বৃত্তিধৰ্ম্ম :-
ভাবে ঝোলে করে না
বাঁধন তা’র কাটে না । ১।
আলিস্যি যা’র করতে ভাল
তা’র দুনিয়ায় সবই কালো । ২।
কর্মহীন চিন্তা যা’র
শান-বাঁধানো নরক তা’র । ৩।
অশুভে যে দেয় লাই
ক্ষয় ছাড়া জয় নাই। ৪।
যোগ্যতা নাই স্পর্দ্ধা ধরে
ছোট্ট যা’রা দাবীই করে । ৫।
কহত-আশায় করা ছাড়ে
তা’রে কি কেউ রাখতে পারে? ৬।
ক্ষণভঙ্গুর মান যা’র
চিররুগ্ন যশ তা’র। ৭।
যোগ্যতা নাই দাবী করে
বেঘোর পথে তা’রাই মরে । ৮।
বিশ্বাসঘাতক কৃতঘ্নকে
কেঁটিয়ে তাড়াও এক ধমকে। ৯।
কৃতয়ে আশ্রয় দেয় অথবা প্রশ্রয়
পরিবার-পরিজন-সহ পায় ক্ষয়। ১০।
আপন স্বার্থে ব্যস্ত যা’রা
দুর্দ্দশাতে হয়ই সারা । ১১।
ভ্রান্তি এল সেই-
উৎস-বিমুখ চলন-বলন
বসলো পেয়ে যেই। ১২।
খায় যা’র খসায়ও তা’র
জীবন যায় ব’য়েই ভার । ১৩।
পেতেই শুধু আত্মীয়তা
ঠক-চালাকের এই মূঢ়তা । ১৪।
যা’র খায় তা’কেই মারে
দুঃস্থ-দাপট ধরেই তা’রে । ১৫।
পাওয়ায় খুশি, দেওয়ায় রোষ
চোরাই-ধর্মীর এমনি দোষ । ১৬।
সঙ্গতিহীন কৰ্জ্জে দান
ব্যর্থতাতেই মুহ্যমান । ১৭।
যোগ্যতা নাই উচ্চে দাবী
বেঘোর পথে খায় সে খাবি। ১৮।
বিশ্লেষণে নিন্দা দেখে
নিজের মরণ নিজেই শেখে । ১৯।
বৃত্তিবাগী আত্মসুখী
ভুলের দালাল ধ্বংসমুখী । ২০।
হীনস্বার্থী প্রবৃত্তিটান
থাকলে যায় না সতের স্থান। ২১।
যে-ভাব হ’তে চাহিস্ ত্রাণ
তা’ হ’তে ঝোঁক ফিরিয়ে আন্ । ২২।
কৰ্ম্মে শিথিল, ভাব-প্রবল
দূষণ-স্বভাব দৈন্যে তল । ২৩।
ইষ্টহারা যা’র গোলা
ভাতে মরে তা’র পোলা। ২৪।
পাপ-স্বভাবের সমর্থনে
পাপমুক্ত হ’তে যাওয়া-
ভণ্ড কথা জানিস্ ওটা
ঝোঁক কিন্তু পাপেই ধাওয়া। ২৫।
মনের মতন না হ’লে যা’র
মনটি ক্রোধে লালে লাল,
দিগ্বিজয়ী দুর্দ্দশা তো
দৌড়ে ধরে তা’র নাগাল । ২৬।
ইষ্টানত নয়কো হৃদয়
গুরুত্বে যা’র অভিযান-
হেলন-দলন যা’ পারিস্ কর,
কৃতঘ্ন সেই শয়তান। ২৭।
চাক্ষুষেরে দিয়ে বিদায়
ওশোনা-কথায় বাঁকে,
দুনিয়ায় সে কেনাবেচায়
ফাঁকিই পেয়ে থাকে। ২৮।
রোশনি চোখে আছে তবু
ভেবেই দেখিস্ তাই,
মনগড়া তোর দেখা হ’তে
পেলি না রেহাই। ২৯।
যে-বৃত্তিকে করবি খাতির
সেই হবে রে শক্তিমান,
তারই হেল্লায় হ’বি রে তুই
ঊর্ধ্ব-অধে অধিষ্ঠান । ৩০।
ভুত-বাতুলি মন যত যা’র
পরিচ্ছন্ন নয় সে তত,
গাধার মত যতই খাটুক
শ্রীহারা হয় স্বভাবতঃ । ৩১।
হামবড়ায়ী অহমিকা
ক্রুদ্ধ অভিমানে ফোলে,
