📚 আলোচনা প্রসঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ড,
🔷 ভক্তির চাইতে বড় কামনার বস্তু আর নেই কিছু মানুষের ,
🔷 গীতায় আছে , তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তির্বিশিষ্যতে ' কথাটার মানে কী ?
pag no 102-
শ্রীশ্রীঠাকুরকে আবার তামাক দেওয়া হলো । তামাক খাচ্ছেন , এমন সময় প্যারীদা জিজ্ঞাসা করলেন — আপনার পেট কেমন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর পট ক’রে মুখ হাঁ করে প্যারীদাকে বললেন — শোঁক তাে !
প্যারীদা শুঁকলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — গন্ধ আছে নাকি ?
প্যারীদা — না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — তাহ'লে পেট ভাল আছে , হজম ঠিকই হ’চ্ছে !
কথা আজ আর ফুরোচ্ছে না , রােদ উঠে গেছে , আশ্রম - প্রাঙ্গণে লোকজনের আনাগােনা শুরু হয়েছে , তবু কথা চলছেই । ভক্তবৃন্দ প্রিয়তমকে কেন্দ্র ক'রে মধু - মহােৎসবে মেতে উঠেছেন , এই উপভােগের আসরে , আনন্দের আসরে সবাই তন্ময় , চারিদিকে কোথায় কী ঘটছে , কোন দিকে খেয়াল নেই কারও ।
এই পড়লো , পড়লো , ধর্ ! ধর্ ! –ব'লে হঠাৎ ব্যাকুল কণ্ঠে চীৎকার করে উঠলেন শ্রীশ্রীঠাকুর । তখন থতমত খেয়ে কয়েকজন তাড়াতাড়ি উঠে এদিক ওদিক চাইতেই দেখতে পেলেন , একটি ছােট ছেলে বাঁধের শেষ সীমানায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে , প'ড়ে যায় আর কি ! তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকে ধ’রে আনা হলো ।
ছেলেটির মা তখন এগিয়ে এসে তাকে কোলে তুলে নিলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর স্নেহকোমল ভৎসনার সুরে বললেন — ছাওয়াল - পাওয়ালের উপর যে নজর রাখিস্ না , এটা ভাল নয় । কোন্ সময়ে কোন্ বিপদ ঘটে তার কি ঠিক আছে ? তাই সব সময় সাবধানে থাকা লাগে । সব দিকে নজর যদি না থাকে , তাহলে ভাল মা - ও হওয়া যায় না , ভাল গিন্নীও হওয়া যায় না । সংসারটা তোদের হাতের উপর , স্বামী - পুত্রের জীবনের মালিক তােরা , তাই প্রতিপদক্ষেপে তােদের হঁশিয়ার হ'য়ে চলা লাগে । তােরা যদি চৌকস হোস্ , তুখােড় হােস , ছাওয়াল - পাওয়ালরাও তোদের দেখে শিখবে , মানুষ হবে তারা । আবার , তােরা যদি ঢিলে হয়ে চলিস্ , তােদের দৈনন্দিন আচরণে যদি সুশিক্ষার ছাপ ফুটে না ওঠে , ওরাও বরবাদ যাবে । শিক্ষা মানে কিন্তু কতকগুলি বই পড়া নয় । চাল - চলন যদি দুরস্ত না হয় , হাতেকলমে যদি চৌকস না হয় , তবে পুথি পড়ার কোন দাম নেই । উপযুক্ত মা , উপযুক্ত শাশুড়ী কিংবা তৎস্থানীয় যারা তারাই হলো মেয়েদের , বৌদের সেরা শিক্ষক ।
এরপর তামাক খেতে - খেতে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — আমার বুকের মধ্যে এখনও কেমন করছে । ছেলেটা যদি ওখান থেকে পড়ে যেত ।
একটু পরে কেষ্টদা জিজ্ঞাসা করলেন — গীতায় আছে , তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তির্বিশিষ্যতে ' কথাটার মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — একভক্তি না হলে হবে না । পঁচিশ ঠাকুর করলেই মুশকিল , বহু - নৈষ্ঠিক যারা তাদের জীবনে কোন সঙ্গতি থাকে না , তারা আস্তে - আস্তে পাগলাটে হ’য়ে ওঠে । বহুনৈষ্ঠিক মানে মূলতঃ তার কিছুতেই নিষ্ঠা নেই , নিষ্ঠা আছে রকমারি প্রবৃত্তি - স্বার্থে , তাই আত্মনিয়ন্ত্রণ ব'লে জিনিসটা তাদের জীবনে ঘ’টে ওঠে না , ফলে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের উন্মেষ হয় না । একানুরক্তি ছাড়া জ্ঞান ফোটে না । একটা দাড়ায় দাড়িয়ে যে দুনিয়াটাকে দেখে , একের জন্য যে ভাবে , বলে , করে — তারই স্বার্থে স্বার্থান্বিত হ'য়ে , তার বােধ ও ব্যক্তিদের মধ্যে একটা অন্বয়ী সংহত - বিন্যাস ফুটে ওঠে । কোনটা কী এবং তাকে কেমন ক’রে , কিভাবে প্রিয় - স্বার্থে সার্থক করে তোলা যায় , সে - সম্বন্ধে তার হু’শ থাকে , আবার বিভিন্ন বস্তু ও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কী , কেমনতর পারস্পরিক সমাবেশের ভিতর - দিয়ে প্রত্যেকটাকে প্রত্যেকটার পরিপূরণী ক'রে তােলা যায় , এতে গড়ে যাবতীয় যা’ - কিছুকে কেমন ক’রে প্রিয়ের পরিবেশের ও নিজের সত্তা - সম্বৰ্ধনী করে তোলা যায় , অনুরাগ - সমন্বিত বাস্তব চিন্তা ও কর্মের ভিতর - দিয়ে ঐ বোধ সে আয়ত্ত করে ফেলে । সে বোঝে , জানে , সমগ্র সত্তা দিয়ে । ফলকথা তার চরিত্রটাই অমন হ’য়ে ওঠে । একেই বলে জ্ঞান । ভক্তি ছাড়া , একভক্তি ছাড়া এই জ্ঞানের দরজা খােলে না । একভক্তি যার আছে তাকে যে - কোন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ফেলে না কেন , সে তার মধ্যদিয়েই কেটে বেরিয়ে আসবে । তার জ্ঞানের নাড়ী হয় টনটনে । কথায় বলে প্রহলাদমার্কা ছেলে , তার মানে সে আগুনে , জলে , পাহাড়ে , পৰ্ব্বতে , অন্তরীক্ষে কোথাও ডরায় না। নব - নব উন্মেষশালিনী বুদ্ধি ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি সব অবস্থায় তাকে জয়ী ক'রে তোলে , সে হত হয় না , নষ্ট পায় না সহজে । দয়িত যে , বাঞ্ছিত যে , তার জন্য বেচে থাকার , তার সেবায় ব্যাপৃত থাকার তীব্র লালসা তাকে পেয়ে বসে । ঐ লালসাই অমৃত লালসা , অমৃতকে উপভােগ করে সে দুনিয়াদারীর সব আবিল্যের মধ্যে থেকেও । তাই ভক্তির চাইতে বড় কামনার বস্তু আর নেই কিছু মানুষের , ওতে এক ঢিলে সব পাখী মারা হয় , সব - কিছুই ওর ব্যাড়ের মধ্যে পড়ে , নইলে আর যা - কিছুই চাইতে যাক মানুষ তা’তে অনেক কিছু ছুট যায় , উপভােগ ও স্বার্থকতায় খাঁকতি থাকে মানুষের ।
