[ P - 10 ] 🎗️ বড় লোকের অযোগ্য ও অপোগণ্ড ছেলে জন্মায় এর কারণ কী ? 🎗️ বিকৃত সন্তান জন্মায় কেন ? 🎗️ সু বা কু-সন্তান কী ভাবে জন্মে ?

🎗️ বড় লোকের অযোগ্য ও অপোগণ্ড ছেলে জন্মায় এর কারণ কী ?
🎗️ বিকৃত সন্তান জন্মায় কেন ? 
🎗️ সু বা কু-সন্তান কী ভাবে জন্মে ? 

 

২০শে এপ্রিল, ১৯৩৪

[P 84-92]

    প্রশ্ন । অনেক সময় বড় লোকের অযোগ্য ও অপোগণ্ড ছেলে জন্মায়, অথচ অনেক নিকৃষ্ট লোকেরই হয়তো এক genius (মহাপ্রতিভাবান) ছেলে জন্মাইতেও দেখা যায়। এরূপ কী ক'রে হয় ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ যত বড়ই হোক্, স্ত্রী যদি তাহাকে কুৎসিত ব্যবহার, ভাব, ভাষা দিয়া রঞ্জিত করে—তার সন্তান তেমনতরই হইবে । তাই, হয়তো মহাবীরের সন্তান এক মহাভীরু জন্মগ্রহণ করে—মহাজ্ঞানীর সন্তান একটা মূঢ় অপোগণ্ড জন্মায় ।

   তেমনি, নিকৃষ্ট পুরুষের স্ত্রী যদি এমনতর হয় যাহার সাহচর্য্যে সে soothed, nourished and enlightened হয়, অর্থাৎ, বিনোদিত, পুষ্ট ও উদ্ভাসিত হয়,—তবে সে স্ত্রীর ভাগ্যে কুৎসিত পুরুষ হইতেও সুসন্তান লাভ ঘটিয়া থাকে* । 

   প্রশ্ন । তবে কি এই জন্যই সর্বত্র শাস্ত্রে দেখতে পাই—নারী সালঙ্কারা সুপরিচ্ছদ-পরিহিতা সুগন্ধানুলেপিতা থাকিবে !

   শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষের নারীর প্রতি, নারীর পুরুষের প্রতি inclination(আসক্তি) স্বাভাবিক। যেখানে মানুষের natural inclination (স্বাভাবিকঝোঁক) থাকে, সেটা যদি soothing, encouraging and elevative হয়,অর্থাৎ তৃপ্তিপ্রদ, উৎসাহপ্রদ এবং উন্নতিপ্রদ হয়,— তাহ'লে যে inclined (আসক্ত), সে তা' হ'তে এমনতর প্রেরণা পায় যা তে নাকি depression(অবসাদ) তাকে আগলে ধরতে পারে না, আর active ও energetic হয়ে উঠে কৰ্ম্ম ও চিন্তাপ্রবণতা উৎকর্ষে অনুধাবিত হয় † ; তাই বোধ হয় শাস্ত্রের

____________________________________

         * “অপত্যং ধৰ্ম্মকার্য্যাণি শুশ্রূষা রতিরুত্তমা ।

             দারাধীনস্তথা স্বর্গঃ পিতৃণামাত্মনশ্চ হ ৷৷"      —মনু, ৯/২৮

    অপত্য অর্থাৎ সন্তান, ধর্ম্মকার্য্য, শুশ্ৰূষা, উত্তম রতি এবং পিতৃগণের ও নিজের স্বর্গ—এই সমস্ত দারাধীন অর্থাৎ স্ত্রীর উপর নির্ভর করে।

     † “সংঘাতো হীন্দ্রিয়ার্থানাং স্ত্রীষু নান্যত্র বিদ্যতে । 

     স্ট্র্যাশ্রয়ো হীন্দ্রিয়ার্থো যঃ স প্রীতিজননোহধিকঃ ৷৷

 অমনতর ব্যবস্থা । আর, এইরকম normal inclination (নৈসর্গিক টান) আছে ব'লেই পুরুষের স্বাভাবিক attitude (ভাব) হওয়া উচিত—তার আদর্শে heavily inclined (গভীরভাবে অনুরক্ত) হ'য়ে থাকা; আর, নারী যদি তার হাবভাব, চালচলন, কথাবার্তা ইত্যাদির দ্বারা তাকে আরও উদ্দীপিত ক’রে তোলে—তাহ'লে তার হয়তো ঐ inclination (অনুরক্তি) more active হ'তে পারে (অধিকতর কর্ম্মপ্রবণ হ'তে পারে),—এমন-কি, তার being-কেও অর্থাৎ অন্তর্নিহিত সত্তাকেও হয়তো অমনতরভাবে inclined (উন্মুখ) করে দিতে পারে ।