বাধা যা’ তায় করতে নিকাশ
সমর্থনী কাঁদন তোলে । ৩২।
ইতর-কুহকে অনুরাগী হ’য়ে
নীচতায় করে সংস্কার,
মাজাঘসা-নীচু নীচতা তা’দের
সাবাড়েই করে পরিষ্কার । ৩৩।
ইষ্টপ্রীতি নাইকো যাহার
চলে কামের নেশায়,
কামে খোয়ায় ওজঃশক্তি
ধরেই স্নায়ুনাশায়। ৩৪।
কাম, ক্রোধ জানিস্ রে তুই
তখনি দোষের অতি-
ইষ্টস্বার্থ হটিয়ে যবে
লোকের করে ক্ষতি । ৩৫।
ইষ্টপ্রীতি অবসন্ন
স্ত্রী-প্রভাব প্রবল,
বংশ এতে অবশ হ’য়ে
খায় মরণের জল। ৩৬।
উপকারীর ক্ষতি করে
স্বার্থবশে অপবাদ,
দেখ না চেয়ে কৃতঘ্নতা
আছেই ধ’রে তাহার কাঁধ । ৩৭।
ধাপ্পা মেরে অর্থ খেলে
হিত করবার অছিলায়,
দুর্ব্বিপাকে ঘিরেই রাখে
রাখতে বিধি নারেন তা’য়। ৩৮।
উপায় করতে জানল না যে
দিলেও রাখতে পারল না,
পাওয়ার কৰ্ম্ম হারা হ’য়ে
সঞ্চয় করে লাঞ্ছনা । ৩৯।
দিতে চেয়ে স্বার্থনেশায়
করে প্রবঞ্চনা,
দুঃখ তা’রে দারুণ বেগে
দেয়ই রে লাঞ্ছনা। ৪০।
লোকের কথা শুনেই যা’রা
নিন্দা নিয়ে চলে,
বিষাদ-সহ বিপদ তা’দের
পদে-পদেই ফলে । ৪১।
কেবল পাওয়ার ফন্দী যাহার
দেবার হাতটি হতচেতন,
এক ডাকেতে বলছি আমি
ব্যর্থ তাহার উন্নয়ন । ৪২।
প্রবঞ্চকের মনটি ভরা
বঞ্চনারই ভয়,
যাচা-লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে
মেগে আনে ক্ষয়। ৪৩।
শ্রেষ্ঠ সৎ-এর কুৎসা রটায়
স্বার্থনেশায় অত্যাচার,
স্বগণসহ এমন-জনা
আত্মবিষে হয় সাবাড় । ৪৪।
হিসাবপত্রে গণ্ডগোল
চোট্টাবুদ্ধি অন্তরে,
তল্ছা মেরে চুপটি ক’রে
পণ্ড-কুটিল ছল করে,
বিশ্বাসেরই দাবী করে
হিসাবপত্র বেগোছাল,
সাধুর ধাঁজে টেক্কা মারে
বিছিয়ে কতই ধাপ্পাজাল । ৪৫।
মোকাবিলায় নিন্দাবাদের
নিরসনেও বুঝল না,
নিস্থি মানুষ সরীসৃপ সে
কৃতঘ্নতার বিষফণা । ৪৬।
জন্মগত ভ্রষ্ট যা’রা
সৎ বা দয়ায় হয় না বশ,
ভয়েই কেবল অনুগত
শুভের পথে পায় না রস। ৪৭।
হামবড়ায়ী নিৰ্ম্মাল্য যা’-
নিলেই এমন দান,
ভবিষ্যতে বিড়ম্বনায়
ঘায়েল করে প্রাণ। ৪৮।
পণ্ডিতি যা’র উপদেশেই,
কাজের ভিতর ম্লান,
মূর্খ সে-জন ছন্নছাড়া
নাইকো পরিত্রাণ। ৪৯।
রক্ত-চোষা বাদুড়যোনি
দত্তহারীর ভাগ্যলেখা,
জীয়ন্তে তাই দ’গ্ধে মরে
শঠ-চলনে জীবন-রেখা। ৫০।
সংহতিতে ভাঙ্গন ধরায়
চাল-মোলায়েম যমের দূত,
এমন এদের সাহচর্য্যে
হর মানুষ হয় জ্যান্ত ভূত । ৫১।
নীতির নিয়ম অভ্যাসে আর
বৃত্তিটানের মহড়ায়
দ্বন্দ্বে বেঘোর হ’লেই মানুষ-