কথা বলতে - বলতে শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখ - মুখ পুলকে , প্রহর্ষে , প্রেরণায় স্ফীত হয়ে উঠেছে — স্নিগ্ধ - মধুর জ্যোতির্ময় আভায় বিভাসিত হ’য়ে উঠেছে । অন্তরে তার তীব্র অনুভূতিময় একটি কথা বারবার ফুট কাটছে — ভক্তির চাইতে বড় কামনার বন্ধু আর নেই কিছু মানুষের । শ্রীশ্রীঠাকুর আপন মনে বলে চলেছেন — আর অবতারে - অবতারে যে তুলনা করে প্রভেদ দেখায় , একজনকে ছােট দেখিয়ে আর একজনকে বড় করে — এটা ভারি বিশ্রী । রামকেষ্ট ঠাকুরকে কেউ যদি দেখার মত দেখে থাকে , তাহলে তার মধ্যে সে বুদ্ধ , যীশু , শ্রীকৃষ্ণ , মহম্মদ , চৈতন্য সবাইকে দেখেছে , তাদের জীবনের তাৎপর্য তার মধ্যেই খুজে পেয়েছে । আর , সত্যিই তাই পাওয়া যায় , এ ছাড়া উপায়ও নেই । বর্তমান প্রেরিত যিনি , তার মধ্যে পূর্বতন সবাই থরেথরে সাজান থাকেন , সবারই glimpse ( ঝলক ) তাঁর মধ্যদিয়ে ঠিকরে বেরােয় । যার পূর্বতন কারও প্রতি অনুরাগ আছে , এক ঝলক দেখেই সে টের পায় — এই আমার চিরযুগের চেনা মানুষ , চাওয়া মানুষ । অমনি সে তাকে আঁকড়ে ধরে । রামকেষ্ট ঠাকুরের ভক্ত যদি কেউ হয় , সে কি জ্যান্ত রামকেষ্ট ঠাকুরের flashes ( দীপ্তি ) দেখে বুঝবে না ? খুব বোঝে । ছেলের ভেতর যেমন বাপকে দেখা যায় , বর্তমানের ভেতরও তেমন পূর্ধ্বতনকে পাওয়া যায় — ‘ সঃ পূ্র্ব্বেষামপি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাৎ । বর্তমানকে দেখেশুনেও যে তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না , বুঝতে হবে তার পূর্ব্বতনের কারও প্রতি টান নেই ।
অক্ষয়দা ( দেব ) নিজের খেতের কফি , বেগুন , মূলাে ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন একটা ঝুড়িতে করে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ঝুড়িহাতে অক্ষয়দাকে দেখেই বালকের মত খুশিতে আটখানা হয়ে উল্লাসভরে বলে উঠলেন — কি মাল আনিছেন অক্ষয়দা ।
অক্ষয়দা তাড়াতাড়ি ঝুড়ি নামিয়ে প্রণাম করে বললেন — বাগানে কফি , বেগুন , মূলােটুলাে হইছিল , তাই নিয়ে আইছি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রীতিভরে তরকারিগুলি দেখতে - দেখতে বললেন — একেবারে গন্ধমাদন ঠেলে নিয়ে আইছেন । শালার অবাক কাণ্ড ! যান , বড় বৌয়ের কাছে দিয়ে অসেন গে । ••••••••• এ সব আপনি নিজে করিছেন ?
অক্ষয়দা — ছেলেমেয়ে , আমি , মিনুর মা সকলেই খাটি বাগানের পিছনে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর -- সে খুব ভাল । এতে সংসারের সাশ্রয় হয় , শিক্ষাও হয় , শরীর - মনও ভাল থাকে । কৃষি , গো - পালন , ঢেকী , যাঁতা , তাত , ছোটখাট কুটিরশিল্প , ছােট্ট রকমের ল্যাবরেটারি , কিছু ভাল বই , খাদ্য - লতাপাতার গুণাগুণ , স্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যসম্বলিত কতগুলি ছবি , চাট , ম্যাপ , গ্লোব ইত্যাদি সব বাড়ীতে রাখতে হয় । সমস্ত পরিবার শুদ্ধ অনুশীলনের উপর থাকতে হয় । তাহলে ছেলে পাশ করুক না করুক , ঘরোয়াভাবে এমনতর শিক্ষার ভিত্তি পত্তন হয়ে যায় যে , তাকে কেউ রুখতে পারে না , বেকারও থাক না সে , একটা - কিছু ক’রে - কর্মে পেটের ভাত , পরণের কাপড় যােগাড় করতে পরেই । আর , তার একটা আত্মপ্রত্যয় থাকে , সে ঘাবড়ায় না । দ্যাখেন কেষ্টদা । আমার খুব ইচ্ছা করে যে , আপনি যেমন জমি করিছেন , সবাই ঐ রকম জমি করে । পেটের ভাতটার জোগাড় থাকলে মানুষের অনেকখানি বল থাকে । যুদ্ধবিগ্রহের যে রকম অবস্থা , কোন্ সময় কী হয় বলা যায় না । তাই নিজেদের খাদ্য - খানার জন্য পরমুখাপেক্ষী না হ'তে হয় , এতটুকু ব্যবস্থা করে রাখা লাগে । এখন থেকে সবাইকে এ - কথা বলতে থাকুন ।
কেষ্টদা — আচ্ছা ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তামাক খেয়ে পায়খানায় গেলেন । যাবার পথে ঘাড়টা বেকিয়ে কেষ্টদার দিকে চেয়ে মৃদু - মৃদু হাসতে লাগলেন । সেই রহস্যমণ্ডিত নীরব হাসিতে বুক ভরে যায় আনন্দে । যেতে - যেতে হঠাৎ সামনে একখানি পা ও পিছনে একখানি পা রেখে মাজাটি গুঁজে মোহন ভঙ্গীতে থমকে দাঁড়ালেন— আবার , তাঁর দৈর্ঘ্য তখন যেন অনেকখানি কমে গেছে , ঐভাবে দাঁড়িয়ে ২|১ মিনিট কেষ্টদার সঙ্গে গােপনে কী যেন বললেন । তারপর ঋজু হ'য়ে থপ-থপ ক'রে চটি ফেলে বাঁধের ধারে পূবদক্ষিণ কোণে অস্তিকায়নে পায়খানায় গেলেন । পায়খানা থেকে এসে শ্রীশ্রীঠাকুর মাতৃমন্দিরের বারান্দায় চৌকিতে বসলেন ।
ডাক্তার কালীদা ( সেন ) আসতেই শ্রীশ্রীঠাকুর জিজ্ঞাসা করলেন — কিরে , তোর রােগী - পত্রের খবর ভাল তো ?
