📚 আলোচনা প্রসঙ্গে দ্বিতীয় খণ্ড,
🔷 নামী লাগবে কেন ?
🔷 ইষ্টমূৰ্ত্তি ধ্যানের সার্থকতা কী ?
🔷 পুরুষােত্তমের অবর্তমানে মানুষ সাধন - ভজন করবে কিভাবে ? তখন ধ্যান করবে কাকে ?
🔷 স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম্মো ভয়াবহঃ
[P240-250]
১২ ই পৌষ , শনিবার , ১৩৪৮ ( ইং ২৭/১২/৪১ )
দুর্জ্ঞেয় রহস্যে ভরা মানুষের জীবন । তার আদি , অন্ত দুই - ই অজানা । তার মাঝখানকার স্থূল বাস্তব যেটা তা - ও অর্থপূর্ণ হয়ে ধরা দেয় না । তাই মানুষ যখন বেত্তাপুরুষের সন্ধান পায় , তখন অবুঝের মত তার কাছে বারবার প্রশ্ন করে । তার ধারণা , প্রশ্নের জবাব শুনে সে সবটুকু বুঝে যাবে , হৃদয়ঙ্গম করবে । কিন্তু তা’ হয় না । তিনি বলেন — ক’রে জানতে , তার নির্দ্দেশমত আমরা করার পথে যতটুকু অগ্রসর হই ততটুকুই জানতে পারি । অজানার দিগন্ত আমাদের সামনে প্রসারিত হয়েই থাকে , তাই প্রশ্নের অবধি থাকে না । রাত্রি : অপগত হতে না হতেই তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে বাঁধের ধারে তাসুতে জিজ্ঞাসুর দল এসে ভিড় করে বসেছেন । মাঝে - মাঝে কাকলী শোনা যাচ্ছে , ঝিলের ওপাশটায় কুয়াশায় ধোঁয়া - ধোঁয়া দেখাচ্ছে । ওদিকের চর যেন অনেকখানি মুছে : গেছে ।
শরৎদা ( হালদার ) নাম - সম্বন্ধে প্রশ্ন তুললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর বিছানায় বসা । ডান পায়ের নীচে একটি কোলবালিস , গায়ে পাতলা কাঁথা জড়ান । স্ফূর্ত্তিযুক্তভাবে বলে চললেন — নাম হ'লাে কারণস্বরূপের পন্দনাত্মক প্রতিচ্ছবি । আপনি , আমি , দুনিয়ার যা - কিছুই কিন্তু ঐ নামেরই বিবর্তিত রূপ । কারণরূপী যিনি তিনিই সূক্ষ্ম ও স্থূলে পর্য্যবসিত হয়েছেন । সৃজন - ধারার কথা ভাবতে গেলেই পুরুষ - প্রকৃতির কথা আসে , বিজ্ঞানে বলে positive ( ঋজী ) , negative ( রিচী ) -এর কথা । এই দুইয়ের মধ্যে আছে আকর্ষণ , বিকর্ষণ , অকুঞ্চন , প্রসারণ । তার মধ্যদিয়েই লীলায়িত হয়ে ওঠে স্পন্দনে - স্পন্দনে আবার ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া চলে । এইভাবে পারস্পরিক সংঘাত ও সংযােগ - বিয়ােগের ভিতর দিয়ে সৃষ্টি গুণিত হ'য়ে চলে — ছন্দায়িত তালে । এক - একটির ছন্দ এক - এক রকম , তাই আমরা দেখতে পাই , সৃষ্টির কোন দুটি জিনিস একরকম নয় , প্রত্যেকটিই বিশিষ্ট । সমজাতীয় বৈশিষ্ট্যের এই গুচ্ছকেই বলা হয় বর্ণ , তাই বর্ণ জিনিসটা কিন্তু মানুষের তৈরী নয় । এটা সৃষ্টির মধ্যে অনুস্যূত । ফলকথা , বৈশিষ্ট্যবান স্পন্দনের ঘাত - প্রতিঘাত