খাদ্যবিচার :-
শক্তি না পেলে মানুষ চলবে কী করে? হাত-পা নাড়া, ওঠা-বসা, দৌড়োনো, কথা-বলা— সবের পেছনেই শক্তি। খাবার হল সেই শক্তির জোগানদার। জন্মানোর সময় শিশুর ওজন থাকে গড়ে প্রায় তিন থেকে চার কেজি। পরিণত বয়সে তা দাঁড়ায় সত্তর কেজিতে। এই বাড়ন্ত-বৃদ্ধির পেছনেও খাবার।
যা খাই সেভাবে তা কিন্তু দেহের অঙ্গীভূত হয় না। মুখ দিয়ে খেলাম। খাদ্য এলো পৌষ্টিক নালীতে। পৌষ্টিক নালীর গাত্র-কোষ আর আশেপাশের নানান গ্রন্থি থেকে ‘হজম-রস’ এসে মিলল খাদ্যে। বিরাট বিরাট খাদ্য অণুগুলো ছোট ছোট অণুতে ভেঙে গেল। এবার তারা সহজেই পৌষ্টিক নালীর নীচের দিকে গিয়ে রক্তনালীর সাহায্যে (যা রয়েছে নালী গাত্রে) শোষিত হয়ে রক্তে পৌঁছোল। সেখান থেকে বিভিন্ন কোষে।
মোটামুটিভাবে খাবার ছ’রকম :-
চাল, চিঁড়ে, মুড়ি, আটা, চিনি আর অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাদ্যে এর উপস্থিতি বেশি। পৌষ্টিক নালীতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের হজমে (বড় থেকে ছোট অণুতে পরিণত হওয়া) গ্লুকোজ (সাধারণতঃ ) তৈরি হয়। তা রক্তে শোষিত হয়ে কোষে গিয়ে অক্সিজেনের (যা প্রশ্বাসের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে) সাহায্যে বিক্রিয়া ক’রে শক্তি উৎপন্ন করে। এই শক্তিই আমাদের চলা-বলা-ওঠা-বসার ভরসা। অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে(Liver) গিয়ে গ্লাইকোজেনে পরিণত হয়ে ভবিষ্যতের জন্যে ‘স্টোর’ (Store) হয়ে থাকে।
* ফ্যাট—
ঘি, মাখন, তেল জাতীয় খাদ্যে এদের পরিমাণ প্রায় শতকরা একশো ভাগই। পৌষ্টিক নালীতে হজমের পর এরা পরিণত হয় ফ্যাটি অ্যাসিড আর গ্লিসারলে (সাধারণতঃ) এই ছোট-অণুগুলিরও কাজ শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করা।
* প্রোটিন—
মাছ, মাংস, ডাল, সোয়াবীন, ছোলায় এর আধিক্য। প্রোটিন পৌষ্টিক নালীতে ভেঙে গিয়ে ছোট ছোট অজস্র অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি করে। বিভিন্ন প্রোটিনের একটি অণুর বিশ্লেষণে পঞ্চাশ থেকে কয়েক হাজার অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যেতে পারে। আবার, এইসব অ্যামাইনো অ্যাসিড কুড়ি রকমের। একটি প্রোটিনে কুড়ি রকমই অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকবে তার কোন মানে নেই। কোন প্রোটিনে পাঁচ রকম, কোন প্রোটিনে পনের, কোন প্রোটিনে আবার কুড়ি রকমও থাকতে পারে। প্রোটিন এত প্রয়োজনীয় কেন? প্রথমতঃ আমাদের দেহ কোটি কোটি কোষের সমবায়। বাড়ি তৈরিতে যেমন ইট-সীমেন্ট-বালি প্রধান উপকরণ, তেমনি কোষ তৈরির মূল উপকরণগুলির অন্যতম হল প্রোটিন। দ্বিতীয়তঃ হজমের সময় জটিল বড় অণু ভেঙে গিয়ে ছোট ছোট খাদ্য-অণু তৈরি হয়। এমনি এমনি হয়ে যায় নাকি? ‘এনজাইম’ বা উৎসেচক’ হজম-রসের মধ্যে থেকে এই বড় অণুকে ছোট ছোট অজস্র অণুতে কেটে দেয়। নিজেরা অপরিবর্তিত থেকেই। কোষের মধ্যে প্রতিনিয়ত এরকম হাজার হাজার ‘ভেঙে যাওয়া’ আর ‘জুড়ে যাওয়া’ (অনেক ছোট ছোট গ্লুকোজ মিলে বড় গ্লাইকোজেন অণুর সৃষ্টি) রাসায়নিক বিক্রিয়া চলতে থাকে। ‘এনজাইম’ কখনও বা কাঁচি, কখনও সূচ-সূতো হয়ে এই কাটা আর জোড়ার কাজ করে চলেছে। এই “এনজাইম” বিশেষ প্রোটিন ছাড়া আর কিছুই নয়। খাদ্যে গৃহীত হজম হওয়া প্রোটিন থেকে উৎপন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকেই “নির্দিষ্ট এনজাইম” (উপযুক্ত সংখ্যা ও রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিডের সাহায্যে) জীবদেহ তৈরি করে নেয়। শরীরের নানান হরমোনের গঠনেও অ্যামাইনো অ্যাসিড চাই।
* জল —
জল ছোট অণু হওয়ায় পৌষ্টিকনালীতে ওর আর ছোট হওয়ার দরকার নেই। সরাসরি রক্তনালীর পর্দা ভেদ করে রক্তে চলে যেতে পারে। কোষের একটি অন্যমত উপাদান যেমন প্রোটিন, আরেকটি হল জল। রক্তরসের নব্বই শতাংশ জল। জীবদেহের যাবতীয় ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে জল-মাধ্যমেই।
* ভিটামিন-
কাঁচামাল পেলে মাত্র দুটি ভিটামিনই (ভিটামিন A এবং ভিটামিন D) মানুষ তৈরি করতে পারে। বাকি আরও পনের-ষোলটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের জন্য আমাদের সাধারণতঃ রকমারি খাদ্যের (শাক, ফল, দুধ ইত্যাদি) ওপর নির্ভর করতে হয়। এরাও ছোট ছোট অণু। হজমের দরকার নেই। লাগেও খুব কম। একেকটি ভিটামিন রোজ আমাদের কয়েক মাইক্রোগ্রাম করে দরকার। এক মাইক্রোগ্রাম হল এক মিলিগ্রামের হাজার ভাগের এক ভাগ। দেহবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় বিক্রিয়ায় এর ভূমিকা অপরিসীম। নির্দিষ্ট পরিমাণে এদের না পেলেই দেহে দেখা দেবে নানান রকম রোগ (রাতকানা, স্কার্ভি, রক্তাল্পতা ইত্যাদি)
* খনিজ লবন—
অনেকে বলেন মিনারেল। উদাহরণ — লোহা, ক্যালসিয়াম, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়োডিন, ফ্লোরিন। দেহে এদের নানান কাজ। লোহা ছাড়া রক্ত হবে না। ক্যালসিয়াম হাড়ের উপাদান। উৎসেচকের বন্ধু ম্যাঙ্গানিজ। দাঁত শক্ত করে ফুরিন। দেহজ জলে সোডিয়াম— পটাসিয়ামকে দ্রবীভূত থাকতেই হবে। এদেরও রক্তে শোষণের আগে হজমের দরকার নেই। গৃহীত নানান খাদ্যের মধ্যে এদের পাওয়া যায়। যেমন লোহা আপেলে, ‘আয়োডাইজড্ নুনে’ সোডিয়াম পটাসিয়াম — ক্লোরিণ আয়োডিন, কাঁচকলার ক্যালসিয়াম.......... ইত্যাদি।
শরীর ভালো রাখার অর্থ – উপরোক্ত এই ছ’টি খাবারকেই খেতে হবে যেমন দরকার সেই বুঝে। এই ‘বুঝ’-টাই আসল।
তার জন্যেই খাদ্যবিচার। কার্বোহাইড্রেট কম খেলে শক্তি পাব না। বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়বে নয়ত দেহে মেদ। সমতাবিধান একান্ত জরুরি।
