ধৰ্ম্ম
ধৰ্ম্ম বলে কা’রে?
চলা-বলা-করা দিয়ে
জীবনটা যা’য় বাড়ে। ১।
সত্তা-সহ জীবনটাকে
ধ’রে রাখে যা’তে,
ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্ম তা’কেই বলে
জীবনও বয় তা’তে। ২।
সত্তা যা’তে ভাল থাকে
জীবনীয় যা’ সত্তার-
তা’ই-ই যে তা’র ধর্মাচরণ
জীবনসত্তা তা’ই-ই তা’র। ৩।
ধৃতিমুখর চলন নিয়ে
কৃতী হওয়াই ধৰ্ম্ম করা,
স্বার্থলোলুপ অলসতা
নয়কো কিন্তু ধৰ্ম্ম-ধরা। ৪।
ধর্মাচরণ, ধৃতিপোষণ
সব-জীবনের শুভ আলো,
বুড়োকালে ধৰ্ম্ম করা
যদিও খাঁকতি, তা’ও ভালো। ৫।
ধর্ম মানে আর-কিছু নয়
যোগ্যভাবে বাঁচা-বাড়া,
নিজের সহ পরিবেশের
ধৃতি-চর্য্যার এইতো ধারা। ৬।
ধারণ-পালন-পোষণ-চৰ্য্যায়
সত্তাটিকে পেলে চল্,
ঐটিই তো ধৰ্ম্ম-কর্ম
ঐটিকেই ধৰ্ম্ম বল্। ৭।
ধর্মকথা আগে শোন
বুঝে-সুঝে বেশ ক’রে,
হাতে-কলমে করতে থাক
বিহিতভাবে বোধ ধ’রে। ৮।
সৎ-আচার্য্যে নিষ্ঠা রেখো
আচারসিদ্ধ যিনি হন,
শুভ-সুন্দর নিষ্পাদনে
চল, পাবে উৎসারণ। ৯।
সৎ-আচার্য্যে যুক্ত হ’য়ে
দীক্ষার দক্ষ অনুশীলন,
যোগ্য হওয়ার এইতো সুপথ
এতেই যুক্ত, ধৃতিপ্রবণ। ১০।
বাঁচতে যদি চাও-
সব-চলনই বাঁচার পথে
চালিয়ে নিয়ে যাও,
পারবে যেমন হবেও তেমন
ভোগও হবে তেমনি,
করা-চলা-ভাবার সাথে
যুক্ত তুমি যেমনি। ১১।
সত্তারই পূজারী যে-জন
সাত্বত যা’র মন্ত্রণা,
বাড়বি যেমন তাঁ’য় অর্ঘ্য দিবি
ক’রবি যেমন বন্দনা। ১২।
চ’লবে
ক’রবে
দেবেও যেমন
ইষ্ট-দেবতায়,
হবে,
পাবে,
থাকবেও তেমন
প্রসাদ-প্রেরণায়। ১৩।
পূজা মানে তা’ই-ই-
শরীর-মনের সম্বর্দ্ধনায়
বাড়িয়ে তোলা চাই-ই। ১৪।
ধৃতিই যদি রইল না,
সত্তা যে তোর রইল প’ড়ে
জীবন তোরে বইল না। ১৫।
শ্রদ্ধা-আকুল নয়ন-মন তোর
সেবা-আকুল হাত,
সৎ-এর সঙ্গ এ নিয়ে কর্
হ’য়ে প্রণিপাত। ১৬।
অনুরাগী অনুচর্য্যা
ভজন বলে তা’য়,
ভজন যেমন ভাগ্যও তেমন
ঠিকই জানিস্ পায়। ১৭।
পূজা-আর্চ্চা মানেই কিন্তু
দৈবগুণ যা’ সেধে নেওয়া,
হাতে-কলমে অভ্যাস ক’রে
ব্যক্তিত্বে তা’র রূপটি দেওয়া। ১৮।
খাওয়া-দাওয়া, বাজী-পোড়ান
অঢেল ঢালা আয়োজনে,
পূজা সার্থক হয় না-বিনা
দিব্যগুণের সংসাধনে। ১৯।
থাক্ না রূপ তোর যেমন-তেমন
গুণ-পূজার তুই সাধন কর্,
দেবগুণে অন্বিত হ’য়ে
শ্রেয়চর্য্যায় জীবন ধর্। ২০।
গুণ ধীইয়ে গুণীকে ধর্
সেবা-চর্য্যায় নিয়ত র’,
পরিচর্য্যী প্রগতিতে
দীপ্তি তা’রই অঢেল ব’। ২১।
মকস ক’রে গুণীর গুণ
হৃদয়টাকে তৃপ্ত কর্,