   প্রশ্ন। সুপ্রজননের দায়িত্ব কার — পুরুষের না নারীর ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। নারীর । নারী তার সাহচর্য্যে পুরুষকে যেমনতরভাবে enlightened বা উদ্বর্দ্ধন করে, পুরুষের সেই মনই স্ত্রীতে গমন করে এবং সন্তানরূপে মূর্ত্ত হয়; তাই, স্ত্রীকে জায়া বলে ।

  প্রশ্ন । অনেক সময়ে দেখা যায়, বড়-বড় genius-দের (প্রতিভাবান্ 

        _____________________________________

        স্ত্রীষু প্রীতির্বিশেষেণ স্ত্রীষ্বপত্যং প্রতিষ্ঠিতম্ ।

        ধৰ্ম্মার্থৌ স্ত্রীষু লক্ষ্মীশ্চ স্ত্রীষু লোকাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ ।।”

—চরকসংহিতা

  অর্থাৎ, স্ত্রী-ভিন্ন অন্য কোনো বস্তুতে সমুদয় ইন্দ্রিয়ার্থ একাধারে দৃষ্ট হয় না। পরন্তু স্ত্রী-শরীরে যে রূপরসাদি ইন্দ্রিয়ার্থ বিদ্যমান থাকে, তাহা অধিকতর প্রীতিজনক। স্ত্রীতেই প্রীতি, বিশেষতঃ অপত্য প্রতিষ্ঠিত। ধর্ম্ম, অর্থ, শ্রী ও লোকসমূহ স্ত্রীতেই প্রতিষ্ঠিত । 

পক্ষান্তরে, মলিনা স্ত্রী চিত্তের অপ্রমোদকারিণী; তাহার সঙ্গ ও সহবাস পরিত্যাজ্য।

যথা—

    “রজস্বলামকামাঞ্চ মলিনামপ্রিয়াং তথা 

.............নোপেয়াৎ প্রমদাং নরঃ ।।”    

         —সুশ্রুত, ক্ষীণবলীয় বাজীকরণ, ৫০/২৪ অধ্যায়

   †Cf. “The mother is the child's supreme parent. "

                           'Sex and Society'-Ellis

মাতাই শিশুর সর্বশ্রেষ্ঠ জনয়িত্রী। "It depends more on the woman than on the man whether or not a child will be born unto the world."

 “What is Eugenics'— L. Darwin 

অর্থাৎ, সন্তান জন্মাইবে কি-না তাহা পুরুষের চেয়ে নারীর উপরেই বেশী নির্ভর করে ।

 ——এল. ডারুইন

লোকের) সন্তান হয় না বা কুসন্তান হয়—ইহার কারণ কী ? বংশহানি কি-কি কারণে ঘটে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। বড়লোক কখনো-কখনো এমন over-enlightened হয়,—এত অত্যুদ্ভাসিত হয়,—এত above (উচ্চ) হয় যে, স্ত্রী তাকে reach করতে পারে না, তার নাগাল পায় না বা হাবভাব দ্বারা তাকে রঞ্জিত করতে পারে না। এমন-স্থলে প্রায়ই অল্পসন্তান বা নিঃসন্তান হয়* ।

আবার, স্ত্রীর এমনতর subnormal পুরুষও হ'তে পারে যে, স্ত্রীর impulse তাকে তুলতে পারে না। Normal deficiency (নৈসর্গিক পঙ্গুতা) যা নাকি তার স্ত্রীর পক্ষে unhandleable — যেমন ক্লীবত্ব,  সেখানেও সন্তান হয় না।

অবশ্য, স্ত্রীর দোষেও বংশহানি ঘটতে পারে; যেমন ধরুন—স্ত্রী যদি তার স্বামীর প্রতি ক্রমাগত কদর্য্য ব্যবহার দ্বারা স্বামীর মনে এমন অভিঘাত জন্মায়, যার দরুন, সে সহজ পুরুষ থাকা সত্ত্বেও ক্লীবত্বের অধিকারী হয়। । এ-ছাড়া physical deformity-ও (শারীরিক পঙ্গুতাও) কারণ । 

_______________________________

* "The offspring of extraordinary parents tends to regress towards the general population mean."