বুদ্ধিশুদ্ধি থৈ না পায়। ৫২।
নিজের ত্রুটির ধার না ধেরে
পরের ঘাড়ে দোষ চাপায়,
অহংমত্ত এমন বেকুব
ক্রমে-ক্রমেই নষ্ট পায়। ৫৩।
উপযুক্ত নয় যে যা’তে
দাবীদাওয়া সেইখানে,
অন্ধ-ইতর দৈন্য স্বভাব
চলে ব্যর্থ কুহক-পানে । ৫৪।
কাম-আবেশে বেহুঁশ চলন
ভাল-মন্দ নাই বিচার,
চোখের আড়াল না করলেও
ভালবাসা নাইকো তা’র । ৫৫।
স্বার্থবুদ্ধি অভিমানে
লাখ বছরেও জ্ঞান ফোটে না,
হামবড়ায়ী অন্ধতমোয়
লাভ শুধু হয় বিড়ম্বনা । ৫৬।
প্রাণের টানে কাম যেখানে
শ্রেয়-উছলা,
বুদ্ধি-বিবেক শক্তি-সেবা
সেথায় উথলা। ৫৭।
শ্রদ্ধাহারা বুদ্ধি ইতর
গর্হিত উপভোগ,
ধুরন্ধরী ডাইনী-চলন
সেইতো কামুকরোগ। ৫৮।
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠা তোর
যায় তলিয়ে যেইখানে,
মরণ-হানায় আসছে বিপাক
ঐ পথেতেই সেই টানে। ৫৯।
সত্তাতে যেই আঘাত পড়ে
অহং ওঠে ফেঁপে,
বৃত্তি তখন আঁকড়ে ধরে
নানান ধাঁজে কেঁপে। ৬০।
পরশ্রীতে কাতর হ’য়ে
অযথা করে অত্যাচার,
দুর্ব্বিনীত আঘাত ছোটে
পিছু-পিছুই জানিস্ তা’র । ৬১।
অসৎ কাজে জেল্লা যা’দের
সৎ-এর বেলায় মিইয়ে যায়,
শিষ্টসেবী নয়কো জনম
ইতর ধাতু ব্যক্ত তা’য়। ৬২।
ভর-দুনিয়ায় প্রেরিতদের
বিভেদ-গাথায় নিন্দা করে,
সমর্থন তুই করিস্ নাকো
সে-জন হ’তে থাকিস স’রে। ৬৩।
অহংতালে দম্ভরাগী
বৃত্তি-ঝোঁকা যে,
ভাবে স্বাধীন, ঘোর পরাধীন;
অজ্ঞ মূঢ় সে। ৬৪।
যখন যেটার হয় প্রয়োজন
শরীর-মনের খোরাক দিতে,
না পেলেই তা’ বিগড়ে যাওয়া-
সহনশীল নয় স্বভাবটিতে । ৬৫।
দুর্ব্বলতা অলস-চক্ষু
মিটিমিটি চায়,
বৃত্তিপথে দিয়ে হানা
বাগে পেলেই খায় । ৬৬।
আহব তোদের সেইখানে-
ইষ্টানুগ বাঁচাবাড়ায়
আঘাত-ব্যাঘাত যেইখানে । ৬৭।
বৃত্তিলোলুপ দ্রোহণ-স্বভাব
শ্রেষ্ঠে নতি নাইকো যাহার,
আইন-কানুনে তা’রাই জোগায়
খোরাক চৌর্য্য-কৃতঘ্নতার । ৬৮।
দূরদৃষ্টি যতই খতম
রকম ততই অসৎ-পথে,
রঙ্গিল লোভে দম্ভদাহে
ডাকে জীবন কূট-অসতে । ৬৯।
ভাল-মন্দ যাই না আসুক
বৃত্তিবশে যাসনে বেঁকে,
ইষ্ট বজায় দেখবি যা’তে
যতই পারিস্ নিবি ডেকে । ৭০।
সৎমুখোসী বন্ধু যা’রা
‘করতাম’—ব’লে সম্বেদনে
বিপদ গেলে দাঁড়ায় এসে,
নেহাৎ এটা রাখিস্ মনে । ৭১।
বাঁচাবাড়ার হক্ চাহিদা
ঠকিয়ে যা’রা চলবে লোকের,
সুদে-আসলে একদিন তা’
শুধতে হবে জানিস্ তা’দের । ৭২।
প্রেরিত-তীর্থ আরাধনায়
