🎗️ নারী কী ? নারীর নারীত্ব কী দিয়ে ?
🎗️ পুরুষ কথার মানে কী ? পুরুষের পুরুষত্বই বা কী ?
🎗️ পুরুষ-নারী যদি সমান বা একধৰ্ম্মী না-ই হয়, তবে পুরুষ ও নারীর অধিকার কখনো সমান হ'তে পারে কী ?
🎗️ নারী ও পুরুষের পরস্পরের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে। এর কারণ কী ? উভয়ের প্রতি উভয়ের কী যেন চাওয়া ! এ চাওয়ার ফলে তো দেখতে পাই, মানুষ বিধ্বস্ত। এর সার্থকতা কোথায় ?
🎗️ তবে ভগবান রামকৃষ্ণদেব যে বলেছেন – 'কামিনী-কাঞ্চন থেকে তফাৎ তফাৎ’—তার মানে কী ?
বিবাহিত জীবনে মাঝে-মাঝে (occasionally) স্ত্রী-গ্রহণ সত্ত্বেও ব্রহ্মচর্য্য রক্ষা সম্ভব কি ?
🎗️বিবাহ মানে কী ?
প্রশ্ন । বিবাহিত জীবনে মাঝে-মাঝে (occasionally) স্ত্রী-গ্রহণ সত্ত্বেও ব্রহ্মচর্য্য রক্ষা সম্ভব কি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । হ্যাঁ।
প্রশ্ন । কী করে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । স্ত্রীর প্রতি যদি মন নিয়ত কামাসক্ত না থাকে এবং সে (স্ত্রী) যদি পুরুষের ব্রহ্মচর্য্যের সহধর্মিণী হয় তবে ব্রহ্মচর্য্য-প্রতিষ্ঠাই হয়। আর স্ত্রী-সহবাস হইতে কেহ যদি বিমুখ থাকে—আর, সে যদি উচ্চচিন্তাপরায়ণ, উচ্চকর্ম্মনিরত না হয়,—তবে তার পরিণতি মনুষ্যত্বহীন ক্লীব হওয়া (subman)* । অতএব, উচ্চচিন্তা বা ব্রহ্মচিন্তা বা ব্রহ্মচর্য্যপরায়ণতার বিক্ষেপ না
_____________________________________
+ বীৰ্য্যলাভ মানে তেজ বা শক্তি লাভ । শব্দকারের মতে—বীর্য্য মানে চরম ধাতু অর্থাৎ ওজঃ
বা শক্তি বা বল ।
মেদিনী মতে—বীৰ্য্য মানে তেজ।
শব্দরত্নাবলী মতে—চেতঃ, দীপ্তি ।
* “বলিনঃ ক্ষুব্ধ-মনসো নিরোধাৎ ব্রহ্মচর্য্যতঃ ।
ষষ্ঠং ক্লৈব্যং মতং তত্তু স্থিরশুক্রনিমিত্তজম্ ।।” ৫ ।
—সুশ্রুত, ক্ষীণবলীর বাজীকরণ, ২৬ অধ্যায়
অর্থাৎ, বলবান্ ব্যক্তি ব্রহ্মচর্য্যের খাতিরে ক্ষুব্ধ মন লইয়া শুক্রধারণ করিলে সেই স্থির শুক্র ক্লীবত্বের নিমিত্ত (কারণ) হয়, ইহা একপ্রকার নিমিত্তজ ক্লীবত্ব ।
“কর্ম্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন ।
ইন্দ্ৰিয়ার্থান্ বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে ॥” ৩/৬ — গীতা
যে-ব্যক্তি কৰ্ম্মেন্দ্রিয়সমূহ নিরোধ করিয়া মনে-মনে ইন্দ্রিয়ের উপভোগ্য বিষয়ের চিন্তা করে সে
বিমূঢ়াত্মা—মিথ্যাচারী ।
আনে এমনতর স্ত্রী-সহবাসে বীর্য্যহানি হয় না অর্থাৎ বলের হানি হয় না ৷+
প্রশ্ন । বিক্ষেপ আনে না অথচ স্ত্রী-সহবাস—এ কী ক'রে হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। মানুষ যখনই বিস্তারমুখতা† অর্থাৎ যাহা ভাবিয়া বা করিয়া মানুষের বৃদ্ধি বা উন্নতি (elevation) সব দিক্-দিয়া আসে, তাহা হইতে বিরত হইয়া কামিনীমুখী হয় এবং সেই ভোগ-লালসাতেই মন লাগিয়া থাকে—এমনতর ভাবকেই ব্রহ্মচর্য্যের বিক্ষেপ বলা যায়। আর, যখনই স্ত্রী পুরুষের বিস্তারমুখতার অনুগামিনী—সার্থককারিণী হওয়াটাই তার জীবনের সুখ এবং সার্থকতা মনে করে এবং তার ফলে, এই উচ্চভাব ও উচ্চসংসর্গজনিত যে সহজ কামের উদ্ভব হয়—তাহাতে প্রায়শঃই মানুষ দুর্বল হয় না ।
প্রশ্ন। তবে ভগবান রামকৃষ্ণদেব যে বলেছেন – 'কামিনী-কাঞ্চন থেকে তফাৎ তফাৎ’—তার মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। কামিনী যেখানে কামেরই কেন্দ্র হয়, মানুষ সেখানে মূঢ় হইয়া ওঠে ; উন্নতিতে সার্থক হওয়ার – বৃদ্ধি পাওয়ার—আকৃতি লাঞ্ছিত হইয়া অবসন্ন হইয়া দাঁড়ায় ;—ফলে, অজ্ঞানতায় তার জগৎ সঙ্কীর্ণ হইয়া ওঠে, — অবশেষে মৃত্যুতে তার শেষ নিঃশ্বাস বিলীন হইয়া যায়। তাই গীতায় আছে—
“সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোঽভিজায়তে
ক্রোধাৎ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ ।
স্মৃতিভ্রংশাৎ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি ।।”
____________________________________
+ Cf. “ষোড়শৰ্ত্তুনিশাঃ স্ত্রীণাং তাসু যুগ্মাসু সংবিশেৎ ।
ব্রহ্মচার্য্যের পর্ব্বাণ্যাদ্যাশ্চতস্ৰস্তু বৰ্জ্জয়েৎ ।।” ১/৭৯ – যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা
অর্থাৎ, স্ত্রীদিগের ঋতুকাল ষোড়শ অহোরাত্র । ইহাদের মধ্যে প্রথম চারদিন বাদ দিয়া অবশিষ্ট যুগ্ম রাত্রিকালে স্ত্রীসংসর্গ করিলে ব্রহ্মচর্য্যের চ্যুতি ঘটিবে না। অবশ্য এস্থলে—
‘যথাকামী ভবেৎ বাপি স্ত্রীণাং বরমনুস্মরন্
স্বদার-নিরতঃ।’... ১/৮১- যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা
স্ত্রীদিগের কামানুসারে কামী হইয়া স্ত্রীতে রত হইবার উপদেশ করা আছে।
+ “বিস্তারই জীবন—সঙ্কোচই মৃত্যু; প্রেমই জীবন— দ্বেষই মৃত্যু।” —বিবেকানন্দ
ঋতুকালেঽভিগম্যৈবং ব্রহ্মচর্য্যে ব্যবস্থিতঃ।
