কেদারনাথ ভট্টাচার্য্য
বস্তুগত জীবনে বিশেষ সাফল্য, বৈষয়িক সমৃদ্ধি ও সামাজিক খ্যাতি-প্রতিপত্তির দুর্নিবার আকর্ষণ জয় করে যাঁরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের চরণে এসে নানাবিধ পার্থিব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে হাসিমুখে তাঁরই সেবায় নিজেদের নিঃশেষে নিবেদনের মাধ্যমে ধন্য হয়েছেন, প্রথিতযশা চিকিৎসক কেদারনাথ ভট্টাচার্য্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধানরূপে উল্লেখযোগ্য।
১৩০১ বঙ্গাব্দের ১৯শে ফাল্গুন (৪ঠা মার্চ, ১৮৯৫ খৃঃ) ঢাকা জেলার অন্নপুর গ্রামে বিশিষ্ট সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হরনাথ ভট্টাচার্য্যের পুত্র কেদারনাথের জন্ম হয়। তাঁর মাতার নাম সৌদামিনী দেবী। মাত্র চার বছর বয়সেই কেদারনাথের পিতৃবিয়োগ হয়। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে একটি তেজী, একরোখা, জোরালো সত্তার স্ফুরণ লক্ষ্য করা যায়। নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা আরম্ভ করেন পিতৃহীন বালক কেদারনাথ। বাড়ি থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরবর্তী তেঁওথা হাইস্কুলে পড়তে যেতেন; সেখানে কুমুদশঙ্কর রায় (পরবর্তীকালে প্রখ্যাত চিকিৎসক, যাদবপুর যক্ষা হাসপাতাল যাঁর নামাঙ্কিত) এবং কিরণশঙ্কর রায় (পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) প্রমুখের সঙ্গে তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাপ তখন বাংলার তরুণের হৃদয় জুড়ে; সেই উত্তেজনাপূর্ণ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দৃপ্ত তরুণ কেদারনাথ গোপনে স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। সহজাত মেধা ও স্বীয় পুরুষকার, দু’য়ের সমন্বয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এ. পাশ করেন। বি. এ. পাঠ সমাপ্ত করার পর পরীক্ষায় বসার সময়ে প্রবলভাবে আক্রান্ত হন ম্যালেরিয়া জ্বরে, ফলে বি. এ. পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। এরপর শিক্ষকতা শুরু করেন।
ম্যালেরিয়ার মহামারীর কবল থেকে গ্রামবাংলার অধিবাসীদের মুক্ত করার মানসে কেদারনাথ চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নেন। ভর্তি হন ঢাকার মিডফোর্ড মেডিক্যাল স্কুলে। কিন্তু দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন ছিল তাঁর অন্তর জুড়ে। কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। মেডিক্যাল ফাইনাল পরীক্ষার আগে ১৯২০ খৃষ্টাব্দে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে যোগদান করে মেডিক্যাল স্কুলের ইংরেজ প্রিন্সিপালের বিরাগভাজন হন কেদারনাথ, তাঁকে ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি নাকচ করে দেন প্রিন্সিপাল।
পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রী নেওয়া সম্ভব না হলেও মেধাবী কেদারনাথের চিকিৎসাশাস্ত্র বিশেষভাবে অধিগত হয়েছিল। ফরিদপুর জেলার রাজবাড়িতে ডাক্তরি শুরু করেন তিনি এবং অল্পদিনের মধ্যেই ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও কলেরা-তৎকালীন গ্রামবাংলার কালান্তক বিভীষিকা এই তিন রোগের বিশেষজ্ঞ হিসাবে ডাক্তার কেদারনাথ ভট্টাচার্য্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। রাজবাড়ি মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান এবং গোয়ালন্দ মহকুমা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। এরই সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার যজ্ঞ। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের অপরাধে ইংরেজ সরকারের রোষানলে পড়ে ১৯৩০ খৃষ্টাব্দে এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন। ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট জেল এবং বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে রাজবন্দী হিসেবে তাঁর এক বছর কাটে।
জেলে থাকাকালীন বহু বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতার সঙ্গে কেদারনাথের পরিচয় ঘটে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী, কংগ্রেস সভাপতি প্রভৃতি বিশিষ্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু জেলের ভিতর বিশেষ সুবিধা বা স্বাচ্ছন্দ্য লাভের জন্য অনেক নেতার আগ্রহাতিশয্য তাঁকে আহত করে; ভাবেন-দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা সর্বস্ব ত্যাগ করার পণ করেছেন, সামান্য শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাঁরা কেন এত ব্যাকুল? এই সুবিধালোভী সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী তাঁকে ব্যথিত করে। মনে হয়, এই স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে কোথায় যেন ফাঁকি আছে, আছে আত্মপ্রবঞ্চনা। স্বাধীনতা লাভের পর ক্ষমতা পেলে এ সমস্ত আত্মস্বার্থী নেতৃবৃন্দ যে নিজেদের সুযোগ-সুবিধার প্রতিই দৃষ্টি দেবেন, এ কথাও তাঁর মনে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হল।
জেল থেকে বেরিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ধ্যানধারণা অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়ে গেল-দেখা দিল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিরূপতা। মানসিক এই পরিস্থিতিতে ঘটনাচক্রে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের মতবাদ সম্বন্ধে অবগত হন। আগে মানুষ তৈরি, তারপর স্বাধীনতা- পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই মতবাদ তাঁকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে, কিন্তু দীক্ষা নেওয়ার কথা তখনও মনে আসেনি।
রাজবাড়ি শহরে তাঁর চিকিৎসার পশার, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, বৈষয়িক বৈভব- সব মিলে তাঁকে ব্যবহারিক দিক থেকে চূড়ান্ত সফল জীবন এনে দিয়েছিল। আত্মীয়- পরিজন, পরিচিত মহলে তাঁর উপাধি ছিল ‘রাজবাড়ির মুকুটহীন রাজা’। কিন্তু বাইরের পরিপূর্ণ সমৃদ্ধি তাঁর অন্তরকে তৃপ্ত করতে পারত না, ভেতরে ছিল অন্যতর প্রাপ্তির তাগিদ। নানা প্রশ্ন উদিত হত মনে, যার সমাধান খুঁজতে হাজির হতেন বিভিন্ন সাধু- সন্ন্যাসী, ধর্মপ্রচারক ফকির দরবেশের দরবারে। কিন্তু যথাযথ উত্তর পাননি কারও কাছে, মনের অতৃপ্তি বেড়েই চলল।
