🔷 ঠাকুরের পুনর্জন্ম - সম্বন্ধে কথা .... *
🔷 জয়পুর , কাশ্মীর ইত্যাদি রাজ্যে বহু সুন্দর - সুন্দর প্রাচীন গ্রন্থাদি আছে...*
🔷 দারিদ্রব্যাধির লক্ষণ...কী..?
🔷 ভূতবলি ..*
৭ ই ভাদ্র , শুক্রবার , ১৩৪৭ ( ইং ২৩/৮/১৯৪০ )
অনেকদিন পরে সুশীলদা ( বসু ) আশ্রমে বাংলা মায়ের কোলে ফিরে এলেন । ভাদ্রের ভরা নদী তখন কুলপ্লাবনী হ'য়ে আশ্রমের পাশ দিয়ে উচ্ছল আবেগে ছুটে চলেছে , আশ্রমের সামনের দিকে তখন এক অপূৰ্ব্ব শোভা । শ্রীশ্রীঠাকুর সকালে বাঁধের ধারে খড়ের চালাঘরখানিতে বসে আছেন । সুশীলদা সেখানে এসে হাজির হলেন । তিনি ইদানীং ভৃগুর কোষ্ঠী সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন । সেই সব বিষয়ে নানা গল্প করছেন ।
সুশীলদা — জয়পুর , কাশ্মীর ইত্যাদি রাজ্যে বহু সুন্দর - সুন্দর প্রাচীন গ্রন্থাদি আছে , সেগুলি এখনও ছাপা হয়নি । জার্মানী ও আমেরিকা থেকে কত পণ্ডিত লােক ওখানে গিয়ে সেগুলি দেখে নেবার চেষ্টা করেছেন , কিন্তু রাজ্য - সরকার অনুমতি দেননি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমরা যে কতখানি উন্নত ছিলাম , তা ভৃগুর এই একটা ব্যাপার থেকেই বােঝা যায় । অমিরা যতখানি উঠেছিলাম ওরা এখনও সে - স্তরে পেছায়নি ।
ধাতুর রূপান্তর - সম্বন্ধে সুশীলদা আলোচনা করছিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর- Principle ( নিয়ম ) -টা ভালভাবে না GIACO tackle পরিচালনা করা মুশকিল।
পুনর্জন্ম - সম্বন্ধে কথা উঠল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমার মনে হয় , মানুষ যে দশায় মারা যায় , সেই দশাতেই অর্থাৎ সেই গোচর ফলে জন্মে । একজনের জন্মলগ্ন থেকে সেইটে revert করে ( উল্টিয়ে ) তার পূর্বজন্ম জানা যেতে পারে । কোন্ point ( জায়গা ) থেকে revert করতে ( ওল্টাতে) হবে , সেটা ঠিকভাবে বুঝতে হবে । গােপাল একবার আমাকে বলছিল— “ আপনারটা উল্টিয়ে রামকৃষ্ণদেবের জীবন হয় ; সেটার পিছনে বুদ্ধদেবকে পাওয়া যায় ” , ইত্যাদি । আমি তখনই ওকে বারণ করলাম , বললাম — এমনতর কথা বলতে নেই । ফলকথা , লগ্নটা যেন সূর্যের মতাে ওঠে । একই স্থানে অবিকল একই লগ্নে দুই ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করতে পারে না ।
সুশীলদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে জানালেন যে , এক ভদ্রলােক মারা যাওয়ার পর তার বন্ধু ও বন্ধুপত্নী তার বিষয় আলোচনা ও চিন্তা করতে - করতে পরস্পর মিলিত হন এবং সেই রাত্রেই উক্ত বন্ধুপত্নীর গর্ভে তিনি স্থান লাভ করেন । পরজন্মে তিনি জাতিস্মর হওয়ার দরুন এটা পরীক্ষিত হয় । শ্রীশ্রীঠাকুর — এটা হওয়াই সম্ভব । এইজনাই শাস্ত্রে আছে , স্বামী - স্ত্রী যেখানে নির্জনে থাকে , সেখানে যেন অন্য রকমের impulse ( সাড়া ) না থাকে , তা'তে একটা soul in হওয়ার ( আত্মা গর্ভে স্থান লাভ করার) পক্ষে ব্যাঘাত হতে পারে । অর , স্বামী - স্ত্রী যেখানে নিভৃতে একত্রে শুয়ে থাকে , সেখানে অন্য কারাে যাওয়া নাকি পাপ ।