 -Prof. Karl Pearson 

অর্থাৎ, অসাধারণ জনক-জননীর সন্ততিসংখ্যা লোক-পিছু সাধারণ গড়ের দিকে নামিয়া আসিতে চায় ।

  —প্রোফেসার কার্ল পিয়ারসন

"Those who are......intelligent or enlightened actually fail to produce their own numbers; that is, they do not on the average have as many as two children each who survive infancy."  ——Russell

যাহারা ধীশক্তিসম্পন্ন ও বিশেষ আলোকপ্রাপ্ত, তাহারা গড়ে দুইটির বেশী সন্তান উৎপাদন করে না, করিলেও শিশুকাল অতিক্রম করিতেই না করিতে কালগ্রাসে পতিত হয় ।

 —রাসেল

+ “যদি হি স্ত্রী ন রোচেত পুমাংসং ন প্রমোদয়েৎ। 

  অপ্রমোদাৎ পুনঃ পুংসঃ প্রজনং ন প্রর্বদ্ধতে ।।”

——মনুসংহিতা, ৩|৬১

 স্ত্রী যদি পুরুষের মনোরঞ্জিনী না হয় এবং পুরুষের চিত্তের প্রমোদকারিণী অর্থাৎ প্রহর্ষিণী না হয়, তাহা হইলে পুরুষের অপ্রমোদ হইতে প্রজনন বা সন্তুতিহীনতা ঘটে। 

"তৈস্তৈর্ভাবৈরহৃদ্যৈস্তু রিরংসোর্মনসি ক্ষতে । 

 দ্বেষ্যাস্ত্রী-সম্প্রয়োগাচ্চ ক্লৈব্যং তন্মানসং স্মৃতম্ ৷৷” ৫। 

—সুশ্রুত, ক্ষীণবলীয় বাজীকরণ চিকিৎসিতম্, ২৬ অধ্যায়

   প্রশ্ন। ব্যবহারের দ্বারা ক্লীবত্ব হবে কেমন ক'রে ? ক্লীবত্ব না একটা physical disease (শারীরিক ব্যাধি) ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। যে স্ত্রী স্বামীর দোষদর্শিনী, যাহার কাছে স্বামী বিদ্বেষভাজন, স্বামীকে ঘৃণা করে, তাচ্ছিল্য করে, হীন ভাবে, নানা অনুযোগ করে, নিজের দুরদৃষ্ট ভাবিয়া অনুতাপ ও আপসোস করে—এমনতর স্ত্রী লইয়া যে-পুরুষ বাস করিতে বাধ্য হয়, তাহার nervous debility (স্নায়বিক দৌর্বল্য), dyspepsia (অজীর্ণ), dull memory (স্মৃতিহীনতা), dull eye-sight (দৃষ্টিশক্তির খর্ব্বতা), dull hearing (শ্রবণশক্তি-রাহিত্য), complete কিংবা partial ( সম্পূর্ণ বা আংশিক) impotency বা রতিশক্তিহীনতা প্রায়শঃই অল্পবিস্তর হইতে দেখাই যায় । তাই, শাস্ত্রে অমনতর স্ত্রীর সহিত মিলিত হইতে বিশেষভাবে নিষেধ করা আছে *, এবং এই মিলনে অল্পায়ু, দুর্ভাগ্য, জড়মস্তিষ্ক, peevish (খিটখিটে),

________________________________________

অর্থাৎ, রমণেচ্ছু ব্যক্তির অন্তরে অভিঘাতজনিত ক্ষত জন্মিলে এবং রমণকালে অপ্রিয় ভাব উদিত হইলে এবং দ্বেষ্যা অর্থাৎ দ্বেষপরায়ণা স্ত্রীর সহিত সম্ভোগ করিলে ক্লীবতা জন্মিয়া থাকে । ইহাকে মানসিক ক্লীবতা কহিয়া থাকে ।   ——সুশ্রুত, ১০৬৬ পৃষ্ঠা