রাজবাড়ি রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণাশ্রিত। তিনি একবার ঠাকুরকে বিশেষ অনুরোধ করে তাঁর অনুমতিক্রমে হিমাইতপুর আশ্রম থেকে কীর্তনের দল নিয়ে আসেন ফরিদপুর। সেই কীর্তনের দলে অন্যান্যদের মধ্যে মহারাজ অনন্তনাথ রায়, কিশোরীমোহন দাস, ব্রজগোপাল দত্তরায় প্রমুখ ছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারা-প্রচারে তাঁদের উদ্দীপনার অমিয় প্রভাবে ফরিদপুরে বহু মানুষ সৎনাম গ্রহণ করেন। ফরিদপুর থেকে ঐ দল আসে রাজবাড়ি। কীর্তনে রাজবাড়ি শহরকে মাতিয়ে তুলে সেখানে একটি আলোচনা সভার আয়োজন হয়। যথারীতি কেদারনাথ ভট্টাচার্যও উপস্থিত হন সেখানে তাঁর অমীমাংসিত প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে। পূর্ব অভিজ্ঞতাবশত ধারণা নিয়েই এসেছিলেন যে, প্রকৃত সমাধান এখানেও পাওয়া যাবে না কিছুই। কিন্তু এই প্রথম পর্যুদস্ত হলেন কূটপ্রশ্নকারী, তার্কিক, অভিমানী চিকিৎসক, পরাজিত হয়ে জীবনের সবথেকে বড় বিজয়মাল্য বরণ করলেন তিনি; বাদ-বিতণ্ডার অসার অহমিকা বিসর্জন দিয়ে শরণ নিলেন সকল প্রশ্নের চরম সমাধানকারী সর্বজ্ঞ পুরুষের। ব্রজগোপাল দত্তরায় লিখিত জীবনীগ্রন্থ “শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র” থেকে নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি এখানে একান্ত প্রাসঙ্গিক:
“কীর্তন অন্তে মহারাজ (শ্রীঅনন্তনাথ রায়) শ্রীশ্রীঠাকুরের এবং সৎনামের অপার মহিমা সম্বন্ধে আলোচনা আরম্ভ করিলেন। এই আলোচনা সভায় স্থানীয় ডাক্তার কেদারনাথ ভট্টাচার্য্য নামক জনৈক পণ্ডিত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তিনি নানা তত্ত্বকথার অবতারণা করিয়া মহারাজের নিকট নানা কূটপ্রশ্নের উত্থাপন করিলেন। উক্ত ভদ্রলোক ইতিপূর্বেও নাকি বহু সাধু, সন্ন্যাসী ও ধর্মপ্রচারককে এইরূপ বিধ্বস্ত করিয়াছেন। আমরা লক্ষ্য করিলাম-মহারাজ উক্ত ব্যক্তির উত্থাপিত প্রশ্নাদির কোনরূপ মীমাংসা দান করিতে আদৌ চেষ্টা করিলেন না। তিনি তাঁহাকে তাঁহার স্বভাবসুলভ সহাস্যবদনে শুধু বলিলেন-‘দেখুন দাদা, বহুদিন ধরেই তো শুধু তর্কবিতর্ক করেই আসছেন, এখন এসব ছেড়ে দিয়ে একবার একটু কাজ করেই দেখুন না, কী হয়। যদি কোন সুফল না পান, ছেড়ে দিতে কতক্ষণ! নাম নিতে বা ছাড়তে তো টাকা-পয়সা লাগবে না! কাজ না করে শুধু কথা বলে লাভ কী?’ মহারাজের সুতীক্ষ্ণ, সুস্পষ্ট উক্তিগুলি শুনিয়া ভদ্রলোকটি আর কোনরূপ দ্বিরুক্তি না করিয়া সাগ্রহে তৎক্ষণাৎ সৎমন্ত্রে দীক্ষা লাভ করিলেন।”
কেদারনাথের দীক্ষাগ্রহণ বাহ্যিকভাবে অকস্মাৎ মনে হলেও বস্তুত এর ক্ষেত্র যে বহুদিন যাবতই প্রস্তুত হচ্ছিল, সেকথা আগেই উল্লিখিত হয়েছে। তাঁর যে তীব্র অধ্যাত্ম-তৃষ্ণা তাঁকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল, শ্রীশ্রীঠাকুরের অমিয় ভাবসরিৎধারায় তারই নিবারণ হল, তাঁর আত্মিক অনুসন্ধানের আকূতি খুঁজে পেল এক নিশ্চিত প্রত্যয়ভূমি।