আমিষ-নিরামিষের দ্বন্দ্ব বহুদিন। তবে, ইদানিং নিরামিষের পক্ষে জোরদার সওয়াল চলছে। নিরামিষভোজীরা নিরামিষভোজী মনীষিদের (প্লেটো, সক্রেটিস কিংবা নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর) উদাহরণ দিয়ে আশ্বস্ত হচ্ছেন। প্রয়োজনে ‘হাতি’ তাদের বিরাট সম্বল। ‘হাতি’ নিরামিষভোজী হয়েও প্রচণ্ড বলশালী। উদাহরণ নিদর্শন হতে পারে। উদাহরণ টিকবে না, যদি না নিদর্শনের পেছনে বিজ্ঞান না থাকে। খাদ্যে নিরামিষ— আমিষের সংজ্ঞাটাও তেমন পরিষ্কার নয়। মোটামুটিভাবে অত্যধিক (কত?) প্রোটিন সমন্বিত খাদ্যকেই আমরা আমিষ হিসেবে ধরে নিই। অনেকে মসুর ডালকেও আমিষ বলেন। প্রাণীজ প্রোটিনকেও (যেমন, দুধ) আমিষের পর্যায়ে ফেলেন অনেকেই। প্রোটিন বলতে উদ্ভিজ্জ (উদ্ভিদ্ থেকে পাই। যেমন ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি) এবং প্রাণীজ (মাছ, মাংস, দুধ)। দয়াল ঠাকুর আমাদের আমিষ খেতে বারণ করেছেন। তার চেয়েও বলা ভাল তিনি দুধ ছাড়া প্রাণীজ প্রোটিন (মাছ, মাংস) খাওয়ার বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, দুধ এবং উদ্ভিজ্জাত প্রোটিন আমাদের দেহবিধানের (Body system) সাথে সমাঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা সহজেই এদের হজম করতে পারি। যে সমস্ত কোষ থেকে পাক-রস নির্গত হয়ে উদ্ভিজ প্রোটিনের হজম হয়, সেই সমস্ত কোষগুলির ওপর বাড়তি
প্রোটিনের পরিমাণ
ডাল২২%
আলু ১২%
মাংস ১৪.৫%
দুধ ৪%
সয়াবিন ৪০%
চাপ পড়ে না। কিন্তু, প্রাণীজ কোষকে (মাছ, মাংস) হজম করা প্রাণীদের পক্ষে মুশকিল। ঠাকুরের মতে, এ যেন সমানে সমানে টক্কর। দু’টি কোষেরই (দেহকোষ এবং গৃহীত প্রাণীজ কোষ) প্রকৃতি একইরকম হওয়ায় উভয়েই একে অন্যকে হজম করতে চায়। এতে হজমে সাহায্যকারী কোষের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। দেহজ কোষ থেকে ক্ষরিত তীব্র পাক্রসের সাহায্যে খাদ্য হিসেবে গৃহীত প্রাণীকোষের পচন কালে অনেক সময় দেহকোষে উৎপন্ন হয় ‘টক্সিন’ জাতীয় বিষ। এই বিষের প্রভাবে বহু কোষের (হজমকারী প্রাণীর) মৃত্যু ঘটে। সেই স্থান পূরণের জন্যে তাড়াতাড়ি নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। অন্যভাবে ঐ টক্সিন দেহকোষকে উত্তেজিত করেও কোষ বিভাজনের দ্রুততা আনে। যে কোষটা হয়ত শরীরবিধানের প্রাকৃতিক নিয়মে কিছুদিন পর সৃষ্টি হত তা আগেই সৃষ্টি হয়ে গেল। সামগ্রিকভাবে কোষকলার আয়ু গেল কমে। এতে অনতিবিলম্বে বার্ধক্য আসে। আর, কোষগুলির ঐ ছটফটানি আর টক্সিনজাতীয় পদার্থের প্রাবল্যের জন্যে আমরা সাময়িক উত্তেজনা অনুভব করি। পরক্ষণেই চাবকানি থেমে গেলে (হজমকাজ শেষ হলে) অবসাদও আসে । তখন আবার যেন ঐরকম খেতে ইচ্ছে হয়। প্রোটিনের ভাঙনজাত