ও ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার পরিপ্লব চলছে দুনিয়াময় । তার মধ্যদিয়েই সৃষ্টি নিত্য নবীনভাবে উৎসারিত হচ্ছে — কারণ হ'তে সূক্ষ্ম , সূক্ষ্ম হতে স্থূলে । স্থূল থেকে সূক্ষ্ম ও কারণ - রাজ্যে যদি যেতে হয় , তবে যে স্পন্দন নানা ঘাত - প্রতিঘাত ও রকমারির ভিতর দিয়ে এত পথ বেয়ে আজ এই হ'য়ে দাঁড়িয়েছে , তাকে অনুসরণ করেই যেতে হবে । নাম হলো সেই স্পন্দনেরই প্রাণবীজ , যে - কোন পন্দনের মরকোচ আছে এই নামের মধ্যে । তাই একে বলা হয় অনামী নাম । এই নাম যদি ঠিক - ঠিক ভাবে অনুশীলন করেন — নামীর প্রতি অনুরাগ নিয়ে , তবে আপনার সমস্ত অতীত আপনার সামনে উদ্ভাসিত ও উদঘাটিত হয়ে উঠবে । আপনি একেবারে মুলে চলে যেতে পারবেন । একগাছ দড়ি পড়ে আছে , সেই দড়িটা বাধা আছে দূরে একটা গাছের সঙ্গে , কোন্ গাছের সঙ্গে বাঁধা আছে , তা যদি আপনি জানতে চান , এই দড়িটা ধ'রে এগিয়ে গেলেই তা জানতে পারবেন । নাম ও নামীও তেমনি এই অজানাপথে আমাদের একমাত্র অবলম্বন ।
রত্নেশ্বরদা ( দাশশর্মা ) —নামী লাগবে কেন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — নামী হলেন তিনি যিনি নামের চেতন মূ্র্ত্ত প্রতীক বা নামকে উপলব্ধি করেছেন জীবনে , এক - কথায় নাম যাঁর মধ্যে জীবন্ত , বাস্তবায়িত , আয়ত্তী কৃত । নামের উপলব্ধির উপর দাড়িয়ে বিশ্বের যা - কিছুই তার কাছে ব্যাখ্যাত ও অর্থপূর্ণ হ’য়ে উঠেছে — করা , বলা , ভাবার সুসঙ্গত - সমন্বয়ে , সপরিবেশ জীবন বৃদ্ধির সার্থকতায় । নামকে যদি এমনভাবে আমার জীবনে সার্থক করে তুলতে চাই , তবে ঐ নামীকে অনুসরণ করেই তা সম্ভব । নাম আমার মধ্যে জীয়ন্তই হয়ে উঠবে না ঐ নামীর সঙ্গে যােগ ছাড়া । তাই বলে — তজ্জপস্তদর্থভাবনঞ্চ । তদর্থভাবনা মানে নাম যাঁতে সার্থক হয়েছে , নিজের বৈশিষ্ট্য - অনুযায়ী তেমন তর হয়ে ওঠা , ভাবনার মধ্যে আছে হওয়া , শুধু চিন্তা নয় । আমার কিছু হতে গেলে তাঁর জীবন্ত রূপটি আমার সামনে থাকা চাই । তার নির্দ্দেশমত চ'লেই আমি তবে সহজে হ'তে পারব — আমার বৈশিষ্ট্য - অনুযায়ী আমি যেমন হ'তে পারি । এর মূল জিনিস হলাে , তাঁতে , সক্রিয় প্রাণের যোগ , টানের যােগ । তাই দেখুন নামীর প্রয়োজন কোথায় ।
চুনিদাকে দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর হেসে জিজ্ঞাসা করলেন — কি কী খবর ?
চুনিদা — ভাল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কেষ্টদা কোথায় রে ?
চুনিদাঘরে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কি করে ?
