সাধনা :-
করতে গেলে যা’-যা’ ক’রে
হাসিল তাহা হয়,
সেই চলনে চললে তবে
সাধন তা’রে কয়। ১।
ঘৃণা, লজ্জা, ভয়, মান
রুদ্ধ করে পরিত্রাণ । ২।
ধৰ্ম্মানুগ দেখলে ন্যায়
পালবি অটুট দৃঢ়তায় । ৩।
সাধ যাহার হয় যেমন দড়
সাধনাও তা’র তেমনতর। ৪।
ভাবে বলে করে না
সিদ্ধি তা’র আসে না। ৫।
তপের পথে সাধনে যায়
যোগ্যতা তা’র পিছনে ধায়। ৬।
সাধ হবে তোর যেমন তোড়ের
সাধনায়ও তেমনি,
দুঃখ-বাধা হটিয়ে দিয়ে
সিদ্ধিও পাবি অমনি । ৭।
সিদ্ধি যদি চাও—
করায় তুমি লেগে থেকে
নিরন্তরই ধাও। ৮।
সন্ধিৎসা যা’র নাই—
কিসের রে তা’র ভজন-পূজন?
বিপাক সর্ব্বদাই ! ৯।
বাধার কথা শুনিস্ নে তুই
ইষ্টপানে চল্,
শতেক অভাব মোচন হবে
বাড়বে বুকে বল । ১০।
রোখের তোড়ে বৃত্তি যখন
ধরবে তোরে ক’ষে,
সৎ কাজেতে লাফিয়ে পড়িস্
জয় পাবি তুই ব’সে। ১১।
মুগ্ধ আকুল সন্ধিৎসাতে
সার্থক তাপস টান,
এ-জন হ’তে পায় দুনিয়া
জ্ঞানচুয়ান দান । ১২।
স্বস্তিটিকে বজায় রেখে’
লক্ষ্য রেখে সৎ মহান,
তপ, দান, ধ্যান যা’ পারিস্ কর
ঐ পথেতেই অভ্যুত্থান । ১৩।
বৃত্তিনেশার অমোঘ টান
উৎসপানে ব’য়ে,
সার্থকতায় ইষ্টেতে ধায়
আত্মকর্মক্ষয়ে। ১৪।
স্বভাব রাখিস্ সুশীল-কোমল
ঝোঁকটি সৎ-এ কড়া,
হৃদয় রাখিস্ ইষ্টস্বার্থে
অটুটভাবে ধরা,
তালটি রাখিস্ চল-নজরে
এড়িয়ে বৃত্তিদায়,
এমন চালে চললে সে-জন
শ্রেয়ের দিকেই ধায় । ১৫।
অনুরাগের ঝলক-ঝোঁকে
আত্মোৎসর্গে নিবেদনে
আল্লে নতি অনুগতি
প্রেষ্ঠস্বার্থী উদ্দীপনে,
সন্ধানী এই অনুরাগে
নিয়ে সেবার সমীক্ষা
প্রেষ্ঠনীতির পথে চলাই
মন্ত্রপূত দীপন দীক্ষা । ১৬।
সৎদীক্ষা তুই এক্ষুণি নে
ইষ্টেতে রাখ সম্প্রীতি,
মরণ-তরণ এ-নাম জপে
কাটেই অকাল যমভীতি । ১৭।
দীক্ষা-বিয়ের আনুষ্ঠানিক
সাম্যভাঙ্গা মন্থরতা,
আনেই জীবন-কৰ্ম্মশালায়
মন্দ-বধির অলসতা । ১৮।
দক্ষিণা দিতে
যেমনি টান,
দক্ষতাতেও
তেমনি প্রাণ । ১৯।
দীক্ষা নিয়ে সাধ্যমত
দক্ষিণা দেয় না যে-ই।
সাধনা তা’র মর্মাহত
ব্যর্থসিদ্ধি সে-ই। ২০।
দীপ্ত সম্বেগ ফুল্লপ্রাণে
সামর্থ্যে দান যেমনটি,
দক্ষিণা সত্যি কয় তা’কেই
আর কিছু নয় তেমনটি । ২১।
ইষ্টসম্বেগ দৃপ্ত হ’য়ে
বৃত্তিরই একমুখতায়
দেওয়ার স্পৃহার উচ্চেতনে
চলৎ-স্নায়ু দীপ্তি পায়,
অমন দীপ্ত সম্বেগেতে
কাজে করলে উচ্ছ্রয়ণ
ঝোঁকসম্বেগে দক্ষ হ’য়ে
দক্ষিণায় হয় উৎক্রমণ,
এইটি হচ্ছে দক্ষিণার তুক