গচ্ছন্নপি যথাকামং ন দুষ্টঃ স্যাদনন্যকৃৎ । —ব্যাসসংহিতা, ২/৪৫
পূর্ব্বোক্ত নিয়মানুসারে স্ব-স্ত্রীতে অভিগত হইলে ব্রহ্মচর্য্যের হানি হইবে না । অনন্যকাৰ্য্য হইয়া ঋতুকালে স্বপত্নীতে যথাভিলষিত গমন করিয়াও দোষভাগী হইবে না ।
তাই, যে-বুদ্ধি স্ত্রীতে কামলোলুপ করিয়া তোলে তাহা হইতে দূরে সরিয়া যাইবার জন্যই তাঁর (ভগবান্ রামকৃষ্ণদেবের) ঐ সাবধানবাণী—আমার এই মনে হয় । *
আর, অর্থ যেখানে ভ্রান্ত স্বার্থ অর্থাৎ পারিপার্শ্বিককে বঞ্চিত করিয়া নিজেকে সেবামূঢ় অথচ প্রতিপত্তি প্রয়াসী করিয়া তোলে, সেই অর্থ হইতে দূরে থাকিবার জন্য ঐ সাবধান-বাণী ।
প্রশ্ন । নারী কী ? নারীর নারীত্ব কী দিয়ে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। নারী সে-ই বা তা-ই যা' ধারণ করে ও বৃদ্ধি পাওয়ায় । এই ধারণ ও পুষ্ট করানোতেই নারীর নারীত্ব ।+
প্রশ্ন। তার মানে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । প্রকৃতিতে দেখতে পাই, এমনতর কোন বীজ নাই, যাহা আশ্রয় না পাইয়া পোষণ ও পুষ্টির অভাব সত্ত্বেও পরিস্ফুট হইয়াছে (without nourishment, without nutrition evolve করিয়াছে)। আর, আমরা আশ্রয় বা ধারণ, পুষ্টি (nutrition) এবং পোষণ (nourishment) দেওয়ার প্রকৃতি (tendency) কেবল নারীতেই মুখর (prominent) হইয়া উঠিয়াছে
________________________________________
* ‘কামিনীতে করে স্ত্রী-বুদ্ধি যে-জন ।
হয় না তাহার বন্ধন মোচন ৷৷' – বিবেকানন্দ
+ “The true function of woman is to educate, not children only, but men, to train to a higher civilization, not the rising generation, but the actual society. And to do this, by diffusing the spirit of affection, of self-restraint, self-sacrifice, fidelity and purity, and this is to be affected, not by writing books...nor by preaching sermons...but by manifesting them hour by hour in each home by the magic of the voice, look, word and all the incommunicable graces of the woman's tenderness." —Frederic Harrison
অর্থাৎ, নারীর প্রকৃত কাজ শুধু সন্তানকে তৈয়ারী করা নয়, পুরুষগণকে ও সমাজকে শিক্ষিত করিয়া উচ্চতর সভ্যতায় পৌঁছান নারীরই ধর্ম্ম। ইহা করিবার জন্য নারী বর্ষণ করে তার স্নেহ, সংযম, আত্মত্যাগ, বিশ্বস্ততা এবং পবিত্রতা। সমাজকে জাগ্রত করিতে হইলে—পুস্তক লিখিলে চলিবে না—বক্তৃতা দিলে হইবে না—গৃহে গৃহে নারীর দৈনন্দিন জীবনে নারীকেই সে-আদর্শ প্রত্যক্ষভাবে দেখাইতে হইবে–তার স্বর, তার দৃষ্টি, তার বাক্য ও সমস্ত অপূর্বর মাধুর্য্যরাশির ইন্দ্রজাল দিয়া।
দেখিতে পাই ; তাই, নারীকে মাটির সঙ্গে তুলনা করা হইয়াছে, কারণ, মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যই ধারণ করা, পোষণ (nourishment) দেওয়া এবং উদগত করিয়া তোলা (evolve করানো)। তাই যাহা অর্থাৎ যে-সত্তার (being-এর) বৈশিষ্ট্য ঐ ধারণ করিয়া বৃদ্ধি করানো, তাহাকে নারী বলিলে বোধহয় ভুল হইবে না। আর শুনিয়াছি, নারী কথাটিও নিষ্পন্ন হইয়াছে নারি-ধাতু (বৃদ্ধি পাওয়ানো) হইতে । *
প্রশ্ন । পুরুষ কথার মানে কী ? পুরুষের পুরুষত্বই বা কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ বলতে এক কথায় তাকেই বুঝায় যে বা যা' নাকি পূরণস্বভাব-সম্পন্ন' ;—অর্থাৎ, সে-ই বা তা’-ই পুরুষ যা' পরের অভাব পূরণ করে। অপরকে পরিপূরণ করা অর্থাৎ fulfil করা— সার্থক ক'রে তোলা, কৃতকার্য্য ক'রে তোলা, পারগতায় উদ্বুদ্ধ, উন্নত ও কৃতার্থ ক'রে তোলাই পুরুষের পুরুষত্ব।
প্রশ্ন। নারী ও পুরুষের পার্থক্য তাহ'লে—
শ্রীশ্রীঠাকুর । একটি বৃদ্ধি পাওয়ায়, অপরটি বৃদ্ধি পায়, একটা যেন মাটি, আর একটা বীজ, একটা সক্রিয়, আর-একটা নিষ্ক্রিয়, একটা চরিষ্ণু, আর-একটা
স্থাস্নু +। পুরুষ তাই তার সমবিপরীত সত্তার (opposite equal-এর) কাছে
__________________________________
+ যথা ভূমিস্তথা নারী—
স্ত্রী ও মাটি দুই-ই সমান । —পরাশরসংহিতা
* নারী=নারয়তি (বৃদ্ধি পাওয়ায়) ইতি নারী।
নারী-ধাতু=নৃ + ণিচ্ । 'নৃ' মানে প্রাপণ, নয়ন ।
(জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস প্রণীত 'বাংলা ভাষার অভিধান' দ্রষ্টব্য । )
'নারী' কথার প্রকৃত মানে নেত্রী— ‘ভারত মহিলা' ।
—মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
পুরুষ আসিয়াছে পূর-ধাতু হইতে, পূর-ধাতুর মানে পূরণ করা।
পিপর্ত্তি—পূরয়তি যঃ সঃ পুরুষঃ । -শব্দকল্পদ্রুমঃ
+ Cf. The more exhausted men become, the more they lose the power to lead women or to arouse her nature which is essentially passive. ...
The souls of women so admirably calculated to receive suggestions.