দ্বন্দ্ব আনে ম্লেচ্ছ সে-ই,
বৃত্তিচতুর যুক্তি এদের
যুক্ত করে নরকেই। ৭৩।
মনের মাঝে চিন্তা কামের
ঢেউয়ের মত চলতে থাকে-
শিষ্ট যেমন, সংহত তা’
উন্নতি তা’য় তেমনি ডাকে। ৭৪।
অবিন্যস্ত অর্থ-বিহীন
এমন বৃত্তি-মহড়ায়,
যে-অঙ্গেরই চালন করে
সে-অঙ্গটি নিকাশ পায় । ৭৫।
বৃত্তিগুলো চলবে যখন
প্রেষ্ঠপূরণ-উচ্ছলায়,
দক্ষ-বিনয়দীপ্ত অহং
নাচবে মোহন চলৎপায় । ৭৬।
বৃত্তি-বেহুস্ পাগলা-ধাঁজে
বাঁচাবাড়ায় ক’রেই ক্ষয়
বেকুব-চালাক দম্ভীরা সব
সার্থকতায় ব্যর্থ হয় । ৭৭।
সব প্রবৃত্তি সমাহারে
যা’ই ক’বি আর করবি,
সুফল পথে বাস্তবতায়
কৃতীর মুকুট পরবি। ৭৮।
কামের তোড়ে প্রাণ যেখানে
অবশ চলায় ধায়,
জানিস্ সেথায় জীবন-গতি
বেকুব চলন পায় । ৭৯।
জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে
পূরণতেজা যা’রাই হোক,
তা’দের সেবায় বিরোধ ঘটায়-
রক্তশোষক তা’রাই জোঁক। ৮০।
পরচর্চ্চায় সহস্রমুখ
শুধরানে নাই আগ্রহ,
আপনার দোষ নাই নজরে-
ছোটেই পিছু নিগ্রহ। ৮১।
তল্ছা কামের থাকলে রোখ
সঙ্গনেশার মত্ত ঝোঁক,
ভয়-সমীহ শ্রদ্ধা-মান
দূরত্বজ্ঞান হবেই ম্লান,
আদর-সোহাগ মাখামাখি
স্পর্শ-লিপ্সা ডাকাডাকি,
জাহান্নমের ইসারাটি
ডাকছে তোরে জানিস্ খাঁটি,
সামাল বেকুব সাবধান হ’
মন টেনে তুই দূরেই র’। ৮২।
বৃত্তিধান্দায় বাতুল চালাক
সন্দেহী ধুরন্ধর,
না ঠকলে সে পায় না মজা-
আত্মম্ভরীর ঘর । ৮৩।
চলা-বলার চুক দেখিয়ে
কইলে শোধন-কথা,
অপমানে আটাশ হ’স্ তুই
পাস্ কত রে ব্যথা;
ভাল কইলে শত্রু হয় সে
জব্দে লেগে যাস্,
ফাঁসের বাহার এত ক’রেও
লাগবে নাকো ফাঁস? ৮৪।
বৃত্তিভোগের নেশা যত
ধরবে তোরে কষে,
বাস্তব ভোগ উধাও হবে
ইষ্ট যাবে ধ্ব’সে। ৮৫।
আত্মস্বার্থী ভোগ-লালসায়
বিলোল ভালবাসা,
কাম্য নিয়ে স্বার্থসিদ্ধি
সেই তো সর্ব্বনাশা । ৮৬।
কামের রোখে পড়লে বাধা
ছিঁড়বে টান ছুটবে সাধা,
শিথিল ধাঁধা চ’টেই লাল
আপসোসেতে বীতরাগী চাল,
দোষ দিয়ে সে বেড়ায় স’রে
নিজে ভাল—জানায় পরে । ৮৭।
একনিষ্ঠ ইষ্ট-পূজায়
প্রত্যাখানী বিরাগপ্রাণ,
লোকসেবা আর তীর্থ-ধুয়োয়
বৃত্তিপূজোয় ভ্রাম্যমাণ,
ইতোভ্রষ্টস্ততোনষ্টে
নিছক ক’রে আত্মদান,
বিভ্রান্তি আর বিচ্ছিন্নতায়
হা-হুতাশে অবসান । ৮৮।
নিজত্ব যা’র আবেশমূঢ়
প্রবৃত্তিতে চলৎশীল,
শ্রেয়-সেবী হ’তেই ভাবে-
স্বাধীনতায় পড়ল খিল । ৮৯।
যে-ভাব হ’তে ত্রাণ চাহিস্ তুই
