শরৎচন্দ্র হালদার
বাইবেলে যীশুখৃষ্ট-কথিত গল্পে আছে-একজন বীজ বপনকারী কতগুলো বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার পর সেই বীজের কতগুলো পড়ল পাথরে, কতগুলো থেকে চারা জন্মালেও সে চারা পাখিতে ঠুকরে খেলো, আর কতগুলো উপযুক্ত জমিতে পড়ে উপযুক্ত ফসল ফলালো। কালজয়ী তাঁর সেই কাহিনী সর্ব যুগে সর্ব দেশে প্রযোজ্য। দেখা যায়, স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর অমৃত-বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হলেও সেই সুধার ধারা সকলের প্রাণে পৌঁছয় না; কিন্তু প্রকৃত পিপাসু চিত্ত নিজ প্রযত্নে আবিষ্কার করে অমৃত-উৎস, আপন প্রাণ-পেয়ালা পূর্ণ ক’রে ধন্য হয় নিজে, এবং উপছে পড়া অমিয় সিঞ্চনে ধন্য করে তোলে পরিপার্শ্বকে। বিশেষ অধিকার, সত্তার বিশিষ্ট আধার ব্যতীত এই পিপাসা সকলের থাকে না, এ কথা অনস্বীকার্য। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নৈকট্য-সৌভাগ্য যদের হয়েছে, তাঁরা সকলেই যে সে দুর্লভ সৌভাগ্যের তাৎপর্য সমানভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তা নয়। আবার অনেকে বহু দূর থেকেও অনুভব করেছেন তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ, তাঁদের প্রাণে অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে পরম প্রেমময়ের প্রবল প্রেমের আহ্বান, যে-আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁদের মানব-জমিনে সোনা ফলেছে। অধ্যাপক শরৎচন্দ্র হালদার এই শেষোক্ত শ্রেণীর এক উজ্জ্বল প্রতিভূ।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার চাঁপাতলা গ্রামে ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ১০ই অগ্রহায়ণ শরৎচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বনমালী হালদার ও মাতা অমৃতময়ী দেবী, উভয়েই ছিলেন ধর্মপ্রাণ ঈশ্বরানুরাগী। মেধাবী ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর শরৎচন্দ্রের মধ্যে নিতান্ত অল্প বয়স থেকেই দৃষ্টি-আকর্ষণকারী নানা বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। অধ্যাপনার এক অদম্য প্রবৃত্তি যেন ছিল তাঁর সহজাত। যখন মোটে পাঁচ বছরের বালকটি, সবে পাঠশালা যাওয়ার শুরু, তখন থেকেই ঝোপঝাড়, আগাছা ইত্যাদি হাতের নাগালে যা পাওয়া যেত তাদেরই মহা উৎসাহে পড়ানো চলত; আবার পড়া না পারলে তাদের ভাগ্যে প্রহারও জুটত শিশু গুরুমহাশয়ের হাতে। খুব ছোট বয়স থেকে পূজার্চনার প্রতিও বিশেষ ঝোঁক ছিল শরৎচন্দ্রের। যখন থার্ড ক্লাসের (বর্তমানের অষ্টম শ্রেণী) ছাত্র, তখন একবার সন্ন্যাস গ্রহণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগে তাঁর মনে। গেরুয়া ধারণ করে ধুনি জ্বালিয়ে গাছতলায় বসেন তিনি; পিতামাতা বহু কষ্টে বুঝিয়ে তাঁকে ঘরে ফিরিয়ে আনেন। একটু বড় হওয়ার পর থেকে পরিপার্শ্বস্থ সবাইকে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করে তোলার আন্তরিক প্রেরণা সৃষ্টি হয় তাঁর ভেতরে। গ্রামের সকলের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া, লাইব্রেরি স্থাপন, যুবকবৃন্দের চরিত্র গঠন ও নৈতিক চেতনার উন্মেষ ইত্যাদি গঠনমূলক কাজে ছিল তাঁর সহজাত উৎসাহ। সকলকে নিয়ে চলা, ভাল কাজে সকলকে জড়িত করা ও উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতা ও প্রবণতা তাঁর প্রকৃতিগত ছিল। একটা সামূহিক মঙ্গলের লক্ষ্য, আদর্শপ্রাণতার সম্বেগ তাঁর মধ্যে প্রথম থেকেই ছিল।
বিদ্যালয়ের সীমানা সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে ডিস্ট্রিক্ট স্কলারশিপ পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করে স্নাতক পর্যায়ে শরৎচন্দ্র কলকাতায় সিটি কলেজে পড়াশুনো করেন রামমোহন হস্টেলে থেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. এবং বি. এল. পাশ করেন, কিন্তু পেশা হিসাবে আইন ব্যবসাকে গ্রহণ করেননি তিনি। নির্বিবাদী প্রকৃতির মানুষটির পক্ষে বিবাদজীবী আইন ব্যবসা সম্ভবত বিশেষ উপযুক্ত বলে বোধ হয়নি। তবে নির্বিবাদী বা শান্তিপ্রিয় হলেও শরৎচন্দ্র অত্যন্ত স্পষ্টভাষী ছিলেন। নিজের বিবেক অনুযায়ী যে-কথা যথাযথ বলে বোধ করতেন, সে- কথা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে তাঁর দ্বিধা ছিল না। এ কারণে কারও কারও তাঁকে কিঞ্চিৎ রূঢ়ভাষী বলে মনে হত। কিন্তু অফুরন্ত ভালবাসা ছিল তাঁর প্রাণে-তাই সাময়িক রূঢ় ভাষণ সত্ত্বেও তাঁর ভালবাসা এবং প্রাণশক্তিতে বহুসংখ্যক মানুষ আকৃষ্ট হতেন তাঁর প্রতি।
