড়ে ফেলে স্ফুর্তিযুক্ত মেজাজে চলতে হয় । তুমি ঋত্বিক , তােমার কাজ হলো মানুষের প্রাণে আশা , ভরসা , উদ্দীপনা সঞ্চার করা । তুমি নিজেই যদি ঝিমিয়ে পড় , অন্যকে চেতাবে ক কি’রে। তােমার এই পরম দায়িত্বের কথা স্মরণ করে সর্বদা ঐ তালে থাকবে । যাজনের উপর যদি থাক এবং সেই সঙ্গে - সঙ্গে যজন যদি ঠিকমত কর , তাহ'লে , দেখবে মন চাঙ্গা থাকবে । অর , শরীরটা যাতে ভাল থাকে , বিশেষতঃ পেটটা , সেদিকে খুব নজর রাখবে । রোজ খানিকটা বেড়াবে ।
ধীরেনদা — ভবিষ্যৎ - সম্বন্ধে উদ্বেগ বোধ করি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ( দীপ্ত ভঙ্গিমায় ) —তাের শালার অতাে উদ্বেগ দিয়ে কাম কী ? চাকরী - বাকরীর মধ্যে ফাঁকে - ফাঁকে যতখানি পারিস্ , পরমপিতার কাজ কর । নারায়ণের সেবা নিয়ে যে চলে , লক্ষ্মী কি কখনও বেজার হন তার উপর ? তুই খাবি - দাবি , স্ফূৰ্ত্তি করবি , দোয়াড়ে যাজন করবি , নাম দিবি আর যজমান গুলিকে ঠেলে তুলতে চেষ্টা করবি । যতই কও , এই বামনাই কামের মত কাম নেই । বামুন হ’লো মানুষের রাজা । তুমি ভাবিছ কি ? ক'রে দেখ না । তখন রাস্তায় বেরােলে তােমার পা’র ধূলি নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে , যদিও তুমি তা চাইব না । পরমপিতা ধরে আছেন তোমাদের , ঘিরে আছেন তােমাদের , শতহস্তে আগলে রাখছেন , অবান্তর দুর্ভাবনা না ভেবে , যা করণীয় অবিচ্ছেদভাবে করে যাও । •••••• পরমপিতা তো দয়া করবার জন্যই ব্যস্ত , তােমাদের কম্মের ভিতর - দিয়ে তাকে সেই সুযােগটুকু দাও , সূত্রটুকু দাও , যার ভিতর - দিয়ে তিনি আশ - মিটিয়ে করতে পারেন তােমাদের জন্য ।
শ্রীশ্রীঠাকুর একটু - একটু থেমে - থেমে জোর দিয়ে - দিয়ে কথাগুলি বলছেন । সাক্ষাৎ লোকাত্ৰাতা যেন বরাভয় - হস্তে অৰ্ত্ত মানবকুলকে পরম আশ্বাসের বাণী শােনাচ্ছেন । তার বদনমণ্ডল দিব্য বিভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে — তার সর্বাঙ্গ দিয়ে বিচ্ছুরিত হচ্ছে আশা , ভরসা , উদ্দীপনা , বল , বীৰ্য্য , বিশ্বাসের অনির্বাণ ধ্রুবজ্যোতিঃ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর একবার তামাক চেয়ে খেলেন । এরপরে টানটান হয়ে চৌকিতে পাতা বিছানায় শুয়ে পড়লেন । শুয়ে অপোন মনে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলেন । চোখে - মুখে তখনও একটা গনগনে ভাবের আবেগ । এমন সময় বাইরে রােদের ঝলক দেখা দিল । শ্রীশ্রীঠাকুর খুশি হয়ে বললেন — এ যেন প্রিয়ার মুখের চপল হাসির মত ।
একটি মা তার স্বামীর দুর্ব্যবহার - সমন্ধে বললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ঈষৎ হেসে বললেন — জানিসই তাে ওর স্বভাব । ও রাগী হলেও কিন্তু মানুষ ভাল । তােকে ভালও বাসে খুব । তুই যদি তিন দিনের জন্যও কোথাও যাস্ , তাহলেও কিন্তু ওর ভাল লাগে না । যে সময় চটে যায় , তখন তুই কোন কথা কোস্ ’ না । তাের উপর রাগের ঝাল মিটিয়ে যদি শান্তি পায় — পা'ক , সেই বা মন্দ কী ? দোষ - গুণ সবটা নিয়ে মানুষটাকে যদি ভালবাসিস্ , সহানুভূতির সঙ্গে স'য়ে - ব’য়ে নিস , তার মেজাজ বুঝে যদি ' চলিস্ , দেখিস্ , তাের ভালবাসার দৌলতে আস্তে - আস্তে সে হয়তো শুধরেও যেতে পারে ।