কালীদা — হ্যাঁ ! এখন তেমন serious ( গুরুতর অবস্থা নয় কারও । তবে ঠাকুর ! এখানে ডাক্তারি করা ভারি মুশকিল । পয়সা - কড়ি পাবার প্রত্যাশা তাে রাখি না , সে যাক — কিন্তু প্রেসক্রিপশন করলেই বলে , পয়সা পাব কোথা থেকে ? আপনি একটু , ঠাকুরকে ব’লে দেন । আপনাকে ঐ জন্য বিরক্ত করতেও ভাল লাগে না । অনেক রােগী নিজেরাও ব্যবস্থা করতে পারে না । আপনার কাছে যে নিজে বলবে , তাও বলবে না । আমাকে চাপাচাপি করে । আমি তখন ফাপরে পড়ে যাই । অথচ ওষুধ না খেলে তো আর রোগ সারবে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — নিজেও কিছু - কিছু যােগাড় করে দেওয়া লাগে । কালীদা — সে বড় কঠিন ব্যাপার । চাইব কার কাছে ? সবারই তো একরকম অবস্থা । আপনি চাইলে মানুষ যেমন করে হােক দেয় , কিন্তু আমরা চাইতে গেলে পাওয়া মুশকিল । আর , ভিক্ষা করা আমার পছন্দও হয় না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেবে না কেন ? খুব দেবে । চেয়ে দেখলেই পারিস্ । আজ যদি তুমি কাউকে রুগ্ন অবস্থায় ওষুধপত্র দিয়ে সাহায্য কর , কাল তাকে দিয়েই তুমি আর - একজনের জন্য করিয়ে নিতে পারবে । এইভাবে মানুষ যদি তােমার হাতে থাকে , তােমার ভাবনা কী ? দায়িত্ব নিতে যত ভয় পাবে , তত ছােট হ’য়ে থাকবে । ভগবান - লাভ বা ব্রহ্মলাভ কিছুই সম্ভব নয় , যদি মানুষ সুকেন্দ্রিক হ'য়ে বহুর জীবনে ব্যাপ্ত হ'য়ে না পড়ে । তিনি প্রেমস্বরূপ , তাকে যদি ভালবাস , তাঁর জগৎকে তুমি ঠেলে ফেলতে পার না । তোমার পরিবেশের দায়িত্ব নেওয়াই লাগবে তােমাকে , তাদের ব্যথাটা নিজের ব্যথা ব’লে বোধ করতে হবে । আর নিজের অভাব - অসুবিধার প্রতিকার করতে যেমন উঠে - পড়ে লাগ , অন্যের বেলায়ও সাধ্যমত তেমনি করতে হবে । তুমি দরদী , সমব্যথী , মানুষের দুঃখ - কষ্টে মুখে আহা - উছ কর , কিন্তু বাস্তবে তার নিরাকরণের জন্য কিছু কর না বা তত্ত্বকথা শুনিয়ে ছেড়ে দাও , কিন্তু নিজের গায়ে একটু , কাঁটার আঁচড় লাগলে অস্থির হয়ে ওঠ , তার মানে তােমার ঈশ্বরানুরাগও কপট । ধ্যান - ধারণায় একজন মানুষ যতই দেখুক - শুনুক না কেন , তাকে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অনুভূতি কয় না , যদি তা ’ চরিত্রে , চলনায় , কর্ম্মদক্ষতায় , হৃদয়বত্তায় প্রতিফলিত হ’য়ে তার সত্তাকে ভাগবত ক’রে না তোলে । আর , মানুষের কাছে কারও জন্য যে চাইতে পার না , ওর মধ্যেও হীনত্ব - বুদ্ধি আছে । সবাই তোমরা ভাই - ভাই , দেওয়া নেওয়ায় আপনবােধ বাড়ে — তুমি যা পার অন্যকে দেবে , আবার প্রয়ােজনমত অন্যের কাছ থেকে নেবে । এই সহযোগিতা ছাড়া কি মানুষ বাঁচে ? আর , প্রেসক্রিপসন করতে হয় simple ( সরল ) অথচ অব্যর্থ । ওর জন্য মাথা খাটান লাগে , ধ্যান করা লাগে । ওর মধ্যেই efficiency ( দক্ষতা ) । কি কোস্ তুই ? আমার তাে এইরকম মনে হয় ।
কালীদা — আপনার কথাগুলি যুক্তির দিক দিয়ে ঠিকই মনে হয় , কিন্তু করা বড় কঠিন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কঠিন মনে করলেই কঠিন , করতে আরম্ভ করলেই সােজা । তাই বলে যে অসুবিধে নেই , কষ্ট নেই তা বলি না ’ তবে করতে - করতেই আয়ত্তের , মধ্যে আসে ।
কলকাতা থেকে একটি নূতন দাদা এসেছেন , সঙ্গে তার মেয়ে । মেয়েটি ভাল গাইতে জানে । তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুরােধ করে বললেন — বাবা , আমার খুকীর বড় ইচ্ছা যে আপনাকে একট গান গেয়ে শােনায় , আপনি যদি দয়া করে শোনেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আচ্ছা ।
তখন কেষ্টদার বাড়ী থেকে হারমােনিয়াম অনা হ'লো । মেয়েটি গানের উদ্যোগ করছে এমন সময় শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — বড় বৌকে ডাক্ । সে গান শুনতে বড় ভালবাসে ।
শ্রীশ্রীবড়মা এসে একপাশে দাঁড়ালেন ।
—তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কেন ?