বাড়ির কাছে বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপকরূপে যোগ দেন শরৎচন্দ্র। মেধাবী ছাত্র শরৎচন্দ্র অধ্যাপনাতেও বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ছাত্রসমাজে তাঁর আদর্শমুখী ব্যক্তিত্ব, দরদী কল্যাণার্থী দৃষ্টিভঙ্গী এবং দক্ষ অধ্যাপনা বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করেছিল; অচিরেই ছাত্রপ্রিয় তরুণ অধ্যাপকরূপে খ্যাত হয়ে ওঠে তাঁর নাম। ছাত্রদের শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা, দুই-ই যথেষ্ট আকর্ষণ করে নিতে পেরেছিলেন তিনি। কলেজের পরিচালন সমিতিও বিশেষ সমীহের দৃষ্টিতে দেখতেন এই তরুণ অধ্যাপকটিকে। কিন্তু গ্রাম ও পরিপার্শ্বস্থ উন্নয়নমূলক নানাবিধ কাজকর্ম এবং সফল অধ্যাপনার মধ্যেও তাঁর মনে এক অতৃপ্তি বাসা বেঁধে ছিল; মনে হত, এই বুঝি সব নয়, আরও কী যেন চাই, যা না পেলে অন্তর পূর্ণ হচ্ছে না, জীবন সার্থক হয়ে উঠছে না। শ্রীকৃষ্ণের মত সর্বসমন্বয়কারী ব্যক্তিত্বশালী কোন পুরুষের সান্নিধ্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা উদ্বেল করে তুলত তাঁর চিত্তকে; ইচ্ছা হত অমন সর্বপূরক সদ্গুরুর চরণে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণ করে সম্পূর্ণ আত্মোপলব্ধির আস্বাদন পেতে। অগ্রজ যোগেন্দ্রনাথ হালদার কর্মোপলক্ষে একসময় বার্মা (বর্তমান মায়ানমার)-য় ছিলেন। সেখানে যাজনকর্মে আগত ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর মাধ্যমে যোগেন্দ্রনাথ সৎনাম করেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের চরণে আশ্রয় লাভ করেন। তিনি অনুজ শরৎচন্দ্রের আধ্যাত্মিক আকূতি লক্ষ্য করে তাঁকে ক্রমে ক্রমে বলতে থাকেন নিজ প্রাপ্তির কথা, পরমপুরুষের তাৎপর্য। শরৎচন্দ্রের অন্তরের গভীরে জেগে ওঠা ঈশ্বরপিপাসা তৃপ্তি খোঁজে অগ্রজ-প্রদর্শিত পথে। হিমাইতপুর আশ্রমে গিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখে তাঁর বোধ হয়, এই তাঁর অন্বিষ্ট সর্বসমন্বয়মূর্তি শ্রীকৃষ্ণ-সদৃশ পুরুষোত্তম। অনন্ত মহারাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাতেও বিশেষ মুগ্ধ ও তৃপ্ত হন তিনি। অবশেষে ১৯৩০ খৃষ্টাব্দে মহারাজের মাধ্যমেই সৎনাম প্রাপ্ত হন তিনি।
দীক্ষাগ্রহণের পর যথাসাধ্য সাধন অনুশীলনের ফলে সমাজসেবী অধ্যাপকের চৈতন্যরাজ্যে আসতে থাকে ব্যাপক পরিবর্তনের স্রোত। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবাদর্শের আলোকে অন্যভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে জগৎ ও জীবন সংক্রান্ত সমস্ত ধারণা। পরিবেশ ও সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের মূল সূত্র কী- এ বিষয়ক তাঁর এতাবৎ পালিত যাবতীয় বোধ ও সংস্কার সমূলে বদলে যেতে লাগল। তিনি উপলব্ধি করতে আরম্ভ করলেন, বাইরে থেকে তৈরি করে দেওয়া উন্নয়নের সোপান মানুষকে যথার্থ উন্নয়ন দিতে পারে না; উন্নতির প্রথম কথা আভ্যন্তরীণ সুকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চরিত্র গঠন, মূর্তিমান কোন আদর্শকে কেন্দ্র করেই যা হওয়া সম্ভব। মূর্তিমান আদর্শের নির্দেশ নিঃশর্তভাবে পালনের মধ্য দিয়েই বাধাহীনভাবে এগিয়ে চলা যায় সপরিবেশ বর্ধনের পথে। এই বোধ তাঁর মধ্যে কত গভীরভাবে গেঁথে গিয়েছিল তা বোঝা যায় পরবর্তীকালের এক ঘটনায়। বহুদিন পরে প্রবীণ বয়সে এক সৎসঙ্গী যুবককে তিনি বলেছিলেন-ঠাকুরের কাছে যদি না আসতাম, তাহলে এতদিনে হয়তো দেশময় আরও কতগুলো স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, হাসপাতাল তৈরি করে দেশটাকে আরও অধঃপাতে পাঠাবার, গোল্লায় দেওয়ার ব্যবস্থা করতাম! অর্থাৎ আদর্শকেন্দ্রিক সুনিয়ন্ত্রণ ব্যতীত বাহ্যিক সংগঠনকর্ম উন্নয়নের পরিবর্তে সমাজের ক্ষতিসাধনই করে, এই ছিল তাঁর অভিমত।
দীক্ষার কিছুকাল পরে শ্রীশ্রীঠাকুর শরৎচন্দ্রকে বললেন, শরৎদা, আপনার ছুটিগুলো আমায় দেবেন? সেই কথা অনুযায়ী শরৎচন্দ্র গ্রীষ্মকালীন ও পূজার সময়কার অবকাশে চলে যেতেন হিমাইতপুরে, ঠাকুরের কাছে। ঠাকুরের সান্নিধ্যসুধায় পূর্ণ হয়ে উঠত অন্তর, মনেপ্রাণে পেতেন এক নবীন উদ্দীপনা। আশ্রমের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন এই দুটি দীর্ঘ ছুটির সময়। আপন হৃদয়ের তাগিদে এবং ঠাকুরের নির্দেশে দক্ষ অধ্যাপক সুবক্তা শরৎচন্দ্র যাজনকার্য শুরু করেন; যত বেশি তৃষিত মানুষকে অমৃতপ্রাপ্তির পথে নিয়ে আসা যায়, ততই বাড়ে নিজের তৃপ্তির গভীরতা। মহারাজ অনন্তনাথ রায়ের দেহত্যাগের পর ঠাকুরের অভিপ্রায় অনুসারে কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্যকে ঋত্বিগাচার্যরূপে পুরোভাগে রেখে গঠিত হল ঋত্বিক সংঘ। এই সময় ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর প্রতিঋত্বিকের পূত পাঞ্জা লাভ করেন তিনি-ঠাকুরের প্রতিনিধি হয়ে মানুষকে সৎনাম বিতরণের অধিকার অর্জনে ধন্য হন। ক্রমশই বাড়তে থাকে টান; শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রেমের জোয়ার সতত বর্ধনমুখী, এখানে হ্রাসের বা ভাটার কোন সম্ভাবনা নেই। অবশেষে অধ্যাপনা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সব ভেসে গেল সে সর্বপ্লাবী জোয়ারের স্রোতে, পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে নিশ্চিন্ত হলেন শরৎচন্দ্র; ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে হিমাইতপুর আশ্রমে চলে এলেন সপরিবারে স্থায়িভাবে-নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োগ করলেন তাঁর কর্মসাধনের উদ্দেশ্যে।
অধ্যাপনা ছেড়ে স্থায়িভাবে আশ্রমে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়াতে তাঁর নিজের গ্রামসহ আশেপাশের সব ক’টি গ্রামের লোক অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়েন এবং নানাভাবে শরৎচন্দ্রকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁর মত প্রাণদৃপ্ত, সর্বহিতাকাঙ্ক্ষী, মনন-প্রোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বকে স্বভাবতই কেউই ছেড়ে দিতে চাইছিলেন না। বাগেরহাট কলেজ থেকে তাঁকে ভাইস প্রিন্সিপাল পদের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আশায়, কিন্তু সাগরমুখী নদীর মত অদম্য তাঁর নিজেকে নিবেদনের আকাঙ্ক্ষা, কোন কিছুতেই তাঁকে টলানো গেল না। তখন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায় দেওয়ার সময় সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদায় অভিনন্দনে ভরিয়ে দিলেন তাঁকে। কলেজ থেকে দুটি এবং নিজের ও আশেপাশের গ্রাম থেকে আরও পাঁচটি অভিনন্দনবার্তা পান তিনি যার মধ্যে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং তাঁকে বিদায় দেওয়ার বেদনার অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে। এই অভিনন্দন বার্তাগুলির কথা শ্রীশ্রীঠাকুরের গোচরে এলে তিনি অত্যন্ত আগ্রহসহকারে ঐগুলি চেয়ে নিয়ে পাঠ করেন এবং কৃতী সন্তানের গর্বিত পিতার মত উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন।
আশ্রমে যোগদানের পর থেকেই শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যাজনকর্মে বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্যের গভীরতা, ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই বক্তব্য প্রকাশের দক্ষতা, আন্তরিক এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ-সবই মানুষকে আকর্ষণ করত। তাঁর স্বভাবের আর একটি বিশেষ উল্লেখ্য দিক ছিল তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও সময়ানুবর্তিতা। ১৯৪২ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলার কর্মীদের একত্র করে ঠাকুরের ইচ্ছানুযায়ী প্রাথমিকভাবে দুটি ভ্রাম্যমান কর্মীদল বা ট্যুরিং ব্যাচ গঠিত হয়; তার একটির নেতৃত্ব দেন শরৎচন্দ্র হালদার ও অপরটির ভার গ্রহণ করেন প্রফুল্লকুমার দাস (পরবর্তীকালে ‘আলোচনা-প্রসঙ্গে’-র সংকলক)। এর পরে আরও দু’টি ট্যুরিং ব্যাচ গঠিত হয়। এই ভ্রাম্যমান দলের নেতা হিসাবে সারা ভারতে-বিশেষত পূর্বের আসাম অঞ্চলে ও পশ্চিমের মহারাষ্ট্রে শরৎচন্দ্র অগণিত মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। প্রসঙ্গত এই ট্যুরিং ব্যাচ-এর কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে কয়েকটি কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এঁরা যে-অঞ্চলে যেতেন, সেখানকার সমাজের প্রতিপত্তিশালী গণ্যমান্য ব্যক্তিসমূহের সঙ্গে প্রথমে পরিচতি হয়ে, ঠাকুরের আশীর্বাদ-উদ্ভাসিত ব্যক্তিত্বে তাঁদের মুগ্ধ করে, তাঁদেরই মাধ্যমে সে-সমস্ত সমাজের অভ্যন্তরে শ্রীশ্রীঠাকুরের সর্বকল্যাণসন্ধী ভাবধারা পৌঁছে দিতেন-দলে দলে মানুষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সৎনাম গ্রহণে প্রবৃত্ত হত। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-লাইব্রেরি, মন্দির- মসজিদ, বার লাইব্রেরি, কমিউনিটি হল ইত্যাদি জায়গায় নানা আলাপ আলোচনা, বক্তৃতা সভা, প্রশ্নোত্তর পর্ব ইত্যাদির মাধ্যমে সকল সম্প্রদায়ের সকল মতের মানুষকে মাতিয়ে তুলতেন এইসব সুযোগ্য কর্মীর দল, যাঁদের অন্যতম মধ্যমণি ছিলেন শরৎচন্দ্র। অনেক সময় স্থানীয় ডাকবিভাগ থেকে সে-অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সন্ধান নিয়ে নিতেন ট্যুরিং ব্যাচ-এর কর্মীবৃন্দ।