বস্তু অ্যামাইনো অ্যাসিড পৌষ্টিকনালী থেকে রক্ত শোষিত হয়ে কোষে পৌঁছায়। বাড়তি অ্যামাইনো অ্যাসিড ইউরিয়া এবং ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়ে যায়। এই দু’টিই অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। কোষ থেকে রক্ত এসে মূত্রের মাধ্যমে এরা বেরিয়ে যায় বলে বাঁচোয়া। অনেকের মত, প্রাণীজ প্রোটিন থেকে এই ইউরিক অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চেয়ে অনেক বেশি। ফলতঃ রক্তে এবং কোষে, - ইউরিক অ্যাসিড এবং অ্যামোনিয়াজাত রাসায়নিকের বিষক্রিয়া অনেকক্ষণ চলতে পারে। তাদের দেহের বাহির করার জন্য মূত্রপ্রস্তুতকারী অঙ্গ কিডনীর ওপর বিরাট চাপ পড়ে। সামগ্রিকভাবে কিডনীও দিনেকালে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। বিষজাতীয় (ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড) রাসায়নিকের আধিক্যের দরুন দৈহিক উত্তেজনাও বৃদ্ধি পায়, যা মনোসংযোগে বাধা দেয়। রজঃগুণেরও প্রাবল্য ঘটায়। ঠাকুর বললেন,
“আমিষে বিধান উত্তেজিত
অযথা হয় জর্জরিত।”
উদ্ভিজ প্রোটিন খেলে যে তুলনামূলক কম পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড, ইউরিয়া উৎপাদন হবে তাও তাড়াতাড়ি দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তাই, ঠাকুর রোজ সকালে থানকুনী পাতা খাওয়ার কথা বলেছেন। থানকুনী রক্তশোধক ।
উত্তেজনা বৃদ্ধি ও রোগবৃদ্ধির সহায়ক সব জিনিসই ঠাকুরের বর্জনের তালিকায়। মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, মাদকদ্রব্য খেতে তাই তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন। আবার, গোঁড়ামিরও প্রশ্রয় দেননি। রসুন আমাদের শরীরে উত্তেজনা বাড়ায়। কিন্তু মনে করা যাক এমন বিশেষ ভয়ানক কোন রোগ হল, বর্তমান ডাক্তারিশাস্ত্র অনুযায়ী রসুন-নি -নির্যাস তখন তাকে ওষুধ হিসেবে খেতেই হবে ঐ রোগটি সারানোর জন্যে। মাঝে মাঝে অবশ্যম্ভাবী বেশি খারাপকে নিরুদ্ধ করতে গিয়ে অনন্যোপায় হয়ে কম খারাপকে গ্রহণ করতে হতেই পারে। ‘কার্য-কারণ’ দেখে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈজ্ঞানিক যুক্তির পথেই ঠাকুর বরাবর হেঁটেছেন। আসলে ঠাকুরের মতে “জীবনের উদ্দেশ্য বাঁচা আর বাড়া।” অস্তিত্বই যদি বিপন্ন হয়ে পড়ে তাহলে আর হবে কী? ঠাকুরের এই মৌলিক দিকটিকে ঠিকমত অনুধাবন করলে গণ্ডগোল আসার ভয় থাকে না। তবে, সতর্ক জ্ঞানদৃষ্টি নিয়ে তবেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
একদিন ঠাকুরের কাছে আমিষ কথাটার মানে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আর সমানে মাছ-মাংস-টেংরীর জুস্ ইত্যাদি খাওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর, ঠাকুর আমাকে ডিশানারী দেখতে বললেন। আমি তা দেখে বললাম, ‘আমিষ’ কথাটা এসেছে ‘অম্’ ধাতু থেকে, যার মানে রোগ গ্রস্ত হওয়া। অম্ ধাতু ইষ্ (কর্মবাচ্যে) প্রত্যয় করে আমিষ। আমিষ খাদ্যের মানে অভিধানিকভাবেও ‘রোগসৃষ্টিকারী খাদ্য।