তৃপ্তি নিয়ে দীপক গুণে
সবারই প্রাণ উজিয়ে ধর্। ২২।
বোধ-বিবেকী সন্ধিৎসাতে
নিষ্ঠা-দীপন আকুল-রাগে,
অনুশীলনী চাতুর্য্যেতে
গুণ সেধে নে জীবন-যাগে। ২৩।
ফন্দী-ফিকির যা’ই করিস্ না
গুণ-সাধনায় নিয়োগ কর্,
গুণের গুণী হ’তে হ’তে
ভরদুনিয়া তুলে ধর্। ২৪।
অঙ্গরাগের বিভব যদি
হৃদ্-বিভবে দেয় সাড়া,
পূজা-আচার-অনুরাগের
সেইতো শুভ প্রাণনধারা। ২৫।
ইষ্টমূর্ত্তি শিষ্ট কিন্তু
জীবন-যাগের উচ্ছলায়,
সে-নিষ্ঠাতেই দীপ্ত হৃদয়
সার্থক সাধন মানুষ পায়। ২৬।
পূজার মরকোচ অনুশীলনে
অধিকৃতি আসে তা’তেই,
নয়তো পূজা বিফলই হয়
নষ্ট পায় সে বিফলেতেই। ২৭।
ধৰ্ম্ম জানিস্ কৃতির বর্ম্ম
কৃতার্থতাই ঐশ্বর্য্য তা’র,
নষ্ট কৃতি ধৰ্ম্মহারা
গঞ্জনাই তা’র উপহার। ২৮।
ধৰ্ম্মনীতি ধৃতির নীতি
ক’রলে তা’রে উপহাস,
সত্তা যে তোর ধ্বসবে ক্রমেই
নিজের গলায় পড়বে ফাঁস। ২৯।
দীক্ষা যদি শিক্ষাকে তোর
অনুশীলন-উছল ক’রল না,
সেই দীক্ষা তোর ক’রবে কী বা
পাবি উপহাস-লাঞ্ছনা। ৩০।
ঘুরলে-ফিরলে নাকাল হ’লে
দেখলে জীবন-কোলাহল,
সত্তায় ভালবাসই যদি
এখনও তা’কে কর্ উছল। ৩১।
সব-জীবনের সত্তা রাজা
সত্তাচর্য্যাই রাজপূজা,
সত্তা যা’তে উল্লে ওঠে
তা’ই-ই তোদের স্বার্থ-ধ্বজা। ৩২।
কৃষ্টি-সাধার প্রারম্ভেতেই
গুরুকরণ ক’রতে হয়,
গুরুচর্য্যী অনুশীলনে
হয়ই সার্থক জ্ঞানোদয়। ৩৩।
ইষ্টে করিস্ জীবন-দাঁড়া
সৎ-চলনটি ক’রে সার,
লোকের সেবায় বর্দ্ধনা আন্
জীবন-শুদ্ধি ক’রে অপার। ৩৪।
বিভুর দেওয়া তোর জীবনটা
বুঝে ক’রে বিভোর হ’,
মনে ভেবে কাজে ক’রে
সিদ্ধ-বিভোর বিভুকে ব’। ৩৫।
জ্বলন্ত দীপ ঐ অদূরে
আঁধারে প’ড়ে মরবি কেন,
এগিয়ে যা’, দেখে-বুঝে
সমাধান তা’র ক’রেই জেনো। ৩৬।
সদ্গুরু-ত্যাগ মহাপাপের-
শাস্ত্রবাণী তা’তেই কয়,
সর্ব্বনাশা ঐটে যে রে
গেয়ে বেড়ায় কালের জয়। ৩৭।
ধৃতিচর্য্যার নিদেশগুলি
ইষ্ট ভ’জে নিও জেনে,
যেখানে যেমন সেটা খাটে
চর্য্যা ক’রো সেইটি মেনে। ৩৮।
জীবন-রথে চলার পথে
শিষ্ট ধৃতি-বিনায়নে,
চল্ ওরে তুই দীপন-বেগে
উৎসমুখে উন্নয়নে। ৩৯।
ধৃতিনিষ্ঠায় যা’রাই চলে-
শক্ত-পোক্ত সদাচার,
শিষ্ট জীবন-তপা যা’রা-
পায় জীবনের সুপ্রসার। ৪০।
বুকের আবেগ উল্লে ওঠে
বাস্তব-বিজ্ঞ বিনায়নে,
তখনই তোর সরস-পূজায়
পায় প্রেরণা জগৎ-জনে। ৪১।
যজ্ঞ মানেই দেবপূজা
পূজায় আত্ম-উৎসারণ,
লোকসঙ্গমে চর্যা-দানে
দেবদ্যুতির সঞ্চারণ। ৪২।
জীবনচর্য্যী হ’ না ওরে!