সে-ভাব ফেরা আগে,
তবেই রেহাই পারবি পেতে
ফুটবি শুভ রাগে । ৯০।
বাঁচাবাড়ার প্রয়াস-পথে
বৃত্তিগুলির উপভোগ,
সহজ মানুষ এমনি চলে
সার্থকতায় পেতে যোগ। ৯১।
বৃত্তি-পূরক প্রেষ্ঠ-নেশায়
অহং ঘোষে হামবড়াই,
স্বার্থ-কুটিল দ্বন্দ্বে আগুন
বিনয়-কাতর সর্ব্বদাই। ৯২।
আদর্শেরে করলি হেলা
লাভ না দেখে তাঁ’র,
হেলা-ফেলায় চললো জীবন
এখনও তা’ ছাড়। ৯৩।
ষড়রিপুর ছয় কুঠুরী
লাখ-চাহিদার বাস,
আপন নেশায় বাতুল সবাই
নাই কোন নিকাশ;
রিপু-রঙ্গিল নেশায় পাগল
চাহিদাগুলিকেই
বৃত্তি ব’লে জেনে রাখিস,-
যেমন বুঝিস্ যেই। ৯৪।
হামবড়ায়ী বৃত্তি-স্বার্থী
ঠকবাজি নীচমন,
স্বার্থধর্মী ভীরু হয় সে
সন্দেহী অনুক্ষণ । ৯৫।
তাচ্ছিল্যেরই অভিমানে
হ’লি কবি বৈজ্ঞানিক,
হামবড়ায়ে সৈন্য হ’লি,
নয়তো হ’লি দেশপ্রেমিক,
ওই খিদমতে করলি কতই
মিটল কি রে ঝাল?
ইষ্টস্বার্থে করলে ও-সব
যেত রে জঞ্জাল! ৯৬।
ইষ্টহারা নিষ্ঠা যা’দের
ভ্রাতৃভাবের উপাসক,
শ্রেষ্ঠ যা’ তা’য় অষ্টরম্ভা
হীনত্বই তার জনক। ৯৭।
করার ঝোঁকটি নিবু-নিবু
বাধায় নাজেহাল,
এমনি হ’লেই দেখিস্ খুঁজে
কোথায় কামের জাল। ৯৮।
ইষ্টপ্রীতি মলিন যখন
ইচ্ছায় অবসাদ,
নিশ্চয় জানিস্ কাম-ডাইনী
ধরেছেই তো কাঁধ । ৯৯।
বৃত্তিক্রম সার্থক হ’য়ে
প্রেষ্ঠেই গেঁথে উঠল না,
কোথায় তবে ব্যক্তিত্ব তোর
বৈশিষ্ট্য তো রইল না;
ব্যষ্টিত্বের এই অহংরাগে
ঠিক্রে টুকরো কতই হ’লি,
বৃত্তিলাভের ধাঁধায় প’ড়ে
আত্মজ্ঞানটি হারিয়ে র’লি! ১০০।
কাম যেখানে কামিনী চায়
কামোদ্দীপ্তি নিয়ে,
লাঞ্ছনারই মাল্য তাহার
লাগে কণ্ঠে গিয়ে। ১০১।
প্রেষ্ঠ-সাশ্রয় গলা কেটে
নিত্য পূজো তোরই করিস্,
তা’রই ফলে ঘোর অনটন
তা’ কি তুই এড়াতে পারিস্ ? ১০২।
পূর্ব্বঋষি স্বীকার অছিলায়
বলে পরবর্তী নাই,
বোকা অন্ধকার আবাস তা’দের
ইহপরকালে ছাই । ১০৩।
বৃত্তি-ঠোকা উত্তেজনা
স্বার্থ সাধার তরে,
ঠোক্করে সব ছিটকে দিয়ে
ক্রোধে ভাঙ্গন ধরে। ১০৪।
স্বার্থ-কুটিল হামবড়াই যা’র
অন্তরে দেছে হানা,
বৃত্তিতন্ত্রী বেকুব-চালাক
সন্দেহে চোখ কানা। ১০৫।
ইষ্টার্থেতে ভিক্ষা ক’রে
ইষ্টে করে না নিবেদন,
দরিদ্রতায় হা ক'রে খায়
নিপাতে যায় ধন আর জন । ১০৬।
বৃত্তিগুলো সত্তাটাকে
টুরো ক’রে ছিঁড়েই খায়,
প্রেষ্ঠপ্রাণ হ’লে কিন্তু
ও-সব হ’তে রেহাই পায় । ১০৭।
কামদীপনী হাবভাব আর
তেমনি অধ্যয়ন,
