🔷 সদগুরু গ্রহণ করে কিছু যদি না করে , তবে কিছু লাভ হয় ?
🔷 ঋত্বিকের কাছ থেকে দীক্ষা না নিয়ে, বই দেখে অনুসরণ হয় না ?
🔷 মানুষের taste ( অনুরাগ ) কোথা হ'তে আসে ?
🔷 আত্মার সঙ্গে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর সম্পর্ক কী (মানুষের জন্মের কিছু রহস্য)
১৬ ই অগ্রহায়ণ , সোমবার , ১৩৪৮ ( ইং ১/১২/১৯৪১ )
তার দয়ার দরবার নিত্য অবারিত — তিনি অকাতরে বিলিয়ে চলেছেন মণি মাণিক্য , অমূল্য রত্নরাজি । কাঙ্গাল মানুষ বঞ্চিত হয় না , বিমুখ হয় না তার কাছে এসে কখনও — তাই বারেবারে আসে , ফিরে - ফিরে আসে , বিশ্বের ভাণ্ডারী যিনি , তারই কাছে — নিখিলের জ্ঞান , গুণ , প্রেম ও প্রাণের রূপায়িত বিগ্রহ যিনি , তারই কাছে ।
বীরেনদা ( ভট্টাচাৰ্য ) —সদগুরু গ্রহণ করে কিছু যদি না করে , তবে কিছু লাভ হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর - দীক্ষা গ্রহণ করে যে যে - ভাবেই চলুক , যাই করুক একটা খচখচানি লেগেই থাকে , এইটুকুই লাভ।
শৈলেনদা ( ভট্টাচাৰ্য্য ) —ঋত্বিকরা যদি কদাচারী হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে দীক্ষাও দেয় , তাতে কি লাভ হয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — ঋত্বিকদের qualification ( গুণ ) দু - রকম , এক যুক্ত , আর realised ( সিদ্ধ ) । যুক্ত মানে interested ( অন্তরসী ) , attached ( অনুরক্ত ) । যে যত interested ( অন্তরাসী ) , infusing- এ ( ইষ্ট - অনুপ্রাণনা সঞ্চারে ) সে তত successful ( কৃতকাৰ্য ) । সবাই সমান না পারলেও আচার্যের রকমটা যা ’ মাথায় থাকে , imparting- এর ( সঞ্চারণার ) সময় তার কিছু - না - কিছু ঠিকরে বেরোয়ই — তাতে কাজ হয় । তবে কদাচারী হলে অন্তরস্থিত দীপন নিপ্রভ হ'য়ে যেতে থাকে , তখন অন্যের প্রাণকে ভাল করে স্পর্শ করতে পারে না ।
প্রশ্ন— “ ঋত্বিক ' বই দেখে একজন যদি তা অনুসরণ করে , কোন ঋত্বিকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যদি দীক্ষা না নেয় , তাতে হয় না ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — তাতে হয় না । একজনের কাছ থেকে impulse ( প্রেরণা সংঘাত ) -টা পাওয়ার দরকার , সেইটকুই আদত জিনিস ।
ধূর্জটিদা ( নিয়ােগী ) —কোন বিষয়ে মানুষের taste ( অনুরাগ ) কোথা হ'তে আসে ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — যে যেমন instinct ( সহজাত সংস্কার ) ও temperament ( প্রকৃতি) নিয়ে জন্মায় এবং তার মধ্যে যেটার আবার nurturing ( পােষণ ) বেশী পায় , তার সেইটেই prominent ( প্রধান) হয়ে ওঠে । তাই শুধু জন্মগত সংস্কার থাকলেই হবে না , সেই সংস্কারের উদ্বোধনের জন্য আবার উপযুক্ত পারিবেশিক প্রেরণা চাই । এই পরিবেশিক প্রেরণার অভাবে , সুযােগ - সুবিধার অভাবে মানুষ তার অন্তর্নিহিত অনেক কিছু সম্ভাব্যতা সম্বন্ধেই সচেতন হতে পারে না , তাকে বাস্তবায়িত করা তো দূরের কথা ।
প্রফুল্ল — জন্মের ব্যাপারে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ক্রিয়া এবং অবদানের কথা বোঝা যায় , কিন্তু বাইরের একটা বায়ুভূত Soul- এর ( আত্মার ) সঙ্গে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর সম্পর্ক বা সঙ্গতি কী বা কোথায় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — স্ত্রীর যে ভাবধারা ও যেমনতর impulse ( সাড়া ) -দ্বারা পুরুষ শ্ৰীতে অনিত হয় , পুরুষের brain - centre ( মস্তি - কেন্দ্রও ) তেমনভাবে excited ( উত্তেজিত ) হয় , আর