আদর্শপ্রাণতা এবং বিপুল কর্মোদ্যম ছিল তাঁর প্রকৃতিরই অঙ্গ; ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে দীক্ষাগ্রহণের পর তিনি রাজবাড়িতে ঠাকুরের ভাবাদর্শে তপোবন বিদ্যালয়, হাতে- কলমে কাজ শেখার জন্য কারিগরি বিদ্যালয় এবং আনন্দবাজার স্থাপন করেন। তপোবন বিদ্যালয়ে ছেলেদের ও মেয়েদের পৃথক পৃথক হাইস্কুল ছিল। স্কুলে বিনা বেতনে পড়ানো হত এবং আনন্দবাজারের ব্যয়ভার বহন করতেন তিনি নিজে। শ্রীমৎ সতীশচন্দ্র গোস্বামীর যোগ্য আত্মজ শ্রীসচ্চিদানন্দ গোস্বামী ছিলেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। রাজবাড়ি তপোবনদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সন্তোষকুমার ঘোষের নাম-পরবর্তীকালে সাহিত্যিক সাংবাদিকরূপে যাঁর খ্যাতি ছিল অবিসংবাদিত। সন্তোষকুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক হিসেবে একবার দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমে আসেন। তখন স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে দর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু বাল্যকালে আমি রাজবাড়িতে ডাক্তার কেদারনাথ ভট্টাচার্য্যকে দেখেছিলাম, যাঁকে সবাই দেবতার মত ভক্তি করত, যিনি গুরুর চরণতলে নিজের সর্বস্ব অর্পণ করেছিলেন। শিষ্য যদি এত মহান হন তবে তাঁর গুরু যে স্বয়ং অবতারপুরুষ তা বুঝতে কষ্ট হয় না।
সন্তোষকুমার দেওঘরে এসে খোঁজ করে কেদারনাথ-পুত্র কুমারকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ম্যানেজার, সৎসঙ্গ প্রেস)-র সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর সঙ্গে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষক শ্রীসচ্চিদানন্দ গোস্বামীকে প্রণাম জানিয়ে আসেন।
রাজবাড়িতে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবাদর্শ অনুযায়ী কর্মকাণ্ডের প্রসারে ব্যাপৃত থাকলেও কেদারনাথের ঠাকুর-সান্নিধ্যের আকাঙ্ক্ষা ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল। সব কাজের মধ্যে মন উচাটন হয়ে ওঠে, অনিরোধ্য আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন ঠাকুরের মধুময় সঙ্গের প্রতি। একদিন সহধর্মিণী সাবিত্রী দেবীকে বলেন- চল, শ্রীশ্রীঠাকুর-দর্শনে যাই। সপ্তাহখানেক বাদেই ফিরে আসব। তখন তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান, দুটিই নিতান্ত শিশু। দিন সাতেকের মত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলেন সাবিত্রী দেবী, রাজবাড়ি থেকে তাঁরা রওয়ান হলেন পাবনা হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমের উদ্দেশ্যে। সারাদিনে একবেলা আনন্দবাজারে প্রসাদ মিলত-এই ছিল আশ্রমের তৎকালীন আর্থিক সঙ্গতির চিত্র। এই পরিস্থিতিতে রাজবাড়ির মুকুটহীন রাজা কেদারনাথ ভট্টাচার্য্য সপরিবারে হিমাইতপুর আশ্রমে ঠাকুরের পৈতৃক ভদ্রাসনের