'Essay on the Education of Girls-G. S. Hall
পুরুষ এবং নারীও তার সমবিপরীত সত্তার (opposite equal-এর) কাছে নারী * । তাহ'লে যে বিপরীত-সত্তার অর্থাৎ নারীর সংসর্গে পুরুষের পুরুষত্ব বা পরিপূরণী শক্তি বৃদ্ধি পায়, নারী সার্থক সেখানে ।
প্রশ্ন । নারী ও পুরুষের পরস্পরের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে। এর কারণ কী ? উভয়ের প্রতি উভয়ের কী যেন চাওয়া ! এ চাওয়ার ফলে তো দেখতে পাই, মানুষ বিধ্বস্ত। এর সার্থকতা কোথায় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ চায় নারীতে বিশ্রাম করতে—নারী চায় পুরুষকে স্বস্থ
_______________________________________
পুরুষ যখন পুরুষত্ব হারাইয়া নিঃস্ব হইয়া পড়ে, সে নারীতে তার soil (আশ্রয়) হারায়, নারীর নারীত্বকে উদ্দীপিত করিতে পারে না, তার ভক্তি হারায়, ইত্যাদি । নারীচরিত্র মূলতঃ passive. প্রসিদ্ধ রুশীয় প্রাণীতত্ত্ববিদ প্রফেসার কোলজফ্ (Prof. Nicholas K. Koltzoff) বহু বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষাদ্বারা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন -- Positive prominent sperm cell হইতে পুংসন্তান এবং Negaive prominent sperm cell হইতে স্ত্রী-সন্তান উৎপন্ন হয়। উল্লিখিত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ১৯৩৪ সালের ২৬শে জুন তারিখের ‘অমৃতবাজারে' বাহির হইয়াছে। তাহা হইতে খানিকটা নিম্নে উদ্ধৃত করিলাম—
"Koltzoff's guess was that one kind of chromosome cells would be attracted to the negative pole of a battery, the other kind to the positive pole. To test the idea, he prepared a U-shaped glass tube for the purpose. Six weeks later the broods began to arrive. The first contained six baby rabbits. Every one was a female. The mother had been fertilised from the tube containing the positive pole. The second brood contained five. All were male except one. Their mother had been fertilised from the tube containing the negative pole...... Thus it appeared that the negative pole attracted the male cells, the positive pole the female cells."
‘Determining Sex - A. B. Patrika, June 26, 1934.
* Cf. "We advise against marriage unless the two sexual constitutions complement each other. "
'Hirshchfeld-Glimpses of the Great-Viereck
অর্থাৎ, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে উভয়ের পরিপূরক না হইলে তাহাদের বিবাহে মত দিতে পারি না। —হার্সফেল্ড
"Each has what the other has not-each completes the other and is completed by the other." 'Sesame & Lilies'-Ruskin
অর্থাৎ, একজনের যাহা নাই আর-একজনের তাহা আছে, দুইজনই দুইজনকে পরিপূর্ণ করে।
—রাসকিন্
করতে, সুস্থ করতে, বৃদ্ধি পাওয়াতে । আর, যেখানে নারী তার এই আদিম স্বভাবকে ব্যাহত করেছে, সেখানেই সে তার ব্যর্থতার আলিঙ্গনে বিধ্বস্ত, বিব্রত, বিকৃত হয়েছে। ;—আর, নারীতে নারীত্ব এতেই সার্থক হয়, আর তার পোষণ, তার বৃদ্ধি, তার চিন্তায় পুরুষকে এমনতরভাবে পুষ্ট (nourished) ক'রেই, বা এমনতরভাবে উদ্দাম ক'রেই তার নারীত্বের সার্থকতা। আর, পুরুষ নারীর কাছে এমন পেয়ে, দুনিয়াটাকে এমন ক'রে সেবা ক'রে, জয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে তার নারীর সম্মুখীন হ'য়ে তার দ্বারা সম্বন্ধিত হয়—এই-ই পুরুষের সার্থকতা, আর এমনই ক'রে সে নারীকে পূরণ করে সর্ব্বতোভাবে ; কারণ, নারী চায় পুরুষকে প্রাণের মুকুট মাথায় পরিয়ে দেখতে—এতেই নারীর বৃদ্ধি বা পুষ্টি । †
_________________________________
* 'ছায়াং যথেচ্ছেচ্ছরদাতপাত্তঃ
পয়ঃ পিপাসুঃ ক্ষুধিতোহলমন্নম্ ।
বালো জনিত্রীং জননী চ বালম্
যোষিৎ পুমাংসং পুরুষশ্চ যোষাম্ ।।
—ক্যাত্যায়ন-সংহিতা, ১২শ খণ্ড, ৩
শরতের রৌদ্রে লোক যেমন ছায়ার অভিলাষী হয়, পিপাসু যেমন জল চায়, ক্ষুধিত যেমন অন্নলোলুপ হয়, শিশু যেমন মাতাকে এবং মাতা শিশুকে চায়, রমণী তেমন পুরুষকে এবং পুরুষ রমণীকে চায়।
+ 'বিরুধ্যমানে পত্যৌ যৎ সপত্ন্যা বা প্রবর্ততে ।
অতীব দুঃখং ভবতি তদকল্যাণকৃৎ তয়োঃ ।।
—কালিকাপুরাণ, ২০ অধ্যায়
নারী পতির বিরোধী হইলে কিংবা সপত্নীর সহিত বিবাদে প্রবৃত্ত হইলে উভয়ের অতীব দুঃখ এবং মহা অকল্যাণের কারণ হয়।
'দুঃখা হান্যা সদা খিন্না চিত্তভেদঃ পরস্পরম্ ৪/৮
‘সুভূত্যাপি কৃতা নিত্যং পুরুষং হাপকর্ষতি ।। ৪/৯ —দক্ষসংহিতা
অর্থাৎ, সর্ব্বদা খেদযুক্তা নারী দুঃখের কারণ। উপযুক্তরূপে প্রতিপালিত হইলেও সে নিত্যই
পুরুষকে অপকর্ষের পথে চালিত করে।
† ‘পত্নীমূলং গৃহং পুংসাং যদি ছন্দোহনুবর্তিনী । ৪/১ —দক্ষসংহিতা
অর্থাৎ, পত্নীই পুরুষের গৃহসুখের মূল যদি সে ছন্দানুবর্তিনী হয় ।
‘যত্রানুকূল্যং দম্পত্যোস্ত্রীবর্গস্তত্র বর্জ্যতে।' ১/৭৪ – যাজ্ঞবল্ক্য-সংহিতা
অর্থাৎ, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর আনুকূল্য, সেখানে ত্রিবর্গ (অর্থাৎ, ধৰ্ম্ম, অর্থ কাম) সার্থক
হয় ।
ঋগ্বেদের অনুবাদে দেখতে পাই, বর কন্যার পাণিগ্রহণ করার সময়ে বলছেন—
প্রশ্ন । পুরুষ-নারী যদি সমান বা একধৰ্ম্মী না-ই হয়, তবে পুরুষ ও নারীর অধিকার কখনো সমান হ'তে পারে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ ও নারীর অধিকার তাদের এইরূপ স্বভাব হ'তেই পরমপিতা determined (নির্দ্ধারিত) ক'রে দিয়েছেন। যেমন ধরুন, ছেলে দুধ খেয়ে খুশি আর মা মাই মুখে ঠেলে দিয়ে খাইয়ে খুশি,—তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখে খুব খাচ্ছে, খুব পুষ্টি হ'চ্ছে—আর তাতেই তার তৃপ্তি ; আর, এই তৃপ্তিস্পর্শে মুগ্ধ সন্তান তার জগতের চারিদিকে যা’-কিছু সুন্দর দেখে, কুড়িয়ে এনে মায়ের কাছে হাজির করে ;—আর, মায়ের মুখের দিকে উদ্গ্রীব নেত্রে ক্ষণিকের জন্য স্থির হ'য়ে তাকায় শুনতে মা কী বলে, কেমন বাহবা দেয়; আর, মা'র একটু নয়নভঙ্গীর বাহবাতেই ছেলে হেসে নেচে-কুঁদে পাগল হ'য়ে আবার বেরুল কুড়ুতে—আর কী সুন্দর আছে; কিসে মা বলবে – আহা কি ধন্যি ছেলে !