**রজস্বলামকামাঞ্চ মলিনামপ্রিয়াং তথা ।

       বর্ণবৃদ্ধাং বয়োবৃদ্ধাং তথা ব্যাধিপ্রপীড়িতাম্ ৷৷

      হীনাঙ্গীং গর্ভিণীং দ্বেষ্যাং যোনিদোষসমম্বিতাম্ ।

            ........ নোপেয়াৎ প্রমদাং নরঃ ।।”

—সুশ্রুত, ক্ষীণবলীয় বাজীকরণ খণ্ড, ২৪ অধ্যায়, ৫০।১০৬৬ পৃষ্ঠা 

   যে-স্ত্রীলোক রজস্বলা (ঋতুমতী), অকামা (মৈথুনে অনিচ্ছুক), মলিনা (অপরিচ্ছন্ন থাকিতে ভালবাসে—নোংরা থাকিতে ইচ্ছুক), অপ্রিয়া (মনোমত নহে), বর্ণবৃদ্ধা (অর্থাৎ উচ্চবর্ণীয়া), বয়োবৃদ্ধা (বয়সে বড়), রোগাক্রান্তা, হীনাঙ্গী, গর্ভিণী, দ্বেষ্যা (দ্বেষকারিণী) ইত্যাদি রকমের স্ত্রীর সহিত কদাচ সহবাস করিবে না।

তাই, পরাশর স্মৃতিতেই আছে— 

'একাদশে স্ত্রীজননী সদ্যত্ত্বপ্রিয়বাদিনী' ইত্যাদি অর্থাৎ সদ্য অপ্রিয়বাদিনী স্ত্রী অগম্যা। রজস্বলা, দ্বেষ্যা, অকামা, অপ্রিয়া ইত্যাদি পূৰ্ব্ব-কথিত অগম্যা স্ত্রীর সহবাস করিলে কী হয় ? 

“দৃষ্টায়ুস্তেজসাং হানিরধর্ম্মশ্চ ততো ভবেৎ।

......... গচ্ছতো জীবিতক্ষয়ঃ ৷

হীনাঙ্গীং মলিনাং দ্বেষ্যামকামাং বন্ধ্যামসংবৃতে। 

দেশে অশুদ্ধে চ শুক্রস্য মনসশ্চ ক্ষয়ো ভবেৎ ।।” ইত্যাদি

 —সুশ্রুত, ২৪ অধ্যায়, ৫১।১০৫৭ পৃষ্ঠা

অর্থাৎ, দৃষ্টিশক্তি, তেজ ও আয়ু হ্রাস হয়; ধর্ম্ম (বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়া) অবসন্ন হয়, জীবন ক্ষয়

egoistic (অহংবিকারগ্রস্ত) ইত্যাদি রকমের সন্তানের সৃষ্টি হয়। তাই, এই মিলনকে সামাজিক পাপও বলা যাইতে পারে।

____________________________________

হয়, হীনাঙ্গী, মলিনা, দ্বেষ্যা (যার নিকট স্বামী বিদ্বেষভাজন), অকামা (যে স্ত্রী কামরহিত—এমতাবস্থায় পুরুষ স্বপ্রণোদিত হইয়া স্ত্রীগমন করিলে) ও বন্ধ্যা স্ত্রীতে উপগত হইলে..... চিত্তক্ষয় (স্মৃতি, বুদ্ধি, ধীশক্তি ইত্যাদি নষ্ট হয়) ও শুক্রক্ষয় (স্নায়বিক দৌর্বল্য, ক্লীবত্বাদি পীড়া) জন্মে।

তাই, দক্ষ-সংহিতায় পুনঃ পুনঃ বলা আছে—

  ‘প্রতিকূলকলত্রস্য নরকো নাত্র সংশয়ঃ। ৪/৫ 

যাহার স্ত্রী প্রতিকূল—বিপরীতগামিনী, তাহার নরক, — ইহাতে সংশয় নাই । আবার বলছেন— 

“দুঃখা হান্যা সদা খিন্না চিত্তভেদঃ পরস্পরম্ ।

 প্রতিকূলকলত্রস্য দ্বিদারস্য বিশেষতঃ ।। 

যোষিৎ সর্বরা জলৌকের ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ । 

সুভূত্যাপি কৃতা নিত্যং পুরুষং হাপকর্ষতি ॥

জলৌকা রক্তমাদত্তে কেবলং সা তপস্বিনী । 

ইতরা তু ধনং বিত্তম্ মাংসং বীর্য্যং বলং সুখম্ ।।”