যতই রঙ্গিল হোক্ না জানিস
কামুকই সেই জন । ১০৮।
বাধ্য-বাধকতা যেথায়
ঝোঁকটি কাবু করে,
বৃত্তিটানের ডাইনী মায়া
অমনি চেপে ধরে। ১০৯।
আত্মমুখী উত্তেজনা
পূরে না অন্যেরে,
নিজের চাওয়ায় পাগলপারা
অন্ধ ব্যর্থ সেরে। ১১০।
ব্যর্থ কামের তৃষ্ণা নিয়ে
ব্যথী অনুরাগ সুরে,
কুশ্রীবেশে ভূতের মত
ফিরিস্-বেড়াস্ ঘুরে,
সহানুভূতির উদ্দীপনায়
আনতে নজর লোকের,
নিঠুর-নিরাশ কাম ভজনায়
স্বভাব হ’ল প্রেতের । ১১১।
বৃত্তি-অহং পুষ্টি তরে
মতবাদের তুই তো জোঁক,
মতের প্রতীক পূজলি না রে
পূজলি বেকুব বৃত্তি-ঝোঁক;
পণ্ডিতী হীন হাতের নাড়ায়
করছিস্ বকছিস্ কত কী,
হারালি সব যতেক বিভব
নষ্ট হ’ল তোদের ধী। ১১২।
বৃত্তিরফায় জাত-গরিমা
ডোবালি আত্মপ্রতিষ্ঠায়,
দধীচি-অস্থি বজ্র-নিঠুর
ছাড়ে কি তাহারে? নিপাত দ্যায়! ১১৩।
পূর্ব্বতন আপ্তধারা
না দেখে না পেয়ে তোর,
তাঁ’দের প্রতি টান-অছিলায়
বৃত্তিসেবায় রইলি ঘোর,
বৃত্তিধৰ্ম্ম দোহাই দিয়ে
কত রং-চং লাগিয়ে গায়,
বর্তমান প্রেরিত যিনি
পড়লি নাকো তাঁ’রই পায়;
হচ্ছিস্ সাবাড়, করছিস্ কাবার
পয়মালেতে যাচ্ছিস্ কত,
এখনও ফের, জীবনের জের
ভাঙ্গিস্ না রে, হ’স্ না হত ! ১১৪।
বৃত্তি-রংএ রঙ্গিল যদি
সপর্য্যায়ে অহঙ্কারে,
বৃত্তিগুলি বিন্যাসিত
দক্ষক্রিয় অহংভারে,
রজোগুণে দীপ্ত মানুষ
তা’কেই আদত জেনে রাখিস্,
বৃত্তি-অহং-বিক্ষিপ্ত যা’
রজ নয় তা’ ঠিকই বুঝিস্। ১১৫।
পরের পুষ্টি কেড়ে নিয়ে
শোষণ-নীতির আত্মপোষণ,
প্যাঁচোয়া জালে লোক-সমাজে
ইষ্টভ্রষ্ট ক’রে যখন,
আপদ-বিপদ-উচ্ছৃঙ্খলা
গজিয়ে তেমনি বিশৃঙ্খলে,
একগাট্টায় মরিয়া হ’য়ে
ধায়ই ‘যুদ্ধং দেহি’ ব’লে । ১১৬।
জীবন-স্বপন ফস্কে গেল
লাভ হ’ল কী তোর,
ভাবনা-মাফিক করলি নে কাজ
রইলি রে বিঘোর ! ১১৭।
খামখেয়ালী ধরলি খেয়াল
সার্থকতায় চললি না,
করণ-প্রবণ ধরন-ধারণ
উৎসাহকে ধরলি না;
ঠগীর ঝুলে ঠিক কেবল
পেলি শুধুই বঞ্চনা,
চলতিস্ যদি সৎ-চলনে
অভাব-টভাব রইত না। ১১৮।
করবি নাকো, চাইবি শুধুই
করবি আপসোস্ নাইকো কেউ,
পেঁচি বেকুব স্বার্থ-অন্ধ
বেড়াল ডাকিস্ মেউ-মেউ । ১১৯।
দক্ষ যা’রা অহঙ্কারে
ফুলে-ফেঁপে নিত্যদিন,
লোকগুলি সব পেলে-পুষে
ভাবছে মনে খুব প্রবীণ। ১২০।
তক্ষকী ঐ তক্তকে ডাক
লক্ল’কে চায় প্ররোচিতে,
ছলছলে তোর উপচোলো লাল
ছুটলি দরণ বরণ দিতে;
বিষের ছুরি ওই দেখিস্ না
লুকিয়ে রেখে আড়ালফাঁকে?