সাবুদ নেশায় জ্ঞানকে ব’,
আচার-আচরণে নিখুঁত হ’য়ে
প্রেষ্ঠনিষ্ঠায় অটুট র’। ৪৩।
আচার্য্যকে অটুট শ্রদ্ধায়
স’য়ে-ব’য়ে চল্ দেখি,
নিদেশ তাঁহার পালন ক’রে
বোধ-বিবেকে দে রাখি’। ৪৪।
সব কথা যাক্-
সাম্যতালে বাঁচা-বাড়া
এই-ই কিন্তু চাহিদা সবার,
কী আছে আর এটুক ছাড়া? ৪৫।
তাই বলি রে, কোল ছেড়ে মা’র
শিখলি যখন হাঁটতে-চলতে,
আচরণে ধৃতি-সাধন
আসুক বোধে চলতে-ফিরতে। ৪৬।
একটু-একটু ধৃতি-চলায়
একটু-একটু বলা-কওয়ায়,
অভ্যাসেতে আসুক সে-জ্ঞান
উন্নতিরই জীবন-হাওয়ায়। ৪৭।
অস্তিত্বটাকে রাখবে যেমন
চালাবে তুমি যেই দিকে,
অভ্যাসটাও ফুটবে তেমন
নিয়ে তোমার বিধানটিকে। ৪৮।
জীবন নিয়েই সব ব্যাপার তো
বাঁচা-বাড়াই তা’র আসল,
ধৃতিপালী, ঈশ্বর যিনি,
ধৃতি সাধাই তাই কুশল। ৪৯।
সব যা’-কিছুর অধিপতি-
ধারণ-পালন স্বভাব যাঁ’র,
একনিষ্ঠ সেই তপে হও,
অমৃত তো সেই তোমার। ৫০।
ধৃতি যা’তে করে নিকেশ
আনে সবার সেই সাবাড়,
ধৃতি নিয়েই আনাগোণা
ধৃতি-পোষাই সব ব্যাপার। ৫১।
জীবন-পথে চল্ সিধে তুই
তোকে নিয়ে আর সবারে,
পুরুষোত্তমে লক্ষ্য রেখে
আপূরণী জোয়ার ধ’রে। ৫২।
সব জীবনে সেইটি প্রধান
প্রধানকে যা’ ধ’রে থাকে,
ঐ নিশানায় প্রধান বাছিস্
দেখে-শুনে তুকে-তাকে। ৫৩।
জীবনটা তোর নয়কো বাতুল
নয়কো বেকুব মিথ্যাভরা,
বিধির বিধান চল্ রে মেনে
হবেই জীবন তৃপ্তিভরা। ৫৪।
ঊর্জ্জী-দীপা নিষ্ঠা নিয়ে
চল্ এখনো ওরে,
সন্ধিৎসাকে সতেজ রেখে
ইষ্টসেবা ধ’রে। ৫৫।
সবার গোড়ায় ইষ্টনিষ্ঠা-
ইষ্ট-সেবায় তৎপর,
রেহাই চায় না একটুও যে-
সেই জীবনে ধৃতি ধর্। ৫৬।
সুধৃতিকে নিয়ে কর্
জীবনচর্য্যার বন্দনা,
এইতো সুধা জীবনের
অমৃতে হয় রঞ্জনা। ৫৭।
অবিদ্যা অসৎ যা’ তা’য়
জেনে সমীচীন,
সৎ-চলনে ধৃতি-যোগে
ওঠ হ’য়ে প্রবীণ। ৫৮।
ইষ্টের কাছে নিও না কিছু
দিও তাঁ’রে যত পার,
নেওয়ায় বাড়ে স্বার্থবুদ্ধি
দেওয়ায় প্রীতি হয়ই গাঢ়। ৫৯।
দেবদেবী তোর লাখ থাকুক না
ইষ্টে ক’রে সংহতি,
একাগ্রেতে প্রসাদ-মনে
স্বস্তি পাবি, কর্ স্তুতি। ৬০।
দেবদেবী তোর থাক্ না যতই
ইষ্টে যদি এক না হ’ল,
কী ফল তা’তে হবে রে তোর
সবই যে তোর ব্যর্থ গেল। ৬১।
সৎ-আচার্য্যে আনতি রাখ
নিষ্ঠা-অটুট নন্দনায়,
নিদেশবাহী সেবা-অটুট
হ’য়ে চল্ তাঁ’রই তর্পণায়। ৬২।
দেবদেবী তোর যতই থাক্ না
ইষ্টে ক’রে একায়িত,
সার্থকতায় উঠে দাঁড়া
নইলে হ’বি ব্যর্থায়িত। ৬৩।