দীপ্তপ্রাণ শরৎচন্দ্র যাঁর আদেশ ও আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন যাজন পথে, তাঁরই ভরসায় নিঃশঙ্কচিত্তে রেখে যেতেন স্বীয় পরিবার-পরিজনকে। হিমাইতপুর আশ্রমে কিংবা আশ্রমকর্মীদের পরিবারে তখন বস্তুগত স্বাচ্ছন্দ্য একেবারেই ছিল না। শরৎ-জায়া রাধারাণী দেবীর কাছে শোনা কিছু কাহিনী এখানে উল্লেখ্য, যাতে ভক্তের ভগবানের করুণার আভা বিচ্ছুরিত।
বাগেরহাট কলেজের অধ্যাপনা ত্যাগ করে আশ্রমে পাকাপাকিভাবে চলে আসার পর শরৎচন্দ্রকে একদিন শ্রীশ্রীঠাকুর ডেকে বলেন, শরৎদা, কত হলে আপনাদের চলে? তাঁর স্ত্রী রাধারাণী দেবীকেও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসা করেন, কী রে, কত হলে তোদের চলে? উত্তরে তিনি বলেন, আপনি আর্শীবাদ করে যা দেবেন, তাতেই আমাদের চলবে। শরৎচন্দ্র জানান যে মাসে ষাট টাকা হলেই চলবে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, আপনার মা’কে পাঠাতে হয় না? আরও পনের টাকা মায়ের জন্য থাকুক। তখন স্থির হয়- মোট পঁচাত্তর টাকা করে মাসে দেওয়া হবে শরৎচন্দ্রের পাঁচটি সন্তানসহ পরিবার প্রতিপালনের জন্য। ঠাকুর মধ্যম ভ্রাতা পূজনীয় ক্ষেপুদাকে ডেকে সেইমত নির্দেশ দ্যান।
এর কিছুদিন পর ঠাকুর বলেন-শরৎদা অধ্যাপনা ছেড়ে এসেছেন, ওঁর পরিবারকে পুরোপুরি একশ টাকা করেই দেওয়া হোক। শরৎচন্দ্র তখন যাজনকর্ম উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ায়। তাঁর স্ত্রী রাধারাণী দেবী সই করে টাকা আনতে গিয়ে দেখেন, পঁচাত্তরের জায়গায় একশ টাকা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বেশি টাকা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করায় যিনি টাকা দিচ্ছিলেন তিনি বলেন যে এরকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাধারাণী দেবী বলেন, উনি (শরৎচন্দ্র) তো এখন এখানে নেই, ওঁর অনুমতি ব্যতীত আমি বেশি টাকা নিতে পারব না। তখন ঐ কর্মী ইষ্টভ্রাতা তাঁকে বলেন, আপনি সই না করেই তাহলে পঁচাত্তর টাকা নিয়ে যান, শরৎদা অনুমতি দিলে সই করে বাকি টাকা নেবেন।
রাধারাণী চিঠিতে শরৎচন্দ্রকে বিষয়টি জানালে তাঁর কাছ থেকে উত্তর পান- ওঁরা আশীর্বাদ করে যা দেবেন, তা মাথা পেতে নিতে হয়, তবে অতিরিক্ত পঁচিশ টাকা তুমি বরং ঠাকুর-প্রণামীরূপে দিও। এভাবেই চলল আট মাস। এরপরে শরৎচন্দ্রকে ডেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অকস্মাৎ একদিন বললেন, শরৎদা, ওটা (আশ্রম থেকে দেওয়া টাকাটা) ছেড়ে দিতে পারেন না? উত্তরে শরৎ বলেন, ভেবে দেখি। দু’একদিন পর রাধারাণী গেছেন ঠাকুর-প্রণামে, তাঁকে ডেকে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করেন-কী রে, কী ঠিক করলি?
-কোন্ ব্যাপারে?
-কেন, শরৎদা তোকে কিছু বলেনি?
-না তো!
-তাহলে বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করে নে-
বাড়ি এসে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে ঠাকুর অ্যালাওয়েন্স ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। দুজনে মিলিতভাবে স্থির করেন যে ঠাকুরের যখন ইচ্ছা তখন তা ছেড়ে দেওয়াই ভাল; তাঁর আশীর্বাদে ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে। সে-কথা ঠাকুরকে জানাতে তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন; বলেন, শরৎদা, আগে আপনার যজমানদের কাছে চাইবেন, তারপর দরকার হলে চাইবেন অন্যান্য গুরুভাইদের কাছে।
তদনুযায়ী এরপর থেকে যজমান এবং অন্যন্য গুরুভাইদের দানের ওপর নির্ভর করেই চলল তাঁর সংসারযাত্রা। শরৎ-গৃহিণী ডাল ভেঙে, বড়ি দিয়ে হাসিমুখে সংসার সামলাতেন অটুট ইষ্টপ্রণতা নিয়ে। একরকম স্থিতিশীল অবস্থা হয়ে উঠেছিল তাঁদের।
কিন্তু আবার দৃশ্যপটের পরিবর্তন হল। শ্রীশ্রীঠাকুর ১৯৪৬-এর ২রা সেপ্টেম্বর হিমাইতপুর ছেড়ে দেওঘর এলেন। ঠাকুরের মধ্যম ভ্রাতা পূজনীয় ক্ষেপুদার শরীর তখন অসুস্থ থাকায় ঠাকুরের নির্দেশে দিন সাতেক পর ক্ষেপুদা কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে নিয়ে সপরিবারে শরৎ এলেন দেওঘর। আবার নতুন করে গড়ে তুলতে হল সবকিছু।
