🔷 শ্রীশ্রী ঠাকুর দুঃখ করে বলছেন জয়পুর State- এ কত পুরােনাে পুথি আছে , আয়ুর্বেদ - সম্বন্ধে এমন গ্রন্থ আছে যা এ পর্যন্ত published ( প্রকাশিত ) হয়নি..
🔷 কেষ্টদা — কারও family - tradition ( পারিবারিক ঐতিহ্য ) যদি খারাপ হয় ?
🔷 operation তাে ভালই , কিন্তু principle ( আদর্শ ) যদি বিসর্জন করতে হয় তার জন্য , তাতে কোন লাভ নেই..
🔷 একজন পণ্ডিত লোক তার পাণ্ডিত্য দিয়ে যদি কাউকে fulfil পরিপূরণ না করে তার পাণ্ডিত্য বিধবার বিলাসিতার মতাে অশােভন ও পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে..
🔷অতীতের ভাল - মন্দ কিছুই আমাদের ছাড়ে না...
৭ ই শ্রাবণ , মঙ্গলবার , ১৩৪৭ ( ইং ২৩/৭/১৯৪০ )👇
শ্রীশ্রীঠাকুর আজ সকালে বনবিহারীদাকে ( ঘােষ ) দুঃখ করে বলছেন জয়পুর State- এ কত পুরােনাে পুথি আছে , আয়ুর্বেদ - সম্বন্ধে এমন গ্রন্থ আছে যা এ পর্যন্ত published ( প্রকাশিত ) হয়নি । রাজ - রাজড়া মানুষ , ইচ্ছা করলেই ওরা এগুলি বের করতে পারে । তা’তে মানুষের কত উপকার দেশের কি অবস্থা যে হয়েছে , মানুষের কী যে বুদ্ধি !
বৈকালে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছিলেন — আমাদের দেশে যে population ( লোকসংখ্যা ) তা'তে ইণ্ডিয়া থেকে ৫৭ কোটি গণসেবক - বাহিনী সংগ্রহ করতে পারলে ভাল হয় । তারা দেশের স্বাস্থ্য , শিল্প , কৃষি ও নিরাপত্তার জন্য দায়ী থাকবে । তারা যদি সবদিক থেকে সুশিক্ষিত , সংহত ও সক্রিয় হয়ে ওঠে , তাহলে ভারতের তাে উন্নতি হবেই , সকলেই উপকৃত হবে ।
বনবিহারীদা কথাচ্ছলে প্রশ্ন করলেন — সুভাষ বােস কর্পোরেশনে মুসলমানদের সঙ্গে co - operation ( সহযােগিতা ) করবার যে policy ( কৌশল ) করেছেন , সেটা ভাল নাকি ?
শ্রীশ্রীঠাকুর— Co - operation তাে ভালই , কিন্তু principle ( আদর্শ ) যদি sacrifice ( বিসর্জন ) করতে হয় তার জন্য , তাতে কোন লাভ নেই । অবশ্য সুভাষবাবুর ক্ষেত্রে এ - কথা হয়তো প্রযোজ্য নয় । তবে তথাকথিত উদারনৈতিকতা দিয়ে কিছু হয় না , principle- এ ( উদ্দেশ্যে ) যারা fanatic ( অচ্যুত ) হয় , তারই কিছু করতে পারে । আমরা অনেক সময় personal gain- এর ( ব্যক্তিগত লাভের জন্য community ( সম্প্রদায় ) -কে sacrifice ( বিসর্জন ) করি , কিন্তু আদর্শে অনুরাগ থাকলে তা করা যায় না । মুসলমানদের মধ্যে প্রতিলোম ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও তাদের এক “ লায় লাহেল্লা ••••• . ” থাকার দরুন সমাজটা খানিকটা integrated ( সংহত ) হয়ে উঠেছে । কিন্তু পূরয়মাণ আদর্শে সংহত হওয়ার বাণী সৃষ্টির প্রথম উষয় ঋষিদের কণ্ঠে ধ্বনিত হওয়া সত্ত্বেও তাদেরই সন্তান আমরা তা জানি না , মানি না — তাই যা ’ হবার তাই হচ্ছে । প্রতিলোম যা ’ সমাজে চলছে , এতে আর সর্বনাশের দেরী নেই । জাতকে ধ্বংস করতে হলে শুধুমাত্র প্রতিলোম ঢুকিয়ে দিয়েই তা ’ হতে পারে । এখন তােমাদের যে principle ( আদর্শ ও নীতি ) আছে , সেইটে যদি জোরসে চালাতে পার , তাহ'লেই নিস্তার ।
বনবিহারীদা নিজে - নিজে বললেন — তাহলে আমাদের নিজেদের খুব fanatic ( অচ্যুত ) হ'তে হবে । হিন্দু ব'লেও কথা নয় , মুসলমান ব'লেও কথা নয় , সকলকেই সত্যিকার ধর্মপরায়ণ করে তুলতে হবে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর হেসে বললেন — ওই ঠিক বলেছিস্ । শ্রীশ্রীঠাকুর সতীশদাকে জিজ্ঞাসা করলেন — নুতন Register- এ ২৫,০০০ সৎসঙ্গী হয়নি ?
