তত্ত্ব :-
সন্ধিৎসা যা’র থাকে-
কোথায় কখন কেমন কী রয়
পথ-চলনেই দ্যাখে । ১।
অহিত উচিত লাখ বছর ক’
পাবি নাকো বৃদ্ধি,
হিতানুগ সত্যকথায়
এক যুগেই বাক্সিদ্ধি । ২।
ইষ্ট লাগি’ কৰ্ম্ম করা
সেই তো হ’ল পুণ্যে ভরা । ৩।
পাওয়ার নেশায় মানুষ যখন
দেয় না কিছুই, নিতেই চায়,
চৌর্য্যবৃত্তি তখনই তা’র
হামা দিয়ে এগিয়ে ধায় । ৪।
মাথায় লেখা স্মৃতির মাঝে
জানা যে-বোধ আছে,
তা’ই মিলিয়ে বিবেক-বিচার
বিদিত সবার কাছে । ৫।
ভরদুনিয়ার কিছুই যদি
নিজের দাঁড়ায় জানলি না,
ব্রহ্মজ্ঞান তোর মাথার বিকার
এও কি বেকুব বুঝলি না? ৬।
বৃদ্ধিতে যা’ হানি আনে
টেনেই নেয় তা’ নরক-পানে । ৭।
করায় যে রে পারল না-
তা’রে যদি সাধু বলিস্
সে-কথা তোর খাট্ল না । ৮।
যা’তে তোমার জীবন চলে
তা’রও অধিক চাও যখন,
তখনি জেনো লোভ-রিপুতে
নুইয়ে দেছে তোমার মন । ৯।
সেই সাহসই সত্যি সাহস
বোধহারা না হয়,
চলার পথে বাধা যত
অবাধে করে ক্ষয়। ১০।
মন্দদর্শী যারা-
এক ঝলকে দেখে নেবে
ভালয় মন্দ তা’রা। ১১।
কথায়-কাজে মিতালী হ’লে
তবেই তা’কে প্রকৃত বলে । ১২।
সংস্কারের তিনটি চোখ
অভ্যাস, ব্যবহার-আরটি রোখ । ১৩।
যথার্থ তুই লাখ বলিস্ না
হিত না যদি হয়,
সত্যকথা হবে নাসে
সত্য হিতেই রয় । ১৪।
যতই প্রাজ্ঞ হ’স্ না রে তুই
কিংবা মহান বিদ্যাধর,
সব পাওয়াই অর্থহীন তোর
না হ’লে চেতন জাতিস্মর । ১৫।
দক্ষিণাতে দক্ষ ক’রে
সুফল আনে কৰ্ম্মে,
দৈনন্দিন করা যদি
বিনিয়ে চলে ধৰ্ম্মে। ১৬।
একযোগেতেই দোটানা মন
হ’লেই হবে স্মৃতির ক্ষয়,
একটা হয়তো থাকবে মনে
নয়তো হবে দুটোই লয় । ১৭।
বাঁচা-বাড়ার সংরক্ষণী
না জুটিয়ে কা’র,
আত্মপুষ্টি আদায় করাই
চৌর্য্য ব্যবহার। ১৮।
সবার পক্ষে সাধ্য যা’ নয়
সেইটি সাধ্য যতই হবে,
অলৌকিকতা ফুটবে ততই
ভরদুনিয়ায় কীর্ত্তি র’বে । ১৯।
চুলকিয়ে যে কু খুঁজে নেয়
মাছি-মানুষ তা’কে বলিস্,
কু হ’তে যে সু বেছে নেয়
মৌ-মক্ষী তা’রেই জানিস্ । ২০।
শ্রদ্ধা আনে ভাল থাকা
জ্ঞানের আলোয় সুদর্শিতা,
সন্দেহ দেয় অবিশ্বাস
বিতৃষ্ণা আর কুদর্শিতা । ২১।
প্রাণের যেথায় প্লাবন আনে
হৃদয় ধ’রে তুলে,
এইটুকুই তো লুকিয়ে আছে
তীর্থ করার মূলে । ২২।
চাওয়ার চিন্তায় বিভোর রে তুই
করায় মন্দগতি,
চাওয়া যে তোর খেয়াল শুধু
বুঝলি রে দুর্মতি? ২৩।
বাক্যে আর কায়মনে
বস্তু কিংবা বিষয়ের,
ইষ্টোচ্ছল নিয়ন্ত্রণ