চুনিদা — পড়ছেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ( স্মিতহাস্যে ) —পড়ার নেশা আর কেষ্টদার কমে না ।
প্যারীদা ( নন্দী ) —ইষ্টমূৰ্ত্তি ধ্যানের সার্থকতা কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — মানুষের বাহ্যিক চেহারাটা তার ভিতরেরই প্রতিচ্ছবি । জ্ঞানময় , চিরচেতন যিনি , তাঁর মূৰ্ত্তি ধ্যান করতে - করতে তার অন্তরের সম্পদও আমাদের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । আর , ধ্যান মানে শুধু ইষ্টের চেহারা চিন্তা করা নয় , তার চাল - চলন , আচার - ব্যবহার , চাহিদা , পছন্দ , নির্দ্দেশ সব সম্বন্ধেই চিন্তা করা লাগে , এবং নিজেকে সেইভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হয় । এক কথায় , ইষ্টস্বার্থ - প্রতিষ্ঠামূলক চিন্তাই ধ্যান । আমার মধ্যে ভাল - মন্দ যা - কিছু থাকুক , তা কেমন ক’রে ইষ্টানুকুল করে তুলব , সেই চিন্তাই ধ্যান , শুধু চিন্তা করে ক্ষান্ত হ'লে চলবে না , বাস্তবে সেইভাবে চলতে হবে । তাতেই ধ্যানের সার্থকতা ।
প্যারীদা - ধ্যানের সময় তাে অনেক আজে - বাজে চিন্তা আসে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — যে - চিন্তাই আসুক না কেন , কোনােটাকে জোর করে চাপা দিতে নেই । তােমার চিত্তজগতে ইষ্টের সঙ্গে অনন্বিত যাই থাক না কেন , তাকে ইষ্টে অন্বিত করে তােলাই তােমার কাজ । যেটাকে তা না করতে পার , তাকে প্রত্যাহার করবে , পরিবর্জন করবে । ইষ্টের প্রতি টান থাকলে তা আদৌ কষ্টকর মনে হবে না । ধর , একজনের প্রতি তুমি রূঢ় ব্যবহার করেছ । কিন্তু অভিমানের দরুন তার কাছে যে তুমি ক্ষমা চাইবে , তা ’ পারছ না । ব'সে সেই কথাটা তােমাকে পীড়া দিচ্ছে । যখন এটা ধরা পড়লাে , তোমার উচিত , সব অভিমান বিসর্জন দিয়ে যথাসত্বর তার সঙ্গে ভাব করে ফেলা । এইভাবে গলদ ক’মে যায় , কোন প্রবৃত্তিই আর ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না । মানুষের শক্তি ও আনন্দ বেড়ে যায় । যে নিজেকে এইভাবে নিয়ন্ত্রিত করে , পরিবেশকে নিয়ন্ত্রিত করাও তার পক্ষে সহজ হয় । সেইজন্য নিজের কোন দু্র্ব্বলতাকে ক্ষমা করতে নেই ।
ফরিদপুর থেকে নিবারণদা ( চক্রবর্তী ) আসলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর দেখেই উল্লসিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন — কি নিবারণদা ! কখন আসলেন ? হাতে ও কী ?
নিবারণদা — এই আসছি । আপনার জন্য দেশ থেকে কিছু ভাল পাটালি নিয়ে আসছি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখি কেমন পাটালি ?
নিবারণদা পাত্রটা খুলে দেখালেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখে তো মনে হয় খাসা মাল । যান , বড়বৌকে দিয়ে আসেন গিয়ে , যদি পায়েস - টায়েস করে ।
নিবারণদাগন্ধও খুব ভাল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আর কবেন না । দেখেই আমার মন অস্থির । ( এই বলে শিশুর মত সরল আনন্দে হাসতে লাগলেন ) ।
নিবারণদা পাটালি শ্রীশ্রীবড়মার কাছে পৌঁছে দিয়ে আবার এসে বসলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আপনার চেহারাটা যেন একটু কাহিল দেখছি ।
নিবারণদা — মাঝে জ্বর হয়েছিল , সেই থেকে শরীরটা আর ফিরছে না , পেটটাও ভাল না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — প্যারীকে দেখাবেন , ও দেখেশুনে আপনাকে একটা ওষুধ ঠিক ক’রে দেবে । প্যারী ! ফাক - মত দেখিস তাে !
প্যারীদা — আচ্ছা ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — নিবারণদা ! আপনি ডুব - সঁতার কাটতে পারেন না ?
নিবারণদা — পারি । আজকাল আর তেমন অভ্যাস নাই , একসময় খুব পারতাম ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - এক ডুবে কতদূর যাবের পারেন ?
নিবারণদাতা বােধহয় ২০-২৫ হাত পারি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - সঁতার কাটা , বেড়ান , দৌড়ান — এ - সব অভ্যাস রাখা ভাল । মাটিকাটা , বাগান - করা — এসবও করবেন । শারীরিক পরিশ্রম বাদ দেবেন না । তাহলে আমার মত অকর্মণ্য হয়ে পড়বেন । আর , আপনি তো ঋত্বিক্ মানুষ , গাঁয়ে - গাঁয়ে ঘুরে যাজন - টাজন করবেন । যাজন খুব ভাল জিনিস , ওতে শরীর - মন চাঙ্গা থাকে । ওরা একটা বই প’ড়ে শুনিয়েছিল — ধর্ম্মজাকরা নাকি সবচেয়ে দীর্ঘায়ু হয় ।
নিবারণদা — বয়সের সঙ্গে - সঙ্গে শরীর - মন দুই - ই যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে । আগের মত উৎসাহ লাগে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ( দৃপ্ত উল্লাসে ) —উৎসাহ - আনন্দের চাবিকাঠি আপনার হাতেই আছে । সেই পথে চললেই হয় । মানুষের যাতে ভাল হয় , মানুষ যাতে ইষ্টমুখী হয় , সবদিক দিয়ে উন্নতিলাভ করে , সেই ধান্ধা নিয়ে চলুন , করুন , দেখবেন — উৎসাহের জোয়ার ব’য়ে যাবে । অমৃতের সন্তান আমরা , অমৃত পরিবেষণে যতই ব্যাপৃত থাকব , ততই রোগ - শোক - জরা দুরে হ’টে যাবে । কি বলেন নিবারণদা ? জীবন এইভাবে কাটান ভাল না ?