  —দক্ষসংহিতা ৪, ৮, ৯, ১০ 

পুরুষের প্রতিকূলচারিণী — খেদদযুক্তা স্ত্রী দুঃখেরই কারণ। পরস্পরের চিত্তের অনৈক্য চলিতেই থাকে । ইহারা জলৌকা বা জোঁকের তুল্য । অলঙ্কার বস্ত্র এবং অন্ন প্রভৃতি দ্বারা উত্তমরূপে প্রতিপালিত হইলেও পুরুষগণের অপকর্ষ সাধন করে। ক্ষুদ্র জলৌকা মনুষ্যের কেবল রক্তই শোষণ করে । কিন্তু ইহারা পুরুষের রক্ত, বিত্ত, মাংস, বীর্য্য, বল, সুখ সর্ববস্ব শোষণ করে। —দক্ষসংহিতা পরন্তু গম্যা, বৃষ্যতমা ( বাজীকরণ-ক্ষেত্রে) স্ত্রীর লক্ষণ সম্বন্ধে চরক বলিয়াছেন—

“সুরূপা যৌবনস্থা যা লক্ষণৈর্যা বিভূষিতা।

যা বশ্যা শিক্ষিতা যা চ সা স্ত্রী বৃষ্যতমা মতা ৷৷

 বয়োরূপবচোহাবৈর্যা যস্য পরমাঙ্গনা । 

প্রবিশত্যাশু হৃদয়ং দৈবাদ বা কৰ্ম্মণোঽপি বা ৷৷ 

হৃদয়োৎসবরূপা যা যা সমানমনোরমা । 

সমানসত্ত্বা যা বশ্যা যা যস্য প্রীয়তে প্রিয়ৈঃ ||

 গত্বা গত্বাপি বহুশো যাং তৃপ্তিং নৈব গচ্ছতি । 

সা স্ত্রী বৃষ্যতমা তস্য নানাভাবা হি মানবাঃ ।”

—চরক সংহিতা, চিকিৎসাস্থানম্, ২য় অধ্যায় 

অর্থাৎ, যে-স্ত্রী সুরূপা, সুযৌবনা, সুলক্ষণা, বশ্যা ও শিক্ষিতা---যে পরমা স্ত্রী কৰ্ম্ম বা দৈবগুণে বয়স, রূপ, বাক্য, হাবভাব ইত্যাদি দ্বারা পুরুষের হৃদয়ে সর্ব্বতোভাবে প্রবেশ করে, যে স্ত্রী হৃদয়ের উৎসবস্বরূপা, যে স্ত্রী পুরুষের মনের মত বলিয়া মনোরমা, যে স্ত্রীর সত্ত্ব পুরুষের সত্ত্বের তুল্যরূপ (equal and opposite), যে-স্ত্রী পুরুষের বশীভূতা, যে স্ত্রী পুরুষের প্রিয়জন হইতে প্রীত হয়.....এবং যাহার কাছে পুরুষ অনেকবার গমন করিয়াও তৃপ্তি বোধ করে না— সেই স্ত্রী পুরুষের প্রধান বাজীকরণ-ক্ষেত্র। 

   প্রশ্ন । অনেক-সময়ে কাহারও কাহারও line short হ'তে হ'তে — দুই-তিন পুরুষ পরেই নিভে যেতে দেখা যায়। তার কারণ কী ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর । বাপ যদি poorly inherited and received হয়—অর্থাৎ পিতার গুণগুলি যদি ছেলেতে ভালো ক'রে না বর্ত্তে এবং গৃহীত না হয়, তাহ'লে line short হওয়া (বংশ দুই-তিন পুরুষ বা কিছুদুর গিয়েই নিভে যাওয়া) সম্ভব । তার মানেই—স্ত্রী যদি মনোবৃত্তির অনুসারিণী না হয়, এমনস্থলে প্রায়ই বহু অথচ অল্পায়ু সন্তান বেশী জন্মে।

