✧ গুরুর প্রয়োজনীয়তা....
✧ শুধু মাতৃভক্তিতে সব হয় না....
✧ সাধু কথাটা এসেছে......
✧ আর্যদের কথা....
✧ বর্ণাশ্রমের প্রয়োজনীয়তা বা লাভ...
২৯ শে আশ্বিন , সােমবার , ১৩৪৬ ( ইং ১৬/১০/১৯৩৯ )
পারিপার্শ্বিকের সেবার অজুহাতে আমরা যে অনেক সময় বাবা , মা বা গুরুজন ও পরিবারের প্রতি করণীয়ে এটি করি , সে - সম্পর্কে আজ বিকালে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছিলেন — পরিবারের কিংবা most immediate environment ( নিকটতম পরিবেশ ) —যেখান থেকে মানুষের অন্নসংস্থান হয় , তাদের সেবা না করে বাইরের সেবা করতে গেলে , সে - সেবা নিরর্থক হয়ে দাড়ায় । প্রথমতঃ সেখানকার সেবা করা দরকার — অবশ্য ত ’ তখনই ignore ( উপেক্ষা ) করা যায় যখন কিনা ইষ্টের কাজ করে আর সময় পাওয়া যায় না । সময় - সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ইষ্টের কাজের অজুহাতে কর্তব্য ও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
এরপর ভূপেশদা ( দত্ত ) একটা মােটরের ক্যাটালগ দেখাতে নিয়ে আসলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর চশমা চোখে দিয়ে পাতা উল্টিয়ে দেখতে - দেখতে বললেন আমার মাথায়ও অনেক সুন্দর - সুন্দর মডেল আসে , বলিই বা কা'কে , আর ক'রেই বা কে।
৩০ শে আশ্বিন , মঙ্গলবার , ১৩৪৬ ( ইং ১৭/১০/১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রাতে বাঁধের ধারে খড়ের ঘরে চৌকিতে বসেছিলেন— Students organisation ( ছাত্র - সংগঠন ) কেমন হওয়া উচিত , সেই সম্বন্ধে জনৈক দাদা জিজ্ঞাসা করলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - কাজ করতে - করতে যখন যে - প্রয়ােজন দেখা দেয় তার সমাধান করা ভাল — এতে জবর জিনিস হয় ।
হিটলার - মুসােলিনীর কথা উঠলাে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর গুরু না থাকলে মানুষের balance ( সমতা ) ঠিক থাকে না । শিবাজী রাজা হয়েও রামদাসকে রাজ্য দিয়ে নিজে প্রতিনিধি হিসাবে রাজত্ব চালাতো । রামদাসকে সে জুজুর মতো ভয় করতো । এ ভয়টা কিন্তু ভালবাসার অমােঘ টানে । অতাে বিপদের মধ্যে পড়েও তাই সে ঠিক ছিল — তার গায়ে একটা আঁচড় লাগেনি । মুসােলিনী ইচ্ছা করলে রাজাকে অস্বীকার করতে পারে কিন্তু তা সে করে না ।
হিটলারের কথায় বললেন — শুধু মাতৃভক্তিতে সব হয় না— fulfilling ( পরিপূরক ) একজন থাকা দরকার হয় । হোক না একটা মানুষ সামান্য নগণ্য , কিন্তু ইষ্টে তার টান যদি থাকে সে বড় হবেই । আজ একটা মানুষকে দেখছ মিটমিট করে তাকাচ্ছে , পরশু যে সে কত বড় হয়ে উঠবে তা কি তুমি বলতে পার ? মূল সম্বলটুকু থাকলে তার উন্নতি অবশ্যম্ভাবী — ঐ অনুরাগই তাকে যােগ্যতায় দিগ্বিজয়ী করে তােলে ।