সেই সময়ই ঐ ভাবের range- এর ( সীমার ) মধ্যে যত Soul ( আত্মা ) in tune (ঐকতানিক সূত্রে ) থাকে , তারা এসে হাজির হয় । Scrotum- এর (অণ্ডকোষের ) মধ্যে যে সমস্ত Spermcells ( শুক্রাণুকোষ ) থাকে , সে - সময় সেগুলি charged ( শক্তিসত ) হ'য়ে নিয়ে life ( জীবন ) পায় অর্থাৎ ঐ আগত Soul ( জীবাত্মা ) -গুলি Spermcell ( শুক্রাণু কোষ ) -কে life ( জীবন ) দিয়ে চলৎশীল , নড়নশীল , সজীব করে তােলে , মানুষের শরীরের মধ্যে তখন একটা contraction ( আকুঞ্চন ) -এর ভাব হয় । তারপর স্ত্রী - পুরুষের মিলনের সময় তারা ovum- এর ( ডিম্বাণুর ) সঙ্গে মেশার জন্য ছুটে যায় । স্ত্রী আবার স্বামীর ভাবভঙ্গী থেকে , আচার - ব্যবহার থেকে যেমন - ভাবে impressed ( প্রভাবিত ) হয় , ovum ( ডিম্বাণু ) -ও তেমনিভাবে impressed ( প্রভাবিত হয় তার ভাবভূমির ভিত্তিতে দাড়িয়ে । অবশ্য , পুরুষও যে স্ত্রীর ভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে সে - কথা তাে পূর্বেই বলেছি । স্ত্রীর একনিষ্ঠ শ্রদ্ধাপ্লুত পরিচৰ্য্যা পুরুষকে যতখানি exalt ( উন্নীত ) ক'রে তােলে , তত উন্নত স্তরের আত্মা নেমে আসে । কিন্তু শুক্রাণুগুলি যত উন্নত স্তরের আত্মা বহন করেই অনুক না কেন , ডিম্বাণু যে - রকম impressed ( প্রভাবিত ) হয় , সেই impression ( প্রভাব ও ছাপ ) -এর সঙ্গে affinity ( সঙ্গতি ) -ওয়ালা যে শুক্রাণু থাকে তারই সঙ্গে হয় মিলন — যেন খাঁজে - খাজে প'ড়ে গেল , আর ফাক রইল না , শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিশে একটা whole entity ( গােটা সত্তা ) হয়ে গেল , তারপর cell - division ( কোষ - বিভাজন ) আরম্ভ হয় as a whole ( সামগ্রিক ভাবে ) —সেই হােল ছেলে । পুরুষ ও নারী স্বভাবতঃই যদি ঊদ্ধমুখী না হয় বাস্তব জীবনে , তবে কিছু বুদ্ধি করে ঐ সময়ে উচ্চ ভাবভূমিতে থাকতে পারে না । তাই পুরুষের ইষ্টনিষ্ঠ চলন ও স্ত্রীর ইষ্টানুগ স্বমিভক্তির উপর অত জোর দেওয়া তবে স্বামী - স্ত্রী উভয়ের মধ্যে একটা পারস্পরিকতা চাই , সঙ্গতি চাই , গভীর প্রীতি চাই , শরীর , মন , চরিত্র ও প্রকৃতির সামঞ্জস্য চাই , আর এইটে পেতে গেলে বিয়েটা হওয়া চাই বিধিমাফিক । এতখানি হলে তবেই উন্নত আত্মার আবির্ভাব সম্ভব । আর , আমার মনে হয় , প্রত্যেকটা sperm ( শুক্রাণু ) -ই micro - cosmic form- এ (ক্ষুদ্রাকারে ) এক - একটা being ( জীব ) , ও নষ্ট করা মানে micro - cosmic form- এর ( ক্ষুদ্রাকারের ) একটা মানুষ মেরে ফেলা । আমাদের বোধশক্তি ও মমত্ববােধ জাগলে তখন আর অযথা নিষ্প্রয়োজনে , নিজের সুখের জন্য , ইন্দ্রিয় - পরিতৃপ্তির জন্য লক্ষ - লক্ষ শুক্রাণু নষ্ট করে অতােগুলি soul ( আত্মা ) -কে মারতে পারবো না । নিজের জন্ম নিতে এসে বারবার যদি অমন করে মারা পড়ি , তখন কী অবস্থা হয় , সেই কথা চিন্তা করে শিউরে উঠব । অবশ্য , ডিম্বাণু যে সাধারণতঃ একটার বেশী শুক্রাণু গ্রহণ করতে পারে না এবং একটা জীবনকে রুপায়িত করে তােলার ব্যাপারে যে বহু শুক্রাণুর জীবনাহুতির প্রয়ােজন হয়ে পড়ে , প্রকৃতির এই বিধানের উপর তাে কারও কোন হাত নেই । তাই প্রজননকল্পে ছাড়া অন্য কারণে শুক্রাণু যথাসম্ভব নষ্ট না করাই উচিত । তুমি - আমি সবই তাে ঐ living sperm ( জীবন্ত শুক্রাণু ) , প্রত্যেকে ওরই উপর দাড়িয়ে গজিয়েছে , ওই আজ কত কথা কইছে , ঘুরছে , ফিরছে , হাতি - ঘােড়া মারছে । তুমি যে - দশা পছন্দ কর না , অনর্থক সে - দশায় ওদের ফেলবে ? ওরা যে তুমিই ।
10