   প্রশ্ন । কখনো হাত-কাটা, পা-ভাঙ্গা, দুই-মাথা প্রভৃতি monsters (বিকটাকার বিকৃত সন্তান) জন্মায়—এর জন্য দায়ী কে ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর । তাহাতেও নারী প্রধানতঃ দায়ী । কারণ, দেখা গিয়াছে—ঐরূপ পিতার ঔরসেও স্বাস্থ্যবান, দীর্ঘায়ু এবং পণ্ডিতের জন্ম হইয়াছে ।

অবশ্য, পুরুষেরও incurable (দুঃসাধ্য, দুশ্চিকিৎস্য) unenlightenable psycho-physical defect থাকিতে পারে *, যাহার জন্য স্ত্রী তাকে অমনতরভাবে যথাযোগ্য শুশ্রূষাদি দ্বারাও সুসন্তান লাভে সমর্থ হয় না । এ-রকম পুরুষকে ঋষিরা বিবাহ-ব্যাপার হইতে নিষ্কৃতি দিয়াছেন—ইহাকেই প্রকৃতপক্ষে ‘নষ্ট পুরুষ' বলে ।

   প্রশ্ন । কোন জাতিতে উন্মাদ, অর্দ্ধ উন্মাদ ও idiot (মূঢ় বা জড়মস্তিষ্কের সংখ্যা কখন বেড়ে যায় এবং নারী-দর্শনেই কামোন্মত্তভাবের বাড়াবাড়ি দেখা যায়,—এই জাতিগত দুর্বলতার কারণ কী ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। কারণ—বিবাহ-বিপ্লব,—স্ত্রী-পুরুষের ভিতর বিধি-অনুসারিণী মিলনের অস্বাভাবিকতা † 

   প্রশ্ন। সু বা কু-সন্তান প্রজননের condition (সৰ্ত্ত ) কী ? 

   শ্রীশ্রীঠাকুর। সুসন্তান লাভ করিতে হইলেই নারীর তাহার স্বামীর মনোবৃত্তির উৎকর্ষিণী হওয়া চাই । বৃত্তির অভিঘাতিনী যদি হয়, তবে সে যে-যে

_________________________________________

  * আমেরিকায় ঐ জাতীয় physiological defect (দেহগত দোষ) থাকলে আইনতঃ বিবাহে

অনধিকারী । 

   † অর্থাৎ বিধির দোহাই দিয়া অস্বাভাবিক মিলন।

বৃত্তির অভিঘাতিনী হয়, সেই-সেই বৃত্তির অপরিপুষ্ট বৃত্তিযুক্ত সন্তানই হইতে দেখা যায় ! এমনও দেখা গিয়াছে যে, সন্তান by birth (জন্ম হইতেই) ক্লীব, idiot (মূঢ়)। Pennis (শিশু) ঠিক আছে—আবার বাহ্যিক স্বাস্থ্যও ঠিক আছে, কিন্তু কিছুতেই sexual excitement (কামের উত্তেজনা) হয় না বা খুব কমই হয়,—কিংবা dull brain (মস্তিষ্ক নিস্তেজ)। ইহা thrashing denial-এর কুফল ।

   প্রশ্ন । ‘বৃত্তি' কী ? বৃত্তির অভিঘাতই বা কি করে হয় ? 

   শ্রীশ্রীঠাকুর। বাহিরের impulse (সাড়া) যখন existence-কে (অস্তিত্বকে—সত্তাকে) আঘাত করে তার ফলে বাহিরের প্রতি existence-এর (সত্তার) যে reaction বা প্রতিক্রিয়া—তাকে wishes (ইচ্ছা) কহে । আর, এই বাহিরের প্রতি আমার যে wishes (ইচ্ছা) থাকে—তা' যদি কোনো প্রকারে denied, thrashed বা repelled হয় (প্রত্যাখ্যাত, অভিহত বা ব্যাহত হয়), তখনই সেই ইচ্ছা বা বৃত্তি অভিঘাতিত হয় ।

   প্রশ্ন । Thrashing denial মানে কী ? 