কথাপ্রসঙ্গে শমুকের কথা উঠলো — শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — শমুক বর্ণাশ্রম ভেঙ্গে দিচ্ছিল , সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল । ব্রাহ্মণত্ব আমাদের প্রত্যেকের আদর্শ বটে , তা কিন্তু আমাদের বর্ণোচিত কৰ্ত্তব্যকে অবহেলা করে নয় । Instinct ( সহজাত সংস্কার ) -মাফিক কাজ করে তার ভিতর দিয়ে ব্রাহ্মণত্ব evolve ( উদ্ভিন্ন ) করাতে হয় । আমাদের জনক ক্ষত্রিয়ের কাজ ছেড়ে দেননি । একজন যদি বৈশ্য হয় , বৈশ্যের সহজাত কাজ ignore ( উপেক্ষা করে সে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করতে পারে না । আর , তাই যদি করতে যায় , সমাজে ভাঙ্গন শুরু হয় । যে - বৈশ্য বৈশ্যের কাজই করতে জানে না — সে আবার ব্রাহ্মণত্বের অধিকারী হবে কেমন করে ? যে যা ’ করক তার hereditary instinct ( জন্মগত সংস্কার ) এর উপর দাড়িয়ে করবে — তবেই সমাজ ঠিক থাকে । ক্ষত্রিয় - বৈশ্যদের মাঝে যে প্রতিঋত্বি করা হচ্ছে — তারাও কাজ করবে ঠিক ঐভাবে । অৰ্যরা acquisi . . tion- এর ( অর্জিতবিদ্যার ) চাইতে instinct ( সহজাত সংস্কার ) -কে প্রাধান্য দেয় । Instinct ( সংস্কার ) হ'লাে automatic ( স্বতঃ ) —যেমন আমাদের heart ( হার্ট ) আজকাল স্বতঃই চলে , এক সময় হয়তো এমনভাবে চলতাে না , তখন হয়তাে চেষ্টা করে চালাতে হয়েছে , আজকাল attention ( মনোযােগ ) দিই আর না - দিই , heart ( হার্ট ) চলেই ; এইরকম automatic ( স্বতঃ যে গুণ তাই instinct ( সংস্কার ) । পুরুষ - পুরুষানুক্রমিক ধরে চলতে - চলতে একটা জিনিস instinct ( সংস্কার ) -এ পর্যবসিত হয় । উজীরপুরের কামাররা এখনও নাকি হাতে যে temper ( পােলাদ ) দেয় তার তুলনা নেই — তারা নাকি পিস্তলও তৈরী করতে পারে । Instinct ( সহজাত সংস্কার ) হাজার বছরেও মরে না । বিপ্র , ক্ষত্রিয় , বৈশ্যই , দ্বিজ আর আর্য্যকৃষ্টি তে initiated aborigines- রা ( দীক্ষিত অনাৰ্যরা ) শূদ্র । তারা হাতে - কলমে কাজ করতো— practice (অনুশীলন ) বাদ দিয়ে তাদের theoretical training ( তাত্ত্বিক শিক্ষা দেওয়া হতো না) । মাথা তো পাকা নয় , কী বুঝতে কী বুঝবে , গণ্ডগােল করে ফেলবে , তার তাে ঠিক নেই । তাই এই ব্যবস্থা । •••••• ইষ্ট ও কৃষ্টির ভিত্তির উপর আজই যদি অামরা গুচ্ছ বেঁধে উঠতে পারি — কী যে করে ফেলতে পারি তার ঠিক নেই । আমাদের রক্তে সব - কিছু রয়ে গিয়েছে — চাই তার উপযুক্ত পোষণ । অনুলোম অসবর্ণ বিয়ে ও একাদর্শ গ্রহণ — এই দুটো হ'লাে সমাজের cementing factor ( সংহতির উপাদান ) । আবার তা জাগিয়ে তুলতে হবে । অামাদের কী যে ভুল - একজনকে নিন্দে করে আর - একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে যাই , তাই জাতটা হয়ে গেছে disintegrated into lumps ( টুকরাে - টুকরো বিচ্ছিন্ন ) । পূর্বতন পরিপূরণী বর্তমানকে কেন্দ্র করে যজন , যাজন , ইষ্টভৃতির উপর দাড়াতে হবে । নিজেরা করবে , অন্যকেও করাবে — এই যজন - যাজন দিয়ে যে কী করে ফেলা যায় ।
এক হাজার ঋত্বি যদি আজ বাংলার পল্লীতে - পল্লীতে যাজনে ব্রতী হয় — তারপর এক - একদল এক - এক province- এ ( প্রদেশে ) যদি বেরিয়ে যায় , জাতটা গ'ড়ে তুলতে কতদিন লাগে?
