[ P - 4 ] 📌 গোত্র’ বলতে কী বুঝায় ? 📌 কিন্তু বর্ণ কী ? 📌 ব্রাহ্মণ কে ? ক্ষত্রিয় কে ? ‘বৈশ্য’ কাহাকে বলে ? ‘শূদ্র’ কাহাকে বলে ?

🎗️বর্ণ ও বংশ এই দুইয়ের তফাৎ কী ? 
🎗️‘গোত্র’ বলতে কী বুঝায় ?
🎗️কিন্তু বর্ণ কী ? 
🎗️ব্রাহ্মণ কে ? 
🎗️ক্ষত্রিয় কে ? 
🎗️‘বৈশ্য’ কাহাকে বলে ?
🎗️‘শূদ্র’ কাহাকে বলে ? 
🎗️সগোত্রে-বিবাহ কেন ভালো নয় ? 
🎗️সবর্ণ ও অসবর্ণ বিবাহ— কোনটি বেশি ভালো..?

[Page 21 - 40]

  । নারী যে পুরুষের চরিত্র, চলন ইত্যাদিতে মুগ্ধ হ’য়ে তাকে বরণ করবে

____________________________________

poison. The Jill that will make Jack the happiest mortal may make life a living hell for Tom-Hans whose presence is a heart-balm to Greatchen may make Erina wretchedly miserable.

       “If Hans is married to Gretchen they may rear a happy family of seven children. Married to any one else their lives may be miserable and childless. Dalia may imagine that she is in love with Russell, a fair youth inclined to stoutness, whereas every cell of her being calls out for Williams-long-legged and swarthy.

         “Before making his final choice, the modern lover consults sex-science. Like other sciences it is not infallible but it can prevent certain obvious blunders and repair other.”   

                                                                                       -Viereck on ‘Hirschfeld’

* “Neither money pays, nor name, nor fame, nor learning. It is character that can cleave through adamantine walls of difficulties.”

-Vivekananda

 অর্থাৎ, টাকায় কিছু হয় না, নাম-যশে কিছু হয় না, পাণ্ডিত্যে কিছু হয় না । চরিত্রই বাধাবিঘ্নের বজ্রদৃঢ় প্রাচীর ভেদ করতে পারে ।                                                                                                       —বিবেকানন্দ

বলছেন—তা’ তো উভয়ের ভিতর মেশামেশি না হ’লে হ’তে পারে না । তবে কি আপনি কোর্টশিপের পক্ষপাতী ?

      শ্রীশ্রীঠাকুর। কোর্টশিপ সর্ব্বথা পরিত্যাজ্য। যেমনতর পুরুষ যেমন সহজভাবে চলাফেরা করে, মেয়েদের যেমন চলাফেরা করা উচিত, – পুরুষ-নারী তেমন সহজভাবে চলাফেরা করবে, শিক্ষাপদ্ধতিও তেমনতর হবে । তাহলেই স্বাভাবিকভাবে লোকের যেমন admiration (শ্রদ্ধা) আসে, তেমনতর আসবে ।

_________________________________________________

       † Cf. “Under the influence of our amorous emotions, the beloved assumes an importance ludicrously out of proportion with the realities. His or her virtues are magnified, while we turn the blind spot of the mind upon our lover’s faults. The path of human passion and the path of marriage is strewn with too much wreckage to justify man’s faith in the intuitions of love.”

                                                                                 Hirschfeld-Glimpses of the Great’-Viereck

       সংক্ষিপ্ত তাৎপর্য্য এই –

      হার্শফেল্ড বলছেন—মানুষ কোর্টশিপ করিতে গিয়া যেমন ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে, তাহাতে সাময়িক প্রণয়াবেগে যুবক-যুবতীর বিচার-ক্ষমতা আচ্ছন্ন হয়, গুণগুলি অতি-রঞ্জিত হইয়া ওঠে, দোষের দিকে নজরই পড়ে না । বিবাহ-ব্যাপারে মানুষের সহজ-সংস্কারের উপর নির্ভর করিতে গেলে প্রায়শঃ বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা— শেষে সারাজীবন দুঃখভোগ করিতে হয় ।

            ‘Einstein of Sex’ বলছেন – “They may believe that they are in love with each other, whereas their temperament demands a partner of a fundamentally different type.” 

                                                                                              -Viereck on ‘Hirschfeld’

       তাহারা ভাবিতে পারে যে দুইজনই দুইজনকে ভালবাসে, অথচ তাহাদের প্রকৃতির দাবী, হয়তো

সম্পূর্ণ বিপরীত রকমের (প্রকৃতির) সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জন্য ।

                            ১৪ই এপ্রিল, ১৯৩৪                         

      প্রশ্ন । আচ্ছা,—চরিত্র, চলন, বিদ্যা, দক্ষতা, স্থৈর্য্য, নৈপুণ্য ইত্যাদি  ব্যক্তিগত

গুণ তো দেখতেই হবে, এ আমরা বুঝিও—কিন্তু বর্ণ কী ?

     শ্রীশ্রীঠাকুর । গুণ এবং কর্ম্মের continuation of culture-এ (উৎকর্ষের

ক্রমাগতিতে) heredity (বংশানুক্রমিকতা) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গুণ এবং কর্ম্মের

বিভেদই বর্ণ* ।

      প্রশ্ন । Continuation of culture মানে তো ঠিক বুঝলাম না ? 

      শ্রীশ্রীঠাকুর। Continuation of culture মানেই হ'ল তাই—যে-চিন্তা বা কর্ম্মের ধারা বংশের ভিতর কোন-একটা subject বা sphere of culture-এর

_____________________________________

        * গুণকৰ্ম্মবিভেদ-অনুযায়ী চাতুর্ব্বর্ণ্য আমি সৃষ্টি করিয়াছি । 

              ‘চাতুৰ্ব্বৰ্ণাং, ময়া সৃষ্টং গুণ-কৰ্ম্মবিভাগশঃ । ৪/১৩ — গীতা

মহাভারতের ভৃগু বলেন—

“ন বিশেষোঽস্তি বর্ণানাং সর্ব্বং ব্রাহ্মমিদং জগৎ ।

ব্রহ্মণা পূৰ্ব্বসৃষ্টং হি কৰ্ম্মভির্বর্ণতাং গতম্।' ১০,

 মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৮১ অধ্যায় 

কর্ম্মদ্বারাই নর বিভিন্ন বর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছে ।

Cf. "Heredity is an acquired fact-an experimental truth." 

                                                                'Mountain Paths'-Maurice Maeterlinck

     আর, এই বর্ণবিভেদ যে শুধু আমাদের দেশেই আছে তা' নয় । তাই লিওনার্ড ডারুইন লিখেছেন—

      “In an examination of the Census Report of 1911, the population of England was divided into eight social classes." 

       অর্থাৎ, ইংলণ্ডের ১৯১১ সালের জনগণনার রিপোর্টে প্রকাশ, ইংলণ্ডের জনসংখ্যা আটটি

সামাজিক শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়াছিল ।

        স্যার আই. এ. টমসন বলছেন—

        "Mendal discovered that certain kinds of characters behave in a particular way in inheritance. They do not blend or break up or average off, but persist in their intactness... generation after generation."

         অর্থাৎ, মেণ্ডেল আবিষ্কার করেছেন, – কতকগুলি চরিত্রগত লক্ষণ বংশানুক্রমে বরাবর

অব্যাহত, অবিকৃত অটুটভাবে সন্তান-সন্ততিদের ভিতরে বিদ্যমান থেকেই যায় । 

(বিষয়ের বা সাধনাক্ষেত্রের) গবেষণা ও কর্ম্ম নিয়ে পুরুষ-পরম্পরায় তার উন্নতির দিকে অগ্রসর করিয়ে দেয় ; আর, এইরূপ চিন্তা ও কর্মে পুরুষানুক্রমে ব্যাপৃত থাকার ফলে পরে easy instinct রূপে— সহজ-সংস্কাররূপে যা' দাঁড়ায়—তা’ই heredity বা বংশানুক্রমিক সংস্কার বা বর্ণ; আর, এইটি-ই কোনও individual-এর (ব্যক্তি-বিশেষের) permanent inborn asset — স্থায়ী সহজাত সম্পদ* ।

      প্রশ্ন । বর্ণ হইতে individual-এর বা ব্যক্তির কতটুকু বোঝা যায় ?