এ না হ’লে সবই মাটি,
বুঝে-সুঝে চল্ল্বি ঋত্বিক্
এইতো আমার কথা খাঁটি;
ভালবাসার দৃপ্ত সম্বেগ
সেবা-দানের বিচ্ছুরণে
দক্ষ হ’য়ে চলবে তখন,-
লয়ই পাবে এর বিহনে । ২২।
দক্ষিণা দেয় না দীক্ষা নেয়
দক্ষতাটি মুষড়ে’ খায়। ২৩।
আবেগভরা দক্ষিণাটি
যেমনতর দেখতে পাবে,
দীক্ষা হ’ল কার্য্যকরী
তেমনতরই বুঝা যাবে। ২৪।
প্রাণশক্তি দীপ্ত হ’য়ে
দানে করে উৎসেচন,
দক্ষিণাটির উপভোগ তাই
প্রাণের আনে উচ্ছলন। ২৫।
দক্ষতাকে উচ্চেতিয়ে
দক্ষিণাতে ফুল্ল ক’রে
তোলে না এমন আচার্য্যটি
দক্ষতাকে নিকাশ করে;
উৎস-অবশ দক্ষধারা
হ’য়ে হয় সে ঋদ্ধি-হারা
যজমানের অপ্রাতুল্যে
দু্র্ব্বিপাকে মরেই মরে । ২৬।
ঊষানিশায় মন্ত্রসাধন
চলাফেরায় জপ,
যথাসময় ইষ্টনিদেশ
মূর্ত্ত করাই তপ। ২৭।
ইষ্টপদে টান না হ’লে
জপ করিস বা কী?
জনমভোর করলেও জপ
লাভ হবে ফাঁকি! ২৮।
বৃত্তিস্বার্থী বহুরতি
বিচ্ছিন্নতায় টানে,
ইষ্টানুগ বহুরতি
তোলে ঊর্দ্ধপানে । ২৯।
জপ তখনই হয়-
জপ্যচিন্তা হৃদে রেখে
সার্থকতার পন্থা দেখে
কাজে নিছক ফুটিয়ে যবে
অর্থ উপজয়। ৩০।
তুই মনে করিস্ ধ্যান-জপ
যাজন করিস্ মুখে,
কাজে তা’দের ফুটিয়ে তুলিস্
বহিস্ জীবন সুখে। ৩১।
ইষ্টস্বার্থী প্রাণটি নিয়ে
জপ করলে রে তুই,
সার্থকতায় উঠবি ফুলে’
মলিনতা ধুই’। ৩২।
জপ করিস্ তুই পূজো করিস্
সহজ জ্ঞান তো ফুট্ল না,
ঠিকই জানিস্ জপ-পূজোর নেই
নিত্য কর্ম্মে মূর্ছনা। ৩৩।
ইষ্ট আর ইষ্টস্বার্থে
মনের আনাগোনা,
এমনি ক’রেই ধ্যানে আসে
চিত্ত-সংযোজনা । ৩৪।
পুনঃ পুনঃ সেইটি করা
যা’তে পাওয়া ফলে,
অমনতর সম্বেগকেই
ইচ্ছা করা বলে;
লক্ষ্য আছে অভীষ্টেতে
করায় ফুটে উঠল না,
উদ্দেশ্য লোকে কয় তা’রেই
ওইটি ইচ্ছার সূচনা;
কল্পনাতে পাওয়ার চিন্তা
সম্বেগেতে নেই,
ওইটি হ’ল চিন্তাটি সেই
উদ্দেশ্যেরই খেই;
ভেবে-চিন্তে বুদ্ধি ক’রে
কথায় ফোটে কাজে নয়,
মনন-করণ কয় তা’কেই
চাহিদা যা’তে উপজয় । ৩৫।
যে-বিদ্যে তোর আছে জানা
দক্ষতা যা’ মজুত,
ইষ্টার্থে তা’ লাগিয়ে যা না
বাড়বে গুণে অযুত । ৩৬।
বৃত্তিসেবার গর্ব্বী দানে
বর্দ্ধনাটা টোটে,
ইষ্টসেবী সৌকর্য্যেতে
উন্নতিটি ফোটে। ৩৭।
তুই যদি তোর ইষ্ট-পথে
চলতে নারিস্ পাকা,
তোরে ধ’রে চলছে যা’রা
তা’রাও চলবে ফাঁকা। ৩৮।
ইষ্টমুখীন অটুট টানে
মহৎ পরাক্রমে,
অভাব-বাধা অন্তরায়ের
বিনা অতিক্রমে—
কেমন ক’রে জ্ঞান হবে রে
জীবন-যশে উঠবি বেড়ে?
