[ P - 34 ] 📌 শ্রী শ্রী ঠাকুর এর প্রতিশােধ নেওয়ার কৌশল... 📌 স্বস্ত্যয়নীর লাভ...

  🔷 শ্রী শ্রী ঠাকুর এর প্রতিশােধ নেওয়ার কৌশল...
  🔷 স্বস্ত্যয়নীর লাভ...

       ১৯ শে চৈত্র , বুধবার , ১৩৪৭ ( ইং ২/৪/১৯৪১ )

       শ্রীশ্রীঠাকুর রাত্রে সুধাংশুদাকে ( মৈত্র ) বললেন- Physical chemistry- টা ভাল করে পড় , basic principle ( মূলনীতি ) -টা ঠিক - ঠিক বােঝা চাই । আর , শুধু বই পড়ে কেউ original research ( মৌলিক গবেষণা ) করতে পারেনা , inquisitive urge চাই to fulfil purpose to the principle ( আদর্শানুগ উদ্দেশ্য পূরণে সন্ধিৎসু সম্বেগ চাই ) , সেইটের উপর দাড়িয়ে পড়তে হয় , হাতে - কলমে করতে হয় , তার ভিতর - দিয়ে সূত্র হাতে এসে যায় । তারপর শ্রীশ্রীঠাকুর প্রফুল্লকে বললেন — শাস্ত্র , বিজ্ঞান , সাহিত্য , ইতিহাস , দর্শন , রাজনীতি , পূর্বতন মহাপুরুষদের গ্রন্থাদি যাবতীয় যা - কিছু ভাল করে পড়বি , আর সবটা থেকে নিজেদের ভাবধারার সমর্থনী যা - কিছু পাবি , সেগুলি সংগ্রহ করতে চেষ্টা করবি । নিজের একটা দাড়া ঠিক থাকলে , তখনই ঠিক - ঠিক পড়া ও বোঝাটা হয় , এবং সেই পড়টা কাজে লাগান যায় । নচেৎ লাখ পড়লেও হজম হয় না ।

      ২০ শে চৈত্র , বৃহস্পতিবার , ১৩৪৭ ( ইং ৩/৪/১৯৪১)

      সামনে ঋত্বিক - অধিবেশন আসছে । ছেলেমেদের আবৃত্তি - সঙ্গীতাদি হবে । বিকালে আশ্রমে তারই খুব জোর মহড়া চলেছে । শ্রীশ্রীঠাকুর মাতৃ - মন্দিরের পিছনে বকুলতলায় একখানি বেঞ্চে বসেছেন । আশ্রমের দাদা ও মায়ের বিনতি প্রার্থনার পর সেখানে এসে সমবেত হয়েছেন । শ্রীশ্রীঠাকুর প্রসন্ন বদনে ললিত মধুর ভঙ্গিতে সকলের খোঁজ - খবর নিচ্ছেন , যার যে প্রশ্ন তার জবাব দিচ্ছেন । কথায় - কথায় স্বস্ত্যয়নীর কথা উঠলো — মনুসংহিতায় ‘ ইদং স্বস্ত্যয়নং ’ বলে একটা কথা আছে ; শ্রীশ্রীঠাকুর সেইটে বের করতে বললেন । বের করে দেখাবার পর শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — সমস্ত মনুসংহিতার মধ্যে বারটি অধ্যায়ে যা আছে , স্বস্ত্য য়নীর পাঁচটা নীতির মধ্যে তা আছে । 

   তারপর নিবারণদা ( দত্ত ) আসলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর তাকে মনুসংহিতা ও James- এর Habit- এর chapter ( অধ্যায় ) থেকে স্বস্ত্যয়নীয় সংশ্লিষ্ট কথাগুলি পড়ে শোনাতে বললেন । পড়ে শোনান হলো । শুনে তিনি বললেন —এখন বুঝলাম , কেন নিত্য করা প্রয়ােজন । 

      শ্রীশ্রীঠাকুর তাকে বললেন — আপনি যত বছর চাকরী করছেন , এত বছর যদি ঠিক - ঠিক ভাবে স্বস্ত্যয়নী করতেন , তাহলে একটা জমিদারী করে ফেলতে পারতেন । স্বস্ত্যয়নী বলতে শুধু অর্ঘ্য নিবেদন করে রাখা নয় , স্বস্ত্যয়নীর যে পাচটা নীতির কথা বলেছি , ওর সবই নিষ্ঠা - সহকারে পালন করা লাগে । তাহলেই স্বস্ত্যয়নী পূর্ণাঙ্গ হয় । যে যেমনই হােক , এই স্বস্ত্যয়নীব্ৰত যদি কেউ ভালমতাে পালন করে , সে বড় হবেই । যত ব্যাপকভাবে , যত বেশী লোকের মধ্যে এটা চারিয়ে দিতে পারেন , ততই জাতির মঙ্গল । অর্থনৈতিক মুক্তি , জাতির উন্নতি , রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা যাই চান , আগে লক্ষ - লক্ষ ব্যষ্টিজীবনে এই স্বস্ত্যয়নী অভ্যাসগত ক'রে তুলুন । তখন তাদের ধ'রে সারা জাতটা খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারবে । আগে এখানকার প্রয়ােজনে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতে হতো , পরে ভাবলাম , কী করলে টাকা দেওয়াটাই তাদের বাড়ার পথ হয়ে ওঠে , তখন স্বস্ত্যয়নীব্রত যেন appear করলাে ( আবির্ভূত হ'লাে ) সবটা নিয়ে । এ যেন পরমপিতার পরম অবদান । এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর একটা ছড়া দিলেন ।