নিবারণদা— হ্যা , নিশ্চয়ই । আপনার কথায় এখনই যেন একটু গায় জোর লাগতেছে , আশার আলো দেখতেছি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমাদের মন যে - ঘাটে বেঁধে রাখি , সেই ঘাটেই বিচরণ করতে থাকে । নৈরাশ্যের ঘাটে বেঁধে সত্তাটাকে নিপীড়িত করে লাভ কী ? আর , তা'তে আমাদের স্বার্থই বা কোথায় ? তাই জীবনের স্বার্থে , বাঁচার স্বার্থে ইষ্টীপূত অশা , অনিন্দ ও উদ্দীপনাকে জীইয়ে রাখতে হয় । আশাবাদী যে , সে বিপদের কালােমেঘের মধ্যেও সম্পদের সুবর্ণলেখা দেখতে পায় , আর তাই - ই তাকে চেতিয়ে রাখে ।
শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় সবার চোখ - মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হ’য়ে উঠছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্যারীদার দিকে চেয়ে বললেন — একটু তামুক খাওয়াও ।
প্যারীদা তামাক সেজে দিলেন ।
আস্তে - আস্তে অনেকে এসে হাজির হলেন । বাইরে একটি বৃদ্ধা মা বসে আছেন , তাঁর গা - ঘেসে একটি গরু এসে দাঁড়িয়েছে । তাকে তাড়ালেও সে সরছে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — না তাড়িয়ে ওকে একটু আদর কর । ও বলছে , আমি তোমার কাছে এসেছি , আমাকে তাড়িও না , বরং আমাকে একটু সােহাগ কর । •••••••••••• সােহাগখোর কেউ কম নয় ।
শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা শুনে সবাই নীরবে হাসতে লাগলেন ।
মা’টি গরুটার গলায় হাত বুলিয়ে দিলেন । গরুটা আরাে গলা বাড়িয়ে দিল ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখছিস্ তাে ! কেমন খুশি হয়েছে । একেই বলে অনুসন্ধিৎসু সেবা । এই অনুসন্ধিৎসু সেবা যদি থাকে তবে শুধু মানুষ নয় , জীবজন্তু , গাছপালাকেও বশ করা যায় ।
উক্ত মা — গাছপালাকে বশ করা মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — দেখিসনি ? এক - এক জনের যত্নে গাছপালা বেশী ফল দেয় । যে বুঝে - বুঝে দরদের সঙ্গে গাছের সেবা করে , তার হাতে ফলন বেশী হয় । গাছেরও কৃতজ্ঞতা আছে , সে ঐ ভালবাসা ও যত্নের প্রতিদান দিতে চায় , সুস্থ সজীব থেকে , বেশী ফল ফলিয়ে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর চৌকিতে বিছানায় বসেছিলেন , এবার পা - দু’টি নীচেয় ঝুলিয়ে দিলেন । প্যারীদা পা - দুখানি ঘসে দিতে লাগলেন । পা ঘসতে - ঘসতে প্যারীদা জিজ্ঞাসা করলেন — পুরুষােত্তমের অবর্তমানে মানুষ সাধন - ভজন করবে কিভাবে ? তখন ধ্যান করবে কাকে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — পুরুষােত্তমই মানুষের ইষ্ট । পুরুষোত্তমই ধ্যেয় । তিনি চলে গেলে পুরুষােত্তমের অনুগামী ঋত্বিকের কাছথেকে পুরুষােত্তম - প্রবর্তিত দীক্ষায় দীক্ষিত হ'য়ে ঐ পুরুষােত্তমেরই অনুসরণ করবে , ঐ পুরুষােত্তমকেই ধ্যান করবে , যাবৎ পুনরায় তার আবির্ভাব না হয় । পরবত্তী আসলে আবার তাকে গ্রহণ করবে , কারণ , তিনি পূর্ব্ববর্ত্তীরই নব কলেবর ।