মহান্ যা’রা শ্রেয় যা’রা
দেবদেবী আর পূত যা’রা-
সবার প্রতি শ্রদ্ধা রাখিস্
ঠিক্ রেখে তোর ইষ্টদাঁড়া। ৬৪।
সব-প্রবৃত্তির বাতুল চলা
হ’য়ে উঠুক্ সব নিথর,
ধারণ-পালন-উৎস নিয়ে
হেসে উঠুন তোর ঈশ্বর। ৬৫।
ধারণ-পালন বুদ্ধি নিয়ে
ধৃতির পথে এগিয়ে চল্,
ঈশ্বরেরই আধিপত্যে
বাড়িয়ে দেবে বুকের বল। ৬৬।
স্তব-স্তুতি কীর্ত্তনাদি
যা’ই করিস্ না ঠিক বুঝিস্,-
আচার-বিচার-অনুশীলনে
আয়ত্ত তা’ করিসই করিস্। ৬৭।
বাঁচা-বাড়ার সন্দীপনা
সত্তা মাঝে লুকিয়ে রয়,
ভাল থাকা, ভাল পাওয়া
এটা কিন্তু সবাই চায়। ৬৮।
বেঁচে-থাকা বেড়ে-চলা
যে-বিধিতে সমাধান,
ধৰ্ম্মবিধি সেইতো বিধি
সৃষ্টি তা’তেই চলৎপ্রাণ। ৬৯।
বেঁচে থাকা, বেড়ে চলার
যা’তেই আসে সমাধান,
প্রাজ্ঞবোধের দৃষ্টি দিয়ে
তা’ নিয়ে চল্ সটান টান। ৭০।
শান্তি দিবি, তৃপ্তি দিবি
দীপ্তি দিবি সবার প্রাণে,
নিষ্ঠাবিপুল চর্যা দিবি
কানায়-কানায় আকুল টানে। ৭১।
প্রাণন-বেগের উচ্ছলতায়
সবাই তোরা বেঁচে থাক্,
সত্তা-হিংসক হোস্ নাকো কেউ
ঈশ্বরেতে নিষ্ঠা রাখ। ৭২।
তোমার সহ অন্যের যদি
কল্যাণ-অর্ঘ্য অনূত হয়,
আপদ-বিপদ সবটা যদি
ঐ অনৃত করে জয়,
হ’লেও সেটা অনৃতপন্থী
অনৃত কিন্তু নয়কো কাজে,
সে-অনূতকে বিদায় দেওয়া
সেই বেলাতে সেটাও বাজে। ৭৩।
যে বাদের তুই হোস্ না বাদী
জীবনবাদী আসলে তুই,
জীবনটাকে করতে কায়েম
চল্ চ’ষে সব জীবন-ভূঁই। ৭৪।
সত্তাবাদই সেরা বাদ
উৎস যাহার ঈশ্বরে,
ধারণ-পালন সম্বেগ যাহার
চেতন রাখে নশ্বরে। ৭৫।
ঈশ্বরে তুই নাই বা মানিস্
অস্তিত্বকে বুঝিস্ তো?
পালন-পোষণ অস্তিত্বে করা
ধৰ্ম্ম বলে তা’কেই তো। ৭৬।
সত্ব-বাদই বাদের সেরা
শঙ্খধ্বনিত্* কর্ নিনাদ,
সত্তাটুকু বাদ দিলে আর
নাইকো বিশ্বে কোন বাদ। ৭৭।
তাই বলি রে ওরে পাগল!
সত্তাসাম্য রেখে ঠিক,
পারস্পরিক অনুকম্পায়
চলতে থাকিস্, নয়তো ধিক্। ৭৮।
শরীর-মনে ক্রিয়া-কলাপে
সত্তাপোষী যা’,
সেইটি জানিস্ আসল বিধি
অন্য কিছু না। ৭৯।
সুষ্ঠু হ’য়ে বাস্তবে তুই
চলায়-করায় উছল হ’,
সাত্বত যা’ তা’রই
সুসন্দীপী জীবন ব’। ৮০।
*শঙ্খধ্বনিতে
কৃষি, কৃষ্টি নিয়ে চলিস্
যা’তে তোরা বেঁচে থাকিস্,
কৃতিদক্ষ সৎদীপনায়
নিজ-পরিবার গ’ড়ে তুলিস্;
বন্ধু প্রীতি-পরিচর্য্যা
জনচর্য্যা নিয়ে চলিস্,
প্রিয়ের ঘরে তোর বসবাস-
তাঁ’র পথেতেই জীবন পালিস্। ৮১।
ওঠ রে, ওঠ রে, ওঠ রে ও-তুই!
