* মেয়েমুখো পুরুষ
* ইষ্টানুরাগবিহীন সাধনা
* মায়ের দায়িত্ব
* শ্রীরামকৃষ্ণদেব
* সাধন জীবন *সাধু
১৬ ই আশ্বিন , মঙ্গলবার , ১৩৪৬ ( ইং ৩/১০/১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর আজ খুব ভোরে উঠলেন । উঠেই নিভৃত নিবাসে ' পায়খানায় গেলেন ৷ আজকাল শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিদিন সকালে ‘ নিভৃত নিবাসে ’ বহুক্ষণ থাকেন , আজও তেমনি ছিলেন । বাইরে এসে কেষ্টদাকে একটা motto ( বাণী ) দিলেন । স্নানের সময় প্রফুল্ল কাছে গেল , স্নান - সমাপনান্তে তাকে দিয়েও একটা লিখালেন । শ্রীশ্রীঠাকুরের মন সর্ব্বদা কারণমুখী । কোন ব্যাপার লক্ষ্য করামাত্র তার অন্তর্নিহিত যে নিত্য সত্যটি রয়েছে তা তাঁর কাছে উদ্ভাসিত হ'য়ে ওঠে এবং তা ’ তিনি লিপিবদ্ধ ক'রে দেন , — অনেক বাণী ও ছড়ারই উৎপত্তি এমনভাবে ।
স্নানের পর তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে মনুসংহিতা পড়ছিলেন— ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৩৭ তম শ্লোকটি বিশেষ ক'রে পড়ে শোনালেন ৷
শ্রীশ্রীঠাকুর মনুসংহিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৮ তম শ্লোকটি মুখস্থ করতে বললেন । এই দুটি শ্লোকেই আদৰ্শ - সম্মত বিবাহ - সংস্কারের পবিত্রতা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয় উল্লেখ আছে ।
Offer দেওয়া ( বরণ করা ) সম্বন্ধে রাত্রে বললেন— Offer ( বরণ ) ছেলেখেলা ব্যাপার নয় । অপরিণত বয়সে যদি কোন মেয়ে offer দেয় ( বরণ করে ) , তা consider ( বিবেচনা ) করবার যোগ্য নয় , মেলামেশার ফলে যে আকর্ষণ আসে তা ’ কিন্তু ঠিক নয় , offer- এ ( বরণ - ব্যাপারে ) বাপ - মা'র মত থাকা উচিত ৷ যে - পুরুষ offer দেবার ( বরণ করবার ) প্ররোচনা যোগায় , সে কিন্তু আদৌ যোগ্য পুরুষ নয় ।
১৭ ই আশ্বিন , বুধবার , ১৩৪৬ ( ইং ৪।১০।১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর সকালে বাঁধের ধারে খড়ের ঘরে নিরালায় বসেছিলেন । একটি দাদা এসে তাঁর দুর্ব্বলতার কথা ব্যক্ত করলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর পৌরুষ - দৃপ্ত ভঙ্গিতে বললেন — পুরুষত্বের অবমাননা আমি সহ্য করতে পারি না , বড় কষ্ট হয় । সে কি পুরুষ মানুষ , যে একটা মেয়ের প্রতি কামলোলুপতার জন্য জীবন বলি দিতে চায় ? মানুষ একবার ঘা খেয়েও যদি সাবধান না হয় , তার আর কী করা যায় ?
ভদ্রলোকটি বললেন- পারি না যে !
শ্রীশ্রীঠাকুর উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন— ভণ্ডামি করিস্ কেন ? পারি না মানে ? নাপারার কথা বসে-বসে ভাবিস্ – তাই পারিস্ না । চাস্ না তাই পারিস্ না । ও - সব ভণ্ডামি - ন্যাকামি ছেড়ে দে , বাঁচতে চাস্ তো ঠিক পথে চল্ । তোর লজ্জা করে না – তুই মেয়েদের কাছে লাঞ্ছিত হোস্ ? মেয়েরা যদি পুরুষকে ভালবেসে কৃতকৃতার্থ বোধ না করে — তাহ'লে কী হল ? মেয়ে মুখো পুরুষকে মেয়েরা ঘৃণাই করে — সে - মেয়ে যতই হীন হোক না কেন । একটা মেয়ের অভাব আর একজনকে দিয়ে পূরণ করতে চাইলে distortion ( বিকৃতি ) হয় , জড়া পাকিয়ে যায় ; অর্থাৎ , perverted sexuality grow করে ( বিকৃত যৌন আকূতি জন্মায় ) — সাবধান !