বিমলদা ( মুখােপাধ্যায় ) —একটা কথা শুনি — যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে , তা আছে ভাণ্ডে । তার মানে কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ‘যা’ আছে , তা আমাদের শরীরেই আছে । যে - সব উপাদানের সমবায়ে ও সমাবেশে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচিত হয়েছে , তা সংহতভাবে আমাদের দেহবিধানেই আছে । নাম - ধ্যান , বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের সাহায্যে যখন আমরা আমাদের সত্তাটাকে সমগ্রভাবে জানতে পারি , তখন বিশ্বব্যাপারের যা - কিছুও আমরা সহজে জানতে পারি । শরীরের একটা কোষ , কি একটা বালুকণাকেও যদি আদ্যন্ত সামগ্রিকভাবে জানা যায় , তার মধ্যদিয়েও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জ্ঞান আমাদের আয়ত্ত হয় । জগতে কিছুই বিচ্ছিন্ন নয় , একটাকে পুরােপুরি জানতে গেলে সেই সঙ্গে সব - কিছুর জ্ঞান এসে পড়ে । কোনকিছুকে পুরােপুরি জানা মানে তার সঙ্গে অন্য যা - কিছুর সঙ্গতি ও সম্পর্ক শুদ্ধ জানা । সেইজন্য আমি বলি , যা ’ করবে , তা ’ thoroughly ( পুরােপুরি ) করবে , নিখুতভাবে করবে । এই নিখুত করা ও জানার অভ্যাসই আমাদের পূর্ণতার পথে এগিয়ে দেয় । অনেকে হীনম্মন্যতার বশে স্বধর্ম ও স্বকৰ্ম্মকে ত্যাগ করতে চায় । তার চাইতে ভুল আর নেই । সহজাত কৰ্ম্ম তা যার যাই হােক কেন , তার ভিতর - দিয়েই মানুষ চরম জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে । নইলে তার জ্ঞানের কপাট খােলে না । তাই গীতায় আছে , ‘ স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম্মো ভয়াবহঃ’ । তােমার যা ’ সম্পদ আছে , তার উপর দাড়িয়েই তুমি আরাের পথে হাত বাড়াও । তােমার সম্পদকে তুমি যদি অবহেলা কর , তবে বাইরের সম্পদকেও তুমি আয়ত্ত করতে পারবে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর এরপর একবার তামাক খেয়ে গাত্রোখান করলেন ।
খানিকটা পরে এসে মাতৃমন্দিরের বারান্দায় চৌকিতে পাতা বিছানায় বসলেন । বাইরে বেশ রােদ , কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর যেখানে বসেছেন , সেখানে রােদ নেই । শ্রীশ্রীঠাকুরের গায়ে মাত্র একটি আদ্দির চাদর । আজকাল যুদ্ধের বাজারে ভাল কুইনাইন পাওয়া যাচ্ছে না । শ্রীশ্রীঠাকুর বীরেনদাকে বললেন -- ছাতিম- ছালের গুণাগুণ দেখেন তাে । আমার মনে হয় ছাতিমছাল দিয়ে কুইনাইনের প্রয়ােজন অনেকখানি মেটান যায় ।
বীরেনদা ( ভট্টাচাৰ্য ) এসে বই দেখে বললেন — হ্যা । তা’ হ’তে পারে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — মাথায় রাখবেন । কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তাও ভাল ক’রে ভেবে দেখবেন । পরে আপনার সঙ্গে এ - বিষয়ে আলোচনা করব । আমাকে মনে করিয়ে দেবেন । আর , নদীয়া এদিকে থাকে তো ওকে একবার ডাকেন তো ।
বীরেনদা নদীয়া - দাকে ( বসাক ) ডাকতে গেলেন । ইতিমধ্যে একখানা উড়ােজাহাজ খুব নীচু দিয়ে চ’লে গেল । বললেন — খুব নীচু দিয়ে যাচ্ছে । শ্রীশ্রীঠাকুর ঔৎসুক্যভরে চৌকী থেকে নেমে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে দেখলেন ।