দাঁড়া রে তুই সোজা হ’য়ে,
ইষ্টধৃতি অনুশীলনে
সার্থক হ’ তুই তাঁ’কে ব’য়ে। ৮২।
ইষ্টসেবার উপচার যা’
স্বতঃস্বেচ্ছ সম্বেদনায়,
ব’য়ে-ক’রে নিজেই চলে
বয়ই জীবন ঊর্জ্জনায়। ৮৩।
জীবন চায় তোর থাকতে কিন্তু
চায় কি কেউ নিকেশ হ’তে?
উদ্বর্দ্ধনার অনুতপায়
চায়ই সবাই বৃদ্ধি পেতে। ৮৪।
প্রদীপ হাতে চলছে দেখ না
ঐ চেরাকী ফকির-জন,
জীবন-আলো ও চল্ দেখে চল্
স্নিগ্ধ ক’রে সবার মন। ৮৫।
‘মুশকিল-আসান’ সুরে-গানে
ঘুরে বেড়ায় ফকির ঐ,
সব দরজায় দিচ্ছে হানা-
বাঁচা-বাড়ায় চললে কৈ। ৮৬।
মুশকিলগুলি তাড়িয়ে দিয়ে
জীবন-চৰ্য্যায় হ’ পটু,
সেই সাধনায় সিদ্ধ হ’য়ে
দে সরিয়ে সব কটু। ৮৭।
জীবন-তপে কৃতি-রাগে
রঞ্জিত হ’ উচ্ছলায়,
নন্দিত হ’, বর্দ্ধিত কর্
পারিবেশিক সঞ্চলায়। ৮৮।
বাঁচা যা’তে পুষ্টি পেয়ে
শক্তি ধরে জীবনে,
সেই পোষণাই জীবন-পোষণ
অন্য কিছুর কী মানে? ৮৯।
সত্যনিষ্ঠাই সৎ-এর ধরণ
সৎ-অস্তিত্বের শেষ কোথায়?
বিশেষই তা’র হয় বৈশিষ্ট্য
বিশেষভাবে জাগে যেথায়। ৯০।
সজাগ হ’য়ে বজায়-এর পথ
এখনও তুই নে রে খুঁজে,
চলন-বলন-ক্রিয়া-কলাপ
করিস্ সে-সব বুঝে-সুঝে। ৯১।
জীবনবাদের বাদ নিয়ে তুই
অঢেল চলায় চল্ রে চল্,
অমর জীবন পাওয়ার পথে
রাখ নিয়ে সেই কৃতিবল। ৯২।
জীবন-ধ্বনন জাগ্ল প্রাণে
তবে তো তুই বেঁচে আছিস্!
বেঁচে থাকার জোগাড় ক’রে
আর যা’ কর্ যত পারিস্। ৯৩।
আশীর্ব্বাদটি আসবে নেমে
তোমার জীবন-বিধান ব’য়ে,
দীপন-রাগে চলতে থাক
শুভে কুটিল বিনাইয়ে। ৯৪।
ধৃতির বাজনা চল্ বাজায়ে
ধৰ্ম্ম-নিশান ধর্ রে তুলে,
ডমরু বাজায় দেখ না কোথায়
বাজছে বিষাণ কেমন দুলে। ৯৫।
ধৃতি-উপাসনায় ধৃতি-তপা হ’য়ে
ধৃতিক্রিয় হ’য়ে চল্,
ভক্তি-জাগরণে শক্তি বেড়ে যাক্
বাড়ুক জীবন-বল। ৯৬।
আচার্য্যকে বাদ দিয়ে তুই
জ্ঞান-গবেষণ করবি যত,-
সামঞ্জস্য থাকাই কঠিন
হারাবি তুই পথ নিয়ত। ৯৭।
আচার্য্য-নিষ্ঠায় অটুট হ’য়ে
জ্ঞান-গবেষণায় থাকলে মন,
প্রজ্ঞা বাড়ে ক্রমান্বয়ে
সিদ্ধির পথে যায় সে-জন। ৯৮।
ইষ্টনিষ্ঠ শ্রদ্ধা নিয়ে
যে-জন চলে ধী-এর পায়,
কৃতার্থতা সামনে এসে
অনেক কিছুই দিয়ে যায়। ৯৯।
পুণ্য জীবন অটুট রেখে
যেমন পারিস্ ক’রে চল্,
পুণ্যস্রোতা যতই হ’বি
বাড়বে তত হৃদয়-বল। ১০০।
ইষ্টনিদেশ আঁকড়ে ধরবি
স্বাস্থ্য-নীতি তা’র মাধ্যমে,
কৃতিনীতির নিষ্পাদনায়
মগ্ন থাকিস্ এই ধরমে। ১০১।
নিষ্ঠা-আচার তত্তরে কর্
ধৃতির তালে বিনিয়ে তা’দের,
পুষ্টি পেয়ে ধৃতি করুক
