মানুষ কী কৰ্ম্মফল এড়াতেও পারে ?
হস্তরেখা , জ্যোতিষ ….
১ লা আষাঢ় , শুক্রবার , ১৩৪৬ ( ইং ১৬/৬/১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর বাধের ধারে কলতলার পাশে খড়ের ঘরে চৌকিতে তাকিয়া ঠেস দিয়ে শুয়ে আছেন । চতুভুজদা ( উপাধ্যায় ) এসে প্রণাম করলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর স্নেহ - কোমল কণ্ঠে বললেন — চতুর্ভুজ , এবার লেগে যাও জোরে । (পরে আবার বললেন ) —তোমার কোন ভাই নাকি শিলং থাকে ? শুনেছি বাংলা জানে । তাকে যদি আনতে পার । কিছু কয়লা নিয়ে এসাে , smithy (কর্মকারের কাজ) জানে , এমন কয়েকজন লােক যদি আনতে পার , তাহ'লে workshop ( কারখানা ) -টা জোরে চালান যায় । লেদের কাজ , ঢালাইয়ের কাজ , ঝালাইয়ের কাজ , ইলেক্টোপ্লেটিং ইত্যাদি জানা লােক হ'লে workshop এ কারখানা থেকেই তাদের খরচ বেশ চলবে । Military man ( সামরিকবিভাগের লােক ) যদি আনতে পার , খুব ভাল হয় — তারা military training ( সামরিক শিক্ষা ) দেবে , তােমাদের একটা religious fort ( ধর্মীয় দুর্গ ) -এর মত হবে , তােমরা অসময়ে কত লোককে আশ্রয় দিতে পারবে । দুপুরে palmistry , astrology , spiritualism ( হস্তরেখা , জ্যোতিষ , আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ) সম্বন্ধে কথা হচ্ছিল । শ্রীশ্রীঠাকুর তার তাৎপৰ্য সম্বন্ধে বললেন- Urge- এর ( আগ্রহের দরুন আমাদের brain- এ ( মস্তিঙ্কে ) tension ( চাপ ) আসে , আর তার থেকে আমাদের হাতের রেখা ফুটে ওঠে , কপালেও রেখা পড়ে আমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করি । আমরা হয়তাে বুঝতে পারি না কী গড়ছি, কীন্তু হাত দেখলে তার পরিচয় পাওয়া যায় । জন্মলগ্ন দেখে যে একজনের সারাজীবনের কথা predict ( ভবিষ্যদ্বাণী ) করা যায় তার কারণ , কোন- কোন্ বৃত্তি যে তাকে rule ( নিয়ন্ত্রণ ) করছে , জন্মলগ্নের গ্রহসমাবেশ দেখে এইটে জানলে সেই সব বৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে তার জীবনটা কেমন দাড়াতে পারে বোঝা যায় । একটা গাড়ীর চাকার পরিধি যদি জানা থাকে তাহলে কতবার ঘুরে কত দূর যাবে বলতে পারি । যাঁরা বৃত্তির অধীশ , তাদের সম্বন্ধে কিন্তু ঠিক করে বলা যায় না । তারা একটা অবস্থায় পড়ে কিভাবে react (প্রতিক্রিয়া ) করবেন , সে তাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে । আমার সম্বন্ধে ভৃগু লিখেছেন যে , কত কী হতে পারে তা বলা যায় না । মানুষ ইষ্টদ্বারা চালিত হলে তার সম্বন্ধে ও - কথা খাটে । ইষ্টের উপর একান্ত অনুরক্তি থাকলে মানুষ কৰ্ম্মফল এড়াতেও পারে । যতীনদা ( যতীন্দ্রনাথ আচাৰ্য - চৌধুরী ) যদি আমার কথা শুনত — সেদিন না যেত , তাহলে অমনভাবে মৃত্যু হত না ।
★★★
তপােবন বোর্ডিং - এ একটি ছেলে খুব অসুস্থ , সেইজন্য শ্রীশ্রীঠাকুর খুব উদ্বিগ্ন । বারবার তার খবর নিচ্ছেন । বিকালে বলছিলেন প্রতিলোমজ সন্তান কখনও ভাল হতে পারে না । তাদের মধ্যে treachery ( বিশ্বাসঘাতকতা ) থাকবেই । উচ্চবর্ণের মেয়ে নিম্নবর্ণের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে সেখানে husband- এর ( স্বামীর ) উপর regard ( শ্রদ্ধা ) থাকতেই পারে না — বহু গণ্ডগােলের সৃষ্টি হয় । অমনতর ক্ষেত্রে শােনা যায় যে , স্বামীর প্রতি বিরক্তিবশতঃ সন্তানকে মা কুত্তাকা বাচ্চা পর্যন্ত বলে থাকে । Acquisition ( অৰ্জন ) অর instinct- এর ( সংস্কারের ) ঢের তফাৎ । নিউটন ছিলেন Mathematician by instinct ( সংস্কারসিদ্ধ গণিতজ্ঞ ) । Mathematics ( গণিত ) তার চাইতে কেউ হয়তাে ভাল জানতেও পারে — কিন্তু তাদের মধ্যে Mathematics ( গণিত ) হয়তাে instinct ( সহজাত সংস্কার ) -এর স্থান নেয়নি । Instinct ( সহজাত সংস্কার ) কেমন — যেমন heart beat করে ( হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হয় ) , কান শােনে , নাক নিঃশ্বাস নেয় , পা চলে। একটা বড় বংশের ছেলে হয়তাে অনুশীলনের অভাবে একটা বনবৃষ হ'তে পারে , কিন্তু তার মধ্যে instinct ( সহজাত সংস্কার ) সবই ঠিক থাকে । Instinct ( সহজাত সংস্কার ) -এর যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে , বুঝতে হবে সেখানে বংশে প্রতিলোমের সংশ্রব ঢুকেছে বা বিবাহ - বিধির ব্যত্যয় হয়েছে । Corruption ( কলুষ ) -এর দরুন অনেক সময় ভদ্রঘরেও প্রতিলােমজ সন্তানের জন্ম হয় , এমনও অসম্ভব নয় যে , ব্রাহ্মণীর গর্ভে শূদ্রের ঔরসে জাত সন্তান ব্রাহ্মণ - সন্তান ব'লে সমাজে পরিচিত হচ্ছে ।
তারপর বললেন — মানুষ এক শুনতে আর - একটা শোনে , অনেক সময় , তার কারণ হ'ল complex ( বৃত্তি ) । এসব থেকে তার চরিত্র বোঝা যায় । মানুষ যে কী এবং কেমন , সে নিজেই বলে দেয় — তার থেকে অন্য কেউ যদি কোন সিদ্ধান্তে এসে কিছু বলে — তাকে অন্তর্যামী মনে করে । কিন্তু ব্যাপারটা তা ’ নয় , কাৰ্য - কারণ - সম্বন্ধ দিয়েই সব বের করা যায় — সে ভুল শুনেও অন্য রকমটা না শুনে ঠিক এই রকমটা শুনল কেন ?
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
ষষ্ঠ সংস্করণ
10