পরে একটি মাকে কথাপ্রসঙ্গে বললেন— মা হওয়া অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ! রামপ্রসাদের গানে আছে — “ মা হওয়া কি সহজ কথা , প্রসব করলেই হয় না মাতা । ” ‘ বজ্ৰাদপি কঠোরাণি মৃদূনি কুসুমাদপি ’ হ'তে হবে— তা না হও তো ছেলেপেলে মা থাকতে মা পাবে না ।
১৮ই আশ্বিন বৃষ্পতিবার,১৩৮৬ (ইং ৫।১০।১৯৩৯)
সকালে ক’টা বাণী দিলেন। দূপুরে ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত নারী-জাতির সৃষ্টি - সম্বন্ধে গল্প করছিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুরের গল্পগুলি এত জীবন্ত ও সরস , কথাগুলি এমন প্রাণবন্ত যে , তাঁর মুখ থেকে কিছু শুনলে মনে হয় , তা যেন প্রত্যক্ষ দেখা যাচ্ছে ।
সন্ধ্যায় বাঁধের পাশে গোপালদার ( মুখোপাধ্যায় ) সাথে কথা হচ্ছিল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন— মনুসংহিতায় গোড়ায় সৃষ্টিতত্ত্ব দিয়ে আরম্ভ করেছে , এর একটা মানে আছে । এতে পারম্পর্য্যানুযায়ী সব - কিছু যথাযথ বোঝা যায় । ‘ চলার সাথী ' - তেও সৃজনপ্রগতি দিয়ে আরম্ভ করা হয়েছে , অবশ্য এটা খুব ভেবে চিন্তে কিংবা দেখে - শুনে করিনি— আপনি থেকেই অমনটা হ'য়ে গেছে । মরকোচ শুদ্ধ না জানলে খামচা - খামচা উপরসা - উপরসা জেনে আমাদের বোধই পাকা হয় না । আমাদের ঋষিরা যে কত বড় বৈজ্ঞানিক তা ’ কেউ ভাবে না । মহাদেবের মত মহাসাধক কত ওষুধের formula ( সূত্র ) দিয়েছিলেন । সাধু - পুরুষদের সম্বন্ধে আজকাল ধারণাই বদলে গেছে , কিন্তু প্রকৃত সাধুরা ছিলেন দারুণ active ও practical ( সক্রিয় ও বাস্তববাদী ) , তাঁরা কতভাবেই না সমাজকে serve ( সেবা ) করতেন ।
কথায় - কথায় বললেন— অবতার - মহাপুরুষদের কথা বলে , কিন্তু রামকৃষ্ণ ঠাকুরের মত এমন একজন normal man ( সহজ মানুষ ) আর দেখি না ।
রাত্রে সাধন - ভজনের কথা উঠতে বললেন— Normal life ( স্বাভাবিক জীবন ) না হ'লে সুবিধা হয় না । এক রকম আছে— got - up life ( কৃত্রিম জীবন ) , তা ’ টেকে না । কসরত ক'রে আমি কখনও কিছু করিনি , যখন ভাল লাগত করতাম । আমি তো সরকার সাহেবকে দেখিনি , তাই মা - ই আমার কাছে সব । যা ’ করতাম , মা'র কাছে বাহাদুরি নেবার জন্য করতাম । হাউস হ'লো , রাত - দুপুরে নাম করতে লাগলাম । আর , খুব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কাজ করার একটা ঝোঁক ছিল । বাইশ মিনিটে খোকসা থেকে তিন মাইল পায়ে হেঁটে গিয়েছি।Activity ( কর্ম্মপরায়ণতা ) আমার খুব বেড়ে গিয়েছিল । কাজ বেশ ভালো লাগত । কীৰ্ত্তন - টীর্ত্তন করতাম , Trance- এর ( সমাধির ) সময় conscious ness ( বাহাচেতনা ) থাকত না । তাই ও - গুলিকে বড় মূল্য দিই না , অন্য সব সময়ই conscious ( সচেতন ) থাকতাম । একদিন একটা thermometer হাতে নিতেই ১১০ ডিগ্রী তাপ উঠে গেল— গায়ে জল দিলে উবে যেত , এই সব হ'ত । অনুভূতি সম্বন্ধে যা ’ dictate করেছি ( মুখে বলেছি ) — ঐ রকম বোধ সব হ’ত।
লোকে ভগবান মানেই বোঝে না , কিম্ভূত - কিমাকার ধারণা নিয়ে চলে , —কী যে করে, তাই কিছু হয়না। যারা মহাপুরুষের সংসর্গ লাভ করে-তারা সত্য-সত্যই ধন্য হ’য়ে যায়—শত সাধনা ক’রে যা’ বোঝা যায় না, normal (সহজ) না হ'লে ঠিক হয় না। তবে শুধু কাছে থাকলে হবে না, অনুরাগের সঙ্গে তাঁকে অনুসরণ করা চাই।
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
ষষ্ঠ সংস্করণ
10