       শ্রীশ্রীঠাকুর । বর্ণ বা heredity হইতে মানুষের basic temperament—সত্ত্ব বা গোড়ার ধাত হয়; আর, এই basic temperament-এর উপরই culture (উৎকর্ষ), mood of personal acquisition (ব্যক্তিগত সাধনার ভঙ্গী বা রকম) and causal insight (কারণে

________________________________________

* লিওনার্ড ডারুইন বলছেন— "Somewhat the same bodily and mental characters will often keep cropping up in successive generations...Fact and theory hang together perfectly. The laws of heredity can be relied on with complete confidence."

                                                                      'What is Eugenics'-L. Darwin

         প্রায় একরূপ শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ পুরুষ-পরম্পরাক্রমে সঞ্চারিত হয়। এ সম্বন্ধে ঘটনা ও বংশানুক্রমিকতা-বাদে সম্পূর্ণ মিল আছে। বংশানুক্রমিকতার আইনের উপর নিঃসংশয়ে নির্ভর করা যাইতে পারে । 

        রাসেলও স্বীকার করেছেন – “Whatever may be thought of genius, there can be no doubt that intelligence... tends to run in families." 

       অর্থাৎ, প্রতিভার সম্বন্ধে যাহাই কেন ভাবি না, মেধা যে পরিবারের মধ্যে পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত হয় তাহাতে কোন সন্দেহ নাই ৷

      Cf. "The parent is rather the trustee than the producer of the germ-cell; or, again, the individual bodies are like the mortal pendents that fall away from the immortal neck-lace of germ-cells."

                                                                -Sir Francis Galton 

       Eugenics-এর (সুপ্রজনন-শাস্ত্রের) সৃষ্টিকর্তা স্যার ফ্রান্সিস্ গ্যালটন বলছেন—যদিও পিতামাতা হইতে জীবদেহ সৃষ্ট হয়, তথাপি তাহারা বীজকোষের ট্রাষ্টি মাত্র — স্রষ্টা নহে । বীজকোষ অমর, পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত—আর ব্যক্তির দেহ এই অমর কোষমালার ঝালরের মত । 

অন্তর্দৃষ্টি) নির্ভর করে। তাই, বিভিন্ন বর্ণের জানারও বিশেষ বিশেষ রকমফের হয় * ।

       প্রশ্ন । শাস্ত্রে কোনও বর্ণ উচ্চ বা উৎকৃষ্ট, কোনও বর্ণ নিম্ন বা নিকৃষ্ট এইরূপ ইঙ্গিত আছে। বর্ণের উৎকৃষ্টতা বা অপকৃষ্টতার ভিত্তি কোথায় ?

      শ্রীশ্রীঠাকুর । কর্ম্মের অনুসরণে গুণের উৎকর্ষ, আর এই গুণ জ্ঞান হ’তে জন্মে, আর জ্ঞানের প্রসূতিই কৰ্ম্ম । তাই, যে-যে কর্ম্ম করায় যে-যে জ্ঞান, গুণের অধিকারী হয় তার একটা ক্রমোন্নতির পারম্পর্য্য বা ধারাবাহিকতা আছে—এই হিসাবেই বর্ণ-বিভেদ । তা-হ’লেই যে-যে গুণ, জ্ঞান ও কর্ম্মের উৎকর্ষ যে-যে গুণ, জ্ঞান ও কর্ম্মে,—সেই-হিসাবেই উঁচু-নিচু বর্ণ বলা হয় ; তাই এক বর্ণ অন্য বর্ণের রক্ষক, শিক্ষক ও চালক ।

_____________________________________

“Hereditary qualities, when transmitted to another generation remain unchanged, though they may be sorted out differently.”

             ‘What is Eugenics’-L. Darwin

      অর্থাৎ, বংশানুক্রমিক গুণরাজি অপরিবর্তিতভাবে পরবর্তী পুরুষে সঞ্চারিত হয়—যদিও তাহাদের নূতন রকমের সমাবেশ হইতে পারে।

     “Professor Pearson, after working out the statistical laws of inheritance in many physical characters of men, animals and plants, has applied the same methods to what are called the mental and moral attributes......the conclusion is reached that not only bodily characters but also those of the mind are essentially determined by the hereditary endowment.”

                             ‘Heredity in the Light of Recent Research’-L. Doncaster।     

    অর্থাৎ, অধ্যাপক পিয়ারসন বংশানুক্রমিকের নিয়মাবলী মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের বাহ্যিক লক্ষণসমূহের দ্বারা গণনা করিয়া সেই প্রণালী মানসিক ও নৈতিক লক্ষণসমূহে প্রয়োগ করিয়াছেন । তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে, শুধু দৈহিক লক্ষণ নয়, মানসিক লক্ষণগুলিও উত্তরাধিকার সূত্রে বৰ্ত্তে ।                    —ডকাষ্টার                                                               

      Cf. “No doubt the direction which intellectual development takes is to a considerable extent determined by circumstances but the kind of mind is irrevocably decided before the child is born.”       

-L. Doncaster on ‘Heredity’

নবজাত শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ অনেকাংশে ঘটনাচক্রের উপর নির্ভর করিলেও তাহার ভূমিষ্ঠ হইবার পূর্ব্বেই তাহার মন কেমন হইবে তাহা অমোঘরূপে নির্ধারিত হইয়া যায়।           —ডকাষ্টার

     প্রশ্ন । তাহ'লে personal acquistion (ব্যক্তিগত সাধনা) তো heredity-র চেয়ে খাটো হ'য়ে যায়। তবে বিবাহে ব্যক্তিগত গুণের উপরেই বেশী লক্ষ্য করতে হবে, না heredity বা বর্ণ-বংশের উপরেই বেশী নজর দিতে হবে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। Heredity বা বর্ণ ও বংশের উপর তো প্রথম ও প্রধান নজর থাকবেই* । যেমন culture আছে heredity নাই, সে যেমন heredity establish করতে যাচ্ছে অথচ হয়নি, – তেমনি heredity আছে culture নাই, সে heredity নষ্ট করতে যাচ্ছে অথচ এখনও সময় আছে। তাহ'লে এই দাঁড়াচ্ছে যে, সমাজের কর্তব্যই heredity এবং culture-কে অক্ষুণ্ণ রাখা অর্থাৎ heredity নিয়ে তা'তে culture-এর সমাবেশ করা; কারণ, culture-কে heredity-তে পর্যবসিত করতে বহু সময়ের প্রয়োজন । +

    প্রশ্ন । কিন্তু মানুষ সাধারণতঃ culture বা personal acquistion-এর (ব্যক্তিগত সাধনালব্ধ গুণের) উপরেই তো বেশী নজর দেয়, মানুষের বড়-ছোট বিচার তো culture দিয়েই হয়, ব্যক্তিগত সাধনার উপরে দাঁড়ানই তো prudence (বিচক্ষণতা)। যে নিজের সাধনার দ্বারা লোকের চক্ষে মহনীয়, তা'কে বরণ করলে জীবনটা তো কাটবে ভাল। বর্ণ-বংশে নাকি কতই গোল ঢুকছে শুনতে পাই, সুতরাং তা' নিয়ে টানাটানি ক'রে বিশেষ কি লাভ হ'তে পারে ?

_________________________________________________ 

            * “বিদ্যাপ্রণাশে পুনরভ্যুপেতি 

                  জাতিপ্রণাশে ত্বিহ সৰ্ব্বনাশঃ ।”            – যাজ্ঞবল্ক্য-স্মৃতি

       বিদ্যা বিনষ্ট হইলে পুনরায় পাওয়া যায়,—জাতি হারাইলে সৰ্ব্বনাশ ।

     †‘ জাত্যুৎকর্ষঃ যুগে জ্ঞেয়ঃ সপ্তমে পঞ্চমেঽপি বা।' ১/৯৬     —যাজ্ঞবল্ক্য-সংহিতা 

      জাতি বা heredity-র উৎকর্ষ (নিম্নবর্ণীয়া স্ত্রীর গর্ভজাত কন্যাকে উচ্চতর বর্ণের পুরুষের সহিত বিবাহ দিলে ক্রমান্বয়ে) সপ্তম বা পঞ্চম জন্মে হইতে পারে। 

      Cf. Einstein said, "Being both a father and a teacher, I know we cant teach our children nothing. We can transmit to them neither our knowledge of life nor of mathematics.

     "But," I interjected, "nature crystallizes our experiences. The

experiences of one generation are the instincts of the next."