আস , আমার কাছে এসে এখানে । ব'সাে
— এই বলে বালিসটা সরিয়ে তক্তপােষের উপর বিছানায় জায়গা ক’রে দিলেন ।
শ্রীশ্রীবড়মা সলজ্জভাবে বিছানার একপাশে এসে বসলেন । মাথায় ঘােমটা পরনে লাল চওড়া পাড়ওয়ালা শান্তিপুরে শাড়ী । হাতে শাঁখা ও চুড়ি । সদ্য স্নান করেছেন , কপালে ও সিথিতে জ্বলজ্বল করছে সিদুর । কার্নিশের ধার দিয়ে রােদের আভা এসে পড়েছে বিছানায় । উভয়ের উজ্জ্বল গৌরবর্ণ আরাে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে সেই আভায় । শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখমুখ আনন্দদীপ্ত , স্নেহ সিক্ত দৃষ্টিতে চারিদিকে চেয়ে - চেয়ে দেখছেন । গান হবে তাতে তার অশেষ কৌতুহল । পাছে শ্রীশ্রীবড়মার বসতে অসুবিধা হয় , সেইজন্য তিনি সচেতন হয়ে পা - টা গুটিয়ে বসেছেন । শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীবড়মাকে একত্র ঐ রকম দেখবার সুযােগ খুব কমই হয় । সবাই তাঁদিগকে একাসনে উপবিষ্ট দেখে খুব খুশি । আশ মিটিয়ে দেখছেন তাদের । আস্তে - আস্তে বেশ ভিড় জমে গেছে ।
মেয়েটি গাইছে ‘ চিন্তয় মম মানস হরি চিদ্ঘন নিরঞ্জন ।’
শ্রীশ্রীঠাকুর উদাস দৃষ্টিতে দূর আকাশের পানে চেয়ে আছেন ।
এরপর আর - একটা গান হ’লো — রবীন্দ্রনাথের গান ‘ মন একলা চল , একলা চল , একলা চল রে ।
গানের পর শ্রীশ্রীঠাকুর সপ্রশংস দৃষ্টিতে বললেন , “ খুব ভাল । এইবার গানের অসির ভঙ্গ হলাে । গানের শেষে অনেকে প্রস্থান করলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর একবার তামাক খেয়ে খেপুদার বারান্দায় এসে বসলেন , হাতল ওয়ালা একটা বেঞ্চিতে । খেপুদার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বললেন । এর মধ্যেডাক এসে গেল । ভবানীদা ( সাহা ) চিঠি নিয়ে আসলেন । ভবানীদা এক - এক করে কতকগুলি চিঠি হাতে তুলে দিলেন , খামের চিঠি গুলির মুখ কেটে দিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর সেগুলি পড়ে নির্দেশ দিয়ে দিলেন , কোথায় কী লিখতে হবে । পরে হাত ধুয়ে ফেললেন । একটা কুকুর এসে বসেছে বাবলা গাছতলায় শ্রীশ্রীঠাকুরের দিকে মুখ করে ।
শ্রীশ্রীঠাকুরও স্নেহভরে তার দিকে তাকিয়ে আছেন ।
কুকুরটার আমার উপর কেমন একটা টান আছে । আমি যেখানে থাকি , ঘুরে - ঘুরে ও সেখানে হাজির হয় , আমার দিকে কেমন করুণভাবে চেয়ে থাকে , আমাকে কী যেন বলতে চায়।এই বলে শ্রীশ্রীঠাকুর উপস্থিত সবার দিকে চেয়ে একটু , হাসলেন ।
কালীদাসীমা — হয়তো আর - জীবনে ভক্ত ছিল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — জন্মান্তরের খবর যদি আমরা নাও জানি , এটা জীবনে যার টান যেমন তার গতিও হবে তেমন ।
এরপর হরিপদদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে তেল মাখিয়ে দিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর বাঁধের ধারে পশ্চিম - দক্ষিণ কোণে কলের কাছে একটি ভরা চৌবাচ্চায় নেমে পাঁচটি ডুব দিয়ে স্নান করলেন । তারপর গা’টা মুছলেন ।
আহারান্তে শ্রীশ্রীঠাকুর মাতৃমন্দিরের ঘরের মধ্যে বিশ্রাম নিতে এসেছেন , হরিপদদা তার মাথা অচিড়ে দিলেন । মায়েদের মধ্যে অনেকে এসেছেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তাদের সঙ্গে ঘরােয়া গল্প সুরু করে দিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর সুশীলাদিকে জিজ্ঞাসা করলেন — তুই কী রাঁধিছিস্ সুশীলা ?
সুশীলাদি — লাউঘণ্ট , বড়ির ঝোল , পালনের চচ্চড়ি । শ্রীশ্রীঠাকুর — বা ! সত্যং শিবং সুন্দরম । ••••• দ্যাখ্ , তরকারির মধ্যে চিনেবাদামবাঁটা , তিলবাটা এই সব যদি দিস , তাহলে কিন্তু খেতেও যেমন সুস্বাদু হয় , তেমন পুষ্টিপ্রদ হয় । এগুলি অভ্যাস করে ফেলা লাগে , তােদের সবাইকেই বলছি । শৈলমা অসতেই শ্রীশ্রীঠাকুর আদর ক’রে বললেন — আসছ ভুটন ।
একজন শৈলমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন যে তিনি (শৈলমা ) তার সম্বন্ধে আর একজনের কাছে যা ’ - তাই বলছেন ।
শৈলমা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন — হ্যাঁ ! ঠাকুরের কাছে খুব করে লাগাও । ••• দিদি যে বললো আমাকে , তার আর দোষ হলো না । তার কাছে যা ’ শুনেছি , তাই বলেছি । এখন দোষ হলো আমার । যত দোষ নন্দ ঘোষ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — সে বললেই হ’লাে ? তুই সেটা মােকাবিলায় না মিলিয়ে সত্য - মিথ্যা নির্দ্ধারণ না করে , তার নিন্দা - কথায় বিশ্বাস করে আর পাঁচজনের কাছে একজনের বিরুদ্ধে গেয়ে বেড়াবি ? এ তােদের কেমন বিশ্রী স্বভাব ? আমার কিন্তু এসব মােটেই পছন্দ হয় না । মানুষের ভাল যেটা শােন , সেটাকে ঢাক পেটাও না । নিন্দাজনক কিছু শুনলে সেখানে তােমার বিশ্বাস ও যাজন- প্রবৃত্তি উথলে ওঠে — তাই না ? যা’তে মানুষের সঙ্গে মনােমালিন্য হয় , বিরােধ । বাধে , তাই তােমার বুদ্ধি । তােমার সঙ্গে সবার এবং সবার সঙ্গে সবার যা’তে ইষ্টানুগ মিল হয় , সেই বুদ্ধি নিয়ে চ’লে দেখ তাে । ত'তে এর থেকে ঢের বেশী সুখ পাবে ।
কথাবার্তার পর সবাই বিদায় নিলেন । প্যারীদা প্রভৃতি দুই - একজন রইলেন । শ্রীশ্রীঠাকুরকে ঘুমের সময় ঝাকিয়ে দেবার জন্য।