সতীশদা ( দাস ) —অনেক বেশী হয়েছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — তাহ'লে তাে এক লাখের উপর হয়েছে । এগুলি যদি organised ( সুব্যবস্থিত ) হতাে , তাহলে কী বিরাট হয়ে যেত । এদের চেষ্টায় অসৎ যা তা নিরুদ্ধ হ'তো , সৎ - এর উদ্বর্ধন হতো , সকলেরই বাঁচার পথ পরিষ্কার হতো ।
রাত্রে শ্রীশ্রীঠাকুর - ভােগের সময় হয়ে গেছে , কিন্তু তবু তিনি উঠছেন না । বার - বার উঠতে বলায় বললেন - ওরা টাকা নিয়ে আসুক ।
( শ্রীশ্রীঠাকুরকে ধরায় তিনি একজনকে ১৭৫ টাকা সাহায্য করবেন বলে মনস্থ করেছেন এবং ৭ জনকে ২৫ টাকা করে সংগ্রহ করতে বলেছেন ) ।
মায়া মাসীমা বলছেন — কতক্ষণে টাকা নিয়ে আসবে ঠিক কি ? তুমি বরং খেয়ে নাও । শ্রীশ্রীঠাকুর — মুখে কিছু না - বললেও আমি ভাবছি , খাবার আগে দেব । তাই না দিয়ে উঠি কী - ক'রে ?
২৮ শে শ্রাবণ , মঙ্গলবার , ১৩৪৭ ( ইং ১৩/৮/১৯৪০ )👇
আট - নয় দিন পূর্বে ট্রেন - দুর্ঘটনায় সৰ্বজনপ্রিয় গােপালদা (শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায় , সৎসঙ্গের সেক্রেটারী এবং ঋত্বিগাচাৰ্য্য - সচিব ) এবং দুর্গাদা ( দুর্গাচরণ সরকার , সৎসঙ্গের বিশিষ্ট কৰ্মী ) মৃত্যুমুখে পতিত হন । সেই সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর দুঃসহ শােকে ও দুঃখে অভিভূত হয়ে পড়েন । তার অবিশ্রান্ত আৰ্ত্ত ক্রন্দন , করুণ বিলাপ ও বুকফাটা আর্তনাদে অাশ্রমের আকাশ - বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে । শ্রাবণের দুর্যোগের সঙ্গে এক গভীর বিষাদের কালো ছায়া চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে ফেলে । দিনরাত কাদতে কাদতে শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখমুখ ফুলে ওঠে , গলা ভেঙ্গে যায় । তবু কান্নার বিরাম নাই । যিনি সবার সান্ত্বনা , তিনি আজ শোকে অধীর , তাকে সান্ত্বনা দেবে কে ? তার এই অবস্থা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে গােপালদার মা ও মাসীমারা এসে বললেন — গােপালী ! আমরা যে তোমার এ অবস্থা আর চোখে দেখতে পারি না । আমাদের মুখ চেয়ে তুমি শান্ত হও । কী আর করবে ? ভাগ্যে যা ছিল তা হয়েছে । এখন তুমি ভাল না থাকলে , কার মুখ চেয়ে আমরা দাড়াব ?