শরৎচন্দ্র দেওঘরে এসেও আগের মতই ব্যাপক যাজনকর্মে ব্যাপৃত থাকতেন। এদিকে পাঁচটি সন্তান নিয়ে রাধারাণী সংসার চালান ঠাকুরের আশীর্বাদ ভরসা করে। ইষ্ট কাজের ব্যাঘাত হতে পারে মনে করে কখনও স্বামীর কাছে কোন অসুবিধা বা অনটনের কথা জানাতেন না তিনি। একদিন এমন অবস্থা হল যে ঘরে কিছুই প্রায় নেই, রাত্রি কাটলে পরদিন ছেলেমেয়েদের কী খেতে দেবেন, জানা নেই। সন্ধ্যাবেলা ঠাকুর- প্রণামে গিয়ে ঠাকুরের চোখের দিকে তাকান না রাধারাণী, পাছে চোখে চোখ পড়লে ঠাকুর কিছু জিজ্ঞাসা করে বসেন! ঠাকুর কিন্তু বারবারই তাকাচ্ছেন তাঁর মুখের দিকে, আর উনি কেবলই দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুয়ে শুয়ে অরণির গুরুভক্তির উপাখ্যান শোনাচ্ছেন। বেশ রাত হয়ে গেছে। হঠাৎ দরজায় কারও করাঘাত। ‘কে’-জিজ্ঞাসার উত্তরে বুঝলেন-তদানীন্তন সেক্রেটারি প্রমথনাথ দে এসেছেন সস্ত্রীক। দরজা খুলে তাঁদের আপ্যায়ন করে বসালেন। প্রমথনাথ বললেন, প্রায়ই ভাবি আসব, শরৎদা এখানে থাকেন না, আপনাদের খোঁজ খবর নেওয়া তো আমাদের কর্তব্য, কিন্তু সময় হয়ে ওঠে না। তারপর নানা কথাবার্তা, ঠাকুরেরই নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ আলোচনা চলল বহুক্ষণ পর্যন্ত। অনেক রাতে ওঁর বিদায় নেওয়ার জন্য উঠলেন। দরজা পর্যন্ত এগোতে গেলেন রাধারাণী দেবী, প্রমথনাথ তখন অকস্মাৎ তাঁর ভৃত্যের নাম ধরে ডেকে বললেন, ওরে, ঝুড়িটা ভেতরে দিয়ে যা। এতক্ষণঅ পেক্ষমান ভৃত্যটি মস্ত এক ঝুড়ি ভেতরে এনে রাখল-তাতে রয়েছে দশ সের চাল, আনুষঙ্গিক ডাল, মশলা, তেল, আনাজপত্র যাবতীয় জিনিষ। প্রমথনাথ বললেন, জিনিষগুলো গুছিয়ে রাখুন, আপনাদের জন্য এনেছি। অভিভূত রাধারাণীর তখন দু’চোখ ছাপিয়ে অশ্রুধারা নেমেছে। তাই দেখে তাঁরা বললেন-কী হল, কাঁদছেন কেন? আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে কোনমতে তিনি বলেন, এ আমার দুঃখের কান্না নয়, পরম দরদী অন্তর্যামীর করুণার কথা ভেবে আমার চোখের জল সামলাতে পারছি না।
নিরবচ্ছিন্ন যাজন ছিল শরৎচন্দ্র হালদারের কর্মধারার মূল লক্ষ্য। প্রায় সমগ্র ভারত তিনি পরিক্রমা করে বেরিয়েছেন যাজন উপলক্ষে। ১৯৪৭-এর ডিসেম্বর মাসে টাটানগরে শ্রীশ্রীঠাকুরের উৎসব মহা সমারোহে উদ্যাপিত হয় নগেন্দ্রনাথ সেন, কমলাক্ষ সরকার ও অন্যান্য ইষ্টভ্রাতার উদ্যোগে। সেই উপলক্ষ্যে পূজ্যপাদ বড়দা, ঋত্বিগাচার্য্য কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য, শরৎচন্দ্র হালদার, প্রফুল্লকুমার দাস প্রমুখ টাটানগরে যান। পূজ্যপাদ বড়দা, ঋত্বিগাচার্য্য ও শরৎচন্দ্র একই সঙ্গে টাটানগর পৌঁছান। শরৎচন্দ্র হালদারের সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র গুরুপ্রসাদ। নগেন্দ্রনাথ সেন সকলকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শরৎচন্দ্রকে বলেন, “দাদা, একটু অপেক্ষা করুন; দুটি গাড়ি জোগাড় হয়েছিল-একটিতে বড়দাকে, আর একটিতে কেষ্টদাকে তুলে দিয়েছি, আপনার জন্য আর একটি গাড়ি নিয়ে আসছি।” এই বলে তিনি গাড়ির সন্ধানে যাওয়ামাত্র শরৎচন্দ্র পুত্র গুরুপ্রসাদকে বলেন, “নে, মাল তুলে নিয়ে চল্ রওয়ানা হই।” পিতাপুত্র দুজনে নিজেদের মালপত্র নিয়ে হনহন্ করে হেঁটে উৎসবস্থলে উপস্থিত হলেন। নগেন্দ্রনাথ অত্যন্ত বিব্রত হয়ে বললেন-“আপনি হেঁটে এলেন কেন? আপনার জন্য গাড়ি নিয়ে গিয়ে আর আপনাকে পেলাম না!” শরৎচন্দ্র দৃঢ় প্রত্যয়ে উত্তর দিলেন-“আমার ঠাকুরের উৎসবে আমি এসেছি; আমি কি আপনার অতিথি যে আপনি গাড়ি নিয়ে আসবেন আমার জন্য আর আমি সে গাড়িতে যাব? আমি এসেছি আমার নিজের তাগিদে।” এই ছিল ইষ্টসর্বস্ব মানুষটির পরিচয়। উল্লেখ্য, টাটানগর উৎসবের অল্প কিছুদিন পর থেকেই শ্রীশ্রীঠাকুর যতি বিষয়ক আলাপ আলোচনা ইত্যাদি শুরু করেন। ১৯৪৮-এর ১২ই অক্টোবর শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর-বাংলার অভ্যন্তরে যতি-আশ্রমের সূত্রপাত করেন। সম্পূর্ণত সংসার বিমুক্ত সন্ন্যাসীপ্রতিম জীবনযাপন করে যতিগণ তীব্র সাধনা ও তপশ্চর্যার মাধ্যমে সৎসঙ্গ আন্দোলনের মূল ভাবধারা যথাযথভাবে ধারণ করে রাখবেন এবং উপযুক্তভাবে তা পরিবেশনের ব্যবস্থা করবেন, এই ছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের অভীপ্সা। এই উদ্দেশ্যে কালিদাস মজুমদার, যতীন্দ্রনাথ দাস, শরৎচন্দ্র হালদার, যন্তা সুরেন্দ্রমোহন বিশ্বাস, নরেন্দ্রনাথ মিত্র এবং ননীগোপাল চক্রবর্ত্তী এই ছ’জনকে ঠাকুর ‘যতি’ অভিধায় অভিহিত করে পারিবারিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যতি আশ্রমে বসবাসের নির্দেশ দেন। ত্যাগ, বৈরাগ্য, তপশ্চর্যায় শরৎচন্দ্র ইষ্টনির্দেশ মূর্ত করায় ছিলেন বদ্ধপরিকর। নিজ পরিবারকে অন্যান্য পরিবারের মত একই দৃষ্টিতে দেখতে হবে-যতিগণের প্রতি ঠাকুরের এই নির্দেশ তিনি বিশেষভাবে অনুসরণ করে চলতেন। ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দে ঋত্বিকের পূত পাঞ্জা প্রাপ্ত হন তিনি। যাজন উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ানো ছিল তখনও অব্যাহত। একবার আগরতলা যাওয়ার কথা। ঠাকুর ডেকে বললেন-শরৎদা, ওখান থেকে আমার জন্য কয়েকটা বেতাং (বেতের ডগা) আনবেন তো! তিনি ‘আজ্ঞে, আনবো’ বলে প্রণাম করে চলে যাওয়ার পর সম্মুখে উপস্থিত ইষ্টকর্মী দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ঠাকুর রহস্যঘন ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলেন-বল্ তো, ওকে বেতাং আনতে বললাম কেন? দেবীপ্রসাদ উত্তর দ্যান, আজ্ঞে, তা তো আপনিই জানেন। ঠাকুর বলেন, বক্তৃতার ঝোঁকের চেয়ে আমার ঝোঁকটা বেশি থাকলে ও saved হবে, এই জন্য বললাম।
কিছুদিন পর আগরতলা থেকে ফিরলেন শরৎচন্দ্র, ঠাকুরের জন্য কিছু ‘বেতাং’ • সংগ্রহ করে এনে দিলেন তাঁকে। তারপরই শুরু হল মারাত্মক রক্ত আমাশয়, প্রায় প্রাণান্তকর অবস্থা। অনেক চিকিৎসায় এবং ঠাকুরের দয়ায় আরোগ্য লাভ হল। সম্ভবত ঐ বেতাং সংগ্রহার্থে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যাওয়ার ফলেই ঐ প্রাণঘাতী রোগ বিদেশ বিভুঁই-এ তাঁকে কাবু করে ফেলতে পারেনি, স্বীয় স্থানে ফেরা পর্যন্ত প্রতিহত হয়ে ছিল।
আর একবারের ঘটনা। শরৎচন্দ্রের এক কন্যার অকাল মৃত্যুর পর তাঁর শিশু সন্তানগুলির প্রতিপালনের দায়িত্বও শরৎচন্দ্রের পরিবারের উপর এসে পড়ে। শরৎচন্দ্র তখন যতি-আশ্রমে থাকতেন। কন্যার মৃত্যুর মাস দেড়েক পরে অকস্মাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে তাঁর স্মৃতি লোপ ও বাক্রোধ হয়ে যায়। তাঁর সহধর্মিণী রাধারাণী দেবী স্বামীর অসুস্থতার সংবাদ পাওয়ামাত্র ছুটে আসেন এবং যতি আশ্রমের বাইরে একটি ঘরে থেকে অতন্দ্রভাবে স্বামীসেবায় নিরত হন। শ্রীশ্রীঠাকুরও সেসময় অত্যন্ত অসুস্থ, তাই কেউ তাঁর দর্শন পাচ্ছে না। রাধারাণী দেবী মনে ভাবেন, ‘একবার যদি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারতাম! তাঁকে সব নিবেদন করতে পারলেই সব বিপদ কেটে যেত।’ অবশেষে এক ফাঁকে রাধারাণী পৌঁছে যান ঠাকুরের কাছে, তাঁর চরণে নিবেদন করেন শরৎচন্দ্রের অবস্থা। ঠাকুর সব শুনে নিতান্ত ব্যস্ত হয়ে শরৎচন্দ্রের একই সঙ্গে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও কবিরাজি চিকিৎসার নির্দেশ দেন এবং সেইমত চিকিৎসা চলতে থাকে। তাঁর চিকিৎসার জন্য ঠাকুর পাটনার সিভিল সার্জনকেও নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। প্রতিনিয়ত শরৎচন্দ্রের অবস্থার খোঁজ নিতেন ঠাকুর। বাগ্মীপ্রবর মানুষটির কন্ঠ তখন সম্পূর্ণ নীরব। খুব ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি ফিরে এলেও বাকস্ফূর্তি আর হয় না। ঠাকুর আশ্বাস দেন- ‘হবে, আবার সব হবে, শরৎদা আবার বক্তৃতা করতে পারবেন।’ রাধারাণী দেবীকে বলেন, ‘তুই গান করতে পারিস?’ উত্তরে রাধারাণী ‘না’ জানালে তিনি বলেন, ‘এক কাজ কর, ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে শরৎদার সামনে যতজোরে সম্ভব ‘উউউ’-এরকম আওয়াজ করে চলবি। রাধারাণী দেবী ঠাকুরের কথামতন তাই করতে লাগলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার করুণায় এবং রাধারাণী দেবীর ঐকান্তিক সেবায় চৌদ্দ দিনের দিন শরৎচন্দ্র ‘জয়গুরু’ শব্দটি অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারলেন। পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে এর পরেও তাঁর আরও বেশ কিছুদিন লেগেছিল। ঠাকুরের কাজ করতে পারছেন না এই আক্ষেপে তখন মাঝে মাঝেই তিনি আকুল হয়ে উঠতেন। একদিন শ্রীশ্রীঠাকুরকে বলেন- ‘আমার আর থেকে কী লাভ? আমি আপনার কাজ করতে পারছি না!’ ঠাকুর উত্তরে বলেন, ‘না শরৎদা, আপনাকে থাকতে হবে। আপনি মহাস্থবিরের মত এখানে বসে থাকবেন, তাতেই আমার অনেক কাজ হবে।’ পরমদয়ালের দয়ায় তিনি পুনরায় কর্মক্ষমতা ফিরে পান।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রবর্তিত নীতিবিধির রূপায়ণে তাঁর ছিল অপরিসীম ঐকান্তিকতা। বিপ্রবর্ণে নিজের দুই কন্যার বিবাহ দিয়েছিলেন ঠাকুর-ঈপ্সিত ‘বারুজীবী সম্প্রদায়ের কন্যার উচ্চ অসবর্ণ বিবাহ কাম্য’-এই বিধি অনুসরণে। অনুলোম অসবর্ণ বিবাহের আদর্শ রূপায়ণের বিষয়টি সম্যকরূপে অনুসরণ করা অত্যন্ত চারিত্রিক দৃঢ়তা ও তীব্র আদর্শানুরাগ সাপেক্ষ। অনুলোম অসবর্ণ বিবাহের অর্থ হল সবর্ণে এক স্ত্রী গ্রহণের পর নিম্নবর্ণের কন্যার পাণিগ্রহণ। সুতরাং শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শ রূপায়িত করার তাগিদে তিনি দুই কন্যারই অনুলোম অসবর্ণ বিবাহ দিয়ে সচেতনভাবেই তাদের সপত্নীগৃহে প্রেরণ করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, তাঁর কন্যাগণ সকলেই সুরূপা এবং শিক্ষিতা। ব্যক্তিগত জীবনে বহু আঘাত পেয়েছেন; সহ্য করতে হয়েছে এক পুত্র ও এক কন্যার অকাল মৃত্যুশোক এবং তজ্জনিত পারিবারিক বিপর্যয়; কিন্তু তাঁর ইষ্টানুরক্তি কখনও টলেনি।