একটি ঘরে এসে উঠলেন। রাজবাড়ির শহর-জীবনের প্রাচুর্য ও স্বচ্ছলতা ছেড়ে আশ্রমের একান্ত স্বল্প-উপকরণের জীবনযাত্রা তাঁদের পক্ষে অসুবিধাজনক হবারই কথা; কিন্তু মাত্রই সাত দিনের জন্য আশ্রমে আগত কেদারনাথ ঠাকুরের ভুবন- ভোলানো যাদুর ছোঁওয়ায় বাহ্যিক ঐশ্বর্য ও আড়ম্বরপূর্ণ প্রতিষ্ঠিত সংসার ফেলে থেকে গেলেন হিমাইতপুরে স্থায়িভাবে, আর রাজবাড়ি ফিরলেন না কোনদিন। এই অবস্থান্তরে আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্য ও জীবনযাত্রার মানের বিপুল পরিবর্তন সানন্দে মেনে নিয়েছিলেন কেদার-পত্নী, কোনও ক্ষোভ কিংবা বিরূপতা আসেনি তাঁর মনে, ধন্য মনে করেছিলেন নিজেকে পরমপ্রেমময়ের প্রেমসান্নিধ্যের সুযোগ লাভে।
আশ্রমের ব্যয়ভার চালানো হত তখন ঠাকুর-প্রণামী, দান এবং কর্মীগণ সংগৃহীত অর্থে। কোন ভক্তিমতী নিজের গহনা অথবা কেউ কোন স্থাবর সম্পত্তি দান করতে চাইলে ঠাকুর তা সচরাচর গ্রহণ করতেন না। কেদারনাথ একথা জানতেন। কিন্তু তাঁর অন্তর উদ্বেল হয়ে উঠেছিল নিজের সবটুকু শ্রীশ্রীঠাকুরের পায়ে বিলিয়ে দিতে।
রাজবাড়িতে তাঁর নিজের আয় থেকে গড়ে তোলা বাড়িঘর, ডিসপেনসারি ও অন্যান্য সম্পত্তি ঠাকুরকে দান করতে মনস্থ করেন তিনি। ঠাকুরের জ্ঞাতসারে এই দান করা সম্ভব নয় বলে তাঁর অজ্ঞাতে সমস্ত বিষয়-সম্পত্তির দানপত্র তাঁর নামে রেজিস্ট্রি করে কেদারনাথ ঠাকুরকে প্রণাম করার সময় তাঁর চটির তলায় রেখে দেন। ঠাকুর চৌকি থেকে নেমে চটিতে পা গলাতে গিয়ে সেই দানপত্র দেখতে পান। ইষ্টের চরণে নিজেকে নিঃশর্ত সমর্পণের এই নীবর বিনম্র ভঙ্গী সর্বযুগে অনুসরণীয়।
আশ্রমের কর্মীরা কয়েক বছর রাজবাড়ির তপোবন বিদ্যালয় এবং ডিস্পেনসারি পরিচালনা করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে কিছু অসুবিধা দেখা দেওয়ায় আশ্রমের পক্ষ থেকে সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি নৌকায় করে আশ্রমে নিয়ে আসা হয় এবং স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া হয়। আশ্রমিক জীবনের কৃচ্ছুতা ও অস্বচ্ছলতার মধ্যে বাকি জীবন অতিবাহিত করেছেন কেদারনাথ, কিন্তু কখনও ঘুণাক্ষরে কারও কাছে তাঁর এই সমর্পণের কথা প্রকাশ করেননি তিনি, উপরন্তু এ বিষয়ে অপর কেউ আলোচনা করলে বিব্রত বোধ করতেন। তাঁর জন্মশতবর্ষে তাঁর সুযোগ্য পুত্র কুমারকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য লিখিত ‘আলোচনা’ পত্রিকায় ‘জন্মশতবর্ষে প্রণাম’ নিবন্ধের এই অংশটি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য:
“শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, কেউ ষোল আনা পেয়েছে কি না তাই বলে দেয় সে আমাকে নিঃস্বার্থভাবে এক আনা দিয়েছে কিনা। বাবা যা করেছেন, তার ষোল আনা ফল ভোগ করছি আমরা, তাঁর বংশধরেরা। ১৯৬০ খৃষ্টাব্দের ২০শে মে রাত প্রায় নয়টার সময় শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর-বাংলার হল-ঘরে বসে আছেন। আমি সামনে বসে আছি। শ্রীশ্রীঠাকুর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ওর বাবার রোখ ছিল খুব।”