এই সব কথার পর কথায় - কথায় শ্রীশ্রীঠাকুর বিরুদ্ধ পারিপার্শ্বিকের অত্যাচার - সম্বন্ধে নানা কথা বললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমি আমায় উজাড় করে মানুষের জন্য করেছি , আর মানুষও উজাড় করে আমাকে অত্যাচার করেছে । আমি তখন মাসে ৩০০০ টাকা বাইরে দিই , অথচ মা মাসে ৩০০ টাকা করে আমার কাছে চেয়েছিলেন , আমি তা ’ মাকে দিতে পারিনি । এ আমার কম দুঃখ নয় । অভাবের তাড়নায় মা শেষটা আপনাদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হতেন । আর , আমি যাদের দিয়েছি , তারা সেটা দান ব'লে ভাবেনি । দাবী বলে ধরে নিয়েছে । লিখে দেওয়ার কথায় সবাই চটে যেত , রাগ করত । আমি কিছু বলতাম না , আমার কাজ আমি করে যেতাম । আমার ওতে কিছু স্বার্থও ছিল না , কিন্তু লিখে না দেওয়ায় আজ এই অবস্থা দাড়িয়েছে । আমার কাছ থেকে নিয়ে - থয়ে আজ আমার উপর যারা এমন অকথ্য অত্যাচার করছে তাতে যদি তাদের খানিকটা ভাল হতো , তা'ও খানিকটা সান্ত্বনা ছিল , কিন্তু এতে করে তারা নিজের ক্ষতি করছে যে সব চাইতে বেশী , সেই আমার মস্ত আপসােস । •••••• শেষটা আমার কথা শুনতাে না , আমি কিছু বলতেও পারতাম না । সেবার উৎসবে দুই ধামা সোনা জোগাড় করেছিল , আমি বললাম , মোটরের দামের জন্য ৪০০ টাকা দিতে , তাও দিল না ।
কেষ্ট দাস একজনের কাছ থেকে অপমানিত হয়ে আমার কাছে এসে যখন পড়ল , আমি বললাম — তুই এইভাবে - এইভাবে চল , দেখবি , ব্রাহ্মণরাও তােকে ভক্তি করবে । আমার কথামতো চ'লে সত্যি - সত্যি তাই হলো । •••••• দা একদিন ওকে প্রণাম করতে গেলে ও ছুটে পালাল , আরো কত কী হ'লাে । শেষটা সহ্য করতে পারল না , মাথা বিগড়ে গেল , আরো কয়েকজনও ঐ সঙ্গে গিয়ে জুটলাে ।
প্রফুল্ল - ঠাকুরের টাকা public - money ( সাধারণের টাকা ) —এই ধরণের একটা ধু়য়ো উঠেছে । তাতে আমি সেদিন একজনকে ধমক দিয়ে বললাম , আমার ঠাকুরের টাকা যদি public - money ( সাধারণের টাকা ) হয় , তবে উকিল , মোক্তার , ডাক্তার , প্রফেসর — কার টাকা public - money ( সাধারণের এরা প্রত্যেকে সেবা বিক্রি করে টাকা নেন , আর আমার ঠাকুর ভালবাসার টানে প্রত্যাশারহিত হ'য়ে প্রাণপণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন । সর্বতােভাবে , তার সে - ভালবাসাময় নিরন্ধ্র সেবার মূল্য দেওয়া যায় না । মানুষ তাকে ভালবেসে , প্রাণের টানে যৎকিঞ্চিৎ অর্ঘ্য দিয়ে ধন্য হ'তে চায় , আত্মপ্রসাদ লাভ করতে চায় । তাই - ই তার অর্ঘ্য , তাই - ই তার প্রাপ্তি । নিজের চরিত্র ও যোগ্যতা - বলে এই যে সাত্ত্বিক অর্জন — তা হলো কিনা public- money ( সাধারণের টাকা ) , অার দুনিয়ার প্রত্যেকের উপার্জন হলাে কিনা নিজস্ব । এই কথা শুনে সে একেবারে চুপ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমি বুঝি , আমি আমার যা - কিছু নিয়ে পরমপিতার property ( সম্পদ ) এবং প্রত্যেকেই তাই ।
পূর্বকথার সূত্র ধরে শ্রীশ্রীঠাকুর হাসতে - হাসতে বললেন — এমন লােকের কথাও আমি জানি যে আমাকে বিষ খাওয়াতে পারলে খুশি হয় । আমি ভাবি , কী আর করব ? গোপাল ( মুখােপাধ্যায় ) , দুর্গাচরণ ( সরকার ) গেছে , না হয় আমিও যাব । কিন্তু পরমপিতার দয়ায় তার কাজ চলতেই থাকবে ।
এই সব বলছেন , এরই মাঝে গ্রামের এক মুসলমান - ভাই খুবই সুন্দর একটি প্রজাপতি ধ'রে এনে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখিয়ে বলল — এটা আমার গায় পড়েছে । শ্রীশ্রীঠাকুর - বাঃ ! বেশ চমৎকার তো ! খুব ভাল । গায় পড়া সৌভাগ্যের লক্ষণ — তোর ভাল হবে , নিয়ে যা ’ , রেখে দে গে , মারিস্ না কিন্তু ।
সে প্রজাপতিটা নিয়ে খুশি মনে চলে গেল ।