হানবে বুকে মরবি ওরে
প্রাণটা দিবি দুর্বিপাকে! ১২১।
মান-গরবে অহংবশে
ধরলি রে ধাঁজ বেকুব চতুর,
চলনে তোর দিগজী ভাঁজ
দেখতে যেন ক্ষিপ্ত কুকুর। ১২২।
আপন মায়ে ভক্তি ফোটে না
ভক্তি পরের মায়ে,
ভক্ত জানিস্ কারুর ন’স্ তুই
ফিরিস বৃত্তিদায়ে । ১২৩।
মা-মাসী-বোন নিজের যা’রা
টান মোটে নাই তা’র প্রতি,
পরের মা-বোন, পরের মাসী
নিয়েই যাহার সঙ্গতি,
মত্ত অলীক অজান বেকুব
বুঝেও বুঝতে চায় না যে,
অবাধ্যকাম অজানভাবে
ধরছেই, টের পায় না সে। ১২৪।
বৃত্তি-নেশায় বেভুল অহং
ওতেই ভরা কল্পনা,
ওইটি জানিস্ তমোগুণের
নিপট নিঠুর লক্ষণা । ১২৫।
পরের কওয়া চর্চ্চা-কুটিল
রোধেই যাহার প্রেষ্ঠানতি,
বৃত্তিরতির কৃতঘ্নতার
বেড়াজালেই তাহার গতি । ১২৬।
বেগোছাল জিনিসপত্র
ঢিলে ব্যবস্থিতি,
এই দেখলেই বুঝতে পারবি
কেমন বৃত্তিরীতি । ১২৭।
মেয়ে দেখলেই ভিড়ে পড়ে
দরদ-সেবায় কাটায় দিন,
পুরুষ-সঙ্গের নাইকো সময়-
সন্দেহের সে, মতিহীন । ১২৮।
হীন যা’রা সব চক্র-কুটিল
স্বার্থ-নেশায় শেয়াল ডাকে,
বিষ হানি’ ঐ মৃত্যু তা’দের
ছিটকিয়ে আন্ আৰ্য্যী হাঁকে । ১২৯।
বৃত্তিগুলি ব্যক্তিত্বে তোর
হর খেয়ালে খেলছে ভাটা,
কত নাচনে নাচছিস্ রে তুই
হিসেব ক’রে দেখলি সেটা?
বাঁদর-নাচন নাচলি কত
বাহাবাও কত পেলি বাতুল,
ভাবছিস্ তুই মস্ত মানুষ
কেউ কি আছে তোর সমতুল?
পাগল-বেকুব ওরে দিগ্গজ
খতিয়ে কি দেখলি তায়,
প্রেষ্ঠস্বার্থী টান ছাড়া কি
অখণ্ডতা তোর গজায় ? ১৩০।
নারীর খেয়াল করতে তামিল
চলছিস্ কি ক’রে নিয়ত,
ইষ্টনীতি চুলোয় গেল
করতে তা’রেই অনুগত?
কলুর বলদ হ’য়ে নারীর
তুষ্টি-সেবায় মন দিলি,
নিজেরে তুই করলি খতম
তা’কেও সাবাড় করে নিলি । ১৩১।
কামপ্রার্থী হ’য়ে জানিস্
বৃত্তিবিনোদী যা’রা,
তা’দেরই বলে কোটনা লম্পট
ঘৃণ্য পুরুষ-ধারা। ১৩২।
সাশ্রয়ী স্বাবলম্বী হ’য়ে
রাখ সবারে বৃদ্ধিতে,
রক্তচোষা বৃত্তি-বাদুড়
তাড়িয়ে দে, তাড়িয়ে দে । ১৩৩।
জীবন-জনম মুহ্যমান
নীতির পথে রইলি ভোর,
তাড়া ওরে নেকড়েগুলো
হিংস্র-লোলুপ ওরাই চোর । ১৩৪।
স্বীকার করা দূরে থাকুক
ভাল চাওয়ায় চল্লি কেউ?