প্রশ্ন। এই যদি নারীর বৈশিষ্ট্য হয়, তবে নারীর স্বাধীনতা বা নারীর মুক্তি বলতে কী বুঝব ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। নারীর স্বাধীনতা তার বৈশিষ্ট্যে—অর্থাৎ, তার এই বৈশিষ্ট্য যেখানে আলুলায়িত হ'য়ে ওঠে, মুখর হ'য়ে ওঠে—প্রেরণা-পরিপুষ্ট হ'য়ে ওঠে ;– আর তার মুক্তি এরই সার্থকতায়* ।
_________________________________
"I grasp thy hand that I may gain good fortune.
That thou may'st reach old age with me thy husband."
- History of Sanskrit Literature, Page 124
অর্থাৎ, তোমা হইতে সৌভাগ্যের অধিকারী হইব এবং তুমি সুদূর বার্দ্ধক্য পর্য্যন্ত আমার সহবাসে বাস করিবে বলিয়া তোমার পাণিগ্রহণ করিতেছি ।
*"It is a difference of nature, an organic difference, alike in body, in mind, in feeling and in character-a difference, which it is the part of evolution to develop and not to destroy, as it is always the part of evolution to develop organic differences and not to produce their artificial assimilation. A difference, as I have said; but not a scale of superiority or inferiority...... Who can say whether it is nobler to be husband or to be wife, to be mother or to be son? Is it more blessed to love or to be loved, to form a character or to write a poem ? Enough of these idle conundrums, which are as cynical as they are senseless. Everything depends on how the part is
প্রশ্ন । নারী পুরুষকে, আর, পুরুষ নারীকে ঠিক-ঠিক চিনতে পারে কি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। স্বভাবতঃ । কারণ, একজনের চাওয়া স্বতঃই আর-একজনে সার্থক হয়—এ-কথা আরো বলেছি । নারী—স্ত্রী ও পুরুষ উভয়কেই প্রসব করে ।
প্রশ্ন। নারী ও পুরুষের normal relation কী ( স্বাভাবিক সম্বন্ধ কী) ?—এই সম্বন্ধের পরিণতি কোথায় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । নরের বৃত্তিগুলি যে-নারীতে পরিপোষিত, পরিবর্দ্ধিত হয় অর্থাৎ যে-নারী যে-নরের বৃত্তিগুলি লইয়া সন্তুষ্ট, পুষ্ট ও সম্বর্দ্ধনে যত্নবতী, সেই নরনারীর মিলনই শুভ । আর, নারী সেই পুরুষকে তেমনতরভাবে সম্বৰ্দ্ধিত করিয়া তাহার বংশ বিস্তার করে—তাহাতেই তাহার পরিণতি । তাই, নারীর inner tendency (অন্তর্নিহিত ঝোঁক ) মাতৃত্বে (পরিমিতত্বে, figurisation-এ বা মূৰ্ত্ত করাতে),—বৃদ্ধি পাওয়ানোর দিকে ; তাহার প্রকৃতি তাহাই । *
_____________________________________
played, how near each one of us comes to the higher ideal-how our life is worked out, not whether we be born man or woman."
—Frederick Harrison on The Future of Women' শরীরে, মনে, ভাবে, চরিত্রে নারী ও নর পৃথক। প্রকৃতির বিবর্তনের লক্ষ্যই এই বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলা—তাহাকে ধ্বংস করা নহে; কৃত্রিমতার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া দুইটিকে এক করিয়া তোলা নহে । নর ও নারীর মধ্যে পার্থক্য আছে, তাই বলিয়া কেহ কাহারও চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা হীন নহে । স্বামী হওয়া ভাল,—না স্ত্রী হওয়া ভাল, মা হওয়া ভাল, না ছেলে হওয়া ভাল, এই সমস্ত অলস অর্থহীন প্রশ্নের কে উত্তর দিতে পারে! সবটা নির্ভর করে— কে কিরূপভাবে তার নিজত্বকে — বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুণ্ণ রাখিয়া ও বিকশিত করিয়া, তাহার উচ্চতর আদর্শের দিকে পৌঁছাইতে পারে তাহারই উপর । —ফ্রেডারিক হেরিসন
* Cf. "Women are the guardians of the race, their life centres in motherhood. All their instincts and desires are directed consciously or unconsciously to this end...It must be admitted that it is very desirable from the point of view of the nation."
'Principles of Social Reconstruction'-B. Russell
নারীর জীবন মাতৃত্বে কেন্দ্রীভূত। নারীই জাতির নিয়ন্ত্রী। নারীর সমস্ত সহজাত সংস্কার ও প্রবৃত্তি—জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তাহাকে সেই দিকেই চালিত করে । তাই রাসেলও জাতির দিক-দিয়া ইহার সত্যতা ও সার্থকতা স্বীকার করেছেন।
স্বনামখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ জর্জ ষ্ট্যন্লি হল (G. S. Hall) তাঁর Education of Girls নামক প্রবন্ধের এক স্থানে বলিয়াছেন— "The madonna conception expresses man's highest comprehension of a woman's character."