তখন - তখনই গান করতে - করতে এক ফকির এলো । শ্রীশ্রীঠাকুর তাকে দেখেই তার ভাষায় বলে উঠলেনকাল কনে গেছিলু রে , সময়মতাে আসতি হয় । তুমি সুবিধেমতো অসতি ভুলে যাও ।
সে ওতেই মহাখুশি , পরে আসবে বলে তখনকারমতাে বিদায় নিল ।
বিকালে শ্রীশ্রীঠাকুর মাতৃমন্দিরের পিছনে বাবলাতলায় বেঞ্চে বসে আছেন— সুতৃপ্ত ভঙ্গীতে । অনেকেই উপস্থিত আছেন । যতীশদা ( কর ) আর - একটি দাদার সুবিধাবাদী স্বভাবের কথা বলছিলেন , শ্রীশ্রীঠাকুর তাতে বললেন — যাঁর কাছ থেকে সেবা নিয়ে বেঁচে আছি , তার সুবিধার চাইতে নিজের সুবিধাকে বড় করে দেখাই pauperism- এর ( দারিদ্রব্যাধির ) লক্ষণ । যে এরকম করে , তার conception ( ধারণা ) যতই big ( বড় ) হোক না কেন , সে pauper ( দারিদ্রব্যাধিগ্রস্ত ) নিশ্চয়ই ।
বীরেনদা ( মুহুরী ) —আমি দিন - পনর আগে চিঠি লিখেছিলাম — ইদানীং বড় অশান্তিতে আছি । আজ এসেছি , কাল সকালেই আবার যেতে হবে । শ্রীশ্রীঠাকুর — অশান্তিতে মনটাকে বেশী উতলা হতে দিতে নেই । মনকে একটু অলগা রেখে সাক্ষীস্বরূপ দেখে যেতে হয় ।
বেঞ্চের পেছন দিকে যে কাঠটাতে হেলান দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বসেছিলেন , সেটাকে দেখিয়ে বললেন — এটাকে যদি টেনে তুলতে চাই , এটার উপর ভর দিয়ে থেকে তা ’ পারা যাবে না , উঠে দাড়িয়ে করতে হবে । তাই , কিছুকে control- এ ( বশে) আনতে গেলে তার above- এ (উর্ধ্বে ) থাকতে হয় ।
তারপর কাজল - ভাই সম্বন্ধে কথা উঠলো । কাজল পট করে হেসে ফেলে মানুষকে সহজেই আপনার - ক'রে নিতে পারে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — এই আপনার - ক'রে নেবার ক্ষমতা বামনাই ক্ষমতা ।
রাত্রে শ্রীশ্রীঠাকুর বাইরে চৌকিতে শুয়ে আছেন । কতিপয় দাদা ও মায়েরা উপস্থিত । দূরে আলাের কাছে একটা কুকুর ফড়িং ধরছিল । আবার ফড়িংগুলি যখন তার গায়ে এসে লাগছিল , সে চমকে লাফিয়ে উঠছিল । কেউই তা লক্ষ্য করেননি । কিন্তু তা ’ শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখ এড়ায়নি । তিনি দুর থেকে দেখছেন আর একটু - একটু হাসছেন । হঠাৎ বললেন — দ্যাখ , ব্যাপার ! কুকুরটা পােকা ধরতে যাচ্ছে , অথচ পোকা গায় পড়লে কেমন করছে !
তারপর শ্রীশ্রীঠাকুর রহস্যচ্ছলে সহাস্যবদনে গল্প করতে লাগলেন — একবার একদল বিড়াল প্যারীর বিরুদ্ধে conspiracy ( ষড়যন্ত্রক) করেছিল । সেগুলি রোজ ওর বিছানায় মুতে রেখে যেত । প্যারী কশান যা ’ দিত , ওরা আবার তখন দলভারী করে আসতাে । ওর life ( জীবন ) একেবারে miserable ( দুঃখময় ) ক'রে দিয়েছিল ।
প্রফুল্লওরাও তাে পারিপার্শ্বিক , এই পারিপার্শ্বিককে পরিপােষণী ক'রে তােলার জন্য বুঝি ভূতবলি ইত্যাদির ব্যবস্থা ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - হ্যা ।
প্রফুল্ল — আচ্ছা , ওরা কি আমাদের ভাষা বুঝতে পারে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর— তা বোধ হয় পারে না । তবে ওদের ভাষা মানুষ বুঝতে পারে । তক্ষশীলায় এটা নাকি একটা subject ( শিক্ষণীয় বিষয় ) ছিল ।
এরপর শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে কাগজ পড়া হ’ল এবং যুদ্ধ - সম্পর্কে আলোচনাদি চলতে লাগলো !
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
#ষষ্ঠ_সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10