আমাদের দীপঙ্কর - এই তো বজ্রযােগিনী বাড়ী , বাঙ্গাল , যাজনের সাহায্যে তিনি কী করে ফেললেন ? বাঙ্গালী জাতির মধ্যে খাটি Aryans ( আৰ্য ) অাছে , অন্যদিকে যখন অত্যাচার আরম্ভ হয়েছিল তখন তাদের অনেকে এদিকে এসে পড়েছিল । এদের রক্ত , এদের জান যে - সে ব্যাপার নয় । আমরা তো জানিই না আমাদের নিজেদের কী ছিল — কেষ্টদা যে - সব তথ্য যােগাড় করেছেন , তা ’ শুনলে তাে অবাক হতে হয় । একগাট্টা হয়ে উঠলে এ - জাতের সঙ্গে পারা মুশকিল ।
চন্দননগরের কেষ্টদা জিজ্ঞাসা করছিলেন তার ব্যক্তিগত জীবনের কথা । শ্রীশ্রীঠাকুর — কী করতে হবে তা তাে ঠিকই অাছে । এখন— “ মারি অরি পারি যে কৌশলে ” ।
প্রফুল্ল — ঠিক আছে বলতে তাে আপনি ইষ্টস্বার্থ এবং ইষ্টপ্রতিষ্ঠার কথা বলছেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - হা , ওই হ'লো ভবসাগরের compass ( দিঙ - নির্ণয় যন্ত্র ) , কী করণীয় , ঐ দিয়েই মেপে - মেপে ঠিক করতে হবে — ও ছাড়া অার কথা নেই একটা যেন North Pole ( উত্তর মেরু ) আর একটা যেন South Pole ( দক্ষিণ মেরু ) । শুধু ইষ্টস্বার্থ দেখলেই হবে না । তুমি হয়তো দশ লাখ টাকা চুরি ক'রে ইষ্টস্বার্থ সিদ্ধ করতে পার , কিন্তু তাতে লোক বলবে যে অমুক চোরের গুরু — তাতে ইষ্টস্বার্থ সাধন হতে পারে , কিন্তু ইষ্টপ্রতিষ্ঠা হবে না এদিকে খেয়াল রাখতে হবে । এমনকি আপাতদৃষ্টিতে কোন গহিত কর্ম ক'রেও যদি ইষ্টস্বার্থ ও ইষ্টপ্রতিষ্ঠা দুই - ই অক্ষুন্ন থাকে তাহলে তাতেও মঙ্গলের অধিকারী হওয়া যেতে পারে । পাপ হ'ল তাই যা ’ নাকি পালন থেকে পতিত করে — এ - ছাড়া পাপের অার কোন মানে নেই । তারপর বললেন — কেষ্টদা যদি ঠিক করে যে পাঁচশ ' লােককে কিছুতেই পড়তে দেবে না — তাদের উন্নতির জন্য যদি আপ্রাণ চেষ্টা করে সৰ্বভাবে সেবা করে , আর এই পাঁচশ ’ লােক যদি কেষ্টদার জন্য একটা করে নিঃশ্বাস ফেলে , তাতেই কেষ্টদার ডোল ভরে যায় , তার নিজের প্রয়ােজন মিটিয়ে আরো কতজনকে পালন করতে পারে ।
প্রফুল্ল--চতুরাশ্রমের মধ্যদিয়ে যে normal ( সহজ ) সন্ন্যাস , তা ছাড়া কি সন্ন্যাস - গ্রহণ ঠিক ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — সাধু সে - ই যে কিনা সব নিষ্পন্ন করতে পারে — সাধু কথাটা এসেছে সাধ - ধাতু থেকে । Responsibility ( দায়িত্ব ) যে নেয় না , কর্তব্য যে করে না , সে আবার কিসের সাধু । সৎ - এ যার মন ন্যস্ত হয় , তার তো কর্ম ও দায়িত্ব বেড়েই যায় । অামার মনে হয় , মানুষ চতুরাশ্রমের ভিতর - দিয়ে না গেলে তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ হয় না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর গােপালদাকে ( মুখােপাধ্যায় ) ডাকতে বললেন । গোপালদা আসলে তার কাছে কয়েকটি প্রয়োজনীয় কাজের কথা বললেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর কথায় - কথায় বলছিলেন — আৰ্যদের কী রূপ তা তো আমাদের চোখে পড়ে না , তাই বুঝি না । সে - রুপ যদি আবার ফুটে ওঠে — তবেই বুঝব তাদের মর্যাদা । বর্ণোচিত সমীচীন গুণ বিকাশ হয়েছে , এমনতর বিপ্র , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য আজকাল কমই দেখতে পাওয়া যায় । বৈশ্যরা যদি ঠিক থাকতাে তাহলে কি আমাদের এই দুর্দশা হয় ? বৈশ্যরা যখন ইষ্ট ও কৃষ্টিকে ভুলে গিয়ে বিদেশী শ্বশুরদের সঙ্গে যােগ দিল — তখন থেকেই জাতির সর্বনাশ শুরু হল । বৈশ্যের বহির্দেশে বাণিজ্য করত , সেই সব দেশ থেকে মেয়ে বিয়ে ক'রে অনিত , তাদের সন্তান - সন্ততি অাবার বিপ্র , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যেরা বিয়ে করত । যতদিন বৈশ্যেরা ইষ্টকৃষ্টি - অনুগ চলনায় চলেছিল — ততদিন কোন অসুবিধা হয়নি , কিন্তু ধনমদ - মত্ততায় যখন তা বিসর্জন দিল তখন থেকেই বিপৰ্যয় আরম্ভ হ'ল ।
কেষ্টদাকে দুইজন mechanic ( কারিগর ) খুজতে বললেন , যারা ঢালাই , লেদ ইত্যাদি সব কাজ জানে । শ্রীশ্রীঠাকুর আক্ষেপ করতে লাগলেন — আমার এখানে লােকেরই অভাব , যথাস্থানে উপযুক্ত লােক পেলে কী করে ফেলতে পারতাম । লােক - অভাবে laboratory- র ( গবেষণাগারের ) instrument গুলি ( যন্ত্রপাতিগুলি ) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কারখানায় উপযুক্ত লোক পেলে হাজার লােকের পেটের ভাতের ব্যবস্থা হতে পারে । আর , এমন লােক চাই যে মাইনে নেবে না , কিন্তু সমস্ত কাজের দায়িত্ব নিয়ে সব worker ( কৰ্ম্মী ) -দের maintain ( ভরণ - পােষণ ) করবে এবং নিজের minimum ( ন্যুনতম ) যা দরকার তাই নিয়েই খুশি থাকবে । এখানে আসলে বাইরের কেউ হয়তো মাইনের লোভ দেখিয়ে তাকে বাগিয়ে নেবার চেষ্টা করবে , সে যেন তাতে না ভোলে । Institution ( প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা মুখ্য না হ'য়ে টাকা মুখ্য হলে যত বড় expert- ই ( দক্ষই ) হােক , successful ( কৃতকাৰ্য ) হওয়া দুরুহ । তারপর cool temperament ( ঠাণ্ডা মাথা ) হওয়া চাই , এখানে টিকে নানা প্রকৃতির লোক আছে , অনেকে হয়তাে তাকে অতিষ্ঠ করবে , তবু টিকে থাকার মতো শক্তি চাই , নচেৎ মুশকিল।
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
#ষষ্ঠ সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10