সারমর্ম্ম ধেয়ানের । ২৪।
ভেদের ভিতর অভেদ দেখে
অভেদ হ’তে ভেদ,
এমন মানুষ ঠিক জানিস্ তুই
মূর্ত্ত মহান্ বেদ । ২৫।
যা’-কিছু সব বিভুর প্রকট
স্বতঃস্বেচ্ছ তাই প্রতিঘট । ২৬।
কাম-আবেশে স্ত্রী-পুরুষে
যেমন করে উপভোগ,
প্রেষ্ঠ-কাজে বাস্তবতায়
তেমনি হ’লে তবেই যোগ । ২৭।
জঘন্যেতর হোক না কৰ্ম্ম
ইষ্টপ্রতিষ্ঠা লাগি’,
তা’ও যাহার হয় বরেণ্য
সেই তো দৃপ্ত যোগী। ২৮।
করণপথে মনন চলে
অনুভূতি তা’তেই ফলে । ২৯।
কী করলে কী হয় তা’ দেখিস্
কিসেই বা তা’র নিরাকরণ,
দেখে-শুনে এমনি করায়
হয়ই জ্ঞানের উন্নয়ন । ৩০।
রঙ্গিল দৃষ্টি নেইকো যখন
আগ্রহ নত মন,
অমন মনই ধরতে পারে
সংস্কার কেমন । ৩১।
অসৎ ভেঙ্গে সৎ-এ চরণ
সদালাপন-কল্পনা,
এ না করে রেতরক্ষায়
ব্রহ্মচর্য্য হয় না। ৩২।
টানটি যেথায় মূর্ত্তি নিয়ে
করবে অবস্থান,
সাশ্রয়বুদ্ধি সহ সেথা
সন্ধিৎসানুধ্যান । ৩৩।
অন্যের বাঁচা-বাড়া যা’তে
পরিপূর্ণ রয়,
এমনি করে বাঁচতে পারলে
ধৰ্ম্ম উপজয়। ৩৪।
লোকের হিত হয় না যা’তে
লাখ যথার্থ হোক,
এমন কথা, এমন কৰ্ম্ম,-
সবই মিথ্যা রোখ । ৩৫।
গুণ যেমন বস্তুরই হয়
নরেই তেমনি ঈশের উদয় । ৩৬।
করা যখন হটিয়ে বাধা
অভীষ্টেতে চলে,
পাওয়া তখন কৃপা হ’য়ে
উচ্ছলতায় দোলে। ৩৭।
যা’ নিয়ে তুই থাকবি মেতে
যোগ হবে রে তা’তেই তোর,
ফলও পাবি তেমনি রে তুই
তেমনি জানায় থাকবি ভোর। ৩৮।
কাজে উছল ক’রে তোলা
সেবার আসল কৰ্ম্ম,
উন্নতি-পথ ধরিয়ে দেওয়া
হ’চ্ছে যাজন-মৰ্ম্ম;
বাঁচা-বাড়ার নিয়ম পালন
তা’কেই বলে ধৰ্ম্ম,
ইষ্টে বেঁধে পড়শী-স্বার্থী
হওয়াই আসল বৰ্ম্ম। ৩৯।
সন্ধিৎসাতে দেখার বুদ্ধি,
দেখায় আনে সুঝ,
এই সুঝেরই কৰ্ম্মপথে
বিজ্ঞানে হয় বুঝ;
বিজ্ঞান ধায় অমর পথে
মরণভেদী করে নরে,
ধৰ্ম্মপথে বিজ্ঞান চলে
ধৰ্ম্ম রাখে ধারণ ক’রে। ৪০।
উৎসমুখর উদ্যমেতে
প্রাণন-ব্যাপন-বর্দ্ধনে,
সম্বেগ যা’ জনকে জাগায়
উৎসবই সেই সজ্জনে । ৪১।
ধ্যানে হয় মানুষ ধারণক্ষম
গ্রহণক্ষমতা ফোটে,
আবোল-তাবোল বৃত্তি-চাওয়া
সার্থকতায় ছোটে। ৪২।
আবেগ যখন ক্ষিধেয় আতুর
গড়ন পানে ধায়,
তত্ত্বরে সেই মাতাল ঝোঁকই
তেজে বিচ্ছুরায় । ৪৩।
দম্ভভরা রাগ-আবেগের
সৎমুখোসী নয়কো সৎ,
চরিত্র তা’য় বশ থাকে না
টুলে গরম হয় অসৎ । ৪৪।
সপৰ্য্যায়ে সার্থক যা’,
ইষ্টে যাহার সংহতি,
ব্রাহ্মী এমন বুদ্ধি-বিবেক
ব্রাহ্মী এমন পদ্ধতি । ৪৫।
স্রষ্টা এক অদ্বিতীয়
অনন্ত সৃজন,