       "Ah," Einstein remarked, "that is true; but it takes nature ten thousand

    শ্রীশ্রীঠাকুর। শ্রেষ্ঠের প্রতি সহজ love and admiration ( ভক্তি ও ভালবাসা) হইতে মানুষ যখন active (কর্ম্মপরায়ণ) হইয়া ওঠে, তখনই তাহার ভিতরে সত্যিকারের culture (সাধনা ও উৎকর্ষ) grow করে (জন্মে) ; আর তাহা ভালবাসা-প্রসূত বলিয়া — তাহার being হইতে স্বতঃ-উৎসারিত বলিয়া being-এরই (সত্তারই) property (সম্পদ) হয়। ইহাই real acquisition (সত্যিকারের সাধনালব্ধ সম্পদ)। তাই, এইরূপ acquisition মানুষের being-কে mould করিয়া (গঠিত করিয়া) তোলে। আর, এইরূপ ক্রমাগত অনেক পুরুষ ধরিয়া চলিলে তখন তাহাদের seed-এ (বীজে) ঐ acquistion-এর (সাধনার) heredity (বংশানুক্রমিকতা) প্রতিষ্ঠিত হয় । আর, এই পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য হইতেছে তাহার inner temperament (অন্তনির্হিত ধাত), মানে—basic temperament (মৌলিক ধাত)। তাহা এমনতর হইয়া থাকে—তাহা জীবনের acquirement - গুলি (অর্জিত গুণগুলি) instinct-এর মতন (সহজাত সংস্কারের মতন) work (ক্রিয়া) করে। তাই, যদিও সে uncultured (সাধনাবিহীন) জীবনযাপন করে, তথাপি তাহার lower step-এ (নিম্নতর সোপানে) নামিয়া আসিতে আবার কিছু পুরুষান্তর অতিক্রম করার প্রয়োজন হইয়া দাঁড়ায়; তাই, বিবাহে heredity বা বর্ণ-বংশ প্রথম এবং প্রধান । তাই, যদি উন্নতবর্ণের এবং অন্ততঃ উন্নত বাহ্য আচরণ ও চরিত্রসম্পন্ন ব্যক্তিকে accept করিয়া (গ্রহণ করিয়া) তাহার যদি উপযুক্ত প্রকারে ইন্ধন সরবরাহ করা হয়, তাহা হইলে সে অত্যল্পকাল মধ্যে enormous culture-ওয়ালা lesser heredity-কেও অর্থাৎ বহুলসাধনাসম্পন্ন নিম্নতর বর্ণের ব্যক্তিকেও excel

_________________________________

or ten millions of years to transmit inherited experiences of characters. 

                      Glimpses of the Great'-Vierek

     আইনষ্টাইন্‌ বললেন, “আমি জনক ও শিক্ষক উভয়ই—তাই, আমি জানি আমাদের শিশুদের আমরা কিছুই শিখাইতে পারি না । জীবনের অভিজ্ঞতা বা গণিতবিদ্যা কিছুই সঞ্চারিত করিতে পারি না।”

     আমি বললাম, “প্রকৃতি নিজেই তো আমাদের অভিজ্ঞতাগুলিকে দানাকারে গাঁথিয়া তোলে । এক পুরুষের অভিজ্ঞতাই তো পরবর্ত্তী পুরুষে সহজ-সংস্কারে পরিণত হয়।”

    আইনষ্টাইন্‌ বলিলেন—“হাঁ তা সত্য। কিন্তু প্রকৃতির হাজার-হাজার-লক্ষ-লক্ষ বছর লাগে অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলিকে পুরুষানুক্রমে সঞ্চারিত করিতে।”                          —বিয়ারেক

(অতিক্রম ) করিবে তাহা সুনিশ্চিত*। আর, পাশ্চাত্ত্য-বিজ্ঞানবিদ মনীষীগণ ও নাকি ইহা বহুপ্রকারে experiment (পরীক্ষা) করিয়া প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন । †

     আর দেখুন, মানুষের culture (সাধনা) কিন্তু দুই রকমের ঃ—এক রকম inferiority complex হইতে—নিজেকে ছোট মনে করিয়া বড়র মতন প্রতিষ্ঠালাভের আকাঙ্ক্ষা হইতে, ego (অহং) oppressed বা opposed হইয়া—প্রতিহত হইয়া আরম্ভ হয় ; আর-এক রকম—মানুষের spontaneous inner hankering to fulfil অর্থাৎ, কাহাকেও সার্থক করিবার স্বতঃ-উৎসারিত অন্তর্নিহিত প্রেরণা হইতে আরম্ভ হয়—যেমন পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। যাহাদের সাধনা বা culture অহং-প্রতিহত হইয়া আরম্ভ হয়, তাহাদের সেই complex বা বৃত্তি fulfilled (সার্থক) হইয়া গেলেই যেমন ছিল তেমনি স্তরেই আসিয়া দাঁড়ায়— being (সত্তা) unaffected (অস্পষ্ট) থাকে । এ-রকম culture-কে (সাধনাকে) acquistion না বলিয়া learning (পাণ্ডিত্য) বলিলেই যেন ঠিক হয়। তাই, যে-সাধনা বা culture spontaneous অর্থাৎ স্বতঃ-উৎসারিত, heredity-ক্ষেত্রে (বংশানুক্রমিকতা-ক্ষেত্রে) তাহাই গ্রহণীয় । ‡

_______________________________

    * Cf. “Such an improvement in natural qualities would mean that our successors would have a better start in life. They would be able to do as well as we have done with less exertion, etc., etc.”                      -L. Darwin in ‘What is Eugenics’

   অর্থাৎ, স্বাভাবিক গুণের ঐ উৎকর্ষ হইতে বুঝা যাইবে – আমার উত্তরাধিকারীরা আমার চেয়ে ঢের ভাল সহজাত সম্পদ লইয়া জীবন আরম্ভ করিবে ; ফলে আমার চেয়ে ঢের কম শ্রমে আমার মত উন্নতি লাভ করিতে পারিবে।

      কবি কালিদাস, শুকদেব প্রভৃতিকে বোধ হয় ইহার দৃষ্টান্ত হিসাবে ধরা যাইতে পারে। 

  †মরিস্ মেটারলিঙ্ক প্রভৃতির উক্তি ২৩ পৃষ্ঠার foot-note-এ দ্রষ্টব্য। 

   অনেকেই জানেন, আমেরিকার স্বনামখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্যার টি এইচ্ মরগ্যান (Sir T. H. Morgan) heredity বা বর্ণকে বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়া গত বৎসর নোবেল পুরস্কার লাভ করিয়াছেন ।

       ‡ # Sir I. A. Thomson লিখেছেন— “We cannot discuss whether nature or nurture is the more important but whether changes in germinal composition count for more or less (appropriate nurture granted) than changes obviously wrought out in individuals. Galton did not depreciate the importance of nurturer for the individual; but as regards racial progress he insisted on the

   প্রশ্ন । বিবেকানন্দ বলেছেন—“উচ্চবর্ণ হইতে পারিয়া (চণ্ডাল) পৰ্য্যন্ত সকলকেই আদর্শ ব্রাহ্মণ হইতে চেষ্টা করিতে হইবে।” ব্রাহ্মণ কে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । যিনি নিজ হইতে সর্ব্বভূতে ব্যষ্টি এবং সমষ্টির ভিতর ব্রহ্মকে দেখেন, প্রত্যেক জীবকে আত্মবোধে বাঁচা এবং বৃদ্ধি পাওয়ার সংরক্ষণে সেবানিরত,—জ্ঞানের অধ্যয়ন, গবেষণা ও মানুষ যাহাতে সর্বপ্রকার উৎকর্ষে এবং উদ্বর্দ্ধনে অবাধ হইতে পারে এমনতর শিক্ষাদানে ব্যাপৃত,—যিনি উন্নতিপ্রসূ দানে মুক্তহস্ত, প্রতিগ্রহ যাঁহার পরিপুষ্টির জন্য, আদর্শে সম্যরূপে অনুপ্রাণিত, যাঁহার যাজনে তাঁহার পারিপার্শ্বিক আদর্শে ও উন্নতিতে অনুপ্রাণিত হয়, যিনি অতীব সহজভাবে জীবনযাপন করেন—তিনিই ব্রাহ্মণ। আর, যাঁহার উদ্ভব

__________________________________

exclusive value of progressive variations in constitutional vigour. Galton, therefore, insists on the mating of the best with the best and he warns us to the deterioration of good stock by sowing tares with the wheat.”

