🔷 ভারত আবার জগতের গুরু হবে..
🔷 India ( ভারতবর্ষ ) হলো key to the world...
১৩ ই অগ্রহায়ণ , শুক্রবার , ১৩৪৮ ( ইং ২৮/১১/১৯৪১ )
শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে ভােরে তাসুতে আনন্দের হাট বসেছে । রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা কেমন করে তাড়াতাড়ি আসবে , সেই সম্বন্ধেই কথা উঠলাে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — স্বাধীনতা আসে না , জাতি স্বাধীন হয় । আমাদের চরিত্রই আমাদের পরাধীন করে রেখেছে । এখনও আমরা এমন কোন platform ( মঞ্চ ) সৃষ্টি করতে পারিনি , যেখানে প্রত্যেকে তার বৈশিষ্ট্যের পােষণ পেয়ে ঐক্যবদ্ধ হ'য়ে দাঁড়াতে পারে । আজও আমরা হিংসা , দ্বেষ , দলাদলি নিয়ে মেতে আছি , কেউ কারও স্বার্থ নই , একটা পারস্পরিক প্রীতি ও দরদ এখনও ফুটে ওঠেনি ।
তারপর ধৰ্ম্মকে বাদ দিয়ে রাজনীতির কচকচি আমি বুঝি না । ধর্ম মানে বাচাবড়া । Politics ( রাজনীতি ) মানে তাই যা পূরণ করে , পোষণ করে । পূরণ ও পােষণ করবে কাকে ?
পুরণ ও পোষণ করবে প্রত্যেকের বাঁচা - বাড়াকে —ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগতভাবে , সবৈশিষ্ট্যে । এই ধর্মের দাড়া হলেন আবার বৈশিষ্ট্যপালী আপারয়মাণ আদর্শ — অর্থাৎ সেই মানুষটি যিনি প্রত্যেককে তার ব্যক্তিবৈশিষ্ট্য - অনুযায়ী পুরণ করতে পারেন । তার মধ্যে আছে সব ভাব , সব মত , সব পথ , সব বৈশিষ্ট্য , সব স্বার্থ , সব প্রয়ােজন , সব পরিপূরণের বৈধী সুসম্পূর্ণ সুসংহত সমাবেশ । পূর্বতন প্রত্যেকটি মহাপুরুষ জীবন্ত হয়ে থাকেন তা’তে । তাই জনসমষ্টি , এমন কি মানব - গােষ্ঠীর একায়নী কেন্দ্র হতে পারেন একমাত্র তিনি এবং তাকে কেন্দ্র করেই দেশের জনগণ তাদের যা - কিছু সব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হতে পারে , আর তাই - ই হয়ে দাড়ায় স্বাধীনতার ভিত্তিভূতি । আর , এই আদর্শপ্রাণতার উদ্বোধন হলে কর্ম তার সঙ্গে - সঙ্গে উদ্ভিন্ন হয়ে ওঠে । মানুষ তখন পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায় না , বরং নিজের অবদানে উচ্ছল করতে চায় , উপচয়ী করতে চায় প্রিয়পরমকে । এই করতে গিয়ে তার বৈশিষ্ট্য - অনুযায়ী পরিবেশের সেবা তাকে করতেই হয় । প্রত্যেকেই এমন করতে থাকে , এমনি করে তাদের প্রচেষ্টার ভিতর দিয়ে গজিয়ে ওঠে কৃষি , শিল্প , স্বাস্থ্য , শিক্ষা , বাণিজ্য , বিজ্ঞান , খাদ্য , অন্ন , বস্ত্র , বাসস্থান , নিরাপত্তা , যানবাহন , শাসন , সংযমন , অসৎ - নিরোধ , পারস্পরিক যােগাযোগরক্ষা ইত্যাদি সম্বন্ধে সুসম্পূর্ণ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থিতি । তখন রাষ্ট্র স্বতঃই তাদের হাতে এসে পড়ে । কারণ , T. B. ( যক্ষ্মা রোগীকে এমন nourishment ( পােষণ ) যদি দেওয়া যায় যাতে তার vital force ( জীবনী - শক্তি ) ও resistance power ( রােগ - প্রতিরোধ) ক্ষমতা বাড়ে , তখন যেমন তার parasite ( রােগবীজাণু ) -গুলি শরীর থেকে চলে যায় , তেমনি আমাদের সর্বতোভাবে সংহত , সমর্থ ও সত্তাপেষণক্ষম করে তুলতে পারলে , যদি আমাদের শােষক কেউ থাকে , তারা সরবেই , কিন্তু তখন তাদের অনুযোগ করার কিছু থাকবে না । তাই আমার মনে হয় , ইংরেজ তাড়াবার চেষ্টা না করে যদি ইংরেজকে আমাদের প্রতি interested ( অন্তরাসী ) করতে চেষ্টা করি তাদের সত্তায় interested ( অন্তরাসী ) হ'য়ে , তাহলে ইংরেজকে আমরা পেতে পারি আমাদের asset( সম্পদ ) হিসাবে । আর , আমরা নিজেরা যদি সে - চরিত্র ও প্রস্তুতি আয়ত্ত না করি , এবং ইংরেজ যদি এ অবস্থায় চলেও যায় , তাহলে এখন যে সমস্যা আছে , সে - সমস্যা তো থাকবেই , বরং সমস্যা তখন আরাে গহীন হয়ে উঠবে । ঈর্ষা , দ্বেষ , সাম্প্রদায়িকতা , অনৈক্য , অসংহতি , অসামর্থ্য , অসাধুতা ও স্বার্থান্ধতা পরপ্রদত্ত ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে দেশের বুকে প্রেতিনীর নৃত্য শুরু করে দেবে , আর ইংরেজ ও অন্যান্য জাতি আমাদের এ অন্তর্নিহিত দুর্বলতার সুযােগ গ্রহণ করতে কসুর করবে না — তা ইংরেজ যাবার আগেও , পরেও । কারণ , ভারতের প্রতি লুব্ধ দৃষ্টি সবারই আছে । ফলকথা , India ( ভারতবর্ষ ) হলো key to the world ( জগতের চাবিকাঠি ) । যেমন - যেমন বলেছি তেমনি করে যদি সবাইকে organise ও integrate (সংগঠিত ও সংহত . ) করতে পার ধর্ম ও কৃষ্টির ভিত্তিতে - পারস্পরিক সেবা - সহযোগিতা ও সর্বতােমুখী গঠনমূলক কর্শের সুপ্রসারণায় — তাহলে সারা ভারতের স্বরাজ আসতে আর বেশী দেরী লাগবে না । স্বাধীনতার সে - রূপ দুনিয়াকেও সত্যিকার স্বাধীনতার পথ দেখাবে । ভারত আবার জগতের গুরু হবে ।
10