    ২১ শে চৈত্র , শুক্রবার , ১৩৪৭ ( ইং ৪/৪/১৯৪১ ) 

    শ্রীশ্রীঠাকুর প্রাতে নিভৃত - নিবাসে । হরিপদদা ( সাহা ) , প্রফুল্ল প্রভৃতি ছিলেন । 

    প্রফুল্ল — আমার মা বলেন , ইষ্টকাজ বড় সুখের কাজ , অবশ্য যদি নিজের টাকা থাকে , পেটের ভাবনা ভাবতে না হয় , কারও কাছে হাত পাততে না হয় , বরং নিজের থেকে ইষ্টকে ও অন্যকে দেওয়া যায় । শ্রীশ্রীঠাকুর — তা থাকলে যে ভাল হতাে তা মনে হয় না । এই যে daily effort ( নিত্য চেষ্টা) করতে হচ্ছে , এইই ভাল , এতে মানুষ তরতরে থাকে । অতন্দ্র প্রচেষ্টার উপর না থাকলে মানুষ মরচে ধ'রে যায় । এই যে যােগাড়যন্ত্র ক'রে চালিয়ে নিতে চেষ্টা করছ , এতে তােমার কর্মশক্তি অনেকখানি বেড়ে যাচ্ছে , মানুষের সঙ্গে অনেকখানি সক্ৰিয় প্রীতি ও সেবার সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হচ্ছে — এতে তােমারই কল্যাণ । 

    এরপর সত্যেনদা ( সাহিত্যশাস্ত্রী ) আসতে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — আমি ওকে বলেছি — তুই টাকা ছুবিও না , অফিস থেকে তাের বাড়ীতে যা পাঠাবার তা পাঠিয়ে দেবে , আর আমি একপয়সাও দেবো না । তা ’ বলা সত্ত্বেও পাঁচ টাকা সেদিন নিল । ওতে যে হাত তুলে বিষ খাওয়া হয় , সেইটেই বােঝে না । সত্যেনদা — বিভ্রাটে পড়ে গেলাম ।

     শ্রীশ্রীঠাকুর — দু’দিন না খেয়ে থাকা কিংবা ছেড়া কাপড় পরা , বা বিছানা কুটকুট করাটা এবং এই - জাতীয় অভাব - অভিযোেগ মােটেই বিভ্রাট নয় । বিভ্রাট হ'লো — আমি অমন করে বলা সত্ত্বেও এই নেওয়াটা ।

    ১৩ ই বৈশাখ , শনিবার , ১৩৪৮ ( ইং ২৬/৪/১৯৪১ )

     আজ বিকালে ঝড়ের পর শ্রীশ্রীঠাকুর বেড়াতে বেরিয়েছেন , সঙ্গে কেষ্টদা ( ভট্টাচাৰ্য ) , উমাদা ( বাগচী ) , সতীশদা ( দাস ) প্রভৃতি কয়েকজন আছেন । একটু অগ্রসর হয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর দেখতে পেলেন , বড়দার বাড়ীতে একটা বেলগাছ পড়ে গেছে । তা ’ দেখে ব্যথিত হয়ে বললেন — এই বেলগাছের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়ান আছে । আগে দুর্গাপূজা হতো , তার বােধন হতাে এর তলায় , আমার আজি-মা গাছটা পুতেছিলেন । 

   কেষ্টদার দিকে চেয়ে করুণ দৃষ্টিতে বললেন — আমার মমতার সঙ্গে আমি পেরে উঠি না । মনে হয় , আমি জড়িয়ে আছি সব - কিছুর সঙ্গে ।

     ব'লেই একটু ; থমকে দাড়ালেন । তার চোখে - মুখে একটা তীব্র আৰ্ত্তি ও ব্যাকুলতার ভাব ফুটে উঠলো । সে - দৃশ্য দেখে সবাই অভিভূত হয়ে পড়লেন ।