প্রশ্ন । প্রজননই স্বামী-স্ত্রীর মিলনের একমাত্র প্রয়োজন ? না নরনারীর এই মিলনের আর কোনো উদ্দেশ্য আছে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । হ্যাঁ, আছে। যখন নারী পুরুষের স্ত্রী হয়, তখন সে চায় তার পুরুষকে তাই দেখতে, সে চায় তার পুরুষকে তাই করতে—যাতে তার পুরুষ সৰ্ব্বতোভাবে বৃদ্ধিশীল হয় বা থাকে ; আর, তার পুরুষের বৃদ্ধিশীলতার উপরেই সর্ব্বতোভাবে নির্ভর করে নারীর উৎকর্ষ।
প্রশ্ন । কেমন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। মাটি তার প্রাপ্ত seed-কে (বীজকে) nourish করতে গিয়ে (পুষ্ট করতে গিয়ে) যেমন গাছ বা তার ফলের refuse-গুলি (আবৰ্জ্জনাগুলি) absorb করে (টেনে নিয়ে) নিজের capacity of nourishment-কে (বদ্ধিত করবার শক্তিকে) excite করে তোলে, তার ফলে বীজকে এমনতর nourishment, এমনতর পুষ্টি দেয়—যা'তে নাকি স্বস্থ, সুস্থ, বর্দ্ধনক্ষম গাছের চারা জন্মে ; আর মাটির প্রকৃতিই এই। তাই, তেমনি জীব-জগতে নারী।
প্রশ্ন । আপনি তো বলেছেন, মাতৃত্বেই নারীর চরম সার্থকতা। কিন্তু আজকাল অনেক নারী মাতৃত্বকে কেমন তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে—এমন-কি কেউ-কেউ মাতৃত্বকে নারীত্বের অগৌরব ব'লে মনে করে। আমেরিকায় তো কোন কোন ষ্টেটে মেয়েরা মাতৃত্ব-বর্জ্জিত হবার জন্য ovariotomy (ডিম্বকোষ-কর্ত্তন) করছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর । যারা মাতৃত্বকে খর্ব্ব ক'রে নারীত্বের প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা নারী নয়—সর্বনাশী। যতটুকু নারী মাতৃত্বকে খর্ব্ব করে, নারীত্ব তার ভেতর ততটুকু—বরং তার চাইতে বেশী — সংকীর্ণ হয় । তার বৈশিষ্ট্য হ'তে বিচ্যুত হ'য়ে
__________________________________
অর্থাৎ, প্রকৃত নারীত্বের চরম আদর্শ যেন ম্যাডোনাতে অঙ্কিত হইয়াছে ।
"Nature has so constituted woman that her creative power and yearning centre primarily on the forming of a child; and so long as woman is woman it must remain so.”
-Havelock Ellis
প্রকৃতি নারীকে এমনভাবেই সৃষ্টি করিয়াছে— যাহাতে তাহার সৃষ্টিকারিণী শক্তি এবং প্রাণের ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা প্রধানতঃ সন্তান-গঠনেই কেন্দ্রীভূত। যতদিন নারী নারী—ইহা ঐরূপই হইতে বাধ্য। —হ্যাভলক্ এলিস্
একটা unnatural (অস্বাভাবিক) জীবনের স্বপ্ন দেখে; তা পায় না, হয় না, পেতে পারে না,—দুর্দ্দশা তার সহজাত পুরুষ হওয়া ছাড়া আর উপায়ান্তরই থাকে না* । তারা সমাজ ও জাতিতে একটা অস্বাভাবিক অপুষ্টিকর সংকীর্ণতার বিদ্রোহ সৃষ্টি করে মাত্র ।†
______________________________________
* অর্থাৎ, মূৰ্ত্তিমান দুৰ্দ্দশাই এইরকম নারীর পুরুষ ।
+ "When marriage and maternity are of less supreme interest...there are various results the chief of which are as follows-
Women grow dollish; sink more or less consciously to man's level; gratify his desires and even his selfish caprices but exact in turn luxury and display, growing vain as he grows sordid; thus while submitting, conquering and tyrannising over him content with present wordly pleasures, unmindful of the past, the future or the above......
Failing to respect herself as a productive organism, she gives vent to personal ambitions, seeks independence, comes to know very plainly what she wants; perhaps becomes intellectually emancipated ;....she perhaps even affects mannish ways, unconsciously copying from those not most manly, or comes to feel that she has been robbed of something; always expecting but never finding she thus succesively turn to art, science, literature and reform; craves especially work that she cannot do and seeks stimuli for feelings which have never found their legitimate expression."
— 'Youth'— G. S. Hall
অর্থাৎ, যে-সমস্ত নারী বিবাহ ও মাতৃত্বকে হীন চক্ষে দেখে, তাহাদের চরিত্রে নানাদোষ আবির্ভূত হয়—
তাহারা খেলো হয়—পুরুষ-রকম আসে, বিলাসিতা ও জমকালো-রকমে ঝোঁক হয় । পুরুষকে জয় করিতে ও তাহার উপরে নানাপ্রকার অন্যায় আধিপত্যে রুচি জন্মে। অতীত-ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অন্ধতা ও বর্তমান সুখভোগেই ঐকান্তিক আসক্তি দেখা দেয়। আরও অনেক দোষ ঘটে ।
নিজের জননীত্বের কথা বিস্মৃত হইয়া সে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে চালিত হয়—নানারকম চাওয়া তাহার ভিতরে অতিশয় স্পষ্ট হইয়া ওঠে—নানা বিদ্যা অর্জ্জন করিয়া পুরুষ-নিরপেক্ষতা আনিবার জন্য পুরুষ-সুলভ চরিত্রের অনুকরণে অশেষ ব্যর্থতা লইয়া আসে, বহুরকম অস্বাভাবিক কল্পনাপরায়ণা হইয়া সর্ব্বদাই তাহাদের সার্থকতা আশা করে, কিন্তু পায় না । তাই সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা, সংস্কার ইত্যাদি কতদিকেই না ভাগ্যপরীক্ষা করিতে যায় এবং যাহা করিবার সে মোটেই যোগ্য নয় তাহাতেই যত্ন- পরায়ণ হয়, – যে-অনুভূতি তাহার জীবনে নাই তাহারই উদ্দীপনার আশাপথে ধাবিত হয় ।
—জি. এস. হল