পরাক্রমশীল অটুট টানেই
হয় রে আসল যোগ,
ইষ্টস্বার্থ-প্রতিষ্ঠাতেই
নিত্য-নবীন ভোগ। ৩৯।
সন্ধিৎসা-পথে সেবা নিয়ে
ইষ্টস্বার্থে নজর দিয়ে
পূরণ-গড়ন পথে চলে
দীপন প্রসার মন,
জ্ঞানের যোগী তা’কেই বলে
ইষ্টতালে যে-জন চলে
গবেষণার আলোক হাতে
চলেই অনুক্ষণ। ৪০
প্রেষ্ঠ লাগি’ কৰ্ম্ম করে
তাঁ’রই স্বার্থে মন,
কাজের ফলে প্রেষ্ঠ-পূজায়
প্রীত দীপ্ত র’ন,
কর্মযোগের হয় সে যোগী
দীপনপ্রাণ সে প্রেষ্ঠ-ভোগী,
জেল্লায় তা’র জগৎ আলো
রয়ই অনুক্ষণ। ৪১।
বস্তু-হারা গুণ যেমন
ভাবতে পারা যায় না,
ব্রহ্মবিৎ বিনেও তেমনি
ব্রহ্ম পাওয়া হয় না। ৪২।
প্রেষ্ঠ-নিদেশ সম্পূরণে
যেমনতর দক্ষতা,
বৃত্তিগুলো সার্থকতায়
লভেই তেমন পক্কতা । ৪৩।
ধ্যান ভাল হয় কোথায়?
হৃদয়-আবেগ উপচে যেথা
ইষ্টপানেই ধায়। 88
ইষ্টস্বার্থই ভুল হ’ল তোর
মূর্ত্তি-চিন্তাই ধরলি,
ধ্যানটি গেল গোল্লায় কিন্তু
এমন করাই করলি! ৪৫।
সূক্ষ্ম-সার্থক বিভেদ-বিচার
সফল অনুভব,
ক্ষিপ্র চিন্তা স্মৃতি-কৰ্ম্ম,
ধ্যানেরই বিভব । ৪৬।
জয়ই যদি চাস্—
অভাব-বাধা অতিক্রমি’
ইষ্টপানে ধাস্। ৪৭।
সুফল লভি’ চলার সাথে
অভিজ্ঞতা অর্জ্জন,
অমনি করে চলাই জানিস্
সাধুর আদত লক্ষণ। ৪৮।
গুচ্ছে-গুচ্ছে বৃত্তিগুলি
ইষ্টে ন্যস্ত যতই হবে,
নিত্যনূতন ব্যক্তিত্বটা
গজিয়ে নিত্যানন্দে র’বে । ৪৯।
দীক্ষা নিয়ে নিয়মমত
চললে তবে হয় উন্নত । ৫০।
চলনহারা চরণ-পূজা
বন্ধ্যা পূজা সেই জানিস্,
আদর্শতে অটুট চলন
বর্দ্ধনা তোর তাই মানিস্। ৫১।
করার নেশায় অন্তরায়ে
যতই ক’রে অতিক্রম
অভীষ্টে হয় উপনীত—
সুখ তা’রই হয় যে-জন ক্ষম । ৫২।
কারণ-পথে করণ আসে
কারণেরই করণ-ধাঁজ,
করণ-পথের একটু আগেই
অধিষ্ঠিত কারণ রাজ। ৫৩।
তপের তোড়ে বৃত্তিগুলি
কারণে হ’লে সমাহিত,
লাখ চাহিদার অযুত টান
নির্ব্বাণে হয় নির্ব্বাপিত । ৫৪।
ভালবাসা যা’র অটুট টানে
চলে প্রেষ্ঠঝোঁকে,
আত্মসমর্পণ হয় তাহারই
বৃত্তিভেদী রোখে। ৫৫।
দরদ-ভরা ইষ্টে টান
তবেই সিদ্ধ জপ আর ধ্যান । ৫৬।
ইষ্টে চেতন ব্যক্তিত্বটা