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, কেদারনাথের পুত্রগণ সকলেই সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ইষ্টস্বার্থী।
হিমাইতপুর আশ্রমে পাকাপাকিভাবে বাস শুরু করার পর কেদারনাথ আশ্রম- বাসীদের চিকিৎসা এবং তপোবন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর ইষ্টানুগ দৃপ্ত চলন, চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষ পারঙ্গমতা এবং আদর্শনিষ্ঠ শিক্ষকতা-সবই তাঁকে বহুদিক থেকে অনন্য করে তুলেছিল।
শ্রীশ্রীঠাকুর যখন কোন প্রয়োজনে হিমাইতপুর থেকে কলকাতা যেতেন, তখন মাঝে মাঝে তিনিও যেতেন ঠাকুরের সঙ্গে। ঠাকুর কলকাতা গেলে প্রায়ই জননী মনোমোহিনী দেবীও কিছুদিন পরই কলকাতা যেতেন। ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে একবার ঠাকুর কলকাতা যাত্রার আগে বারবার জননী দেবীকে বলে যান যে, তিনি যেন কিছুতেই এবার কলকাতা না যান। সেবার ঠাকুরের সঙ্গে কেদারনাথও গেছেন কলকাতা। কিন্তু পুত্রের অদর্শন দীর্ঘদিন সহ্য করতে না পেরে জননী মনোমোহিনী পুত্রের নিষেধ অগ্রাহ্য করে কলকাতা চলে আসেন। তাঁকে কলকাতায় আসতে দেখেই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন শ্রীশ্রীঠাকুর এবং অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে মাতৃদেবী অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেসময় কেদারনাথ অনুক্ষণ মাতৃসেবায় নিযুক্ত থাকতেন; তিনিই মাতৃদেবীকে নিয়ে হিমাইতপুর ফিরে আসেন। সর্বক্ষণের জন্য জননীর চরণপ্রান্তে সেবানিরত কেদারনাথকে জননীদেবী বলেন- ‘দ্যাখ্ কেদার, তোরা আমার আর কী করবি? আমার এই কর্মভোগ আমারই সৃষ্টি। অনুকূলকে আমি ছেলের বেশি ভাবতে পারিনি-এই আমার ব্যারাম। সে যা বলে তাই সত্য হয়। ভূত, ভবিষ্যত সবই ও জানে। ওর কথা না শুনেই আজ আমার এই দুর্ভোগ। অনুকূল বারবারই আমাকে এখানে আসতে নিষেধ করেছিল, আমি তা শুনিনি। যেখানেই বাৎসল্য সেখানেই তাচ্ছিল্য। পদে-পদে ভুল হয়ে যায়। কর্মফল আর এড়াতে পারলাম না।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, এই অসুস্থতাই জননী দেবীর জীবনের অন্তিম পর্বের সূচনা করেছিল এবং এর ফলেই ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দের ২০শে মার্চ তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে কেদারনাথ দীক্ষাদানের অনুমতি প্রাপ্ত হন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর ইষ্টপ্রতিষ্ঠার আরেক অধ্যায়। নিবিড় ঐকান্তিকতায় পরমপুরুষের ভাবধারার অম্লান প্রদীপখানি এক জনপদ থেকে অপর জনপদে বয়ে নিয়ে বেড়ান তিনি- আলোকিত করে তোলেন অসংখ্য মানুষের যাত্রাপথ। ১৯৪৭ খৃষ্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় পর্যন্ত অক্লান্তভাবে তিনি খুলনা, দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহের গ্রামে-গ্রামান্তরে শ্রীশ্রীঠাকুরের অমিয়-বার্তা প্রচার করেন, সংগঠিত করে তোলেন ইষ্টমুখী নানা কর্মকাণ্ড। খুলনা জেলায় সৎসঙ্গ আন্দোলনের তিনিই ছিলেন পুরোধা।