পরে নিজের জায়গায় এসে বসলেন । শ্রীশদাকে ( রায়চৌধুরী ) বললেন Aeroplane ( উড়ােজাহাজ ) ইত্যাদি করা যে খুব কঠিন , তা আমার মনে হয় না । আমার ইচ্ছা ছিল , আপনাদের এমন ক’রে তৈরী করি যে , আপনাদের অপার , অজানা কিছুই থাকবে না । বিশ্ববিজ্ঞান , কারখানা ইত্যাদি করার পিছনেও আমার ঐ উদ্দেশ্য । কি বিজ্ঞানের দিক দিয়ে , কি যন্ত্রপাতির দিক দিয়ে — কোন দিক দিয়ে আমাদের দেশের খাঁকতি থাকে , তা আমার ভাল লাগে । ধর্মের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আপনারা সব ব্যাপারে অদ্বিতীয় হয়ে ওঠেন, এই আমার ইচ্ছা । এই বাস্তব দক্ষতা যদি না ফোটে , তবে ধৰ্ম্ম হয়ে দাড়ায় শুধু কথার কথা । শিক্ষা কাকে বলে , সভ্যতা কাকে বলে , কৃষ্টি কাকে বলে , দেবদক্ষ চৌকস মানুষ কাকে বলে , আমার বড় সাধ হয় তার নমুনা দেখাতে । আপনারা যে ইঞ্জিনীয়ারিং ডিপার্টমেন্টে বাইরে কাজকর্ম করছেন , আপনারা কত অসাধ্য সাধন করছেন । সাড়া - ব্রিজে আপনারা কী কাণ্ডটা করলেন , কয়েকজনে সাহেবরা পর্যন্ত অবাক্ হ’য়ে গেল । তাই দেখেন , আপনাদের ক্ষমতা কিন্তু কম নয় । একমুখী হয়ে লাগলেই হয় । সব চাইতে বড় অভাব দাড়িয়েছে মানুষের । আপনারা গােটা কয়েক মানুষ , এখন কোন্ দিক যাবেন , আর কি করবেন । তাই তাে বলি লােক - সংগ্রহের কথা , যাজনে চারিদিক flood ( প্লাবিত ) করে দেন , ভাল - ভাল কৰ্মী সব নিয়ে আসেন । ১৩০ টাকার ব্যাপার তাড়াতাড়ি সেরে ফেলেন । একসঙ্গে সব দিকে ধূম লাগায়ে দেবাে নে । যুদ্ধ ঘরের দোরে এসে পড়েছে । আমাদের এখন খুব দ্রুত চলা লাগবে ।
শ্রীশদা — এই ডামাডোলের মধ্যে কাজ করাই কঠিন । তারপরে মানুষগুলি এত callous ( অসাড় ) যে , কিছুই যেন মাথায় ঢোকে না । সম্মখে সমূহ বিপদ দেখেও হুঁশিয়ার হয় না । বললেও বুঝতে চায় না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — এই তাে কাজের সুবর্ণ সুযােগ । অসাড় যাকে বলছেন— তার মধ্যেও যাতে সাড়া জাগে , তেমনতর সম্পদ নিয়ে আপনার হাজির হ'তে হবে তার কাছে । লোহাকে যদি গলাতে চান , তবে লােহা যে তাপে গলে , সেই তাপে ফেলেন তাকে। আপনাদের তপস্যা ও আগ্রহ - উন্মাদনা এতখানি প্রবল হওয়া চাই , যার সান্নিধ্যে কেউই অসাড় না থাকতে পারে । বনের পশুও যেন আপনাদের কাছে এসে ধরা দেয় । সারা দেশটাকে ভূমিকম্পের মত নাড়া দেন , সাড়া নিশ্চয়ই জাগবে । পূর্ব্বপুরুষের রক্ত এখনও মরেনি ।
প্রেরণার অনল - দীপনায় শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখ - মুখ জ্যোতির্ম্ময় হয়ে উঠেছে । উপস্থিত সবাই উদগ্র আগ্রহে সেই দিব্যদুতি নিরীক্ষণ করছেন , আর তাঁদের প্রাণ অমৃত - উদ্দীপনায় ভরপূর হ’য়ে উঠছে ।
ইতিমধ্যে নদীয়াদা ও সেই সঙ্গে রাধারমণদা ( জোয়ার্দ্দার ) আসলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর ২|১ জনকে ছাড়া আর সবাইকে সরে যেতে বললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — কাছে - দূরে ধানের জমি যা পাও , সেগুলির জন্য খোঁজ হাটাতে থাক । কোন্ সময় কী অবস্থা এসে পড়ে বলা যায় না । কত লোক হয়তো তােমাদের আশ্রয় নেবে । তাদের খাওয়াতে হবে । জমি না থাকলে পারবা না । এখন যে জমির চাষ হচ্ছে না , পতিত অবস্থায় আছে , অথচ চাষযোগ্য , তাও কিনতে পার । বেশী গরজ দেখাতে গিয়ে আবার দাম বাড়ায়ে দিও না । আর , বেশী সােরগােল করো না । চুপিসারে কাম সা’রে ফেলবা । কোন জমি কিনতে