মন্ত্রে চেতন মন,
ইষ্টভৃতে দীক্ষা চেতন
সেবায় চেতন ধন । ৫৭।
ইচ্ছাশক্তি করতে প্রবল
থাকেই যদি তোর মতি—
রোজই করিস্ ভাল যা’ তাই
বাড়িয়ে তুলিস্ তা’র গতি । ৫৮।
প্রেষ্ঠ প্রীতি-অনুরাগে
প্রেষ্ঠ-কথা বলা,
প্রেষ্ঠপ্রীতির নিছক টানে
প্রেষ্ঠ-পথে চলা,
প্রেষ্ঠ কিংবা প্রেষ্ঠ-কথায়
অভিরুচি যা’র,
যজন-যাজন হয়ই সহজ
জীবনমাঝে তা’র। ৫৯।
যেথায় থাকিস্ হ’স্ না বেহুস
করতে সন্ধ্যা-প্রার্থনা,
হ’বিই তা’তে কৰ্ম্মনিপুণ
শক্তি পাবে বর্দ্ধনা । ৬০।
পূর্ব্বঋষি উড়িয়ে দিয়ে
অভিজ্ঞতা খুঁজিস্ পাগল?
দর্শন জ্ঞান যা’কিছু তা’র
পূর্ব্বতনেই ভিত্তি অটল,
তা’কেই বেকুব করলি বাতিল
বৃত্তিস্বার্থ-পূরণ তরে,
হাওয়ার ঘড়ায় কখনও কি
যায় রে রাখা সলিল ভ’রে? ৬১।
ব্যস্ত হ’য়ে বৃত্তিরিপু
দমন করতে যতই যাবি,
ঐ বিব্রতির সুযোগ নিয়ে
তা’রাই তোরে করবে দাবী;
শোন্ রে বলি আমার কথা-
রেহাই পাবি এড়িয়ে পাক,
মন না দিয়ে ধাঁধায় ওদের
অন্য কাজে ব্যস্ত থাক্। ৬২।
সাধনারই তপ-তাপেতে
বিনিয়ে-গুছিয়ে বৃত্তিগুলি
একীকরণে ইষ্টার্থেতে
সব যা’-কিছু গেঁথে তুলি’,
সাশ্রয়ী সংহত হ’য়ে
দীপ্ত আলোয় আঁধিয়ার
প্রাণের টানের অমোঘ তাড়ায়
ক’রেই ফেলে চূর্ণীকার,
সিদ্ধ মানুষ পূরণকারী
তাঁ’কেই জানিস্ নিছক সবে,
ইষ্টানুগ জয়ের গানে
থাকেই সিক্ত সে-জন ভবে। ৬৩।
বাঁচা-বাড়ার সদাচারে
ইষ্টানুগ সংহতি,
এ ধাঁচে নয় চরিত্র যা’র
শুভে স্বতঃই বিরতি । ৬৪।
মন যা’তে তোর লেগেই থাকে
মুগ্ধ হ’য়েই রয়,
তা’রই প্রীতির চলন-বলন
প্রাপ্তি তা’কেই কয় । ৬৫।
দক্ষতাকে দখল ক’রে
প্রেষ্ঠমত্ততায়-
ক্রমাগত সৎচলনে
ভগবত্তা পায়। ৬৬।
ঈশ্বর তোরে বাসেন ভাল
স্বার্থ তা’তে কী?
তুই ভাল না বাসলে তাঁ’রে
সবই ছাইয়ে ঘি । ৬৭।
‘যদি’ ‘যেন’ যতই দিবি
প্রার্থনা আর কর্মস্থলে,
সাধ্য আবেগ সাঁতার দিয়ে
চলবে প্রায়ই ভাঁটি-জলে। ৬৮।
স্নায়ুগুচ্ছ স্থৈর্য্যঘাতী
উগ্রবীর্য্য ভোজন-পানে,
মন্দিরেতে যানে রে তুই
কী হবে তোর ভজন-ধ্যানে । ৬৯।
যজ্ঞ মানে বুঝলি কি তুই?