অসাধারণ কর্মশক্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছিল প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য। সৃজনাত্মক রচনায় তাঁর বিশেষ প্রবণতা এবং পারদর্শিতা ছাত্রাবস্থাতেই প্রকাশিত হয়। তরুণ বয়সে ‘জীবন- প্রভাত-গ্রন্থমালা’ সিরিজের কয়েকখানি পুস্তিকা রচনা করেন কেদারনাথ, যার মধ্যে ‘মহাত্মা গান্ধীর বাল্যজীবন’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। দীক্ষা-পরবর্তী জীবনে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবান্দোলন সংগঠনে তাঁর বিপুল কর্মোদ্দীপনা এবং বাকশক্তির সঙ্গে সঙ্গে লেখনীরও যথাযথ ব্যবহার করেন তিনি। পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সৎসঙ্গী পত্রিকায় নিরলসভাবে লিখতেন তিনি; সেসমস্ত লেখার মধ্যে তাঁর অম্লমধুর রচনা ‘পঞ্চপ্রদীপ’ বিশেষ সাড়া জাগিয়েছিল। দেওঘরে আসার পর ঠাকুরের নির্দেশে তিনি দশ বছর গভীর গবেষণার পর ‘Marriage System and Eugenics in Varnasram’ শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গবেষণার উদ্দেশ্যে ঐ সময়ে বেশ কিছুদিন কলকাতায় থেকে বড় বড় লাইব্রেরিতে নিয়মিত যাতায়াত করে পড়াশুনো করতেন কেদারনাথ। গ্রন্থটি রচনার পর ঠাকুরকে পড়ে শোনান তিনি। বর্ণাশ্রম ও বিবাহ- ব্যবস্থার সঙ্গে সুপ্রজননের বৈজ্ঞানিক সম্বন্ধ বিষয়ক গ্রন্থখানি ঠাকুরের ভাবাদর্শ প্রচারে বিশেষ সহায়ক। এছাড়াও তাঁর ‘Way to Peace’, ‘The World without Conflict’, ‘Life Research and Postmortem Arrival’ ইত্যাদি পুস্তিকা বিদ্বজ্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘আলোচনা’ পত্রিকায়ও প্রায়ই তাঁর সুচিন্তিত সুলিখিত প্রবন্ধ প্রকাশিত হত। চিন্তায় বাক্যে-কর্মে-লিখনে সর্বথা শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিষ্ঠা ও তাঁর আদর্শ-প্রচারই কেদারনাথের সমগ্র সত্তা জুড়ে ছিল। তাঁর দৃঢ় নিষ্ঠা ও আত্যন্তিক অনুরাগ পারিপার্শ্বিক নানা বিপর্যয়ের মধ্যেও তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে। ১৯৪৮-১৯৫০, এই দু’তিন বছরের মধ্যে পরিবারে ঘনিয়ে এসেছে দুর্দৈব, সহধর্মিণী সাবিত্রী দেবী, দুই কন্যা ও এক পুত্রের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু ইষ্টপ্রাণ মানুষটির অন্তরে তা বিচলন আনতে পারেনি, শ্রীশ্রীঠাকুরের পায়ে সমর্পিত মন নিয়ে শান্তভাবে অতিক্রম করেছেন এত বড় দুঃখের পাথার। অন্য কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়াই ছিল স্বাভাবিক।
তিনি ঠাকুরকে শুধু স্বোপার্জিত বিষয়-সম্পদই নিবেদন করেননি, উজাড় করে দিয়েছিলেন নিজের সবখানি, ত্যাগ করেছিলেন পূর্বজীবনের বিপুল অধ্যায়নসঞ্জাত জ্ঞানাভিমানও। ঠাকুরের কাছে নিজেকে নবীন শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অনুভব করতেন তিনি। একদিন শ্রীশ্রীঠাকুর এই বাণীটি দিচ্ছিলেন:
‘কুচর্চ্চা-ও-গুজববাটা মনের
বিয়োগ ও বিকৃতিই হচ্ছে
প্রধান পরিকর।....’
শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লকুমার দাস বাণীটি লিখে নিয়ে ঠাকুরকে পড়ে শোনালেন। কেদারনাথ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি ঠাকুরের কাছে ঐ বাণীর মানে জানতে চাইলে ঠাকুর বলেন,- আপনিই কন না, আমি শুনি। আপনারা লেখাপড়া জানা মানুষ। কত গোছায়ে কইতে জানেন। আমি তো মুখ্যুর শিরোমণি।
এ কথায় লজ্জিত হয়ে নতমস্তকে বিনীতভাবে কেদারনাথ ঠাকুরকে বলেন,- সত্যানুসরণে আছে, ‘যাই কেন কর না, তার ভিতর সত্য দেখতে চেষ্টা কর। সত্য দেখা মানেই তাকে আগাগোড়া জানা, আর তাই জ্ঞান’। লেখাপড়া করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘জানি’ বলে একটা মিথ্যা অহঙ্কার হয়। কিন্তু আপনি যাকে জ্ঞান বলেন, তার বিন্দু-বিসর্গও হয় না। তবে আপনার দয়ায় এইটুকুই বুঝেছি যে, যিনি স্বয়ং জ্ঞানমূর্তি, ক্রমাগত তাঁর সঙ্গ, সাহচর্য্য ও সেবা করতে-করতে ছিটেফোঁটা সুসঙ্গত জ্ঞান গজালেও গজাতে পারে। আপনার কাছে এসে নিজের অজ্ঞতার মাত্রা সম্বন্ধে সচেতন হয়েছি এবং অন্তঃসারশূন্য অহমিকা কিছুটা ঘায়েল হয়েছে। এখন ভুল জানাগুলি ভুলতে পারলে বাঁচি। এখন যদি কেঁচে গভূষ করে অবিমিশ্রভাবে আপনার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারি। বহুদিন নিজের বিকৃত বোধের দাঁড়ায় দাঁড়িয়ে আপনার ভাবধারার মূল্যায়ন করতে গিয়ে হয়রান ও ব্যর্থ হয়েছি। খাপছাড়া এলেমেলো নানা ধারণারূপী ভূতগুলি এখন মাথা থেকে নেমে গেলে রেহাই পাই।
প্রত্যুত্তরে দয়াল বলেন,- তাই বেত্তাপুরুষের শরণাপন্ন হতে হয় শৈশবে সশ্রদ্ধ খোলা মন নিয়ে, মনগড়া একদেশদর্শী ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের কয়েদ না হয়ে...
কেদারদা! একটা-একটা ক’রে কত জানবেন? আবার জানাগুলির মধ্যে সঙ্গতিই বা কেমন ক’রে করবেন? তার চাইতে দেহধারী জ্ঞান, ভক্তি, শক্তি ও প্রেমকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসুন, অনুসরণ করুণ, তাঁর হুকুম তামিল করুন। কোন-কিছুর জন্য নয়, একমাত্র তাঁরই তুষ্টি, পুষ্টি, তৃপ্তি, স্বার্থ ও প্রতিষ্ঠার জন্য। এই মহানেশায় সর্বদা সক্রিয়ভাবে ডুবে থাকুন, মজে থাকুন। আপনার যা জানবার, যা পাবার, যা হবার তার সব কিছুই তাঁর দয়ায় এই পথে সুসিদ্ধ হবে। নিশ্চয় করে বলছি-হবে।...
কেদারনাথ ইষ্ট-প্রতিষ্ঠার মহানেশায় মগ্ন হয়ে ইষ্ট-প্রোক্ত পথেই চলেছেন এবং তাঁকেই পরিপূর্ণভাবে পেয়েছেন নিজের অস্তিত্ব দিয়ে।
১৯৬৩ খৃষ্টাব্দের ৩রা জুন। জৈষ্ঠ্যের খর তাপে দগ্ধ দেওঘর। অন্যান্য দিনের মতই পুরানদহের নিজ বাসভবন থেকে হেঁটে ঠাকুরবাড়ি যান তিনি, ঠাকুরের সান্নিধ্যে বসে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন, সমবেত প্রণামে অংশ নেন। বাড়ি ফিরে রাত্রে সময়মত আহার করে শয্যাগ্রহণ করেন। হঠাৎ ভোরবেলায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে তাঁর এবং ৪ঠা জুন, ১৯৬৩, বেলা দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সমাপ্তি ঘটে কর্মোজ্জ্বল, দৃঢ়চেতা ইষ্টসর্বস্ব এক মহান ভক্তের ঐহিক অস্তিত্বের। তাঁর প্রয়াণে তৎপুত্র কুমারকৃষ্ণকে পূজ্যপাদ বড়দা বলেন- কেদারদা ছিলেন ভক্তমানুষ। কাউকে কষ্ট না দিয়ে এবং নিজেও কষ্ট না পেয়ে সাধনোচিত ধামে গমন করেছেন।
তাঁর শারীরিক সত্তার অবসান হলেও তাঁর ইষ্টানুরাগের হোমানল চির প্রজ্জ্বলন্ত হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে।
_________________________________
10