   শ্রীশ্রীঠাকুর। এমন bitterly reject করা (নিষ্ঠুরভাবে অগ্রাহ্য করা ) যাহাতে নাকি কোনমতেই compromise (আপোষ করিয়া উঠিতে পারা যায় না, মন choked and depressed হইয়া যায় অর্থাৎ নিরুদ্ধ ও অবসন্ন হইয়া যায়।

   

   প্রশ্ন । অভিহত বৃত্তিজনিত অপরিপুষ্ট বৃত্তিযুক্ত সন্তান হয় কেন ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। প্রত্যেক complex-এর (গ্রন্থির) সঙ্গে full I (পূর্ণ আমি থাকে । কোন গ্রন্থি বা বৃত্তি অভিহত হইলেই তাহা paralysed (অবসন্ন ) হয়, তাহাতে full I (পূর্ণ আমি) সেই অভিহত বৃত্তির বা গ্রন্থির reflection-এ (পরাবর্তনে) dull (মূঢ়) হইয়া যায় । অর্থাৎ, নারী যেমনতর ভাবদ্বারা পুরুষকে উদ্দীপিত করে, সেই ভাবই অনুপ্রাণিত হইয়া নারীতে জন্মগ্রহণ করে ; তাহা হইলেই সেই উদ্দীপনা যেমনতরভাবে হইবে — সন্তানের জীবন ও চরিত্র temperamentally অর্থাৎ ধাতুগতভাবে বা প্রকৃতিগতভাবে তাহাই হইবে । তবেই দেখুন, নারী পুরুষের বৃত্তিগুলি যেমনভাবে পুষ্ট করিবে বা খিন্ন করিবে, সন্তান তাহার তেমনি পুষ্ট বা অপরিপুষ্ট প্রকৃতিযুক্ত হইবে। তাই, কেহ হয়তো অঙ্ক কিছুতেই বোঝে না কেহ-বা অঙ্কই শুধু বোঝে আর-কিছু বোঝে না – কেহ হয়তো হিংসাপ্রবণ, দোষদৃষ্টিপরায়ণ, নিন্দুক—কেহ হয়তো উদার, দয়াপরায়ণ, দোষদৃষ্টিহীন, স্বভাবতঃই শ্রদ্ধা বা প্রশংসা-প্রকৃতিযুক্ত ।

   প্রশ্ন। কখনো মেয়ে কখনো ছেলে জন্মে — কোনো স্ত্রীর বেশীর ভাগ সন্তানই মেয়ে জন্মে ; আবার, এ-রকম কন্যাপ্রসবিনী নারী অগম্যা ব'লেও শাস্ত্রে কথিত আছে*। এ কেন হয়,—একি manageable নয় ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। দেখা যায়, কোনো স্ত্রীতে যদি পুরুষ undone হয় অর্থাৎ নিজত্ব হারিয়ে ফেলে, আর পুরুষ যদি তা'র স্ত্রীতে এমনভাবে আসক্ত হয় যা’তে-নাকি তার মনে ঐ negative aspect (ঋণাত্মক ভাবই) develop করে (বৰ্দ্ধিত হয়)—তখনই প্রায়ই দেখা যায় স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই অল্পবিস্তর acid-prominent হয় (এসিডের প্রাচুর্য্য হয়) ; আর এই acid-prominent হ'লে—দুই জনের ভিতরে এসিডের আধিক্য ঘটিলেই কন্যা-সন্তান জন্মে ! আবার দেখুন—আমার experience-এ (অভিজ্ঞতায়) দেখেছি যে-স্ত্রী তার পুরুষের তুষ্টি ও পুষ্টি বিধান করে না অথবা তুষ্টি-পুষ্টির অপলাপ ঘটায়,—এমনতর পুরুষ বা স্ত্রী অল্পবিস্তর dyspeptic (অজীর্ণরোগ-গ্রস্ত), অল্পবিস্তর sexually abnormal (অস্বাভাবিক কামবিকারগ্রস্ত) হয়ই । হয়ত এর exception (ব্যতিক্রম) থাকতে পারে, কিন্তু আমি দেখিনি !