আবার , ছেলের ভবিষ্যতের দিকে চেয়েও তােমাকে অনেকখানি হুশিয়ার হয়ে চলা লাগবে । তােমাদের যদি ঝগড়া করতে দেখে , সেটা তার পক্ষে খুব খারাপ হবে । তােমাকে যদি দেখে যে ওর বাবা তােমাকে গালাগালি করা সত্ত্বেও তুমি খুশি , তাহলে তােমার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে , আর তােমার স্বামীভক্তি তার মধ্যে পিতৃভক্তি সঞ্চারিত করে দেবে । শ্রদ্ধা জিনিসটাই এমন যে তাতে দোষদর্শন থাকে না , অনুযােগ থাকে না , প্রত্যাশা থাকে না , অমনতর শ্রদ্ধা ও প্রীতির সংস্পর্শে কারও বাস্তব দোষ থাকলেও , তা ’ ছুটে পালায় ।
উক্ত মা — আমাকে যখন উনি বকেন , তখন ছেলেটার মুখ কালী হ'য়ে যায় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — তােমার মুখ কালা হয় বলে তার মুখ কালা হয় । অবশ্য তােমার সঙ্গে ছেলের সামনে অমনতর ব্যবহার তার না করাই ভাল । ওতে ছেলে পেলেদের অনেক সময় বাপের প্রতি বিদ্বেষভাব জাগে । যেমন ক'রেই হােক যেখানে শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ সেখানে যদি শ্রদ্ধা না থাকে , শ্রদ্ধা যদি ব্যাহত হয় , সেটা বড় ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায় । তবে তুমি যদি আবার তেমন চতুর হও , স্বামীর প্রত্যেকটি কথা ও ব্যবহারের এমন সমর্থনী ব্যাখ্যা দিতে পার ছেলের কাছে যে , ছেলের শ্রদ্ধা আরো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে পারে । তাই বলছিলাম , সত্যিকারের শ্রদ্ধা যে কী করতে পারে আর না পারে তার লেখাজোখা নেই ।
উক্ত মা ইষ্ট - বিরােধী চলন যদি দেখি , তাহলেও কি সমর্থন করতে হবে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — ইষ্টের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য যদি ঠিক থাকে , আর সেই সঙ্গে চলায় যদি ভুল থাকে , তবে ঐ ভুল চলনকে কিন্তু ইষ্টবিরােধী চলন বলা ঠিক হবে না । সে ভুল - চুক সবারই আছে । কোন একটা ভুলকে যদি ভুল বলেও বলতে হয় , তা'ও বলার এমন কায়দা আছে , যাতে মানুষটার মহত্ত্ব আরাে ফুটে ওঠে। ও শেখান যায় না , ভিতরে ভাব থাকলে কথা আপনা থেকে জোয়ায় । তোমাদের নামে আমার কাছে যদি কেউ নিন্দা করতে আসে , আর আমি যদি জানি যে সে সত্য কথাই বলছে , তাও তখন তােমাদের এমন করে তুলে ধরি যে , ঐ দোষটা যেন নিতান্তই নগণ্য ও অকিঞ্চিৎকর । তাই বলে আমি কি দোষকে সমর্থন করি ? তােমাদের প্রতি আমার যে স্বার্থবোধ , তাই - ই আমাকে অমন করে বলায় । ভালবাসা থাকলে ভাল যাতে হয় , তাই - ই করা আসে , বলা আসে । অবান্তর সমালোচনার কণ্ডূয়ন থাকে না তখন ।
#আলোচনা_প্রসঙ্গে_দ্বিতীয়_খণ্ড
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
www.facebook.com/Amritokatha.in1

10