প্রশ্ন । সব দেশেই সব সমাজেই প্রায় লোকেই বিবাহ ক'রে সংসারী হয়। বিবাহ করাটা কি এতই স্বাভাবিক—এতই প্রয়োজনীয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রী-পুরুষের মিলন একটা প্রাকৃতিক ক্ষুধা। উভয়ে উভয়ের দ্বারা induced (উদ্বুদ্ধ) হ'য়ে, উভয়ের being and becoming (বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি-পাওয়াকে) solid and continuous (পাকা ও অবিচ্ছিন্ন) করতে চায় । তাই মনোবৃত্ত্যনুসারিণী স্ত্রী—অর্থাৎ যার সাহচর্য্যে পুরুষ nourished হয়, elevated হয় এবং active হয়— পুরুষের জীবনপ্রদ, স্থৈর্য্যপ্রদ ও শক্তিপ্রদ ; তাই, আৰ্য্যগণ স্ত্রীকে শ্রী বা লক্ষ্মীরূপিণী ব'লে অভিহিত করেন* । শ্রী অর্থে তাকেই বুঝায় যে সর্ব্বতোভাবে সেবা ক'রে, অর্থাৎ যার সেবায় জীবন তুষ্ট, পুষ্ট ও অক্ষুণ্ণ তো থাকেই, বরং বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় । আর, পুরুষকে এমনতরভাবে সেবা করাই স্ত্রীর প্রাকৃতিক স্বার্থ ; কারণ, এই-ই তাদের জীবন, তুষ্টি ও পুষ্টির একমাত্র সোপান । তাই, পুরুষের পাওয়ায় আনন্দ—স্ত্রীর দেওয়ায় তৃপ্তি বা সুখ ।
প্রশ্ন । বিবাহ সমাজ-জীবনের পক্ষে না হলেই কি নয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ যদি otherwise (অন্যরকম) জীবনযাপন করতে চায়—culture নিয়ে, উৎকর্ষের সাধনা নিয়ে থাকতে চায় তা'হলে otherwise
হ'তে পারে ।
____________________________________
* “স্ক্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোঽস্তি কশ্চন।” ৯/২৬ —মনুসংহিতা
অর্থাৎ, গৃহে স্ত্রী ও শ্রী একই—ইহাদের কিছুমাত্র তফাৎ নাই ।
“অনুকূলা ন বাগদুষ্টা দক্ষা সাধ্বী পতিব্রতা
এভিরেব গুণৈর্যুক্তা শ্রীরের স্ত্রী ন সংশয়ঃ ।” ৪/১২ —দক্ষসংহিতা
অর্থাৎ, যে স্ত্রী ভর্তার অনুকূল, যে অন্য কাহাকেও বাক্যদানে দুষ্টা নহে, যে দক্ষা, সাধ্বী ও পতিব্রতা—এই সমস্ত গুণযুক্তা স্ত্রী শ্রী-ই, ইহাতে সংশয় নাই ।
Cf. "The great Egyptian people, wisest of the nations, gave to their spirit of wisdom the form of a woman. — Ruskin
" মিশরীয়গণ যখন জ্ঞানে সমস্ত জাতির শীর্ষস্থান অধিকার করিয়াছিলেন, তখন জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবতার নারীরূপ দিয়াছিলেন। —রাস্কিন
প্রশ্ন। সে তো পুরুষের পক্ষে, নারীর ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । নারীরও তাই, কিন্তু rarely (কদাচিৎ)। কারণ, নারীর চরিত্র সহজনম্য, easy sympathetic — সহজ সহানুভূতিপ্রবণ । তাই, তারা ভাল বা মন্দতে inclined হয়ও (ঝুঁকে পড়েও) সহজে—আর, তার চরিত্রে cohesive tendency (মিলন-প্রবণতা) বেশী ; সেইজন্য, তার গুণগুলি কাল ও পাত্রভেদে সু বা কু-এর আকার ধারণ করে; তাই, তাদের কোন-না-কোন গুরুজনের অধীনে থেকে জীবন-যাপন করা আর্য্যশাস্ত্রের বিধি আছে+।
প্রশ্ন । তাই বোধ হয়, বিবাহটা মানব-সমাজের শ্রেষ্ঠ সংস্কার ও উৎসব । আবার, মেয়েদেরই যেন বিবাহ-ব্যাপারে উৎসাহটা একটু বেশী—কেন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর । পুরুষ স্থাসু প্রকৃতির, আর মেয়ে চরিষ্ণু প্রকৃতির । মেয়ে যখন
_______________________________
Cf. "Girls are more sympathetic than boys, they are also more easily prejudiced."
'Essay on the Growth of Social Ideals'-G. S. Hall.
বালিকারা বালকগণের চেয়ে অধিকতর সহানুভূতিপ্রবণ এবং সহজে অন্য প্রকার ভাব দ্বারা
রঞ্জিত ও অভিভূত হয় । —জি. এস. হল
তিনি অন্যত্র আবার বলেছেন—
. “The all-sided impressionability-characteristic of her sex which when
cultivated is so like an awakened child."
সুপ্তোত্থিত শিশুর মতন চারিদিকের সব-কিছু দ্বারা প্রভাবিত হওয়া নারীর চরিত্রগত লক্ষণ ।
Cf. Also “Variable as the light...it (the true changefulness of a woman) may take the colour of all that it falls upon, and exalt it."
'Sesame & Lilies'-Ruskin
নারীপ্রকৃতি আলোর মত পরিবর্তনশীল । যাহা-কিছুর উপর পড়ে তাহারই রঙে রঞ্জিত হয় এবং —রাস্কিন্
তাহাকে উদ্ভাসিত করে।
+ রক্ষেৎ কন্যাং পিতা বিন্নাং পতিঃ পুত্রাস্তু বার্দ্ধকে ।
অভাবে জ্ঞাতয়স্তেষাং স্বাতন্ত্র্য্যং ন কচিৎ স্ত্রিয়াঃ ।। ১/৮৫
—যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা
কন্যাকালে পিতা, বিবাহিত জীবনে পতি, বার্দ্ধক্যে পুত্রগণ, অভাবে জ্ঞাতিগণ, নারীকে রক্ষা করিবে। স্ত্রীগণের স্বাতন্ত্র্য কখনই বিধেয় নহে ।
‘সৰ্ব্বকৰ্ম্মস্বস্বতন্ত্রতা, বাল্য-যৌবন-বার্দ্ধকেস্বপি পিতৃভত্ত্বপুত্রাধীনতা।' —বশিষ্ঠসংহিতা
সমস্ত কর্ম্মে অস্বতন্ত্রতা, পূৰ্ব্বমত পিতা, ভর্তা ও পুত্রের অধীনতাই নারীর ধর্ম্ম ।
‘ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি। ৯/৩
মনুও বলেছেন—নারীর স্বাতন্ত্র্য উচিত নহে । —মনু
পুরুষের সহিত মিলিত হয় অর্থাৎ পুরুষের সুখ-দুঃখ, তুষ্টি-পুষ্টিই মেয়েরও সুখ-দুঃখ, তুষ্টি-পুষ্টি,— ,—এমনতর অবস্থায়, মেয়ে পুরুষকে অবলম্বন ক'রে তার চরিষ্ণু জীবনের গতিপথ ও স্থির কেন্দ্রবিন্দুর সন্ধান পায় । তাই, পুরুষকে আশ্রয় ক'রেই তার চরিষ্ণুতা অর্থাৎ চলিষ্ণুতা সার্থকতার কেন্দ্র খুঁজে পায় । অতএব, এই যদি ব্যাপার দাঁড়ায়, তবে মেয়েদের আনন্দ ও উৎসাহ তো বেশী হওয়াই উচিত ও স্বাভাবিক।