আদর-সেবায়-যত্নে পালা
আর্য্য ছেলের নিত্য নীতি-
পঞ্চযজ্ঞে জীবন ঢালা,
ব্রহ্মযজ্ঞ দেবযজ্ঞ
নৃযজ্ঞ আর পিতৃযজ্ঞ,
ভূতযজ্ঞে পরিস্থিতির
সেবাবর্দ্ধন করে প্রজ্ঞ । ৭০।
বৃত্তি যখন যেমনি ক’রে
চিত্তটাতে ফলিয়ে রং
কর্ম্মে করে নিয়োজিত
ধ’রে নানান কুটিল ঢং,
সেইটি দেখে খুঁজে-পেতে
বিনিয়ে চিৎত্বে ক’রে গমন
অনুতাপে দগ্ধে’ আবার
প্রায়শ্চিত্তই করে শোধন । ৭১।
সিদ্ধি ছাড়া মন্ত্র দান
মরে মারে যজমান। ৭২।
পুরুষোত্তম-আদেশ-বিধি
অভিষিক্ত করে যা’কে,
যেমনই সে হোক্ না জন—
মন্ত্রশক্তি হয় চেতন,
যখনই সে দীক্ষাদানে
ইষ্ট-যাজন ডাকে;
বিসদৃশ বৃত্তিচাপে
নিদেশ-বিধির অপলাপে,
দুর্নীতিবশ হ’য়ে যখন
ইষ্টার্থটি করে হেলন,
উৎচেতনী শক্তিটি ওই
ছাড়েই জানিস্ তা’কে। ৭৩।
সিদ্ধব্যবহারী দ্রব্য-সহ
অনুজ্ঞা যদি থাকে,
কিংবা তাঁ’দের আদেশ-লিপি
অভিষিক্ত করে যা’কে,
যেমনই সে হোক্ না জন
মন্ত্রশক্তি হয় চেতন
যখনই সে দীক্ষা দানে
ইষ্ট-যাজন ডাকে। ৭৪।
হ’লেও অজ্ঞান অবোধ জন
মন্ত্র-তাবিজ করলে ধারণ
সেই নিয়মে চললে যেমন
অনেক ব্যাধিই সারে,
ইষ্টদ্রব্যবাহী যা’রা
ইষ্টপথে চললে তা’রা
সেই চলনে শক্তি তা’দের
উছল ধারে বাড়ে। ৭৫।
লেলিহানী দীপনবেগে
চক্ষু ক’রে তীক্ষ্ণতর
আন্ ধ’রে আন্ বিধির বিধান
অবশ প্রাণটি করে খর,
দগ্ধিয়ে মার রক্তনেশার
প্রাণঘাতী যা’ অবশতা,
কর্ রে নিপাত নিপাতীবাদ
নিপাত ক’রে দুর্ব্বলতা । ৭৬।
বহ্নি-ফাগের ধমক দেখি,
হপকে যাবি তুই,
এমনি কেন ভাবিস্ বেকুব
পড়বি ওতে নুই’। ৭৭ ।
আদর-ভরা ফুল্ল বাণী
আশার পিনাক হাতে,
প্রাপ্তিটাকে আনবি ডেকে
তপের আলোকপাতে । ৭৮।
দ্বন্দ্ব-বাধা-বিঘ্ন দলি’
দক্ষ-কুশল তড়িৎ রাগে,
গুরুর আদেশ পালন যেথা
সেথায়ই তো সিদ্ধি জাগে । ৭৯।
অসীম জানিস্ সসীম হ’য়ে
সীমায় করে বাস,
সসীমেতে দেখলে অসীম
তবেই কাটে ফাঁস। ৮০।
পাওয়ার মত যদি কিছু তা’
অমর জাতিস্মর,
মরণভেদী জীবন ধ’রে
সজাগ নিরন্তর । ৮১।
প্রশ্ন যেথায় মুগ্ধ হ’য়ে
বুদ্ধ হ’তে চায়,
ঐ তো সেথায় পুরুষ-প্রবীণ
নবীন চোখে চায়। ৮২।
সাধন-পথে তপের তোড়ে
বৃত্তিগুলি যা’র
বিনিয়ে-বিনিয়ে গুচ্ছ ধ’রে
ইষ্টে সমাহার,
সাধন-সিদ্ধ তা’রেই জানিস,