      স্যার জেমস্ টসন্ লিখেছেন — মানবের উদ্বর্দ্ধনে প্রকৃতিই বড়, না, শিক্ষা-উৎকর্ষই বড়,এরূপ বিচার করিলে কোনই ফল হইবে না । দেখিতে হইবে বীজই ব্যক্তিত্বের উন্নয়নে বেশী প্রয়োজনীয় কিনা । গ্যালটন ব্যক্তির উদ্বর্দ্ধনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করেন নাই বটে, কিন্তু জাতির উৎকর্ষে বীজেরই শ্রেষ্ঠ স্থান দিয়াছেন । তাই, গ্যালটন সুপ্রজননে উত্তমের সহিত উত্তমের মিলনের পক্ষপাতী,--আর ভাল শস্যের সহিত আগাছার মিলনে যাহাতে উৎকৃষ্টের অপকর্ষ না হয় তিনি সে-বিষয়ে আমাদের সাবধান করিয়া দিতেছেন।

   Cf. “Man must learn to tame by science the nescient waywardness which lays waste his stock.”                -Pearson 

     প্রোফেসর পিয়ারসন্ বলছেন—মানুষের উচিত, প্রকৃতির ভিতরে যে অজ্ঞেয় গোঁড়ামি আছে বিজ্ঞানের সাহায্যে তাহাকে বশে আনিতে চেষ্টা করা।

   Cf. “The kind of mind is irrevocably decided before the child is born. . . the mental powers of the child will be the same whether he had a good education or not. Of course, education is a necessary condition of the development of the mental powers, but at present we have no evidence that it adds potentialities not present at birth.”     

                                                             ‘Heredity’ – Doncaster

    অর্থাৎ, শিশুর জন্মের পূর্ব্বেই সে কি প্রকৃতি লইয়া জন্মাইবে তাহা অপরিবর্তনীয়ভাবে নির্দ্ধারিত হইয়াছে । শিশু শিক্ষিত হোক্ বা না হোক্, তাহার মানসিক শক্তিসম্পদ একই হইবে । অবশ্য, সেই সহজাত মানসিক সম্পদের সম্যক্ বিকাশ সাধনের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন, কিন্তু শিক্ষা মানুষের জন্মগত বা সহজাত শক্তি-সম্পদের সহিত কিছু যোগ করিতে পারে এমন কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নাই ।

এবম্প্রকার কুল বা বংশ হইতে হইয়া উক্ত গুণগুলি স্বতঃই যাঁহাতে উদ্দীপ্ত হইয়াছে, তিনিই প্রকৃতিপ্রসূ বর্ণ-ব্রাহ্মণ* ।

 প্রশ্ন । ক্ষত্রিয় কে ?

 শ্রীশ্রীঠাকুর। যাঁহার জ্ঞান ও গবেষণা, তপ ও আদর্শপ্রাণতা ইত্যাদি, জীবের—বিশেষতঃ মানুষের — বিপদ, বিধ্বস্তি, বেদনা— যাহা মানুষকে মরণমুখী করিয়া তোলে—তাহার রোধ ও অপসারণ করিয়া জীবনে শান্তি স্থাপন করেন তিনি ক্ষত্রিয় ; তাই বোধ হয় সর্ব্বপ্রকার ক্ষত হইতে ত্রাণ করে বলিয়া ‘ক্ষত্রিয়’ কথাটি আসিয়াছে—ক্ষত শব্দ। † ত্রৈ-ধাতু (ত্রাণ করা) হইতে ।

প্রশ্ন। আর, ‘বৈশ্য’ কাহাকে বলে ?

শ্রীশ্রীঠাকুর। যাঁহারা বেদাধ্যয়নে রত, তপঃশীল, গবেষণাপরায়ণ, গুরু বা ইষ্টানুরক্ত— যাঁহাদের কন্যা দ্বিজমাত্রের গৃহেই প্রবেশ করিতে পারে অর্থাৎ দ্বিজমাত্রেই যাঁহাদের কন্যা গ্রহণ করিয়া পুষ্টিলাভ করে— যাঁহারা ধন ও ঐশ্বর্য্য আহরণ করিয়া সেবায় সমাজ ও দেশের পুষ্টিসাধন করেন—এক কথায় ঐহিক সম্পদ্ যা’-কিছু যাঁহাদের কর্ম্মের উপর নির্ভর করে, তাঁহারা বৈশ্য । তাই মনে হয়, ‘বৈশ্য” কথাটি আসিয়াছে বিশ্-ধাতু হইতে, আর বিশ্ ধাতু মানে প্রবেশ করা। । †

___________________________________

         ★"কৰ্ম্মণা ব্রহ্মণো জাতঃ করোতি ব্রহ্মভাবনাম ।

             স্বধর্ম্মনিরতঃ শুদ্ধস্তস্মাৎ ব্রাহ্মণ উচ্যতে ।।”

                                                    —ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, গণেশখণ্ড, ৩৫ অধ্যায়

            “জাতকৰ্ম্মাদিভির্যস্তুু সংস্কারৈঃ সংস্কৃতঃ শুচিঃ 

             বেদাধ্যয়নসম্পন্নঃ যসু কৰ্ম্মস্ববস্থিতঃ। 

              শৌচাচারপরো নিত্যং বিঘসাশী গুরুপ্রিয়ঃ

             নিত্যব্রতী সত্যরতঃ স বৈ ব্রাহ্মণ উচ্যতে ।।” 

                                           —পদ্মপুরাণ, স্বর্গখণ্ড, ২৬ অধ্যায়

                                                      তথা মহাভারত, শান্তিপর্ব, ১৮২ অধ্যায় 

অর্থাৎ, যিনি ব্রহ্মকম্মদ্বারা জাত, ব্রহ্ম-ভাবনা করেন, সর্ব্বদা স্বধর্ম্মনিরত (যজন-যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন, দান, প্রতিগ্রহাদি ব্রাহ্মণকর্ম্মরত), শুদ্ধ (অর্থাৎ একাসক্ত এক চিন্তা ও কর্ম্মপরায়ণ)— তিনিই ব্রাহ্মণ ।

       জাতকৰ্ম্মাদি সমস্ত সংস্কার দ্বারা সংস্কৃত, শুচি, বেদাধ্যয়নসম্পন্ন, ষট্কর্ম্মে অবস্থিত, শৌচাচারসম্পন্ন, গুরুপ্রিয়, নিত্যব্রতী, সত্যরত— তিনি ব্রাহ্মণ ।  

                        † “বিশত্যাশু পশুভ্যশ্চ কৃষ্যাদানরুচিঃ শুচিঃ।                                         বেদ্যাধ্যয়নসম্পন্নঃ স বৈশ্য ইতি সংজ্ঞিতঃ ॥”    – পদ্মপুরাণ, ২৬ অধ্যায়

    প্রশ্ন। ‘শূদ্র’ কাহাকে বলে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । দ্বিজসেবাই যাঁহাদের ব্রত, দ্বিজসেবাই যাঁহাদের তপ, যাঁহারা সেবাতেই আত্মোৎসর্গ করিয়াছেন, সমাজের মঙ্গলপ্রদ সেবাই যাঁহাদের কাম্য, আদর্শে অনুরক্তি যাঁহাদের জীব ও জাতির সেবাকে মুখর (prominent) করিয়া তুলিয়াছে, সেবা করিয়াই যাঁহারা কৃতজ্ঞ, সেবাতেই যাঁহারা শুচি, – সেবা করিয়াই যাঁহারা জ্ঞান, গবেষণা ও অধ্যয়নের ফল লাভ করেন, —এক কথায়, সংরক্ষণের সেবাই যাঁহাদের প্রকৃতিগত এবং তাহা করিয়াই নিজেকে সংরক্ষিত, সংশোধিত ও উন্নত করেন—তাঁহারাই প্রকৃত শূদ্র ।

   প্রশ্ন । বর্ণ ও বংশ এই দুইয়ের তফাৎ কী ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর । ‘বর্ণ’ মানে classes of equicultural heredity (তুল্যরূপে উৎকর্ষিত বংশের শ্রেণী—যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ইত্যাদি), আর ‘বংশ’ মানে personal heredity (ব্যক্তিগত বংশানুক্রমিকতা)।

   প্রশ্ন । আপনি বর্ণ ও বংশের কথা বললেন। শাস্ত্রে বিবাহের গোত্রের বিচারওতো আছে—‘গোত্র’ বলতে কী বুঝায় ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর ।‘গোত্র’ মানে acquisition-এর — সাধনার ধারা—school—তা’ ছেলে-দিয়েও হ’তে পারে, শিষ্য-দিয়েও হ’তে পারে ; যেমন সংহিতায় আছে—son by birth আর son by culture.†