প্রশ্ন । বিবাহ মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। নারীর এই পুরুষকে সম্বর্দ্ধন করবার প্রবৃত্তি, আর, পুরুষের অমনতরভাবে সম্বন্ধিত হবার প্রবৃত্তির সমাধানের প্রয়োজন হ'তেই বিবাহের সৃষ্টি । নারী চায় পুরুষকে উদ্বর্দ্ধন করতে, পুরুষ চায় তাই নারীকে সৰ্ব্বতোভাবে বহন ক’রে নিজের জীবনকে বিস্তারে পরিপ্লুত করতে—তাই বিবাহ । বিবাহ উভয়তঃ,—দুইজনই পরস্পরকে বহন করবে। স্বামী স্ত্রীকে যেমন ক'রে বহন করতে পারে তেমন ক'রে, আর স্ত্রীর স্বামীকে যেমন ক'রে বহন করা উচিত তেমন ক'রে* ।
প্রশ্ন । কোন বিশেষ পুরুষ ও বিশেষ নারীর মিলনকে বিবাহ-সূত্রে চিরস্থায়ী করবার সার্থকতা কী ? অন্যান্য জীবদের ভেতরে যা' দেখা যায়, তা' তো অন্যরূপ ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। পুরুষ যদি যে-কোন নারীকে অমনভাবে বহন করে, তাহা হইলে তাহার জীবন অমনতরভাবে বর্দ্ধনশীল না-ও হইতে পারে । তাই, পুরুষের উচিত নিজের আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকা এবং প্রাণপণে আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করা—জীবনে এবং জগতে। আর, যদি সেই পুরুষের চরিত্রে, চলনে, আচরণে, জ্ঞানে—সব দিক-দিয়া মুগ্ধ হইয়া কোন নারী তাহাকে বহন করিবার জন্য অনুরোধ করে—আর, পুরুষ যদি হৃষ্ট হইয়া তাহার অনুরোধকে সার্থক করে, তাহা হইলে সেই মিলন প্রায়ই উভয়ের being and becoming-কে fulfil
_________________________________
*তাই, বিবাহ কথাটা এসেছে—বি (বিশিষ্টরূপে, অর্থাৎ যার-যার individual —নিজস্ব রকমে) + বহ্-ধাতু হইতে। বহ্-ধাতু মানে বহন করা, carry করা existence ও elevation-এর দিকে (জীবন ও বৃদ্ধির দিকে)।
করে—জীবন ও বৃদ্ধিকে সার্থক করিয়া তোলে, — অন্যথায় ব্যর্থতাই সম্ভব । নারী যখন তাহাকে স্বেচ্ছায় বরণ করে, তখনই সে সৰ্ব্বতোভাবে সেই পুরুষকে গ্রহণ করিবার উপযুক্ত হয়, – তাই, সেই নারী তাহার পুরুষের মনোবৃত্তির অনুসারিণী, সহধৰ্ম্মিণী হয়।
প্রশ্ন । আজকাল তো দেখি সমাজে sexual hunger-কে (যৌন ক্ষুধাকে) চরিতার্থ করবার জন্যই যেন বিয়ে হচ্ছে।Bertrand Russell-ও তো বলেন—“Often and often a marriage hardly differs from prostitution except by being harder to escape from.” – প্ৰায় স্থলেই বিবাহটা গণিকাবৃত্তিরই সামিল ; শুধু তফাৎ — বিবাহরূপ গণিকাবৃত্তি হ'তে উদ্ধার পাওয়া একটু বেশী শক্ত।
শ্রীশ্রীঠাকুর। Unequal match — অসদৃশ মিলন হ'লে ভাৰ্য্যা মনোবৃত্তির অনুসারিণী, সহধর্মিণী হয় না। এমন-কি, স্ত্রী যদি সৰ্ব্বতোভাবে তার স্বামীকে গ্রহণ না করে, সে যদি lover of some qualifications আর hater of some qualifications হয়—কতকগুলি গুণের পূজক হয়, আর কতকগুলি গুণকে অপছন্দ করে— তাহ'লেও উভয়ের মধ্যে difference (অমিল) থাকবেই । এমনস্থলে পুরুষ সেই স্ত্রীর দ্বারা সম্বৰ্দ্ধিত হ'য়ে বৃদ্ধি ও বিস্তারের দিকে অগ্রসর হ'য়ে environment-এর (পারিপার্শ্বিকের) সেবাপরায়ণ হ'য়ে তার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না* । তখন তাদের relation-টাকে intact (অটুট) রাখতে হ'লে sexual propensity — কামুকতা ছাড়া আর অন্য-কোন বন্ধন থাকে না,—তাই মানুষ কামপরায়ণ হ'তে বাধ্য হয়। ।
________________________________
* “It is the type of an eternal truth that the soul's armour is never well set to the heart unless a woman's hand has braced it; and it is only when she braces it loosely that the honour of manhood fails."
অর্থাৎ, রাস্কিন তাঁহার একটি প্রবন্ধে বলেছেন—নারী যখনই আত্মার বর্ম্ম শক্ত ক'রে আগলে
না ধরে—তখনই পুরুষত্বের গৌরব ম্লান হ'য়ে যায়—ইহা চিরন্তন সত্য।
+ Cf. "Large numbers of men and women are condemned to the society of an utterly uncongenial companion, with all the embittering consciousness that escape is practically impossible......such relations have some inevitable drawbacks. They are liable to emphasise sex unduly to be exciting and
প্রশ্ন । তাহ'লে বিবাহ-মিলনের মূল উদ্দেশ্যটা কী হওয়া উচিত ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। বিবাহের মূল উদ্দেশ্য উভয়ে উভয়ের মত বৃদ্ধি পাওয়া। কেউই তার জীবন ও বৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ণ করতে চায় না—কাম-রিপুকে চরিতার্থ করবার জন্য উভয়ের এ ক্ষুধা নয়; মূলে আছে জীবন ও বৃদ্ধি, তুষ্টি আর পুষ্টি – যে যেমন তেমন ক'রে, যাতে তা' হয়—তাই মানুষের প্রকৃত ক্ষুধা এবং তার জন্যই তার যা’-কিছু—আর, এই ক্ষুধা সার্থক করতে যা' প্রকৃষ্ট তাই করণীয় ।++
প্রশ্ন । তবে কোন্ নারী কোন পুরুষের সঙ্গে মিলিত হইবে ? এই মিলনের মূল সূত্র কী হইবে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর। যে-নারী যে-পুরুষের মনোবৃত্তির অনুসরণ সুখের ব'লে মনে করে, তা'তে ধন্য হয়, হৃষ্ট হয়, সার্থক হয়, পুরুষকে হৃষ্ট ও তুষ্ট ক'রে তোলে এবং তা'ই তার শারীরিক ও মানসিক পুষ্টি ও তুষ্টির luxuriant (উর্ব্বর) উৎস, – সেই
______________________________________
disturbing and it is hardly possible it should bring a real satisfaction of the instinct."