শ্রীশ্রীঠাকুর একটু ঘুমুলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর বিকালে মাতৃমন্দিরের পেছন দিকে বকুল গাছতলায় একটা হাতলওয়ালা বেঞ্চিতে এসে বসেছেন । কাছে রয়েছে গাডু় , গামছা , তামাক , টিকে , হুকো ( গড়গড়া ) , কল্কে , পিকদানি , জলের ঘটি , সুপারির কৌটা ও দাঁত - খোঁটা । শ্রীশ্রীঠাকুর বেঞ্চের উপর পা ছড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমাস্য হয়ে হাতলের উপর বাম হাতখানি রেখে মনোরম ভঙ্গীতে আরামে বসেছেন । পায়ের উপর , রােদ এসে পড়েছে — শীতের দিনে বেশ আমেজ বােধ করছেন । পরনে একখানি শান্তিপুরে ধুতি , তার খােটটা গায় দেওয়া । আর কিছু গায় নেই । এদিকে শীতে কাতর , কিন্তু গরম কিছু গায়ে দেবেন না । শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে তার কালো চটি । তামাক সেজে দেওয়া হয়েছে , গড়গড়ার নল টানছেন । নির্বাক স্নেহদৃষ্টিতে সবাইকে নিরীক্ষণ করছেন । এক - এক করে দাদা ও মায়েদের মধ্যে অনেকেই সমবেত হয়েছেন । ছােট - ছােট ছেলেপেলেরাও এসেছে , তারা আশ্রম প্রাঙ্গণে রােদে খেলাধুলাে ও কলরব করছে । কথা নেই , বার্তা নেই , কিন্তু কি যেন এক নিবিড় শান্তি , অনাবিল তৃপ্তি , অনিবাৰ্য আকর্ষণ । স্পর্শ তার সৰ্ব্বদুঃখহরা , তাই তাকে দেখেই সুখ । ভক্তবৃন্দ নয়নমনভরে । দেখছেন তাকে , অন্তরের মণিকোঠায় ভ’রে নিচ্ছেন আনন্দের অক্ষয় সঞ্চয় । এই শান্ত , স্নিগ্ধ , নিস্তরঙ্গ মধুর পরিবেশে মন ব’লে ওঠে — ঐ চরণ - সরোজই তাে আনন্দের নিত্য ধাম , যুগযুগান্ত অনন্ত জীবন যেন ঐ আনন্দ - মকরন্দ - পানে মত্ত হ'য়ে থাকতে পারি ।
চুপচাপ সবাই ব’সে ।
এমন সময় ভেলকু এসে বললাে — গোপালী ! এই দ্যাখ আমি এটা সেলাই করেছি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর (হাসিমুখে) —বারে ! বড় সুন্দর হইছে তাে ! —এই বলেই গানের সুরে বললেন — মা যশােদার আমার গুনের অন্ত নাই রে ।
ভেলকু মহতৃপ্তিভরে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রণাম করলো ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — সেলাই খুব ভাল করে শেখ । এটা কিন্তু একটা কলা - বিশেষ । সুন্দরের আরতি যে হয় এর ভিতর - দিয়ে । মনেমনে আঁচ করতে হয় , কোন্ রঙের সঙ্গে কোন্ রঙের সমাবেশ হ'লে মানায় ভাল । এমনি ভেবে নিয়ে হাতে কলমে আবার সেটা ক’রে দেখতে হয় । এমনি ক'রে - ক’রে একটা সূক্ষ্ম সৌন্দৰ্য " বোধ গজায় । সেই সৌন্দৰ্য্যবােধকে আবার সংসারের কাজে - কর্মে , চলায় ফেরায় , কথাবার্তায় , সাজে - শয্যায় সব জায়গায় রূপ দিতে হয় । এমনি করেই মানুষ সুন্দর হয়ে ওঠে , তখন সবাই তাকে ভালবাসে , আদর করে । রকমারি রং - বেরংয়ের সুতাে তোর আছে তো । না থাকলে আমাকে বলিস্ ।
ভেলকু - আছে । এখন দরকার নেই , পরে দরকার হ’লে বলব ।
সুধাদি বাড়ীর ভিতর আশ্রমের ছােট - ছােট ছেলেমেয়েদের গান , আবৃত্তি , নাচ ইত্যাদি শেখাচ্ছেন , ঋত্বিক - অধিবেশনের সময় তারা এই সব করবে । শ্রীশ্রীঠাকুরের কতকগুলি ছড়ায় সুর দেওয়া হয়েছে , তদনুযায়ী নাচের পরিকল্পনা করা হয়েছে । নৃত্য - গীতের ভিতরদিয়ে পরিবেষণ করা হবে ছড়াগুলি । বাড়ীর ভিতর থেকে গানের সুর ভেসে আসছে ।
তাই শুনে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন — ছড়াগুলি যে এমনি ওতরাবে , তা আগে মনে করিনি । আমি কি ওসব পারি ? কিন্তু কেষ্টদা তাে ছাড়বার পাত্র নয় , আমাকে ট্যাংলায়ে - ট্যাংলায়ে কিভাবে আমাকে দিয়ে করে নিচ্ছে । এখন ওরা যখন আমার সামনে পড়ে , আমার মনে হয় না যে আমি কইছি ।
বঙ্কিমদা ( রায় ) —কতকগুলি ছড়ার কাব্য - ঐশ্বৰ্য্যও অপূর্ব , বাংলা ভাষায় অমন কমই মেলে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমার কিছু কেরামতি নেই । সবই পরমপিতার দান । তিনি দিলে হয় , আমি ইচ্ছামত দিতে পারি না । আমার ওর উপর কোন দখল নেই ।
এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর ওখান থেকে উঠে একবার শ্রীশ্রীবড়মার কাছে গেলেন । গিয়ে বললেন — বড় বৌ ! খিদে পাইছে ।
শ্রীশ্রীবড়মা বললেন — কী দেব ? ছানা আছে , বিস্কুট আছে , সন্দেশ আছে । যা পছন্দ , দিতে পারি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর—ছানাই একটু দাও ।
শ্রীশ্রীবড়মা ছানা এনে দিলেন । ছানা খেয়ে মুখ ধুয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বের হলেন ।
বেলা পড়ে এসেছে । শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — বেড়াতে যাব নাকি ?
শরৎদা — গেলে হয় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কেষ্টদাকে ডাকেন ।
কেষ্টদাকে ডাকা হলাে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার রওনা হ’লেন ।
কেষ্টদা , শরৎদা , শ্রীশদা , যােগেশদা ( চক্রবত্তী ) , ব্রজেনদা (চট্টোপাধ্যায় ) , রত্নেশ্বরদা , চুনিদা প্রভৃতি অনেকেই সঙ্গে রইলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ( কেষ্টদা ও শরৎদাকে লক্ষ্য ক’রে ) —ইষ্টায়নীর ব্যাপারটি কিন্তু খুব ভাল ক’রে চারিয়ে দেবেন । খাতাগুলি প্রেস থেকে আসছে তাে ?