বর্তমানে আশ্রমকর্মীর পুত্রগণ অনেকেই আশ্রম পরিত্যাগ করে বহির্জগতে কর্মে নিযুক্ত হচ্ছেন এবং বাইরের লোক আসছেন আশ্রমের কাজে। শ্রীশ্রীঠাকুরের কিন্তু এরকম অভিপ্রেত ছিল না। তিনি আশ্রমিকগণ সপরিবারে আশ্রমিক এবং ইষ্টকেন্দ্রিক হয়ে চলুক-এমনই চাইতেন। শরৎচন্দ্র তাঁর পুত্র গুরুপ্রসাদ এম. এ. পাশ করার পর তাঁকে বলেছিলেন, আমি ঠাকুরের কথায় অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে তাঁর কাজ নিয়ে সারাজীবন চলেছি, আমার ইচ্ছা, তুমিও ঠাকুরের কাজ নিয়েই থাক। তাঁর সুযোগ্য পুত্র পিতার আদর্শপ্রাণতার সার্থক উত্তরাধিকারীরূপে আশ্রমের তপোবন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী মানুষ ছিলেন শরৎচন্দ্র। প্রত্যুষে ভ্রমণে বেরোতেন প্রতিদিন, এবং তখন বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে সকলের খবরাখবর নিতেন। তাঁর মাধ্যমে সৎনাম প্রাপ্ত বহুসংখ্যক মানুষের মধ্যে গণ্যমান্য, বিশিষ্ট, বিদগ্ধ ব্যক্তি ছিলেন অনেক। তিনি সকলের সঙ্গেই চিঠিপত্র, যাতায়াত ইত্যাদির মাধ্যমে যথাসাধ্য যোগাযোগ বজায় রাখতেন। উৎসবের সময় বা কনফারেন্স-এ আগত বহু কর্মী এবং ইষ্টভ্রাতা তাঁদের টাকাপয়সা শরৎচন্দ্রের কাছে গচ্ছিত রাখতেন, নিয়ে ঘোরাফেরা করলে হারিয়ে কিংবা চুরি হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায়। তিনি প্রত্যেকের টাকা পৃথক পৃথক ভাবে নাম লিখে রেখে দিতেন এবং শত প্রয়োজনেও কখনও একটি সিকিও অল্প সময়ের জন্যও নেননি; ‘এখনকার মত কাজ চালিয়ে নিই, যার টাকা তাকে দেওয়ার আগেই পূরণ করে রাখব’-এ ধরনের কোন শৈথিল্যকে তিনি কখনও প্রশ্রয় দিতেন না। অসামান্য বাগ্মিতা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সংযোগে যে কোন পরিস্থিতি নিজের বশে নিয়ে আসার ক্ষমতা ছিল তাঁর। কোন সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে সংসারে নারীপুরুষের দায়িত্ব ও অবস্থান বিষয়ে এমন কিছু হয়তো বললেন যে উপস্থিত পুরুষ শ্রোতৃবৃন্দ সোল্লাসে সমর্থন করলেন তা, অপরপক্ষে নারীমণ্ডলী কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে গেলেন। কিছু পরেই হয়তো আবার তাঁর বক্তব্যে নারীমহল উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, পুরুষপক্ষ তখন বিব্রতমুখে চুপ!
১৯৫৭ খৃষ্টাব্দে নববর্ষ উৎসবের সময় পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিষ্ট নেতা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ করে আনা হয়। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করলেও তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ধ্যানধারণা-বিরোধী কিছু বক্তব্য রাখেন। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার তৎকালীন উপ-সম্পাদক, ইষ্টভ্রাতা পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়। বঙ্কিমবাবুর বক্তব্যের পর তিনি তাঁর বক্তব্যে কমিউনিজম্-এর বিরুদ্ধ যুক্তির অবতারণা করেন। পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শেষ হওয়ামাত্র বঙ্কিম মুখোপাধ্যায় পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে কমিউনিজম্-এর সপক্ষে ও বিরুদ্ধবাদী বক্তার মত খণ্ডনে একের পর এক যুক্তি প্রয়োগ করতে থাকেন। তিনি থামার পর আবার পাঁচুগোপাল তাঁর বক্তব্য খণ্ডন করেন। এভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বস্তি-উৎসব সভা এক অস্বস্তিকর বিতর্কসভায় পরিগণিত হওয়ার উপক্রম হয়। পাঁচুগোপালের বক্তব্য শেষ হওয়ার মুখে বঙ্কিম মুখোপাধ্যায় উত্তেজিতভাবে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। এই সময় পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন শরৎচন্দ্র হালদার-বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়কে কোন সুযোগ না দিয়ে মাইক টেনে নিয়ে বলতে শুরু করলেন- কমিউনিস্ট মানে যদি com une ist, অর্থাৎ একের সঙ্গে সংযুক্ত বোঝায়, কমিউনিজম্ মানে যদি সকলের বেঁচে থাকার, বেড়ে ওঠার, ভালো থাকার পথকে বোঝায়, তবে Sri Sri Thakur is a communist to his backbone.