___________________________________________

      যে শীঘ্র প্রবেশ করে (তিন বর্ণের গৃহে), কৃষি-সেবী, গ্রহণে রুচিসম্পন্ন, শুচি এবং বেদাধ্যয়নপরায়ণ— সে-ই বৈশ্য ।

     † “দ্বয়মিহ বৈ পুরুষস্য রেতো, ব্রাহ্মণস্যোর্দ্ধং নাভেরর্ব্বাচীনং মন্যেত। তদ্ যদূর্দ্ধং নাভেস্তেনাস্যানৌরসী প্রজা জায়তে, যদুপনয়তি যৎ সাধু করোতি। অর্থাৎ  যদাচীনং নাভেস্তেনাস্যৌরসী প্রজা জায়তে।”         —বশিষ্ঠ-সংহিতা, দ্বিতীয় অধ্যায় 

    অর্থাৎ, ইহলোকে ব্রাহ্মণের নাভির উর্দ্ধস্থিত ও নাভির অধঃস্থিত এই দুই প্রকার রেত । তন্মধ্যে ঊর্দ্ধস্থিত রেতদ্বারা অর্থাৎ মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞানদ্বারা অনৌরস সন্তান উৎপন্ন হয় । এই সন্তান-উৎপত্তিকে উপনীত করা বা সাধু করা বলে, আর যাহা নাভির অধস্তন শুক্র তদ্‌দ্বারা ঔরস সন্তান উৎপন্ন হয় ।

মনু বলিতেছেন—

“উৎপাদকব্রহ্মদাত্রোর্গরীয়ান্ ব্রহ্মদঃ পিতা।

ব্রহ্মজন্ম হি বিপ্ৰস্য প্রেত্য চেহ চ শাশ্বতম্ ৷৷ ২/১৪৬

 আচাৰ্য্যস্তস্য যাং জাতিং বিধিবদ্বেদপারগঃ ।

উৎপাদয়তি সাবিত্রা সা সত্যা সাজরামরা ।।” ২/১৪৮

    প্রশ্ন । আর্য্য-ঋষিরা বিবাহ-ব্যাপারে গোত্র সম্বন্ধে এত particular (সতর্ক) হয়েছেন কেন ? সগোত্রে বিবাহের একেবারে নিষেধ কেন ? পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকগণও দেখেছি blood relatives-দের ভিতর বিবাহ-সম্বন্ধে বলেন — “We oppose the union no less strenously than the church-we oppose it however not on religious grounds but on eugenic grounds. ‘

     শ্রীশ্রীঠাকুর। সগোত্রে হইলে equal and opposite — তুল্য অথচ বিপরীতধর্মী হয় না, একটা আর-একটার reservoir হয় না, ধারণ করিতে সমর্থ হয় না। বিবাহ-মিলনে one reserves the potentiality of the other—অর্থাৎ, একজন আর-একজনের অন্তর্নিহিত শক্তির ধারক ও পোষক হয়। । সগোত্রে-বিবাহ করিলে প্রায়ই বিকলাঙ্গ সন্ততি হয়— তাই, blood-এর distance (দূরত্ব) বেশী হইলে মিলন more perfect (পূর্ণতর) হয়, তবে distance অত্যন্ত বেশী হইলে আবার আলাদা species বা জাতির মতন হয়,—সেও ভাল নয় ।

______________________________________

   অর্থাৎ, উৎপাদক (জন্মদাতা) ও ব্রহ্মদাতা এই দুই-এর মধ্যে ব্রহ্মদাতা পিতাই শ্রেষ্ঠ । বিপ্রের ব্রহ্মজন্মই ইহকালে ও পরকালে শাশ্বত ।

      বেদপারগ আচার্য্য সাবিত্রীদ্বারা যে জাতি (জন্ম) উৎপাদন করেন, তাহা অজর অমর। 

     * অর্থাৎ, যৌন-বিজ্ঞানে যিনি আইনষ্টাইন তিনি বলেছেন—সগোত্রে রক্তসম্পর্কীয়দের বিবাহের আমরা বিরোধী, বিশেষতঃ সুপ্রজননের দিক্ দিয়াই আমাদের আপত্তি। 

   †যেমন একজন ভাল গায়, আর-একজনের সেই গান সর্ব্বতোভাবে ভাল লাগে—একজন এই হিসাবে positive. আর-একজন equally negative. একজন সাজিয়া খুশী, আর-একজন সাজাইয়া এবং সজ্জিত দেখিয়া খুশী—এইরূপ হইলে পরস্পর ঠিক-ঠিক বন্ধুত্ব হয়; দু’জনই ন্যূনাধিক অসমান হইলে পরস্পরের মনের অমিল থাকবেই—বন্ধুত্ব কিছুতেই চিরস্থায়ী হবে না ।

   “Marriage between blood-relatives is apt to accentuate the weakness in the family.”

    - Hirschfeld-Viereck

     অর্থাৎ, শোণিত-সম্পর্কিতদের বিবাহ হইলে পরিবারের মধ্যে যে দুর্ব্বলতা আছে তাহারই বৃদ্ধি হওয়ার কথা।

     তাই সমস্ত সংহিতায়ই সমানার্ষপ্রবরা বা সগোত্রা কন্যার বিবাহ নিষিদ্ধ । ‘ন সগোত্রাং ন সমানার্ষপ্রবরাং ভার্য্যাৎ বিন্দেত।’ ২৪/৯ —বিষ্ণুসংহিতা 

      আবার বলছেন—“ন মাতৃতস্তু আ পঞ্চমাৎ পুরুষাৎ পিতৃতশ্চা সপ্তমাৎ ।।” ২৪/১০

      অর্থাৎ, মায়ের দিক্ দিয়া পঞ্চম ও পিতার দিক্ দিয়া সপ্তম পৰ্য্যন্ত বিবাহ নিষিদ্ধ ।

     প্রশ্ন । সবর্ণ ও অসবর্ণ বিবাহ—এই উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী প্রশস্ত ? শ্রীশ্রীঠাকুর। অসবর্ণ অনুলোম বিবাহ প্রশংসনীয় নিশ্চয়ই — যদি ছেলে-মেয়ের মিলন যেমনভাবে হওয়া উচিত তাই হয়* । তা’ছাড়া প্রথম বিবাহ

______________________________

মনু বলিতেছেন—

           “অসপিণ্ডা চ যা মাতুঃ অসগোত্রা চ যা পিতুঃ ।

             সা প্রশস্তা দ্বিজাতীনাং দারকৰ্ম্মণি মৈথুনে ।।” ৩/৫

চরক বলিতেছেন-

             “অতুল্যগোত্ৰাং বৃষ্যাঞ্চ প্রহৃষ্টাং নিরুপদ্রবাং ।

              শুদ্ধস্নাতাং ব্রজেন্নারীম অপত্যার্থী নিরাময়ঃ ।।”

                                               —চরক-চিকিৎসাস্থানম্, ২য় অধ্যায় 

    তাই বোধ হয় লিওনার্ড ডারুইন তাঁর “What is Eugenics’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন—“Sacrifices for our country’s good include the abandonment of personal pleasures and of social ambitions. The path of duty is the path to social progress.”

    অর্থাৎ, দেশের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী মাত্রেই ব্যক্তিগত সন্তোষ বা সামাজিক প্রতিষ্ঠার লালসা পরিত্যাগ

করিবেন। কর্তব্যের পথই জাতীয় উন্নতির পথ।

      ইংলণ্ড, ফ্রান্স, জাৰ্ম্মেণী প্রভৃতি সমস্ত পাশ্চাত্য সভ্যদেশের আইনেও সগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ । English Law...”The Act of 1835 states-all marriages......between persons within the prohibited degrees of consanguinity and affinity shall be absolutely null and void to all intents and purposes.”

  German Law “Marriages are void between descendants and ascendants; relatives by marriage in the ascending or descending line; brother or sister of the whole or half blood.”

  French Law “Marriage is prohibited between all ascendants and descendants in the direct line and between persons related by marriage in the same line.”-See “Encyclopaedia on Marriage.”