পশুজাত জান্তব খাদ্য কেন ক্ষতিকর, তাঁরই স্থাস্থ্য ও সদাচার সূত্র’ নামে বইতে হৃদয়স্পর্শী ব্যাখ্যা দিলেন ঠাকুর। সহজভাবে তার মানে হল, জান্তব খাদ্য খেতে গেলে পশুকে হত্যা (মাংস খাওয়ার জন্যে পাঠা কাটতে হবে, মুরগী মারতে হবে) করতেই হবে। হত্যা করার মুহূর্ত্তে যে মৃত্যুভয় (ঠাকুরের ভাষায়,— “শঙ্কাধুধুক্ষ বোধবিকার বধত্রাস-কুঞ্চিত ভী”) তার মধ্যে উদয় হয়— তা ক্রমপর্যায়ে তার কৌষিক উপাদানগুলিকে বিকৃত ও বিষাক্ত করে তোলে। এই হঠাৎ সৃষ্ট অনাকাংক্ষিত ‘বিকৃতি ও বিষাক্ত’ জটিল রাসায়নিক রান্নার সময় প্রচণ্ড উত্তাপেও অপরিবর্তিত থাকে। তা ক্রমে মানবশরীরে প্রবেশ করে তাকেই অমনতরভাবে বিপর্যয়যুক্ত, রোগক্লিষ্ট করে তোলে।
বর্তমান বিজ্ঞান মতে ভয় পাওয়াও দেহের কিছু রাসায়নিক ক্রিয়া- বিক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই না। আবেগের জন্যেও দায়ী কিছু রাসায়নিকের সৃষ্টি। স্বচ্ছ বিচারে ঠাকুর বর্তমান বিজ্ঞানের অপরিণত এই নতুন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
একসময়, পাবনায় ঠাকুর গাছ থেকে পেড়েই সাথে সাথে ফল খাওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, ফল গাছ থেকে বিযুক্ত হওয়ার মুহূর্ত্ত থেকেই তা কমবেশি পচনের (যার জন্যে দায়ী জীবাণু বা ছত্রাকের সংক্রমণ) মুখোমুখি হয়। সহজ বোধে ঠাকুর সে সম্ভাবনাকেও অচিরে বিনষ্ট করে অস্তিত্বকে নিরাপদ করতে চেয়েছেন। ভাতের ফ্যানের মধ্যে থেকে যায় প্রয়োজনীয় নানান ভিটামিন। ফ্যান ফেলে দিয়ে ভাত রাঁধলে তা বাদ পড়ে যায়। পার্লারে তাই একদিন এক মাকে ডেকে ফ্যান না ফেলে ভাত রান্না করার উপায় বাতলে দিলেন। এই হল সক্রিয় বিজ্ঞানচেতনা। সহজ পাচ্য খাদ্যের ওপরেই বরাবর ঠাকুর জোর দিয়েছেন। একবারে বেশি না খেয়ে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়ার পক্ষে তাঁর মত। মাঝে মধ্যে উপোস দিলে দেহবিধান নিয়ন্ত্রিত হয়।
আসল কথাটা হল সামঞ্জস্য। শরীরটাকে “সহন পটু-সুস্থ” রাখতে গেলে যা যা খাবার যেমনভাবে খাবার দরকার তাই খেতে হবে। ঠাকুর খাদ্যবিচার প্রসঙ্গে এমনই নির্দিষ্ট কিছু উপায় বলে দিয়ে গেলেন। করাটা আমাদের ওপর ।
“গ্রীষ্মে ভাল ঠাণ্ডা খাদ্য
শীতে ভাল গরম
সেই খাদ্যই শিষ্ট খাদ্য
হজম মাফিক নরম।” –শ্রীশ্রীঠাকুর
#খাদ্যবিচার
#thakurear_Aloke_bighean
#শ্রীশ্রীঠাকুরের_আলোকে_বিজ্ঞান
তৃতীয় সংস্করণ
#মণিলাল_চক্রবর্তী
https://www.amritokatha.in/
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10