তাদের নিরন্তর প্রবোধনায় শ্রীশ্রীঠাকুর ধীরে - ধীরে শান্ত হলেন । আজ ২।৩ দিন হলো স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছেন । আজ সকালে তাসুতে বসে আছেন । সম্মুখের দিগন্তবিস্তৃত চরে জলের ঢল নেমেছে । মাঝে - মাঝে উদাস - দৃষ্টিতে সে - দিকে চেয়ে - চেয়ে দেখছেন । এমন সময় কেষ্টদা ( ভট্টাচাৰ্য) আসলেন । কেষ্টদা মনােবিজ্ঞান - সম্বন্ধে একখানা নতুন বই পড়ছেন । সেই সম্বন্ধে গল্প সুরু করলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রসঙ্গক্রমে বললেন — অতীতকে আমরা সবসময় বয়ে নিয়ে চলেছি । অতীতের ভাল - মন্দ কিছুই আমাদের ছাড়ে না । আপনার পিতৃপুরুষ বংশ পরম্পরায় যে - সব আচার - অনুষ্ঠান ও কর্ম করেছেন , তার ভিতর - দিয়ে আপনার বংশে বিশেষ কতকগুলি instinctive - trait ( সহজাত গুণ ) -এর সৃষ্টি হয়েছে । সেইগুলির উপর দাড়িয়ে আছেন আপনি । আপনার এই ভিতকে যদি আপনি ignore ( উপেক্ষা ) করেন , তাহলে nowhere ( স্থিতিহীন ) হয়ে যাবেন । তাই family - tradition ( পারিবারিক ঐতিহ্য ) থেকে deviated ( বিচ্যুত ) হওয়া ভাল না ।
কেষ্টদা — কারও family - tradition ( পারিবারিক ঐতিহ্য ) যদি খারাপ হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — বাস্তবকে তাে অস্বীকার করা বা মুছে ফেলা সম্ভব নয় । তাই ভাল - মন্দ যাই থাক , তাকেই mould ( নিয়ন্ত্রণ ) করতে হবে towards being and becoming ( জীবনবৃদ্ধির দিকে ) । এই জন্যই দরকার Ideal ( আদর্শ ) । আদর্শের সেবায় যা ’ লাগান যায় , তা খারাপ হয়েও মহা ভাল হয়ে ওঠে ; অবার , আদর্শের সেবায় যা লাগে না , যা ’ নিজ খেয়ালের খোরাক জুগিয়ে চলে , তা ভাল হ'য়েও অনর্থের সৃষ্টি করতে পারে । Surrender ( আত্মসমর্পণ ) -এর ভিতর - দিয়ে কদৰ্য্য যা ’ , তা’ও সুন্দর হয়ে ওঠে , আর তার অভাবে সুন্দর যা তা'ও কুৎসিত হয়ে পড়ে । একজন পণ্ডিত লোক তার পাণ্ডিত্য দিয়ে যদি কাউকে fulfil পরিপূরণ না করে তার পাণ্ডিত্য বিধবার বিলাসিতার মতাে অশােভন ও পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে । আবার একজন মহামুখ্যুও যদি মাতৃভক্ত , পিতৃভক্ত ও গুরুভক্ত হয় , তাকে দেখে মানুষের প্রাণ জুড়ােয়ে যায় । তাকে দেখে মনে হয় , সে যেন সমাজ - সংসারের একটা শােভা । এই প্রফুল্ল যদি আমার জন্য বিয়ে করে , আমার জন্য সংসার করে , আমি যেমনটি চাই ঠিক তেমনি করে , তাহলে সেইটেই হবে ওর পক্ষে প্রকৃত সন্ন্যাস , আর তা না করে যদি নিজের খুশিমতো অবিবাহিত জীবন যাপন করে , তাতে ওর knot ( গেরো ) ভাঙ্গবে না । যতই ধৰ্ম্ম করছি বলে মনে করুক না কেন , আদতে ফয়দা কিছু হবে না । •••••• গোপালের তো কথাই নেই । আমার হাতের লাঠির মতো ছিল , আমার ইঙ্গিত বুঝে চলতে চেষ্টা করত । যেমন ছিল বিদ্যে , তেমনি ছিল বুদ্ধি । তক্ষকের মতো তুখোড় ছিল। অামার চোখের একটা ঈশারা দেখেই বুঝত , কী আমি বলতে চাই । আর , দুর্গাচরণের কথা ভেবে দেখেন । আগে যতই অকাম ক'রে থাক , পরে খুব বদলে গিয়েছিল । বি . সি . চ্যাটার্জী , এস , এন . মােদক — এই সব দরের লোক কত খাতির করতো ওকে । ও কিন্তু তুড়ে যাজন করতো । ঢাক - ঢাক গুডু় গুড়ু ছিল না ! নাটুকে ভঙ্গীও জানতো খুব । এই হাসতিছে তাে এই ঝর - ঝর করে কাঁদে ফেলতিছে । মানুষকে খুব মজায়ে নিতে পারতাে । হরেন বোসেরও ঐ ধরণ আছে ।
এই সব কথাবার্তার পর শ্রীশ্রীঠাকুরকে খবরের কাগজ পড়ে শোনান হলো । এরপর শ্রীশ্রীঠাকুর কেষ্টদাকে বললেন — আপনি কিন্তু মাসীমাদের উপর সব সময় লক্ষ্য রাখবেন । সুধা যেন ফুলের ( দুর্গাদার স্ত্রী ) খোঁজ - খবর রাখে ! রেণু ( গোপালদার স্ত্রী ) ও ফুলের দিকে আমি চাইতে পারি না । বুকখানার ভিতর কেমন যেন ক'রে ওঠে । এখন পরমপিতার দয়ায় কাচ্চাবাচ্চাগুলি ওদের বুক জুড়ে থাকে ও মানুষ হয় , তাহ'লেই হয় ।
এই ব'লে দীঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে কাতরস্বরে বললেন , ‘ দয়াল ’ ! কিছুক্ষণ পরে স্নান করতে উঠলেন ।
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
#ষষ্ঠ_সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10