   * ‘অসবর্ণ অনুলোম বিবাহ’ মানে উচ্চবর্ণের বর ও নিম্নবর্ণের কন্যার বিবাহ। ব্রাহ্মণ বর—ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের কন্যা; ক্ষত্রিয় বর—বৈশ্য, শূদ্রের কন্যা; বৈশ্য বর—শূদ্র কন্যা; এইরূপ ।

    ইহার উল্টো হইলে তাহাকে ‘প্রতিলোম বিবাহ’ বলে । আৰ্য্যশাস্ত্রে এই বিবাহ বিশেষ নিন্দনীয় । ইহাতে সন্তানের শরীরও দুর্বল হয় এবং মানসিক সম্পদও হীন হয় ।

                 “শূদ্রৈব ভাৰ্য্যা শূদ্রস্য সা চ স্বা চ বিশঃ স্মৃতে । 

                  তে চ স্বা চৈব রাজ্ঞঃ স্যুঃ তাশ্চ স্বা চাগ্ৰজন্মনঃ ।।”

                                                                      —মনু ৩/১৩

    ইহাতে অনুলোম ক্রমের প্রশংসা করা হইল এবং প্রতিলোম বিবাহ অগ্রাহ্য হইল ।

সবর্ণ হওয়াই শাস্ত্রের বিধান ।†

     প্রশ্ন । অসবর্ণ অনুলোম বিবাহ প্রশংসনীয় কেন ?

     শ্রীশ্রীঠাকুর। Higher cultural heredity-র প্রতি (উচ্চবর্ণের প্রতি)

lower cultural heredity-র বা নিম্নবর্ণের একটা normal admiration (সহজ শ্রদ্ধা) থাকেই। তা’-ছাড়া, যদি মেয়েরা self-selected higher cultural heredity-কে পায়, অর্থাৎ, স্ব-মনোনীত কোন উচ্চবর্ণের পুরুষকে লাভ করে,—তাহ’লে সে admiration-এর উৎকর্ষ কতখানি active (সলীল) হ’য়ে ওঠে ভাবলেই বোঝা যায়। আর, higher cultural heredity যদি positive (পুরুষ) হয়, lower cultural heredity যদি negative (স্ত্রী) হয়, অর্থাৎ, উচ্চবর্ণের পুরুষ ও নিম্নবর্ণের স্ত্রী হয়,—তাহ’লে তাদের effect বা issue (সন্ততি) with a higher cultural temperament আর with a good strong physique—তার মানেই সুস্থ ও সবলদেহ এবং উচ্চবর্ণানুরূপ প্রকৃতিসম্পন্ন স্বভাবতঃই হ’য়ে থাকে* । তাই, সুপ্রজননের দিক দিয়ে এটা negligible নয় (তুচ্ছ নয়)। আর, সমাজের দিক-দিয়ে এই প্রকার বিবাহে প্রত্যেক বর্ণের ভিতর একটা অচ্ছেদ্য compactness (জমাট ভাব) বজায় থাকাই স্বাভাবিক। আর, এই তিন বর্ণই আর্য্যজাতি, – difference of cultural heredity-হিসাবে এই বিভাগ। অতএব, জাতির দিক-দিয়ে বা species-এর দিক-দিয়ে কোন-প্রকার বৈষম্য নেই । সুতরাং, সুপ্রজননের উৎকর্ষ

_________________________

           †তাই মনুসংহিতায় আছে— “গুরূণামনুমতঃ স্নাত্বা সমাবৃত্তো যথাবিধি ।

            উদ্বহেত দ্বিজো ভাৰ্য্যাং সবর্ণাং লক্ষণান্বিতাম্ ।।” ৩ / ৪ 

   আবার বলছেন—“সবর্ণাগ্রে দ্বিজাতীনাং প্রশস্তা দারকৰ্ম্মণি ।” 

   দ্বিজাতিদের প্রথমা স্ত্রী সবর্ণা হওয়াই প্রশস্ত ।         —মনু ৩/১২

          * “ব্রাহ্মণী-ক্ষত্ৰিয়া-বৈশ্যাসু ব্রাহ্মণাজ্জাতো ব্রাহ্মণঃ ।

             ক্ষত্রিয়ায়াস্তু যঃ পুত্রঃ ব্রাহ্মণঃ সোহপ্যসংশয়ঃ ।।

             ব্রাহ্মণ্যাং ব্রাহ্মণাজ্জাতঃ ব্রাহ্মণঃ স্যাৎ ন সংশয়ঃ ।

             ক্ষত্রিয়ায়াং তথৈব স্যাৎ বৈশ্যায়ামপি চৈব হি ।।"

                                                              —মহাভারতের দানধৰ্ম্ম 

    অর্থাৎ, ব্রাহ্মণী, ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যাতে ব্রাহ্মণ হইতে জাত সন্তান ব্রাহ্মণ। ক্ষত্রিয়ার যে পুত্র সে ব্রাহ্মণ ইহাতে সংশয় নাই । ব্রাহ্মণীতে ব্রাহ্মণ হইতে জাত নিঃসন্দেহে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়াতে জাত পুত্ৰও তাহাই—বৈশ্যাতে জাত পুত্রও তাহাই

     এমনতরভাবে বজায় থাকাই স্বাভাবিক । আরো কথা, — higher culture-এর সাথে lesser culture-এর মিলনে lesser, higher- এ পর্যবসিত হয় ; আর higher আরো higher-এর দিকে যায়—যদি higher-এর সহিত lesser-এর মিলনের ভিত্তি regard ও admiration-এর উপর দাঁড়ায়। যেমন, কোন শিক্ষক যদি কোন ছাত্রকে শিক্ষা দেন, তবে ছাত্রের উৎকর্ষের সাথে-সাথে শিক্ষকের জ্ঞানেরও উৎকর্ষ আসে—ইহা অবশ্যম্ভাবী। আমার মনে হয়, তাই ঋষিগণ অনুলোম বিবাহের এমনতরভাবে প্রশংসা করেছেন ।

    প্রশ্ন । অনুলোম বিবাহে পুত্রকন্যা কোন্ বর্ণের হইবে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । পিতৃবর্ণ অতি নিশ্চয়,—তবে একজনের যদি বিভিন্ন বর্ণের স্ত্রী থাকে, সন্তান-সন্ততির একটি পর্য্যায় (order) থাকিতে পারে মাত্র।

  প্রশ্ন । ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র—এদের কোথাও অন্নের, কোথাও-বা

অন্নজলের চল নাই। তবে অনুলোম বিবাহ কি ক’রে সম্ভব হতে পারে ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। পরস্পরের অন্নজল চিরকালই চলত—তবে higher culture, lesser-এর দ্বারা উপযুক্তভাবে অভ্যর্থিত হ’য়ে, নতুবা নয় । এরও কারণ ছিল। কারণ, যে-culture . মানুষের কাছে elevative and enlightening অর্থাৎ উন্নয়নের উদ্দীপক, তা’ যদি মানুষের কাছে cheaper (সহজলভ্য) হ’য়ে দাঁড়ায়,—তাহলে মানুষের inclination সে-দিকে থাকে না, tension of attachment relaxed হ’য়ে ওঠে, অর্থাৎ আসক্তির টান শিথিল হ’য়ে পড়ে, আর তাই attitude of worship (শ্রদ্ধা) হারিয়ে ফেলে । অতএব, তা’তে elavation (উন্নতি) না এনে আরো deterioration (অধোগতি) নিয়ে আসে,—তাই বোধহয় অমনতর ব্যবস্থা ছিল ।

    প্রশ্ন । তাহ’লে তো আমাদের জাতীয় অবনতির প্রধান কারণ বিবাহ-পদ্ধতির এই অনিয়ম । এই যদি সত্য হয়, তাহ’লে পরাধীনতার চেয়ে বিবাহ-সম্বন্ধীয় এই সামাজিক দুর্নীতিই তো জাতীয় অবনতির মুখ্য কারণ ?       

      শ্রীশ্রীঠাকুর। নিশ্চয়ই,—একশ’ বার * ।

________________________________________

       * “The family is the real social unit, and what society has to do is to promote the good of the family. And in the family woman is as completely

     প্রশ্ন । শাস্ত্রে অনুলোম বিবাহের সুখ্যাতি ও প্রতিলোম বিবাহের বিশেষ নিন্দা দেখতে পাই । কিন্তু নর-নারীর মনের মিলই যদি বিবাহের বড় condition (সর্ত্ত), তবে উচ্চবর্ণের কন্যার যদি নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে মনের মিল হয়, তবে সে-বিবাহ কেন নিন্দনীয় হবে ?