কেষ্টদা — হ্যা ! এসে গেছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — শুধু কনফারেন্সের মধ্যে বললে হবে না । মাথা - মাথা কর্মীদের নিয়ে আপনারা আলাদা বসবেন । সকলের মাথায় সংকল্প গজিয়ে দিয়ে আগুন করে তােলা চাই । এটা কঠিন কিছু না , সবাই পারবে । কেষ্টদা - হা ! এটা খুবই সহজ । এ পর্যন্ত যতজনের সঙ্গে আলাপ করেছি , সবারই দেখলাম খুব positive (কৃতনিশ্চয় ) ভাব ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কনফারেন্সে সব জায়গা থেকে লােক যা'তে আসে , সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন । প্রোগ্রাম যেমন পাঠাবেন , সঙ্গে - সঙ্গে বিশিষ্টদের কাছে চিঠি- পত্রও দেবেন । এক - একজনের কাছে ২|৩ খানা করে চিঠি গেলে ভাল হয় । আপনি লিখবেন , শরৎদা লিখবে , প্রফুল্ল লিখবে । তা’তে জোর হবে । এখান থেকে কেউ বাইরে গেলে তাকেও বলে দেবেন , সে যাতে মুখে - মুখে সকলকে । বলে । মোটপর যতরকম ভাবে যা করা যায় , তার কোনটা বাদ রাখবেন না ।
কেষ্টদা — আচ্ছা !
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখেন , আমার যেন কেমন নেশার মত হয় । যেটা করব ব'লে মনে করি , সব দিক দেখে - শুনে তার আট - ঘাট , অন্ধিসন্ধি সবটা ঠিক ক'রে , হাতে - কলমে ক’রে সিদ্ধিতে এসে না দাঁড়াতে পারলে আমি যেন সোয়াস্তি পাই না ঐ ধ্যান আমার মাথায় লেগেই থাকে । এই ভাবেই মানুষ সিদ্ধার্থ হয় । আপনারাও যদি ঐ রকম ক'রে লাগেন , দেখবেন এক - একজন কত বড় সিদ্ধার্থ হ’য়ে উঠবেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর আস্তে - আস্তে হাঁটছেন , মাঝে - মাঝে আবার থমকে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে খানিকটা বলছেন । সহজভাবে কথা বলছেন , কিন্তু তার মধ্যে একটা তীব্র বেগ আছে , যা বুকের মধ্যে তীরের মত গিয়ে বেঁধে । আবার বলছেন— কৃতী হ'তে যে হাতী - ঘোড়া কিছু লাগে , তা নয় । প্রথম কথা — করণীয় - সম্বন্ধে clear conception ( স্পষ্ট ধারণা ) চাই — কী করব , কেমন করে করব , এর অন্তরায় কি - কি আসতে পারে , সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করব কেমনভাবে , কাজটা উদ্যাপন করতে কি - কি প্রয়ােজন , তা কোথা থেকে , কার কাছ থেকে কিভাবে জোগাড় করব , কার - কার সহযােগিতা আমার প্রয়োজন হবে , তার মধ্যে কে - কে আমার আয়ত্তের মধ্যে আছে , কে নেই , তাকে সরাসরি ধরব , না আর কাউকে দিয়ে ধরলে সুবিধা হবে , কাজ হাসিল করতে গেলে কোন্ - কোন্ step ( পর্যায় ) -এর মধ্যদিয়ে অগ্রসর হতে হবে , তার জন্য পূর্বাহ্নে প্রস্তুত হতে হবে কতখানি , কেমন ক'রে , একটা দিককার চেষ্টা যদি নিস্ফল হয় , তখন কি করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে গভীরভাবে লাগাজোড়া চিন্তা করে একটা সর্বাঙ্গপুষ্ট ছবি । মাথায় একে নিতে হবে । আর সেই চিন্তা - অনুযায়ী বাস্তবে লেগে যেতে হবে । এইভাবে চললে কৃতকাৰ্য্যত অনিবার্য হয়ে ওঠে । যারাই কৃতী হয় , তারাই এইভাবে হয় । তবে মানুষের যদি কোন প্রীতিকেন্দ্র না থাকে , এবং তার করাগুলি যদি তৎপ্রীত্যর্থে না হয় , তবে দুনিয়ার নানা আকর্ষণ এবং প্রবৃত্তির রকমারি বিক্ষেপ ও বিক্ষোভ তার ঐ চিন্তা ও চেষ্টাধারা হতে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় , আর চিন্তা ও চেষ্টায় ক্রমাগতি ও সঙ্গতি না থাকায় সে সফল হ'তে পারে না । তখন সে ভাগ্যের দোষ দেয় , কিন্তু ঐ ভাগ্য যে সে নিজের ভজনা দিয়েই সৃষ্টি করেছে , তা আর বােঝে না ।
হাঁটতে - হাঁটতে শ্রীশ্রীঠাকুর কারখানার কাছাকাছি এসেছেন । কারখানায় তখন সুধীরদা ( দাস ) প্রভৃতি কাজ করছেন । শ্রীশ্রীঠাকুর কারখানায় ঢুকে ঘুরে - ঘুরে কাজ - কৰ্ম্ম দেখলেন । কাজ - কর্ম সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন । একটা নূতন ধরণের ল্যাম্প তৈরী করতে বললেন । সুধীরদা শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা ভাল করে বুঝতে পারছিলেন না । শ্রীশ্রীঠাকুর তখন বললেন — কাগজ - পেন্সিল দে তো দেখি ।
কাগজ - পেন্সিল দেবার পর সুধীরদাকে কাছে ডেকে একটা ডায়গ্রাম একে দেখিয়ে দিলেন , কী করতে হবে , কেমনভাবে করতে হবে ।
— এইবার বুঝলি তাে ? —হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন শ্রীশ্রীঠাকুর ।
সুধীরদাও খুশি হয়ে বললেন — হ্যাঁ !