     ২১ শে জ্যৈষ্ঠ , বুধবার , ১৩৪৮ ( ইং ৪/৬/১৯৪১ )

     শ্রীশ্রীঠাকুর চুনীদা ( রায়চৌধুরী ) , বীরেনদা ( মিত্র ) প্রভৃতিকে বললেন এ্যানাটমি , ফিজিওলজি , ফিজিক্স , কেমিস্ট্রি , বাইওলজি , জিওলজি , ইকনমিক্স , হিষ্ট্ৰী , পলিটিক্স , ফিলসফি , শাস্ত্রগ্রন্থ — ইত্যাদি প'ড়ে ফেল । হাতেকলমেও নানা রকম কাজ করতে শেখ । কোন দিক দিয়ে যেন খাঁকতি না থাকে । তখন দেখবি , মানুষের কত উপকারে লাগতে পারবি । 

    ৬ ই আষাঢ় , শুক্রবার , ১৩৪৮ ( ইং ২০/৬/১৯৪১ )

    সন্ধায় শ্রীশ্রীঠাকুর বাঁধের ধারে চৌকীতে বসে আনন্দে গল্পগুজব করছেন । মায়েদের সঙ্গে রান্নাবাড়া , খাওয়াদাওয়া ও ছেলেপেলে মানুষ করা ইত্যাদি সম্বন্ধে গল্পচ্ছলে নানাকথা বললেন । তারপর রাজেনদা ( মজুমদার ) , কিরণদা ( মুখোপাধ্যায় ) , চুনীদা ( রায়চৌধুরী ) , বীরেনদা ( মিত্র ) প্রভৃতিকে কর্মীর লক্ষণ সম্বন্ধে বললেন — শুধু qualification ( গুণ ) থাকলে হবে না , adjusted ( নিয়ন্ত্রিত ) কিনা দেখতে হবে । সাশ্রয়ী , সুন্দর , অঞ্জনপটু ; যদি না হয় , তবে সে underman ( অপমানব ) । আর , দেখতে হবে , মানুষ principle ( আদর্শ ) -এর জন্য তার যে - কোন বৃত্তিকে sacrifice ( ত্যাগ ) করতে পারে কিনা , এবং পারলেও মানসিক কষ্ট হয় কিনা । কথা দেখলে চলবে না , দেখতে হবে চরিত্র — বিচরণ , activity ( কর্ম ) । রতনে রতন চেনে , গেঁজেলকে বলে দিতে হয় না কে গেঁজেল - গাঁজা খাওয়া যার habit ( অভ্যাস ) ও character- এ ( চরিত্রে ) set করে ( বসে ) -নি , সে কিন্তু পারে না । একটা লোকের তামাক সাজা দেখে ঠিক পাওয়া যায় সে কেমন লােক । অৰ্জনপটুত্ব একটা মস্ত test ( পরীক্ষা ) , গাঁটের থেকে যে - সে দিতে পারে , সংগ্রহ করে দিলে কিম্মত বােঝা যায় — কত সময়ের মধ্যে দিল , কেমনভাবে অনল , ধাপা দিল কিনা , যে দিল সে খুশি হ'য়ে দিল কিনা — এতে যােগ্যতা ধরা পড়ে । মানুষের কাছ থেকে এমনভাবে নিতে হবে , যাতে সে দিয়ে তৃপ্ত হয় — মনটা কিনে নিতে হবে । আমি যদি কারও উপর প্রতিশােধ নিতে চাই , তবে ভাবি , কেমন করে তাকে জয় করব । আমার একজন খেলার সাথী আমার প্রতি অযথা বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে উঠেছিল , সে সর্বত্রই আমার বিরুদ্ধে নিন্দা করতাে , কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও আমি সাক্ষাতে - অসাক্ষাতে তার প্রশংসা করতাম , তার সংগে দেখা হলে সশ্রদ্ধ প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার করতাম , সত্যিই তার প্রতি আমার কোন বিরূপভাব ছিল না , কিন্তু মনে মনে রােখ ছিল , যেমন ক'রে হােক তাকে আপন করে তুলবই । বারাে বছর ধরে তাকে এইভাবে pursue ( অনুসরণ ) করেছিলাম , পরে সে নিজেই অনুতপ্ত হ'য়ে একদিন আমার কাছে এসে কেঁদে পড়লাে , বললো- “ ভাই । তুমি যে কত মহৎ , আর আমি যে কত হীন তা এতদিনে বুঝতে পেরেছি । তুমি আমাকে ক্ষমা কর । আমি তখন আর ও - সব কথা পাড়তে দিই না ।

#Alochona_prosonge_part_1

#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড 

#ষষ্ঠ_সংস্করণ 

https://www.amritokatha.in/

Telegram https://t.me/amritokatha

https://www.facebook.com/Amritokatha.in1

             face book