উচ্ছলাতে পুষ্ট তোদের। ১০২।
বাঁচাবাড়ার সমস্যা যা’দের
অন্তরেতে স্বতঃই জাগে,
ধৰ্ম্মকথা ধৃতি-চলন
তা’দের জানিস্ ভালই লাগে। ১০৩।
জীবনটা তো খেলার নয়কো
হেলাফেলার নয়কো সেটা,
বাঁচাবাড়াই পরম স্বার্থ
বোঝে না এমন মূর্খ কেটা ? ১০৪।
ধৰ্ম্মশিক্ষাই ধৃতিশিক্ষা
আচরণ আর তপ-সাধনায়,
পদ্ধতিতে যে-জন দড়-
প্রাপ্তি আসে তা’র উচ্ছলায়। ১০৫।
বাঁচাবাড়ার পরিক্রমা
বাড়িয়ে তুমি তুলবে যত,
সঙ্গতিশীল ব্যক্তিত্বতে
জেগেই তুমি উঠবে তত,
ধৰ্ম্ম ততই উঠবে ফুটে
ধারণ-গালন-পুষ্টি নিয়ে,
কৃষ্টি-জাতি-বর্ণান্বয়ে
উঠবে ক্রমেই পুষ্ট হ’য়ে। ১০৬।
জীবনটা তো তিনটি ধারায়
সৃষ্টি হ’ল এই দুনিয়ায়;
জীবনধারা একটি শুধু
নিরোধ-ধারাও একটি,
পোষণ-ধারাও তেমনতরই
চলতে সাথে একটি;
পোষণধারা ঠিক রেখে তুই
জীবনে হ’ উচ্ছলা,
নিরোধটাকে তত্তরে রাখ
হ’স না হৃদে পিচ্ছলা;
নিরোধ মানেই অসৎ-নিরোধ
জীবন-ধারায় বর্দ্ধনা যা’র,-
পোষণ দিয়ে পুষ্ট করে
এইতো প্রধান বৃত্তি তাহার;
চলন-বলন এমনি করিস্
তিন ধারাকে এক ক’রে,
সৎ-নন্দনায় নিরোধ-পোষণ
জীবনটাকে রাখে ধ’রে;
তিন-এর ধৃতিই করিস্ পালন
এমন চালে চলবি-
তোমারই বা অন্যেরই হো’ক,
এমন চর্য্যায় থাকবি। ১০৭।
শুভসিদ্ধ জীবনপোষক-
স্বস্তিরক্ষায় সমীচীন,
জীবনীয় ব’লে তা’কে
জ্ঞাপিত ক’রো নিত্যদিন। ১০৮।
সাধ্যে যেমন কুলায়-লোকের
ধৃতিচর্য্যা বাদ দিয়ে,
ধর্মচর্য্যা হবে নাকো
হাওয়াই-জ্ঞানের তুক নিয়ে;
দেখতে হবে শুনতে হবে,
করতে হবে বুঝে-সুঝে-
স্বস্তি আসে কেমন ক’রে
করবে সেটা নিজে খুঁজে। ১০৯।
সব বোধনায় সুযুক্তিতে
সঙ্গত ক’রে সমীচীন,
ধৃতি-বিদ্যা জাগবে তবে
ক্রমে-ক্রমে সর্ব্বাঙ্গীণ ১১০।
সর্ব্বাঙ্গীণ সপরিবেশের
জ্ঞান কৃতি-যাগের উদ্ভাবনে,
বোধ-বিনায়ন-ধৃতির পথে
চ’লতে হবে উন্নয়নে। ১১১।
যাঁ’র ছায়া ছাড়া নাইকো আশ্রয়
চর্য্যাসেবায় দীপ্ত তুমি,
সেইতো তোমার জীবন-অর্থ
সেই তো তোমার স্বস্তি-ভূমি। ১১২।
সন্দীপনী প্রেষ্ঠ-নিষ্ঠা
কৃতিভূষিত অনুকম্পা,
পরিচর্য্যী শ্রমপ্রিয়তায়
হয়ই মানুষ সুসন্তপা। ১১৩।
ইষ্টনিষ্ঠা অটুট যা’দের
কৃতি-তৎপর মিতি-গতি,
আচার-ব্যাভার মিষ্টি-মধুর
তা’রাই তো পায় সুসংস্থিতি। ১১৪।
নিষ্ঠা-কৃতির ধৃতি-দীপন
উৎসশদর্জ্জনারই অনুরাগে,
জীবনটাকে ভরপুর রাখিস্
ধৃতিচর্য্যা এনে বাগে। ১১৫।
আচার-নিয়ম-তপের মকস
সম্বেদনাই সৃষ্টি করে,
অভ্যাস-অনুরাগ-অনুশীলনে
আবেগ-সহ ধৃতি বাড়ে। ১১৬।
মিছে কেন এঘাট-ওঘাট
বেড়ায়ে হাল্লাক হ’বি আর!