কৰ্ম্মবীর সেই তো বুঝিস্,
টানের তোড়ে সাধার বলে
সিদ্ধি আসে তা’র। ৮৩।
প্রবৃত্তি যা’র সহজ চলায়
ইষ্টে স্বার্থান্বিত,
নিত্যসিদ্ধ তা’কেই জানিস্
সবারই প্রার্থিত । ৮৪।
ইষ্টটানে সেবার পানে
যা’র প্রকৃতি বয়,
সেবার পথে বৃত্তিগুলি
ইষ্টস্বার্থী হয়,
সেবায় মুখর সেই মহাজন
কর্ম্মমুখর দীপন মনন,
করার পথে সিদ্ধি পেয়ে
কৃপা-সিদ্ধ হয় । ৮৫।
প্রেষ্টপ্রীতি ক্ষুণ্ণ করে
এমন বৃত্তি-হাতছানিতে
ধায় নাকো মন নিথর চলন
লোভপ্রদ লোভানিতে,
বৃত্তি কাবু বুঝবি তখন
বিনিয়ে হ’চ্ছে নবীন গঠন
পূরণ-গড়ন-প্রস্রবণে
প্রজ্ঞাদীপ্ত নাচনীতে। ৮৬।
জীবন-মরণ দুন্দুভিতে
বাজলে রে ওই বিজয়-ডাক,
লাফ দিয়ে তুই পড় এখনো
কৰ্ম্মে বাজা সিদ্ধি-ঢাক। ৮৭।
অমৃতেরই অভিযানে
হতই যদি হ’স্,
স্বর্গ যে তোর থাকবে অটুট
জয়ে কীর্ত্তিঘোষ। ৮৮।
প্রশ্ন আমার অস্তে যাউক
রহুক যুক্তি স’রে,
তোমার ব্রত করব পালন
মরণ স্তব্ধ ক’রে। ৮৯।
এক নিয়মে একটি কারণ
রূপের উপর রূপটি ফুঁড়ে,
অবস্থানের সৃষ্টি ক’রে
হরেক রূপে চলছে উড়ে;
এক নিয়মের নানান ফেরে
কতই রূপের পরিস্থিতি,
যাচ্ছে অঢেল অবাধ ব’য়ে
এমনি চলাই তা’র প্রকৃতি;
ফুটছে রূপে চলছে রূপে
রূপেই আবার যাচ্ছে ডুবে,
ফোটা-ডোবার আবহাওয়াতে
অসীম বেগে চুপে-চুপে। ৯০।
অসীম যখন সহজ জ্ঞানে
সীমাতে ল’ন স্থান,
বৃত্তিভেদী টান হ’লে তাঁ’য়
দেখবি ভগবান । ৯১।
ঈশ্বরেরই ডাক এসেছে
তাঁ’র কাজে তোর সঙ্গতি,
যোগান দিয়ে ধন্য হ’ তুই
হোক দলিত দুৰ্ম্মতি । ৯২।
কিসের দুঃখ দৈন্য কিসের
বিষাদ বা কী, কী অবসাদ,
ইষ্টীপূত প্রাণে গা’ না
অমর রহুক আর্য্যবাদ;
পূর্ব্বতনে শ্রদ্ধা-আলোয়
পরবর্তী চিনে লও,
যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি
ধ’রে তোমার জীবন বও;
সসম্মানে বর্ণাশ্রমে
বহন কর যথারীতি,
অনুলোমী উদ্বহনে
যত্নে পালিস্ যথানীতি;
ইষ্টমুখী সেবায় করিস্
পাড়াপড়শীর উন্নয়ন,
নিতে হ’লেই করবি রে তা’র
যেটুক পারিস্ সম্পূরণ;
সদাচার করলে পালন
বাঁচা-বাড়ায় অমোঘ হয়,
প্রতিলোমে কু-এর জনম
রাষ্ট্র-সমাজ-জাতি ক্ষয়;
দশবিধ সংস্কারই
মনে রাখিস্ সত্য সার,
মরণভেদী অমর হাওয়া
আর্য্যনীতির শিষ্টাচার । ৯৩।
10