দেব-দেবী প্রকট বীর্য্য
তাঁ’রই বিলক্ষণ। ৪৬।
পুঞ্জীভূত অপকর্ম্মের
ফলগুলি তোর কাটছে কিনা,
বুঝতে দেখবি চরিত্র তোর
উচ্চ ঝোঁকে ছুটছে কিনা । ৪৭।
দীপনহারা চরস্নায়ু
শ্লথ যখন তা’র গতি,
দীর্ঘসূত্রী তখন মানুষ
কর্ম্মে ঢিলা তা’র মতি । ৪৮।
ঘটে-ঘটে ইষ্টস্ফুরণ
যখনই তোর হবে,
ব্রহ্মবোধের প্রথম ধাপটি
ঠিক পাবি তুই তবে । ৪৯।
ঘটে-ঘটে ইষ্টনিশান
বোধে দিলে হানা,
ব্রহ্মবোধের ধাপটিরে তোর
হবেই তখন জানা । ৫০।
ধ্যান কিছু নয় আর—
প্রেষ্ঠমনন-উদ্বোধনায়
স্ফূর্ত্তি-চলন অনিবার । ৫১।
রেত-নিরোধেই থাকলে রত
ব্রহ্মচারী হয় না,
তাই যদি হয় খোজাকে তো
ব্রহ্মচারী কয় না ! ৫২।
যা’র উপরে টানের রাগে
সঙ্কল্পটি দৃঢ় হয়,
সেই আবেগের প্রেরণাই
কর্ম্মকে তোর নিয়ন্ত্রয়;
তা’রই অস্তি-বৃদ্ধিতে তুই
সব যা’ নিয়ে ন্যস্ত র’স্,
ওর যোগেই তুই যোগী তখন
সন্ন্যাসী তুই ওতেই হ’স্। ৫৩।
অবস্থাগুলির সাড়া যখন
মরকোচ নিয়ে তা’র
ধরতে পারে মস্তিষ্কটা
ক’রে সমাহার,
এমনি যতই হ’বি রে তুই
বৃত্তিমোহ ভুলি’,
ততই জানিস্ ক্রমেই যাবে
অন্তর্দৃষ্টি খুলি’। ৫৪।
ধ্যানে নিঝুম মনটা যখন
চিত্তটি সজাগ,
অন্তরেরই চেতন-সাড়া
জুন্তে অনুরাগ;
চেতনভাবে নানারূপে
তখন চিত্তখানি,
ওরই ভিতর ফুটিয়ে তোলে
কতই দৈববাণী । ৫৫।
বৃত্তিগুলি অর্থ নিয়ে
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায়,
গুছিয়ে ওঠে পরস্পরে
একীকরণ-সার্থকতায়;
সার্থকী ঐ যাজন-সেবায়
ইষ্টানুগ প্রেরণাতে,
একই সূত্রে পরিস্থিতির
অভ্যুদয়ী বর্দ্ধনাতে-
গজিয়ে ওঠে ব্যক্তিত্বটা
গোছাল হ’য়ে অখণ্ডতায়,
ক্রমে-ক্রমে উৎসৃজনী
সমষ্টি-ব্যক্তিত্বে ধায়। ৫৬।
গুচ্ছে-গুচ্ছে সামঞ্জস্যে
বিনিয়ে-বিনিয়ে থাকে-থাকে,
সপৰ্য্যায়ে বৃত্তিসকল
সার্থকতায় ইষ্টে ডাকে;
সমাধানী একীকরণ
উপচে ওঠে যখন প্রাণে,
দীপন-দোলায় ইষ্টপ্রতীক
উথলে ওঠেন ভগবানে;
সকল বোধের সমাহারে
সংহত জ্ঞান হয় যখনই,
সবার সকল চাওয়ার পূরণ
ভাগবদ্-বোধ ফোটে তখনই । ৫৭।
জানা-অজানার এপার-ওপার
আকার ছাপিয়ে রহে নিরাকার,
দেখে-শুনে-বুঝে-থেকে-উপচিয়ে
হ’য়ে-র’য়ে আরো তিনি আরো আর। ৫৮।
#তত্ত্ব#Anusruti_part_1#অনুশ্রুতি_প্রথম_খণ্ড#অনুশ্রুতি_১ম#ষষ্ঠ_সংস্করণ#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈Telelegram https://t.me/amritokathahttps://www.facebook.com/Amritokatha.in1
10