শরৎচন্দ্রের এই কথা শোনামাত্র উচ্ছ্বসিত হয়ে হাততালি দিয়ে উঠলেন বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়। এরপর কমিউনিজম্-এর সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের মতবাদের সাযুজ্য এবং ঠাকুরের ভাবধারায় স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে অত্যন্ত প্রাঞ্জল এক আলোচনা করে সমগ্র পরিস্থিতিটিই পরিবর্তিত করে ফেললেন বাগ্মীপ্রবর শরৎচন্দ্র। ঠাকুরকে যথার্থভাবে অন্তরে নিয়ে চলার ফলেই তাঁর সহজাত নেতৃত্বের ক্ষমতা আরও বিকশিত হয়ে উঠেছিল।
সভা-সমাবেশে আকর্ষণীয় বক্তৃতা দেওয়া ছাড়াও শরৎচন্দ্র বৈঠকী আলাপ- আলোচনাতেও ছিলেন বিশেষ পটু; ইষ্টভ্রাতারা যে যেখানে সৎসঙ্গ অধিবেশনের ব্যবস্থা করতেন, সকলেই চাইতেন শরৎদাকে; তিনিও প্রত্যেক স্থানে হাজির হতেন, তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতায়, মনোজ্ঞ ঘরোয়া আলোচনায় অনুপ্রাণিত করে তুলতেন উপস্থিত সকলকে। সামাজিক দায়বদ্ধতা, যা শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশেষ অভিপ্রেত ছিল, যেন প্রকৃতিগত ছিল তাঁর এবং ঠাকুরের সংস্পর্শে তা বহুগুণিত হয়ে ওঠে। গৌরবর্ণ, সুন্দর কান্তি ছিল তাঁর, ঋজু চরিত্রের সমন্বয়ে যা সকলের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করত।
একা কখনও কিছু উপভোগ করা ছিল তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। যখনই যেখানে যেতেন, যা করতেন, সঙ্গে থাকত বেশ কিছু সঙ্গী। চমৎকার রান্নার হাত ছিল তাঁর। শাক, বড়ির ঝোল, চচ্চড়ি, মোচাঘন্ট ইত্যাদি নানা পদ মেয়েদের মত রীতিমত গুছিয়ে সুন্দর করে রাঁধতে পারতেন। ঠাকুর-ঈপ্সিত সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্ন পারদর্শিতা ছিল তাঁর চরিত্রগত। যতি- আশ্রমে থাকাকালীন ভিক্ষালব্ধ উপকরণে সযত্নে নানা পদ রান্না করে যতি আশ্রমস্থ সকলকে, বিশেষত আশ্রম দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত খগেন মণ্ডল ও তার পরিবারবর্গকে খাওয়াতেন। যা রান্না করতেন, তার সামান্য অংশই নিজের জন্য থাকত, অধিকাংশই বিতরণ করতেন। অপরকে উপভোগ করানোর আকাঙ্ক্ষাই হয়তো পরম উপভোগ্য সদ্গুরু-প্রাপ্তি সকলের মধ্যে বিতরণ করার জন্য যাজন কাজে তাঁকে বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছে।
পাবনা থাকাকালীন ছোট্ট একটি ঘটনা। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর পরিচিত ভঙ্গীতে আধশোয়া অবস্থায় রয়েছেন; শরৎচন্দ্র সেদিকে আসছিলেন। ঠাকুর তাঁকে ডেকে নিজের পায়ের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তিনি ঠাকুরের পা টিপে দিতে লাগলেন ধীরে ধীরে। একটু পরে তাঁর দিকে তাকিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন-শরৎদা, ‘সর্ব ধর্মং পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।’ ঠাকুরের এই বলা তিনি আমৃত্যু অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।
যাটের দশকেই ঘটে তাঁর দুই সন্তানের অকালমৃত্যু। শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল -আগের মত আর বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু ইষ্টকর্মে ছেদ পড়েনি কখনও, প্রতি রবিবারে অনুসন্ধিৎসু সভা পরিচালনা করতেন, নিত্য ছিলেন যাজন-মুখর।
১৯৬৯-এর ২৬শে জানুয়ারী ঘনিয়ে এল সে কালরাত্রি-শ্রীশ্রীঠাকুরের ঐহিক লীলার অবসান হল। এর অল্পদিন পরে মার্চ মাসে তৎকালীন সৎসঙ্গ প্রেসিডেন্ট ভক্তপ্রবর সুশীলচন্দ্র বসুর প্রয়াণ ঘটে। তখন পূজ্যপাদ বড়দা (শ্রীশ্রীঠাকুরের জ্যেষ্ঠ আত্মজ)-র ইচ্ছানুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে শরৎচন্দ্র সৎসঙ্গের সভাপতি পদে বৃত হন এবং আমৃত্যু সেই পদে অধিষ্ঠান করেন। অবিরাম যাজন কর্মের অবকাশে বহু সাধু সন্ত মনীষীদের বাণী চয়ন করে ‘যুগবাণী’ নামে একটি সংকলন পুস্তিকা প্রকাশ করেন। Whither India নামক একটি মূল্যবান ইংরেজি পুস্তিকাও প্রণয়ন করেন তিনি।
প্রকৃতির নিয়মে জরা এবং তজ্জনিত অসুস্থতা দেখা দেয় শরৎচন্দ্রের শরীরে- মন যদিও ছিল সদাজাগ্রত, ইষ্টানুভবী। শারীরিক অসুস্থতার দরুন যতি-আশ্রম ছেড়ে পুরাণদহে পারিবারিক গৃহে অবস্থান করতে থাকেন তিনি। ক্রমেই আরও জীর্ণ, অশক্ত হয়ে পড়ে পার্থিব দেহমন্দির, অভ্যন্তরের আত্ম-দেবতা, শ্রীবিগ্রহ যেন অন্যতর নিগূঢ় কোন যাত্রায় অভিলাষী! অবশেষে, কালের অমোঘ বিধানে ১৯৮২ খৃষ্টাব্দের ১৯শে জুলাই একাশি বৎসর বয়সে নির্বাপিত হয় তাঁর ঐহিক জীবন প্রদীপ-পরম ঈপ্সিত পদে লাভ হয় পরমা গতি। শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনবৃদ্ধিদ ভাবাদর্শ প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত-প্রাণ শরৎচন্দ্রের নাম সৎসঙ্গ আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
_________________________________________
10