গেলে সৰ্ত্ত - টৰ্ত্ত ভাল ক’রে দেখে - শুনে নেবা । জমি কিনতে যেয়ে যেন কতকগুলি মামলা কিনে বসো না । যেখানে যা ’ কর স্থানীয় মােড়লদের হাতে ক’রে নিয়ে করবা । দলিল - দস্তাবেজ , রেজিষ্ট্রী অফিসের কাগজ - পত্র , ম্যাপ , পরচা , সীমানা , সরিক , খাজনা - বাজনা সব - সম্বন্ধে ভাল করে খোঁজ নেবা। তাড়াহুড়ো ক’রে কিছু করবার দরকার নেই । তোমরাও খোঁজ - খবর নিতে থাক । আমিও প্রস্তুত হই । যেমন - যেমন খোঁজ - খবর পাবা , বঙ্কিমকে জানায়ে রাখবা ।
ওঁরা সম্মতি জানিয়ে বিদায় নিলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার ওখান থেকে উঠে মাতৃমন্দিরের পাশ দিয়ে খেপুদার বারান্দার দিকে আসছেন । চটি পায় দিয়ে থপথপ ক’রে পা ফেলছেন , শরীরটা একটু দুলছে । তরিতরকারি ও পাটালি নিয়ে বসেছে । শ্রীশ্রীঠাকুর আসতেই তারা উঠে দাঁড়ালো । শ্রীশ্রীঠাকুর স্নিগ্ধ হাসিতে তাদের অভ্যর্থনা করলেন , তারা খুশি হয়ে উঠলাে । আসতে - আসতো আশ্রম - প্রাঙ্গণের বাবলগাছটিতে শ্রীশ্রীঠাকুর এক জোড়া সুন্দর নীল পাখী দেখে বললেন — এ কী পাখী রে ? যারা কাছে ছিলেন , তাঁরা কেউ বলতে পারলেন না । তখন শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ দোকানদারদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন— “ এই , তোরা দেখ তো , ঐ দুটো কী পাখী ? তারাও দেখে বলতে পারল না , শুধু বললাে , সবসময় এ পাখী দেখা যায় না । শীতকালে কোন - কোন সময় আসে । শ্রীশ্রীঠাকুর আরাে অনেককে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন । কিন্তু কেউই নাম বলতে পারলেন না । ইতিমধ্যে পাখী - দুটো উড়ে দৃষ্টির বাইরে চ’লে গেল । শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন , ‘ চ’লে গেল , না হলে বড়খােকাকে ডাকলে সে বোধ হয় বলতে পারতাে । পাখী - দুটো বড় সুন্দর । কোন্ দেশ থেকে এখানে এসেছে , ভেবেছে , আসলাম যখন আশ্রমটা দেখেই যাই । একক আসেনি , দোসর নিয়ে এসেছে । ওদের চেহারা দেখলে মনে হয় , ওরা যেন কত সুখী । আর একটু পরে আসলে ওদের দেখা পেতাম না । আসবে কি না ঠিক কি ?
বলতে - বলতে খেপুদার বারান্দায় এসে বসলেন । একটা হাতলওয়ালা বেঞ্চে । পেছন দিকে ঠেস দিয়ে , পা’টি রােদে রেখে পূর্ব্বস্য হয়ে বসেছেন । সঙ্গে -সঙ্গে বঙ্কিমদা ( রায় ) , উমাদা ( বাগচী ) , শশধরদা ( সরকার ) প্রভৃতি অনেকে এসেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর আপন মনে রহস্যজড়িতভাবে বলছেন — অচানক কত কথা মনে হয় । কত স্মৃতি জাগে । মনে হয় সব সত্যি । সব কথা কই না । ভাবি , মানুষ হয়তাে পাগল ভাববে । হঠাৎ একটা গরু , কুকুর , পাখী , মানুষ , গাছ বা ফুল দেখে মনে হয় , যেন আগে একে কোথায় দেখেছি , সেই সঙ্গে - সঙ্গে চিত্রের পর চিত্র ভেসে আসে , জীয়ন্ত সে চিত্র । এগুলি কী , ভাল ক’রে ঠাওর পাই না ।
প্রফুল্ল — সবাইকে দেখলে কি অমন মনে হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — না , তা’ নয় । তবে যাকে দেখি তাকেই মনে হয় যেন আমার জিনিস । ও ভাল থাক্ , সুখে বেঁচে - বর্তে থাক্ ।