      শ্রীশ্রীঠাকুর। মানুষের মনে জ্ঞান ও অজ্ঞান দুইয়েরই সমাবেশ থাকে । জ্ঞানে উৎকর্ষ, অজ্ঞানে অপকর্ষ । মানুষ সাধারণতঃ অজ্ঞানতাবশতঃ নিকৃষ্টকে সাময়িকভাবে তাহার জীবন ও বৃদ্ধির অনুকূল বলিয়া গ্রহণ করিয়া অশেষ ব্যর্থতা এবং অবসাদে জীবন নষ্ট করিতে চাহিতে পারে—এবং সে-ভ্রান্তির ফলেরও আবার একটা পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ক্রমাগতি আছে। তাহা হইলে যাহা জীবনকে এমনতরভাবে বিব্রত করিয়া মৃত্যুর দিকে চালিত করে, এমন পাপ যাহাতে সমাজকে বিক্ষুব্ধ করিতে না পারে সেইজন্য ঋষিরা বিবাহে বর্ণ, বংশ, বিদ্যা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা ইত্যাদির বিচার করিয়া কন্যার পুরুষকে বরণ করিবার বিধি দিয়াছেন । তা’ছাড়া, প্রতিলোম বিবাহে physical deformity (দৈহিক পঙ্গুতা) প্রায়শঃই হইয়া থাকে, যেমন ধরুন, strong physique but weak nerve, dull brain (বলিষ্ঠ দেহ কিন্তু দুর্ব্বল স্নায়ু ও ক্ষীণ মস্তিষ্ক) ইত্যাদি * 

      প্রশ্ন। আচ্ছা, পুরুষ ও নারী উভয়েই শ্রেষ্ঠের প্রতি attachment (ভক্তি) *

_____________________________________________ 

supreme as is man in the state. To keep the family true, refined, affectionate, faithful is a grander task than to govern the state.” -Frederick Harrison কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যানসেলার স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও বলেছেন  —এই জাতিকে রক্ষা করিতে হইলে বিবাহ-বিধির পরিবর্তন করা দরকার।

      See ‘Modern Review-August, 1911 Cf. “Manifold and far-reaching, influencing the whole structure of society not only in this country, but in every country and at every time, have been the influences which have grown up from the root-fallacy in the marriage relation.” ‘Married Love’ - Marie Stopes

       শুধু এই দেশে নয়, সর্ব্বদেশে ও সর্বকালে – যেখানেই বিবাহ সম্বন্ধীয় গোড়ায় গলদ রহিয়াছে সেইখানেই তাহার প্রভাবে বহু দিক্ দিয়া—বহু দূর পর্যন্ত সমস্ত সমাজদেহ প্রভাবিত হইয়াছে ।

                                        — মেরী ষ্টোপ্স্

       * “অসৎসন্তস্তু বিজ্ঞেয়াঃ প্রতিলোমানুলোমজাঃ ।” 

          অর্থাৎ, প্রতিলোম বিবাহে জাত (অর্থাৎ, উচ্চবর্ণের কন্যাতে নিম্নবর্ণের পুরুষ-সংসর্গে জাত)

আনিবে কেন ? শ্রেষ্ঠকে বরণ করা এত কঠিনই বা কেন ? নিকৃষ্টকে বরণ করিলে

কী হয় ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। Superior-এ attachment -এ -শ্রেষ্ঠের প্রতি আসক্তিতে মস্তিষ্কের একটা tension (টান) লাগিয়াই থাকে, – আর, তাহারই দরুন মানুষের মস্তিষ্ক বিশেষভাবে sensitive (সাড়াপ্রবণ) হয় এবং receptive (গ্রহণক্ষম ) হয় । আর সেইজন্যেই দূরদর্শন, সম্যদর্শন ইত্যাদি ঘটিয়া থাকে ; তাই শ্রেষ্ঠে আসক্তিতে intensity (তীব্রতার) বেশী প্রয়োজন, নতুবা তাহা অল্প বাধাতেই ছিটকাইয়া যায় এবং পতন স্বাভাবিক হয়। । কিন্তু নিম্নে আসক্তিতে মনের একটা সহজ relaxation আসে, শিথিলতা আসে—তাহাতে বিশেষভাবে কোন energy-র (শক্তির) খরচ হয় না । তাই, deterioration-ও—অবনতিও সহজ হয় ;—তাই, লোকে বলে মায়ার নিম্নগমন সহজ । নিম্নে আসক্তির দরুন মানুষের energy (শক্তি) relaxation-এর (শিথিলতার) ক্রমগতিতে চালিত হয়, তার ফল অবশেষে অবসন্ন callous (সাড়াহীন) মৃত্যু । 

  প্রশ্ন। ‘বর’ বলে কেন ?

______________________________________

সন্ততি অসৎ ও অনুলোমজ (অর্থাৎ নিম্নবর্ণের কন্যাতে উচ্চবর্ণের পুরুষের) সন্ততি সৎ ।

            ‘প্রতিলোমাসু স্ত্রীষু চোৎপন্নাশ্চাভাগিনঃ ।                    বিষ্ণু-সংহিতা, ১৫/৩৬

     অর্থাৎ, প্রতিলোমা স্ত্রীতে জাত সন্তান অভাগী ।

         আবার বলছেন—‘প্রতিলোমাস্বাৰ্য্যবিগর্হিতাঃ ।'

          অর্থাৎ, প্রতিলোমাতে আর্য্যবিগর্হিত সন্ততি জন্মে।

       ‘উদ্বহে‍ৎ ক্ষত্রিয়াং বিপ্রো বৈশ্যাঞ্চ ক্ষত্রিয়ো বিশাম্ । 

     স তু  শূদ্রাং দ্বিজঃ কশ্চিন্নাধমঃ পূৰ্ব্ববৰ্ণজাম্ ৷৷’               --ব্যাস-স্মৃতি, ২/১১

 বিপ্র ক্ষত্রিয়া ও বৈশ্যাকে, ক্ষত্রিয় বৈশ্যাকে এবং বৈশ্য শূদ্রাকে বিবাহ করিবে । নিম্নবর্ণীয় পুরুষ কখনও উচ্চবর্ণের কন্যাকে বিবাহ করিবে না।

†”Transference then becomes the battle-field on which all the contending forces are to meet....all the symptoms of the patient have lost original meaning and have adapted themselves to a new meaning which is determined by its relation to transference.”

                                 ‘Introduction to Psycho-Analysis’-Sigmund Freud

      চিত্ত-বিশ্লেষকের উপরে অন্তরের অনুরাগ সংন্যস্ত হইলে রোগীর মন একটা নানাভিমুখী প্রবৃত্তির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় । রোগের সমস্ত লক্ষণ তখন পুরাতন অর্থ হারাইয়া নূতনভাবে রোগী                   —ফ্রয়েড

         শ্রীশ্রীঠাকুর। ‘বর’ মানে যাকে বরণ করা যায়,—অর্থাৎ, কন্যা যে-বংশ হইতে উদ্ভূত, সেই বংশ যাহাকে সর্বতোভাবে বরণ করিতে পারে * । কন্যা যাহাকে পূজা করিবে সেই পূজা যেন কন্যার পিতার বংশেরই হয়, অর্থাৎ, কন্যার পিতৃবংশ যাহাকে বরণ করিয়া নিজেদের উৎকর্ষের পথে চলিতে পারে।

    প্রশ্ন । আপনি সব কথাই তো বললেন কিন্তু ‘জাতি’–যা’ বলতে আমরা race বুঝি, যেমন,—Semitic, Aryan, Mongolian – বিবাহে এই জাতির কি কোন বিচার করতে হবে না ? ‘জাতি’ কী ?