ঘুরতে - ঘুরতে একটা জায়গায় এসে বললেন — এ মেসিনটায় কতদিন হাত দিস্ না ? এটায় মরচে পড়ে যাচ্ছে । মাঝে - মাঝে সবগুলিই নাড়াচাড়া করতে হয় , তেল - টেল দিতে হয় । মানুষ , গরু , মেসিন যার কাছে থেকেই কাজ পেতে চাও , তাকেই যত্ন করতে হয় , সুস্থ রাখতে হয় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ওখানে একটু বসলেন , ব'সে তামাক খেলেন । তারপর বেরিয়ে কেমিক্যাল ও বিশ্ববিজ্ঞানের পাশ দিয়ে সদর রাস্তায় এসে পড়লেন । তখন সূৰ্য্য ডুবে গেছে , আলােছায়ার মিলিত মুনি আলােকে ধূসর আভা ধারণ করেছে পল্লীপ্রকৃতি । ডোবার পাশে বাঁশঝাড়ে কতকগুলি পাখী একটানা কিচিরমিচির করছে । একটা বাছুর উদ্ধশ্বাসে বাড়ীর দিকে ছুটছে । তাই দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন — মানুষ , গরু , জীবজন্তু সবাই বাঁচে ভালবাসার টানে । বাছুরটাও দেখেন মা'র টানে , ঘরের টানে কেমন করে ছুটছে । আর কোন কথাবার্তা নেই ।
শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার বেশ দ্রুত হাঁটছেন । শ্রীশ্রীঠাকুর বড়দার বাড়ীর সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন — বড় খোকা কেমন আছিস্ রে ?
বড়দা ব্যস্তসমস্ত হয়ে বাইরে এসে বললেন — ভাল ।
এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর সােজা এসে বাঁধের ধারে তাসুতে বসলেন ।
মাতৃমন্দিরের দোতালায় তখন আশ্রমের মেয়েরা শঙ্খ , ঘণ্টা , কাসর বাজিয়ে সন্ধ্যস্তোত্রাদি পাঠ করছে । বিভিন্ন বাড়ী থেকে বিনতির সুর ভেসে আসছে । শ্রীশ্রীঠাকুর কিছু সময় নীরব থাকলেন।
খানিকটা বাদে অমূল্যদা ( চক্রবর্ত্তী ) ব'লে একজন উকিল আসলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে । তিনি কথাপ্রসঙ্গে বললেন - ঠাকুর ! আপনি আমাকে ঋত্বিকের পাঞ্জা দিয়েছেন । কিন্তু ওকালতি ও ঋত্বিকতা একেবারে পরস্পর - বিরুদ্ধ । আমার এ ওকালতি আর ভাল লাগে না , কিন্তু সংসারের জন্য না করেও পারি না । তেমনি সঙ্গতি থাকলে ওকালতি ছেড়ে দিয়ে শুধু যাজন নিয়েই থাকতাম । এখন যেন দোটানার মধ্যে আছি । ওকালতিতে কেবল মিথ্যা নিয়ে কারবার । শ্রীশ্রীঠাকুর ব্রাহ্মণের ছেলে তুমি , তুমি শুধু যাজন নিয়ে থাক , সে তাে খুব ভাল কথা । খাঁটি ঋত্বিক যদি হতে পার , তখন আর পেটের ভাবনা ভাবা লাগবে না। যজমানেরাই তখন তােমাকে দেবার জন্য পাগল হয়ে উঠবে । তুমি দয়া ক'রে গ্রহণ করলে তারা বর্তে যাবে । সে - দিক দিয়ে শুধু ঋত্বিকতার কাজ নিয়ে থাক , তাতে আমার কোন আপত্তি নেই । তবে তুমি যে বলছ , ঋত্বিকতা ও ওকালতি পরস্পর - বিরুদ্ধ , ওখানে আমি একমত নই । সত্যং ভূতহিতং প্রোক্তং ন যথার্থাভিভাষণং ।’ যে - কথায় লোকের মঙ্গল হয় , মানুষ বিপদ থেকে ত্রাণ পায় , তা সত্য বই আর কিছু নয় । উকিলের কাজও তাে তাই , বিপন্নকে রক্ষা করাই তার কাজ ।
অমূল্যদাধরুন , একজন খুনী যদি আমার আশ্রয় নেয় , আর আমি যদি তাকে আমার বুদ্ধির জোরে খালাস করে আনি , তাতে করে তাকে তাে খুনের ব্যাপারে আরাে উৎসাহিত করে তােলা হবে । তাই বিপদ থেকে ত্রাণ করাই কি সব ক্ষেত্রে মঙ্গলপ্রদ ? বরং শাস্তি পেলে সে শােধরাতে পারে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — ধর , তুমিই যদি সেই খুনী হও , তাহ'লে তুমি কী চাও ? তুমি কি উদ্ধার পেতে চাও না ? যতদিন তোমার প্রাণে ব্যথাবােধ আছে , ততদিন আর্তের ত্রাণ তোমার ধর্ম । কেউ যখন অৰ্ত্ত , তখন যদি তুমি বাস্তবভাবে তার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হও , এবং অপকর্ম থেকে সে যাতে প্রতিনিবৃত্ত হয় , অনুতাপ , অনুশােচনা ও দরদবােধ জাগিয়ে সেইভাবে তাকে অনুপ্রাণিত ক'রে তােল —সৎ - এ উদ্বুদ্ধ করে , এবং সঙ্গে সঙ্গে যদি তার বিপদমুক্তির ব্যবস্থা কর , তাহলে তার ভিতর দিয়েই বরং তার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে । কেউ অপরাধ করেছে ব'লে তার প্রতি যদি নিষ্ঠুর হও , সে যদি দুনিয়ায় কোথাও আশ্রয় না পায় , এক নির্দয় কারাগারের আশ্রয় ছাড়া , —তুমি কি মনে কর , সে সেখান থেকে সমাজ - হিতৈষণার সাধু প্রেরণা নিয়ে বের হবে ? সে কি সমাজের পক্ষে আরাে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে না ? এক প্রাণদণ্ডের বিধান করে হয়তাে তার হাত থেকে বাঁচাতে পার সমাজকে কিন্তু তার মধ্যে তাে কোন কৃতিত্ব নেই । হিংস্র পশুজগতেও তাে এমনতর সুবিচারের নমুনা হামেশাই দেখতে পাওয়া যায় । তােমরা তো শিক্ষা , সভ্যতার গর্ব ক’রে থাক । অবশ্য , সংশোধনী শাস্তির প্রয়োজন নেই , এ কথা আমি বলি না । এ তো গেল এদিককার কথা , আর শুধু অপরাধীই যে উকিলের আশ্রয় নেয় , তা তাে নয় , অত্যাচারিত , উৎপীড়িত ও বঞ্চিত হয়েও তাে মানুষ আসে , তাদের বাঁচানও তাে ধর্ম । তাই মক্কেল যে যেমনই হােক , তারও সমাজের মঙ্গলের দিকে চেয়ে যে - ক্ষেত্রে যেমন বিহিত তাই করতে হবে । সে দিক - দিয়ে আমার মনে হয় , ঋত্বিকতা ও ওকালতি বিরুদ্ধ কাজ তাে নয়ই , বরং পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক ।