বিবর্দ্ধনের ভয়েই বুঝি
হ’পকে ডরে ডাকিস্ ফেউ। ১৩৫।
জীবন-জোয়ার এলো রে তোর
স্নান করে নে যত পারিস্,
বৃত্তিবাদী হাঙ্গর-কুমীর
কামঠগুলোয় খেয়াল রাখিস্ । ১৩৬।
নিজের ছেলে-মেয়ে আরও
তা’দেরই সন্তান-সন্ততি
পুষছিস্ কিন্তু চাপে ও সুখে
ও হ’তে নাই অব্যাহতি;
প্রেষ্ঠ-প্রয়োজনের বেলায়
দিতে তাঁ’রে শিথিল হ’লি
সব অভাবেই চলছিস্ যদি
তাঁ’র বেলাতেই থমকে র’লি;
এতেও ভাবিস্ পাবি রে তুই
লক্ষ টাকা মাণিক-হীরা,
লক্ষ্মীরে তুই ঠেল্লি দূরে
রইলি তা’তেই হাভাতঘেরা । ১৩৭।
ইষ্টপ্রতীক জড়প্রতীকে
চেতনপ্রতীক রাখলি ক’রে,
প্রতীক ছাড়া প্রতিভা কি
উৎসৃজি’ গুণ রাখে ধ’রে?
চেতন প্রতীক থাকলে তবেই
প্রতীক তাহার প্রতিভা পায়,
চিত্তহারা জড়প্রতীকে
তাঁ’য় কি কভু পাওয়াই যায়?
বদ্ধপাগল সৃষ্টিছাড়া
ওরে অবোধ নিপট পাপ,
বৃত্তিবাধায় নিরোধ ক’রে
বীর্য্য হেঁকে ভাঙ্গ প্রলাপ । ১৩৮।
এলোমেলো বইছে হাওয়া
তরঙ্গ কী নাচছে ছলে,
ছুটলি ওরে দিতে পাড়ি
নাই ধ’রে হাল যুক্তি-বলে;
তরণী তোর তাল-বেতালে
হাওয়া-জলের আঘাত খেয়ে,
ডুবেই যাবে ভাব এখনও
কী নিয়ে তুই যাবি বেয়ে!
ছলাৎ-ঝলাৎ ঘূর্ণী জলের
বৃত্তিপাকের তল্ছা টান,
পারবি না রে সামাল দিতে
ফের্ রে যদি রাখবি প্রাণ । ১৩৯।
প্রেষ্ঠস্বার্থের নাইকো ধান্দা
পূরণ-প্রবণ নয়,
দেখতে দক্ষ নিপুণ কৰ্ম্মী
আড়ম্বর-বাক্ কয়;
ভাঁওতা দিতেই বুদ্ধিমত্তা
খরচ বহুল, স্বল্প আয়,
সাশ্রয়ী-সুন্দর নয় প্রকৃতি
লভ্যে নিছক ক্ষয় ঘটায়;
দেখলে এমন দূরেই থাকিস্
থাকতে যদি চাস্ বজায়,
কথার হাওয়ায় রক্ত চোষে
যাসনে রে তুই ওর ছায়ায়। ১৪০।
সুখ-সুবিধা ভোগ-বাসনা
বৃত্তিস্বার্থ সেবার তরে
ফাঁকি দিয়ে গুরুর জিনিস
যে-জন গোপন হরণ করে,
দৈন্য-ব্যাধি ঘৃণ্যাকারে
বিপাক নিয়ে ঘেরেই তা’রে,
ব্যাধির প্রকোপ অপমানে
বংশে অকাল মরণ ধরে। ১৪১।
নারীর পায়ে মাথা বিকিয়ে
গুরুর দায়টি দিয়ে চলে,
কপট উদ্যোগী এমনদেরই
দৈন্য বিপাক ফলেই ফলে। ১৪২।
হৃদয় যদি আশ্রয় পায়
প্রিয়-প্রীতির কোলে,
সব-কিছু তার সার্থকে ধায়
উল্লাস-পায়ে চলে । ১৪৩।
#বৃত্তিধৰ্ম্ম
#Anusruti_part_1
#অনুশ্রুতি_প্রথম_খণ্ড
#অনুশ্রুতি_১ম
#ষষ্ঠ_সংস্করণ
#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ
🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈
Telelegram https://t.me/amritokatha
https://www.facebook.com/Amritokatha.in1
10