[ P - 27 ] 📌 এক মুহূর্তে তার যা হবে — শত - শত বর্ষ জপ করেও ওদের তা ' হবে না... 📌 মানুষ যে গাঁজাখাের হয় , সে কি সহজে হয়...

🔷 এক মুহূর্তে তার যা হবে — শত - শত বর্ষ জপ করেও ওদের তা ' হবে না...

🔷 সত্যিকার গুরু যিনি , তার মধ্যে পূর্ববর্তী প্রত্যেককেই trace (বের ) করা যাবে...

🔷 তারপর অনুলোম - অসবর্ণ বিবাহের স্থগিতিও একটা মস্ত দোষ হয়েছে । 

🔷 মানুষ যে গাঁজাখাের হয় , সে কি সহজে হয়... 

   ২২ শে ভাদ্র , শনিবার , ১৩৪৭ ( ইং ৭/৬/১৯৪০ )

   আজ কলকাতা থেকে তপতীদা ( মুখােপাধ্যায় — জ্যোতির্বিদ) এসেছেন । সন্ধ্যাবেলায় শ্রীশ্রীঠাকুর হাসিমুখে বাইরের চৌকিতে শুয়ে আছেন । সামনে পদ্মায় বেশ জল এসেছে , আকাশ মেঘমুক্ত , মৃদুমন্দ বাতাস বইছে । বহু দাদা ও মায়েরা শ্রীশ্রীঠাকুরের চৌকির সামনে বসে আছেন । তপতীদার সঙ্গে কথা হচ্ছে।

       তপতীদা — আমার যখন যেটা প্রয়ােজন , কেমন জানি জুটে যায় । যখন দীক্ষার অত্যন্ত প্রয়ােজন বোধ করছিলাম — জে , হাকিমের কাছে গেলাম কাজে , হঠাৎ যোগাযোগ হয়ে গেল । 

      শ্রীশ্রীঠাকুর - দীক্ষাও হয়েছে জবর জায়গায় । 

কথায় - কথায় শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে honest , moralist ( সৎ , নীতিপরায়ণ ) সাধু বলে পরিচিত , কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে really dishonest ( সত্যই অসাধু ) —সাধুর pose ( ভড়ং ) নিয়ে চলে । একজন গুণ্ডা , বদমায়েস , লুচ্চা , জোচ্চোর তাদের

 চেয়ে ঢের ভাল -যদি কিনা বাপ - মা , ভাই - বোন , আত্মীয়স্বজন , বাড়ী - ঘর , টাকাকড়ি , নামযশ , মালমশলা , সুখ - দুঃখ — সব passion ( প্রবৃত্তি ) ছাড়িয়ে ইষ্টস্বার্থ - ইষ্টপ্রতিষ্ঠা তার কাছে বড় হয়ে ওঠে । এক মুহূর্তে তার যা হবে — শত - শত বর্ষ জপ করেও ওদের তা ' হবে না । দেখেন না , হনুমান - ও - বেটা আবার বামুনের বেশে রাবণের বাড়ী পূজো করতে যায় মৃত্যুবাণ চুরি করবার জন্য — দেখে মনে হয় , কী শয়তান । কিন্তু সবকিছু তার প্রেষ্ঠের জন্য । অমনটা আর দেখা যায় না পৃথিবীর ইতিহাসে । একেই বলে ভক্ত । 

     তপতীদা — প্রভু ! বলুন তো এ আমার কী হ'ল — সাহেব আসুক , মুসলমান আসুক , high official ( পদস্থ কর্মচারী ) আসুক , সবাইকে ভাল লাগে , কিন্তু average ( সাধারণ ) বাঙ্গালী খরিদ্দার দেখলেই যেন আমার গা জ্বালা করে । 

     শ্রীশ্রীঠাকুর গা জ্বালা করে তাে লাভ নেই , ওতে আমরা ক্ষতিগ্রস্তই হই , ওকেই সুন্দর করে নিতে হবে । দেখেন , বাঙ্গালীর মতাে এমন জান আপনি আর পাবেন না । গলদ ঢুকেছে দুটো জায়গায় , তাই যদি ঠিক করতে পারেন তবে হয় । প্রথম দোষ হচ্ছে — পূর্ববর্তীকে মনে না এমন লোককেও অমিরা গুরু ব'লে মানি — তাই বৈষ্ণব , শাক্ত , সৌর , শৈব , গাণপত্য , এ - মিশন , সে - মঠ , অমুক আশ্রম , তমুক সঘ ইত্যাদি কত দলের আবির্ভাব হয়েছে — যারা কিনা এক সূত্রে সংহত নয় । সত্যিকার গুরু যিনি , তার মধ্যে পূর্ববর্তী প্রত্যেককেই trace ( বের ) করা যাবে । একেবারে map ( মানচিত্র ) দেখার মতো , যেমন — শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখলে ধরা যাবে , এই এখানে শ্রীকৃষ্ণ , এই বুদ্ধ , এই যীশু , এই মহম্মদ , এই গৌরাঙ্গ । পরিষ্কার বোঝা যাবে সবাইকে , তার মধ্যে সবারই  দেখা মিলবে । এই না হলে তিনি গুরু হবার উপযুক্ত নন । যুগপুরুষােত্তমকে কেন্দ্র করে সমন্বয়ী সঙ্গতি অক্ষুন্ন রাখতে পারলে হাজার মতের লােক থাকলেও কিছু এসে - যাবে না । আমাদের দেশে শ্রীকৃষ্ণ বা তঞ্জাতীয় মহাপুরুষকে না মেনে , অস্বীকার বা অপমান করেও মানুষ গুরুর আসনে বসতে পারে , এর চেয়ে দুরবস্থা আর কী হতে পারে । 