অমূল্যদা — আপনি যা বললেন , তার উপর আর কথা নেই ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমি বললাম ব'লে নয় , কথাটা যুক্তিযুক্ত কিনা , বাস্তবতার দিক - দিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গী কার্যকরী কিনা । অমূল্যদা — হ্যাঁ ।
এরপর কেষ্টদা আসলেন । কেষ্টদা আসতেই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — বসেন গল্প করি ।
কেষ্টদা যুদ্ধের খবরাখবর বলতে লাগলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর কথাপ্রসঙ্গে বললেন — হিটলার শক্তিমান খুব , কিন্তু কূটনীতির দিক - দিয়ে একটু খাটো মনে হয় । শক্তিমত্তা ও কূটনীতিজ্ঞান এই দুয়ের সার্থক সমাবেশ হলে মানুষ অপরাজেয় হয়ে ওঠে ।
কেষ্টদা — যাজনের বেলায়ও এ - কথা খাটে । সেখানে শক্তিমত্তা মানে হবে চরিত্রবল ও বােধসম্প ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আসল কথা কি জানেন ? আসল কথা ঐ ভালবাসা । ওতে সব ' গজিয়ে ওঠে । আমরা থাকি প্রবৃত্তি - রঙ্গিল হ'য়ে , আমাদের ক্ষুদ্র জগতেই আমরা ঘুরপাক খাই । নিজে ছাড়া অন্য কেউ যদি আমাদের সত্যিকার স্বার্থ হয় , কারও প্রতি যদি তার জন্য টান হয় , তবে মনে সেই রং ধরে । নিয়ন্ত্রিত - বৃত্তি কোন মানুষের প্রতি যদি তাঁর জন্য টান হয় , তবে আমাদের প্রবৃত্তিগুলিই adjusted ( নিয়ন্ত্রিত ) হ'য়ে luminous glow (প্রোজ্জ্বল বিভা ) ছড়াতে থাকে । Sincerely (একনিষ্ঠভাবে ) ভালবাসতে যে জানে , সে ত’রে যায় । বিমঙ্গল চিন্তামণিকে ভালবাসতে গিয়ে নিজেকে ভূললো , ভালবাসা জিনিসটা বুঝলল , তাই চিন্তামণির এক কথাতেই তার জীবন ঘুরে গেল । তখন তার সংস্পর্শে আবার কতলােক ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে উঠলো । ভক্তি - ভালবাসাময় মানুষের জীবনটাই যাজন । ভাবভক্তির অধিকারী যে — বাস্তব সক্রিয়তায় , বাঞ্ছিতকে নিয়েই অহরহ ব্যাপৃত যে , তাঁকে নিয়েই যে মাতাল — এমন লােক দেখাও পুণ্য , তা'তে অন্তরে ভক্তির উন্মেষ হয় । তাই প্রকৃত ভক্তই হয় যাজন - জৈত্র । অমনতর ভক্তকেই বলা যায় সাধু । তাই সাধুসঙ্গের গুণ শাস্ত্রে অতো ক'রে লেখা আছে ।
ললিত - মধুর ভঙ্গীতে বলছেন শ্রীশ্রীঠাকুর , তাঁর চোখে - মুখে করুণা ও প্রীতির প্লাবন ।
কেষ্টদা — ‘ অব্যক্তং ব্যক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধয়ঃ , পরং ভাবমজানন্তো মমব্যয়মনুত্তমম্ ’ এর মানে কি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — তিনি নরবিগ্রহ ধারণ করেও যা ’ তাই আছেন । সবখানিই সংহত হয়ে আছে , কিছুই খতম হয়নি , ব্যক্ত , অব্যক্ত উভয়সীমা অতিক্রম ক’রে তিনি আছেন , ব্যক্তিত্বে ব্যক্ত হয়েছেন বলে তাঁর অব্যক্ত স্বরূপ মুছে যায়নি । নির্ব্বুদ্ধিরা এইটুকু না বুঝে তাঁকে চেতনাহারা সাধারণ ব্যক্তি ব’লেই মনে করে ।
এরপর কেষ্টদা বিদায় নিলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর কালিদাসীমাকে বললেন — বড়বৌ - এর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আয় তো অজি কী ব্যবস্থা ।
কালিদাসীমা শুনে এসে খবর দিলেন — মুগের ডালের মধ্যে কফি , কলাইশুটি এই সব দিয়ে ঘন করে রান্না করা হয়েছে , আর হয়েছে একটা পাতলা ঝোল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — মুগের ডালে কফি দিয়ে ভাল করে রান্না করলে মুড়িঘণ্টর মত লাগে । • • • • • • • • •
প্রফুল্লকে লক্ষ্য করে — তুই রুই মাছের মুড়িঘণ্ট খাইছিস ?
প্রফুল্ল — হ্যাঁ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কেমন লাগে ?
প্রফুল্লখুব ভাল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — যতীন আচাৰ্য্যি কাঁঠাল রাঁধতো এমন ক’রে যে , তার কাছে মাংস কোথায় লাগে !
যারা মাছ - মাংস খায় , তারাও সেই কাঠালের তরকারি পেলে আর কিছু চাইত না ।
শৈলমা এসে বাইরে দাঁড়াতেই শ্রীশ্রীঠাকুর পট ক'রে তার মুখে টর্চ ফেললেন ।
শৈলমা চোখ বন্ধ ক’রে হাসতে লাগলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কালো হলেও সুন্দরী আছে — কি বলিস সুরমা ?
সুরমা - মা — আপনার কাছে তো সবাই সুন্দর । আমাদের সবাইকে আপনি নিজের ছেলেমেয়ের মত দেখেন , তাই আপনার চোখে সুন্দর বইকি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - কুমােরখালির মাকে দেখছি না কাল থেকে । তার শরীর ভাল তো ?
সুরমা - মা — মা'র খুব সর্দি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - ওষুধ - টষুধ দিচ্ছি তো ? বুড়াে মানুষ খুব সাবধানে রাখিস্ ।
সুরমা - মা — ওষুধ দেওয়া হইছে । কালকের থেকে আজ একটু কম । ••••••
একটু বাদে সুরমা - মা বললেন — আমার একটু প্রাইভেট আছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর রহস্য ক’রে বললেন — ‘হটিও , প্রাইভেট ।
যাঁরা উপস্থিত ছিলেন , হাসতে - হাসতে স’রে গেলেন ।
সুরমা - মা অনেক সময় ধ’রে তাঁর কথা বললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর আগ্রহ সহকারে শুনে যা’ বলবার ব’লে দিলেন । এর একটু পরে শ্রীশ্রীঠাকুর খাওয়া - দাওয়া ক’রে শুয়ে পড়লেন ।
৫ ই পৌষ , শনিবার , ১৩৪৮ ( ইং ২০/১২/৪১ ) ☝️
#Alochona_prosonge_part_2
#আলোচনা_দ্বিতীয়_খণ্ড
#চতুর্থ_সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
www.facebook.com/Amritokatha.in1
10