      শ্রীশ্রীঠাকুর। কোন-একটা aspect-এর (দিকের) কিংবা কোন একটা বিষয়ের কোন রকমের culture ও কর্ম্ম লইয়া জাতির অভ্যুত্থান হয়—অবশ্য তাহা বহু শাখায় বিভক্ত হইয়া বহু রকমের বর্ণ, বংশ ইত্যাদির সৃষ্টি করে ; আর এই হইল ‘জাতি’।

       এই জাতিতে ওতপ্রোতভাবে এবং নানারকমে culture ও কর্ম্মের বিদ্যমানতা দেখা যায় ; সেইজন্য, eugenic aspect-এর হিসাবে (সুপ্রজননের হিসাবে) জাতি গণনীয়। যেমন, আৰ্য্য, দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয়, ইহাদের temperament (ধাত), physique (দৈহিক গঠন), attitude (ভাব), mode of culture (উৎকর্ষের ধারা) কত তফাৎ দেখিলেই বোঝা যায় ; তাই, inter-racial marriage- (আন্তর্জাতিক বিবাহে) conflicting temperament-এর – অসম বা বিরুদ্ধ ধাতের উদ্ভব হওয়া সম্ভব । ঋষিরা তাই বোধহয় জাতির দিকে অমনতর নজর দিয়াছেন ।

দ্বিজমাত্রেই আর্য্যেতর সর্ব্বজাতির কন্যা গ্রহণ করিতে পারেন—বিশেষতঃ বৈশ্যবর্ণ ; কিন্তু ঐ আর্য্যেতর কন্যা স্বতঃ ও সহজ inner hankering (আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা) হইতে উদ্ভূত শ্রদ্ধায় অবনত হইয়া যদি বরণ করে—আর, সেই দ্বিজ নিজেকে বিবেচনা করিয়া সেই আর্য্যেতর কন্যা তাঁহার পক্ষে মঙ্গলপ্রসূ এইরূপ

_______________________________________

“আরে দাদা, ‘শ্রেয়াংসি বহুবিঘ্নানি, আর ঐ বিঘ্নের গুতোয় বড় লোক তৈরী হ’য়ে যায় ।”

                                                               ‘পত্রাবলী’ – বিবেকানন্দ

                                                                           —অমরকোষঃ

* ‘দেবাদ্ বৃতে বরঃ শ্রেষ্ঠে।

      বর মানে শ্রেষ্ঠ। 

       বৃ-ধাতু মানে বরণ করা ও প্রার্থনা করা।

স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়া যদি গ্রহণ করে তবে। যে conflicting temperament-এর (বিরুদ্ধ ধাতের) সম্ভাবনার কথা বলা হইয়াছে, এই admiration from inner hankering (আন্তরিক টান হইতে উদ্ভূত শ্রদ্ধা) তাহার অনেকটা সমতা আনয়ন করিতে পারে। কারণ, মানুষের being (সত্তা) হইতে উদ্ভূত শ্রদ্ধা কাহারো উপরে ন্যস্ত হইলে তাহার being-ও (সত্তাও) সেই attitude-এ (ভাবে) mould (ছাঁচ) লয়। আর, এটা যদি বৈশ্যবর্ণের ভিতর-দিয়া through accurate filtration ( যথারীতি পরিস্রুত হইয়া) হয়, তবে তো কথাই নাই ।

প্রশ্ন । Filtration কা’কে বলছেন ?

শ্রীশ্রীঠাকুর। মনে করুন, এদেশের একজন আর্য্য একজন বৰ্ম্মী মেয়েকে বিবাহ করল । আর, আর্য্য যাহারা তাহাদের শারীরিক গঠনের বৈশিষ্ট্য—আর বর্মী আর্য্যেতর যাহারা তাহাদের শারীরিক গঠনের বৈশিষ্ট্য—এ দুইয়ের অনেক প্রভেদ, তাহা দেখিলেই বুঝিতে পারিবেন । ধরুন, আর্য্যের নাক উঁচু, আর বর্ম্মীর নাক চেপ্টা। আর্য্য পুরুষ ও বর্মী মেয়ের বিবাহে তাহাদের সন্তানদের নাক আর্য্যের চেয়ে খেঁদা, বর্ম্মীর চাইতে উঁচু এমনতরই হইয়া থাকে। আবার, এই আৰ্য্য-বৰ্ম্মী হইতে সম্ভূত কন্যাকে যদি আর একজন আর্য্য বিবাহ করে, তাহাদের হইতে ইহাদের সন্তানদের নাক আরো উঁচু হইবে । এই রকমের পাঁচ কি সাত পুরুষ পর দেখা যাইবে—হিন্দু বা আর্য্যের সর্ব্বপ্রকার বৈশিষ্ট্য ঐ সন্তানে বৰ্ত্তিয়াছে। এই-রকম physically এবং psychically (শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়া) তখন তাহাদের race (জাতি) হইল (পরিস্রুতি—ফিল্টারকরণ) মানেই এই । আৰ্য্য । Filtration

প্রশ্ন । আপনি অসবর্ণ বিবাহের কথা বলছেন কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে তো দেখি, এক বর্ণের ভিতরই বিবাহ ঠিকমত প্রচলিত নেই—যেমন, পূর্ব্ববঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের কায়স্থের মধ্যে; বারেন্দ্র, বৈদিক ও রাঢ়ী বামুনদের ভিতরও তো বিবাহ এখনও প্রচলিত নেই—অসবর্ণ তো দূরের কথা !

শ্রীশ্রীঠাকুর। না থাকিলে যাহা হয় তাহা তো হইয়াছেই,—আর ইহাতে যদি আমাদের ধর্ম্ম অর্থাৎ জীবন ও বৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ হইয়া থাকে, এরূপ চলিলে তাহা চলিবেই । যত চেষ্টাই করি, যত চেঁচামেচিই করি, আর যত লড়াই-ই করি—যাহা চাই, যেমন-করিয়া তাহা পাওয়া যায় তাহা না করিলে কিছুতেই তাহা পাইব না,—ইহা স্থিরনিশ্চয়, আর ইহা বিধির বাণী ।

        শুনিয়াছি, বিজ্ঞানবিদ্রা নাকি বলেন— ভূয়ো পরীক্ষা দ্বারা তাঁহারাও নাকি আর্য্য-ঋষিদেরই সিদ্ধান্তে স্থিরভাবে উপনীত হইয়াছেন ! যত রক্ত-সম্বন্ধে নৈকট্যে বিবাহ, প্রজননে জীবন ও বৃদ্ধি তত কম, – আর, ইহা আধুনিক দ্বিজাতির ভিতর প্রকৃষ্টরূপেই ঘটিয়াছে, তাই নাকি আজকাল এদেশের গড় আয়ু ২২ বৎসর। এমনতর চলিলে আরো কমিরে—মানুষ আরো খাটো হইবে; শেষে হয়তো ‘পুনমূষিকো ভব’—এ কথার সার্থকতা মূর্তি ধরিয়া অদূরেই বিদ্রূপভঙ্গী করিতেছে । ইহা আমরা দেখিতে পাইতেছি—ক্রমে আরো স্পষ্টতর হইবে বলিয়া মনে হয় । আর, আমি যাহা বুঝিয়াছি, যাহা জানিয়াছি, যাহা দেখিয়াছি, আপ্রাণ স্পষ্টতরভাবে যাহা আমাতে সম্ভব—তাহাই আপনাদের বলিয়াছি । যাহা বলিয়াছি। তেমনভাবে আজই যদি সমাজ তাহার পথ খুঁজিয়া লয়,—তবে হয়তো কালই দেখিতে পাইবেন, পরিবর্তন উন্নতির দিকে কিরূপ তীব্র গতিতে ছুটিতে আরম্ভ করিয়াছে। আপনারাও একটু নজর করিলেই দেখিতে পারিবেন – যে আপদ্ধর্ম্মকে আজ সমাজ স্বতোধর্ম্ম করিয়া লইয়াছে তাহার বিপরীত যেখানেই ঘটিয়াছে, তাহার ফল কিরূপ জাজ্বল্যমান — কিরূপ জীবনপ্রদ !

     এই যাহা deterioration (অবনতি) ঘটিয়াছে, তাহার একমাত্র কারণ বিবাহ-বিভ্রাট এ কথা বলিতেছি না,—কিন্তু ইহাই যে প্রধান কারণ, এ-বিষয়ে আমি স্থিরনিশ্চয় *।

_________________________________

       * Cf. “Whereas continuous and close in-breeding among the higher animals may lead to general deterioration and sterility, these consequences may be obviated and relatively infertile rejuvenated by access to a new enviromnent.”

        ‘Introduction to Sexual Physiology’-Marshall, F. R. S.

    উচ্চতর প্রাণীদিগের মধ্যে ক্রমাগত নিকট-সম্পর্কীয়দের মিলনের ফলে একটা সাধারণ অপকর্ষ এবং সন্তানহীনতা ঘটে। আর, এই অবনত ও অনুর্বর জাতিকে সঞ্জীবিত ও উর্ব্বর করিতে হইলে নূতন পারিপার্শ্বিকের সহিত মিলনের দ্বারাই তা সম্ভব ।                                     — মার্শ্যাল                   

নারীর পথে শ্রীশ্রী ঠাকুরঅনুকূল চন্দ্র 

প্রশ্নকর্তা ও পাদটীকা সংযোজক :-

শ্রীপঞ্চানন সরকার, এম-এ

#narir_pothe 

#নারীর_পথে

#দশম সংস্করণ 

#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ

🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈

Telelegram https://t.me/amritokatha

https://www.facebook.com/Amritokatha.in1?

         face book