'Principles of Social Reconstruction'-Russell
তাই রাসেলও বলেছেন—মানুষ যখনই জীবনের পক্ষে সম্পূর্ণ প্রতিকূল কোন সঙ্গীর সহিত বসবাস করিতে বাধ্য হয়, তখনই তাহার নানারকম তিক্ত অভিজ্ঞতার সংঘাতে জীবন বিপন্ন হইতে থাকে,—ফলে, মানুষের ইন্দ্রিয়-লালসাই অস্বাভাবিকরূপে বাড়িয়া যায়—নানারূপ উত্তেজনা ও বিক্ষেপ আসে; তাই মানুষের বৃত্তির প্রকৃত সার্থকতা কিছুতেই আসে না।
++"Swedenborg calls marriage-union the precious jewel of human life and the repository of Christian Religion. Union in marriage constitutes the complete man and the marriage-union is essentially chaste and holy."
—Frank Sewell, in 'Swedenborg, and the Sapientia Angelica'
অর্থাৎ, সুইডেনবোর্গের মতে বিবাহ-মিলন জীবনের অমূল্য রত্ন এবং খ্রীষ্টধর্ম্মের আধারস্থল । বিবাহ-মিলন মানুষকে সম্পূর্ণ করে এবং ইহা মূলতঃ অতিশয় পবিত্র ।
Cf. "The loftiest and most sacred relation of human life, that upon which the social economy must rest or go asunder is the marriage relation-in which the complementary relation of the sexes is shown......having a significance beyond the earthly life."
'Conjugal Love and its Chaste Delights'-Swedenborg
বিবাহ-সম্বন্ধ মানব-জীবনের শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম সম্বন্ধ। সমস্ত সমাজ-দেহ ইহাকেই ভিত্তি করিয়া দাঁড়াইয়া থাকে, আর ইহাতেই ভাঙ্গিয়া যায়। ইহাতে নরনারীর পরস্পর পরিপূরক সম্বন্ধ দেখান হয়—ঐহিক জীবনের পরপারেও এই মিলনের একটা সার্থকতা আছে । ——সুইডেনবোর্গ
প্রশ্ন । কিন্তু আজকাল তো দেখি—বিবাহের বর-কনের বাপ-মায়ের ভেতর একটা দর-কষাকষি ও কতকগুলি অবান্তর বিষয় নিয়ে হট্টগোল। পুরুষ ও নারীর বর্ণ, বংশ, বিদ্যা, কৰ্ম্ম, স্বাস্থ্য, দক্ষতা ইত্যাদি হিসাবে মিলন বাঞ্ছনীয়* ।
আর Dr. Hirschfeld—যাঁকে Einstein of Sex বলে— তিনিও বলেছেন, “Most people pick their partners of life with less care than their partners in business-they utilise less caution in the selection of a husband or a wife than in the choice of a cook or in the purchase of a car or cow.” – অর্থাৎ, প্রায় লোকেই ব্যবসার অংশীদার
_____________________________________
★ “এতৈরের গুণৈযুক্তঃ সবর্ণঃ শ্রোত্রিয়ো বরঃ ।
যত্নাৎ পরীক্ষিতঃ পুংস্থে যুবা ধীমান জনপ্রিয়ঃ ।।"
—যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা, ১/৫৫
মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন— যে-সমস্ত গুণ থাকিলে পুরুষ পুরুষ হয়, সেই সমস্ত গুণযুক্ত সবর্ণ (সমান বা উৎকৃষ্ট বর্ণ), বিদ্বান, পুরুষত্ব বিষয়ে যত্নপূর্ব্বক পরীক্ষিত, যুবা (অর্থাৎ সু-স্বাস্থ্যবান্ ) জনপ্রিয় ব্যক্তিই বর হইবার উপযুক্ত।
আবার বলেছেন—'ন বিদ্যয়া কেবলয়া তপসা (জাত্যা) বাপি পাত্রতা।
যত্র বৃত্তমিমে চোভে তদ্ধি পাত্রং প্রকীৰ্ত্তিতম্ ।।' ১/২০০
কেবল বিদ্যায় বা কেবল জাতি দ্বারা পাত্রতা হয় না। যাহার বিদ্যা ও জাতি দুই-ই আছে সে-ই
পাত্র ।
পাশ্চাত্ত্য মনীষিগণও বিবাহ-ব্যাপারে অতিশয় সতর্কতা ও নানা বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষার বিধি দিয়াছেন—
"I do not see how any sane young couple can risk the hazard of marriage, involving heavy responsibilities towards each other, their progeny, society without subjecting themselves to the tests provided by Chemistry, Biology and Psycho-Analysis."
'Glimpses of the Great'-Viereck
অর্থাৎ, বার্লিনের যৌন বিজ্ঞানাগারের অধ্যক্ষ হার্শফেল্ড বলছেন—বিবাহটা দম্পতির পক্ষে, সন্ততি ও সমাজের পক্ষে যেমন গুরুদায়িত্বপূর্ণ ব্যাপার— তাহাতে রসায়ন, প্রাণিবিজ্ঞান ও চিত্তবিশ্লেষণ বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষাসমূহের প্রয়োগ না করিয়া কেমন করিয়া পুরুষ-নারী বিবাহ-বন্ধনে বদ্ধ হইতে পারে আমি বুঝতে পারি না ।
Cf. "Both the man and woman should be carefully examined not only with regard to their health-not only with regard to their fitness to marry but whether they are fit to marry each other. One man's meat is another man’s
পছন্দ করতে গিয়ে যতটা হিসাব করে, জীবনের সহধর্মিণীকে পছন্দ করার সময় তার চেয়ে ঢের কম বিচার করে ;—মানুষ, পাচক বা একখানা গাড়ী বা গরু কেনায় যতটা হিসাব করে,তার চেয়ে ঢের কম হিসাব করে স্বামী বা স্ত্রী মনোনীত করার সময়ে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর। বিবাহের স্বাভাবিক উৎকর্ষের ধারা তো এ নয়ই। প্রকৃত ব্যাপার এই হওয়া উচিত—কোন পুরুষের চরিত্রে*, চলনে, বর্ণে, বংশে, বিদ্যায়, দক্ষতায়, স্থৈর্য্যে ও নৈপুণ্যে মুগ্ধ হইয়া সৰ্ব্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গ্রহণ করিয়া অবনত হৃদয়ে তাহাকে বরণ করায়, সেই পুরুষ তাহাকে গ্রহণ করিলে যদি কোন স্ত্রী তাহার সর্ব্বতোভাবে মনোবৃত্তির অনুরঞ্জনী হওয়াটাই জীবনের সার্থকতা, সুখ, তৃপ্তি, তুষ্টি ও পুষ্টি বিবেচনায় নিজেকে ধন্য মনে করে,—তবে সে-ই তাহার প্রকৃত সহধর্মিণী হওয়ার উপযুক্ত,—আর সেই মিলনেই উভয়ে সার্থক হয় । আর, পদ্ধতি যদি এমনতর হয় তবে পণ বা দর-কষাকষি বলিয়া কোন-কিছু উঠিতেই পারে না—আর, সংসারটাও এত অশান্তির আগুনে দাউ-দাউ করিয়া জ্বলিয়া ওঠে না ।
10