পোড়া কাঠের গতির মতন
ধ’রে এ-ঘাট ধরবি আর? ১১৭।
জরণশীল তো সব জগতে
জীবন গেলেই জর হয়,
জরত্বকে তাড়িয়ে দিয়ে
কর এমনটি-বাঁচে যা’য়। ১১৮।
সত্তা যখন বিব্রত হয়
হাত বাড়ায় সে বাঁচার তরে,
প্রকৃতির এ পরম আবেগ
হৃদয় দিয়ে প্রকাশ করে। ১১৯।
সত্তা-প্রীতি এতই জীবের
বৃত্তি-পাশে রয় না লীন,
সবাই যখন এক-আশ্রয়ে
আত্মরক্ষায় কাটায় দিন। ১২০।
দীক্ষা জানিস্ দক্ষ করে
প্রীতিদীপ্ত করে প্রাণ,
কূটকুশলী অনুশীলনে
কৃতি-তীর্থে করায় স্নান। ১২১।
দক্ষ হবার উপায় জানায়,
দীক্ষার তাই এত দাম,
কৃতিগুরুর কাছে গিয়ে
সার্থক কর্ দীক্ষা-নাম। ১২২।
দয়া যেথায় স্বতঃস্রোতা
সেইতো দয়ালদেশ,
ধারণ-পোষণ-চর্য্যাটি তাই
ধর্মেরই নিদেশ। ১২৩।
ঈশ্বরেরই দুন্দুভি ঐ ধারণ-পা
লন-পোষণ-স্রোতা,
বেঁচে থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায়
হ’চ্ছে যে তা’র সার্থকতা। ১২৪।
ভজন-সেবা-ব্যাপন-হৃদয়
দৃপ্ত রাগে তৃপ্তি নিয়ে,
ভগবানের সেইতো আসন
মূর্ত্ত সেথায় দীপ্তি দিয়ে। ১২৫।
ধৰ্ম্ম যতই ফুটবে তোমার
নিষ্ঠা, নীতি, ব্যবহারে,
প্রতিষ্ঠাও আসবে তেমনি
পারবে নাকো রুখতে তা’রে। ১২৬।
ধর্মচর্য্যা ক’রে চললে
বাড়বে ধৃতি ক্রমে-ক্রমে,
কুকর্ম্মেরও হবে নিরসন
তেমনতরই যথা-নিয়মে। ১২৭।
ইষ্টভৃতি আবেগ বাড়ায়
ধৃতিধান্ধার চর্য্যা নিয়ে
যোগ্যতাতে যুত ক’রে
জীবনটাকে সুবিনিয়ে। ১২৮।
স্বস্ত্যয়নীর শুভচর্য্যা
কৃতার্থতায় কৃতী করে,
স্বস্তিতপা ক’রে তা’কে
সত্তাটাকে তুলেই ধরে। ১২৯।
লোহায় পোষে রক্তকণা
শঙ্খে পোষে হাড়,
সিন্দুরেতে শোভা বাড়ায়
বন্ধ্যার প্রতিকার। ১৩০।
অন্যের শুভ হ’য়েও কিন্তু
তোমার ক্ষতি হয় না,
এমন কথা আচার-ব্যাভার
কুৎসিততা বয় না। ১৩১।
সুসমীচীন বাঁচা-বাড়ার
আচার নিয়ে চললি যেমন,
সুসংন্যস্ত সন্ন্যাসী তুই
বাস্তবতায় হ’লি তেমন। ১৩২।
সত্তা তোমার কলগতিতে
ক’রলে শুভ’য় আমন্ত্রণ,
যে-ফল তোমার সত্তাপোষক
তা’ই-ই কিন্তু কল্যায়ন। ১৩৩।
চাওয়ায়-চলায় নাই ভগবান্
খোশ-খেয়ালে করে যা’-তা’,
ভগবান্ যে অন্তর্য্যামী
তা’র মুখে সে ঠাট্টা কথা। ১৩৪।
শ্রদ্ধাচর্য্যা নাইকো কিছু
নাইকো কৃতি-অনুশীলন,
স্বার্থলোভে ঘুরে বেড়াস্
সুফল-আশায় অনুক্ষণ;
দেবতার কাছে মাথা কুটিস্
ফাঁকি দিয়ে বাগাতে মাল,
ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব-
ফাঁকি দেখে নয় সামাল?