    তারপর অনুলোম - অসবর্ণ বিবাহের স্থগিতিও একটা মস্ত দোষ হয়েছে । অনুলােম বিয়ে ছাড়া বর্ণগুলির মধ্যে মিল আনা দুরূহ আর প্রতিলোম যেন - তেন প্রকারেণ বন্ধ করা চাই । এক বর্ণের মধ্যেও বড় বংশের মেয়ে ছােট বংশের ছেলেকে দিলে তাতেও প্রতিলোম হয় । সদ্বংশজ ও অসদ্বংশজের মধ্যে কতকগুলি চরিত্রগত লক্ষণ আছে । নীচু বংশের হ'য়েও একজন সদ্বংশজ হতে পারে , আবার উচু বংশের হয়েও একজন অসদ্বংশজ হতে পারে । অসদ্বংশজের প্রধান দোষ হলো — তারা কাউকে শ্রদ্ধা করতে পারে না । একটু খেয়াল করলেই এ - সব instinct ( সংস্কার) বোঝা যায় । তাই মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেই দেখতে হবে , ছেলে উচু সদ্বংশজ কিনা — এ না হ'লেই , প্রতিলোম হ'লেই সর্বনাশ । প্রতিলােম এমন জিনিস যে যদি কারাে সঙ্গে ( সে একটা দেশই হােক বা পরিবারই হােক ) শত্রুতা থাকে এবং প্রতিশােধ নেবার ইচ্ছা থাকে আর সেখানে যদি কোনভাবে প্রতিলোম ঢুকিয়ে দেওয়া যায় , তাহ'লে একেবারে নিশ্চিন্ত । এর চাইতে সর্বনাশ করার সোজা পথ আর নেই । 

   ২ রা অগ্রহায়ণ , রবিবার , ১৩৪৭ ( ইং ১৭/১১/১৯৪০ ) 

   শ্রীশ্রীঠাকুর সকালে আশ্রমে ফিলান্থপি অফিসে বসে আছেন । মুখে তাঁর প্রসন্ন হাসি , চোখে তার স্নিগ্ধ দীপ্তি , অন্তরঙ্গ আত্মীয়তার সুরে উপস্থিত দাদাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন । 

      কথাপ্রসঙ্গে বললেন — যজন , যাজন , ইষ্টভৃতি ছােটবেলা থেকে অভ্যাসগত করে ফেলা লাগে , সবই অভ্যাসের ব্যাপার । মানুষ যে গাঁজাখাের হয় , সে কি সহজে হয় ? কত কষ্ট করে অভ্যাস করে । গাজা তাে খেতে আর মধুর মতাে মিঠে না , হয়তাে ঘুরেই পড়ে যায় , তবু আবার খায় , ঐ পড়াটাই ভাল লাগে —এইভাবে অভ্যাস করে । মানুষ বদ অভ্যাস কত কষ্ট করে করে , আর যজন , যাজন , ইষ্টভৃতির মতো সদভ্যাস আয়ত্ত করতে পারবে না ? এর প্রতিপদক্ষেপেই তো সুখ । 

      শ্রীশ্রীঠাকুর রাত্রে একটি ভাইকে বলছিলেন — যজন , যাজন , ইষ্টভৃতি একটু করেছিস , তাও তাে ঠিকমতাে করিসনি , তার ঠেলাতেই কত জিনিস খুলে গেছে । স্বস্ত্যয়নী যদি কেউ ঠিকভাবে করে , তার instinct ( সহজাত সংস্কার ) -এর মধ্যে যতখানি আছে ফুটে বেরবেই ।

#Alochona_prosonge_part_1

#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড 

#ষষ্ঠ_সংস্করণ 

https://www.amritokatha.in/

Telegram https://t.me/amritokatha

https://www.facebook.com/Amritokatha.in1

             face book