কালিদাসীমা — কেউ যদি দীক্ষিত না হয় , তাহ'লেও এই মনে হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — পােকাটাকেও দেখলে তার জন্যও স্বতঃই এমনি একটা আগ্রহকুল ইচ্ছা জেগে উঠে , আপনা থেকেই এমন হয় । কারও জন্য কিছু করতে পারলে আমার মনে হয় , আমিই বর্তে গেলাম । কারও জন্য কিছু করণীয় বুঝেও যদি কোন কারণে করতে না পারি , তাহলে আমার আপসোসের সীমা থাকে না । অবশ্য , কেউ দীক্ষিত শুনলো আমার খুব ভাল লাগে । কারণ , একজন যদি আমার ইচ্ছার অনুবন্ত হয় , তবে আমি তার জন্য করার সুযোগ পাই বেশী । মানুষের জন্য কিছু করতে গেলে তার ইচ্ছার সুতাে ধরে করতে হয় । আমি যতটুকু জানি , যতটুকু বুঝি তা বলি , সেই নির্দেশগুলি যদি কেউ মেনে চলে , সে যতটুকু উপকৃত হবে , যে মেনে চলবে না , সে ততখানি উপকৃত হতে পারে না । আমি তার ভাল যতই চাই না , সে যদি সহযােগিতা না করে , সেখানে আমার কিছু করবার থাকে না । সেখানে তারও কষ্ট , আমারও কষ্ট । অথচ নিরুপায় ।
অবিনাশদা ( ভট্টাচাৰ্য ) —আপনার দয়া থাকলে তার মনও ঘুরে যেতে বাধ্য ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - পরমপিতার দয়া সবার উপর এমনিতেই আছে । যদি বলে কোন কথা নেই । সেই দয়া সফল হয় না , যদি পরমপিতার উপর আমাদের দয়া না থাকে , তাকে যদি রক্ষা করে না চলি আমরা । তিনি সবসময়েই আমাদের মঙ্গল করার জন্য ব্যস্ত , তিনি মঙ্গলস্বরূপ । আমরা অমঙ্গল টেনে আনি আমাদের স্বেচ্ছাচারিতা দিয়ে । কুকর্মের ফলে দুঃখে প'ড়ে আমরা অনেক সময় বলি , ঈশ্বরের ইচ্ছা ! আমি কী করব ? কিন্তু ঈশ্বর কখনও চান না যে আমরা অযথা দুঃখে ভুগি । আমরা বাচি , বাড়ি , সার্থকথার পথে চলি , এই তিনি চান । সত্তারূপে তিনি সবার মধ্যেই আছেন , কেউ কি চায় যে তার সত্তা খামকা নিপীড়িত থােক ? আমাদের সত্তা মূলতঃ তাঁরই । তা থেকেই যা - কিছু উৎসৃষ্ট হয়েছে ।
অবিনাশদা ( ভট্টাচাৰ্য ) —তবু আমরা দুঃখ পাই কেন ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — দুঃখ পাই প্রবৃত্তিমুখী হ'য়ে । অশু যদি আপনার কথা না শুনে নিজের খেয়ালে চ'লে দুঃখ ভােগে , সেখানে কি আপনি ঠেকাতে পারেন ? আপনি তাে চান না যে সে বেচাল চলনে চলে দুঃখ পায় , কিন্তু কথা যদি না শােনে কীই বা আপনি করতে পারেন ? হয়তাে শাসন করতে পারেন , কিন্তু শাসন করলেও যদি না শােনে ?
সুরেশদা ( মুখােপাধ্যায় ) আসলেন ।
সুরেশদাকে দেখেই শ্রীশ্রীঠাকুর ব্যস্ত - সমস্ত হয়ে বললেন — সুরেশদাকে বসতে দে । সুরেশদা ( হাতজোড় ক’রে ) —ঠাকুর , আপনি আমাকে বসাবার জন্য অতাে ব্যস্ত হলে আমার বড় সঙ্কোচ বোধ হয় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — সে কি কথা ? আপনি বুড়াে মানুষ , আপনি দাড়িয়ে থাকবেন , সে কি আমার ভাল লাগে ? আর , এদেরও তাে সেদিকে খেয়াল থাকা চাই , আমার ব্যস্ত হওয়া লাগে না , বলা লাগে না , এরা যদি হুশিয়ার হয়।এদের নজর নেই দেখে আমার বার - বার স্মরণ করিয়ে দিতে হয় । এই শ্রদ্ধা দেখানটুকু যদি না শেখে তবে যে কিছুই হবে না । ✅
------------------------------------------
PAT 2 END
#আলোচনা_প্রসঙ্গে_দ্বিতীয়_খণ্ড
https://www.amritokatha.in/
Telegram https://t.me/amritokatha
www.facebook.com/Amritokatha.in1

10