   প্রশ্ন। যাহার মেয়েই জন্মে, তাহার ছেলে জন্মাইবার কোনো conscious (সজ্ঞান) উপায় আছে কি ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রী যদি পুরুষের কাছে submissive (বশীভূত) হয়, enlightening (উদ্বৰ্দ্ধনশীলা) হয়, তার সাহচর্য্যে পুরুষের পুরুষত্ব উৎকর্ষিত

হয়—তবে সে-সব ক্ষেত্রে প্রায়ই পুত্র-সন্তান জন্মে। ছেলে জন্মাইবার প্রধান factor-ই (উৎপাদকই) এই । তা'ছাড়া other factor-ও (উৎপাদকও) হয়তোআছে—যা' নাকি ঐ প্রধান factor-কে (উৎপাদককে) deteriorate (দুর্বল) করে।

______________________________________________

 * 'একাদশে স্ত্রী জননী সদ্যস্ত্বপ্রিয়বাদিনী।'

    প্রশ্ন। শুনিতে পাওয়া যায়—গর্ভস্থ স্ত্রী-ভ্রূণকেও নাকি পুংসন্তানে পরিণত করা যেতে পারে ? এ কী ক'রে সম্ভব হয় ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। যদি বোঝা যায় স্ত্রী-শরীরে এসিডের (অম্লের) প্রাচুর্য্য হইয়াছে, সে-স্থলে প্রায়শঃ কন্যা-সন্তানই আশা করা যায়। ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ developed (সুগঠিত—বিকশিত) হইবার পূর্ব্বেই যদি এসিডকে (অম্লকে) alkaline (ক্ষারপ্রধান) করিয়া তোলা যায়, তবে পুত্রসন্তান আশা করা যাইতে পারে । অনেক-স্থলে alkaline করিয়া (ক্ষারপ্রধান করিয়া) প্রভূত সুফল পাওয়া গিয়াছে * !

_______________________________________________

* ২৪ জানুয়ারী 'বার্লিন' পত্রিকায় জার্মেণীর কনিগবার্গ দাতব্য চিকিৎসালয়ের স্ত্রীরোগ-চিকিৎসায় অভিজ্ঞ অধ্যাপক এফ, উল্টারবাজার লিখিয়াছেন— 'সোডা বাইকার্বনেট ব্যবহারে নিশ্চিত পুত্রসন্তান জন্মিয়া থাকে—পরীক্ষাদ্বারা জানিতে পারা গিয়াছে ।

একখানি জার্ম্মাণ সাপ্তাহিক পত্রে অধ্যাপক উল্টারবাজার এ-সম্বন্ধে এক প্রবন্ধে লিখিয়াছেন—সোডি বাইকার ৫৩ জন নারীকে সেবন করাইবার ফলে ৫২ জন পুত্রসন্তান লাভে সমর্থ হইয়াছেন । গর্ভধারণের পর ১–২ মাস পর্যন্ত ৫–১০ গ্রেণ মাত্রায় প্রত্যহ দুইবার সোডি বাইকার সেব্য। সপ্তাহে ২ দিন বা মধ্যে-মধ্যে ২/৩ দিন ইহা সেবন বন্ধ রাখা উচিত।

   প্রায় পাঁচ হাজার বৎসর পূর্ব্ব হইতে ঋষিদের প্রবর্তিত দশবিধ সংস্কারের মধ্যে ‘পুংসবন’ একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সংস্কার। 'পুংসবন' মানে—'পুং সূয়তে অনেন' অর্থাৎ যাহাতে পুত্রসন্তান প্রসব হয় । ইহাতে গর্ভধারণের পর ১-২ মাস পর্য্যন্ত বটের শোয়া প্রভৃতি গর্ভিণীকে সেবন করাইবার বিধি আছে। বটের শোঁয়া বিশেষভাবে alkaline কি ? ঋষিদের প্রবর্তিত ‘পুংসবন’-সংস্কার এখন আর তেমন প্রচলিত নাই—কিন্তু এই সম্পর্কে তাঁহাদের উদ্দেশ্য ও বিধি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য বলিয়া মনে হয় ।

নারীর পথে শ্রীশ্রী ঠাকুরঅনুকূল চন্দ্র

প্রশ্নকর্তা ও পাদটীকা সংযোজক :-

শ্রীপঞ্চানন সরকার, এম-এ

#narir_pothe 

#নারীর_পথে

#দশম_সংস্করণ 

#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ

🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈

Telelegram https://t.me/amritokatha

https://www.facebook.com/Amritokatha.in1?

 face book