ঢাকে-ঢোলে ভক্ত সেজে
স্বার্থ-পূজায় ন্যস্ত কেবল,
ও-বাহবায় কী হবে তোর
জীবনটাই যে হ’ল বিফল;
ঠিক বলি শোন্ ঠিক হ’য়ে চল্
ইষ্টনিদেশ পালন ক’রে,
জীবনটা তোর ভ’রে উঠুক
শ্রদ্ধাতপে ঠাকুর ধ’রে। ১৩৫।
জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে
নাস্তিকতার ধুয়ো গাও,
অস্তিত্বটা নাকচ ক’রে
দল্ জীবন দিয়ে পাও? ১৩৬।
উঠে দাঁড়া, এঁটে দাঁড়া,
শোন্ কী বলে বরেণ্যে,
সত্তাসাধায় যাবি কেন
বিফল হ’য়ে অরণ্যে? ১৩৭।
ভেল্কি দেখায় যাদুকরে
সাধুর কাজ তা’ নয়কো ওরে!
ভেল্কি ভেঙ্গে বাস্তবতায়
কিসে কী হয়-সাধু ধরে। ১৩৮।
অস্তিত্বতে বজায় থেকে
নাস্তিকতার গর্ব্বী তুই,
থাকবে কী তোর দেখ না ভেবে
চাস্ যে ফসল ফেলে ভুঁই। ১৩৯।
সর্ব্ব কৰ্ম্মে সুনিয়মন-
স্বভাব-নিয়ম ছাড়লি যেই,
ধৰ্ম্মপালন হ’ল না তোর
হারিয়ে ফেললি জীবন-খেই। ১৪০।
আচার্য্য-নিদেশ মানবি নাকো
করবি না কিছু কাজে,
না করলে কী হবে তোর
পিছু ঘোরাই বাজে। ১৪১।
জীবন নিয়ে চলিস্-ফিরিস্
সত্তার ধার ধারলি কি?
সাত্বত যে পন্থাটি তোর
সেই পথে তুই চললি কি? ১৪২।
হাজার ভড়ং করিস্ না ক্যান্
ধৃতি-করণ দিয়ে বাদ,
রকম-সকম যা’ই করিস্ না
পূরবে নাকো মনের সাধ। ১৪৩।
নিজে যদি কর ধর্ম
অন্যকে বাদ দিয়ে,
ধৃতি তোমার হীনবল হবে
দুষ্ট-সংঘাত নিয়ে। ১৪৪।
ঐশী পূজা যে-কামনায়
করবি যেমন উপচারে,
চারিয়ে যাবে জীবন-সম্বেগ
তেমনতরই সেই ধারে। ১৪৫।
ঈশ্বরেরই দোষ দিলি তুই
মতিচ্ছন্ন! ভাবলি না,
ইচ্ছা-শক্তি তাঁ’তে দিয়ে
তুই কেন বল্ চললি না? ১৪৬।
ঐশী সেবায় চলতিস্ যদি
ইষ্টকে তুই স্থণ্ডিল ক’রে,
করপুটে অর্ঘ্য দিয়ে,-
উঠত পুণ্যে হৃদয় ভ’রে। ১৪৭।
ঈশ্বরেরই ইচ্ছাস্রোতে
কল্যাণেরই অতুল বেগে,
চলতে যদি তৃপণ-ঢেউয়ে
বাড়ত জীবন কৃতি-যোগে। ১৪৮।
সৎ-আচার্য্যে ক’রে ত্যাগ
অন্য গুরুকরণ করে,
যেমন-তেমন হোক্ না সে-জন
নষ্ট জীবন আগলে ধরে। ১৪৯।
সুসম্বোধী কৃতিচর্য্যায়
জীবনবৃদ্ধি পাললি না,
কী হবে তোর বাজে বায়নায়
নিদেশধৃতি ধরলি না। ১৫০।
ভাবলি জ্ঞানী নাড়লি মাথা
বললি ব্যথা হৃদয়ের,
পেলি কী আর করলি বা কী-
হ’লি প্রাপ্য তুই ঠগের। ১৫১।
ইষ্টবিহীন যা’ সাধিস্ তুই
না পাওয়ারই তর্জ্জনা,
নিকেশ হ’য়ে পাড়ি দিতে
করবি জীবন বর্জ্জনা? ১৫২।
অস্তিত্বটার আশাশূন্য
হ’য়ে উঠছ যেইখানে,
সুসন্ধিৎসু ধৃতিচর্য্যায়
স্থিতি বাড়াও সেইখানে। ১৫৩।
পুরুষোত্তমে রাগদীপ্ত
মূর্ত্ত ইষ্টে নিষ্ঠা রাখিস্,
পুরুষোত্তমের মূর্ত প্রতীক-
ইষ্টকে তুই সদাই জানিস্। ১৫৪ ।
#ধৰ্ম্ম
#Anusruti_part_2
#অনুশ্রুতি_দ্বিতীয়_খণ্ড
#অনুশ্রুতি_২য়
#চতুর্থ_সংস্করণ
#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ
Telelegram https://t.me/amritokatha
10