✧ ঠাকুর কথার মানে...
✧ luck ( ভাগ্য ) কীসের উপর নির্ভর করে...?
✧ বৃত্তি কথার মানে...
✧ মানুষের অস্তিত্ব নির্ভর করে অন্যের উপর.....
✧ মাতৃ ভক্তি ও গুরু ভক্তি....
✧ ভগবান কাকে বলব...
আলোচনা প্রসঙ্গে ১ লা কার্তিক , বুধবার , ১৩৪৬ ( ইং ১৮/১০/১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর বিকালে বাঁধের ধারে চৌকিতে । অনেকে উপস্থিত আছেন । সত্যদা ( দে ) অসুখ থেকে উঠেছেন , ভাতের ওপর দুর্নিবার টান হয়েছে । শ্রীশ্রীঠাকুরকে বললেন — আমার খুব ক্ষিদে হয়েছে , যা পথ্য ব্যবস্থা করেছেন , তা ’ খাওয়া যায় না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর বুঝলেন সত্যদা প্রকারান্তরে ভাত খাবার অনুমতিই চাইছেন , অথচ তাকে প্রতিনিবৃত্ত করতে হবে । উৎসাহ দিয়ে বলতে লাগলেন — ক্ষিদেই তাে রাজা ! ক্ষিদেই তাে লক্ষ্মী , খাওয়ার চাইতে ক্ষিদে ভাল — ক্ষিদেই তাে খায় , ক্ষিদে হ'তে থাক্ , যখন দেখবি — মুখে গন্ধ নেই , তখন তাের ভাত খাবার সময় এসেছে বুঝবি ।
সন্ধ্যায় এক ভদ্রলোক নানা প্রশ্ন করছিলেন — আমরা যত যা করি না কেন , luck ( ভাগ্য ) -এর উপর সব নির্ভর করে । একজন কত খেটেও কিছু করতে পারে না , আবার কেউ হয়তাে অল্প চেষ্টাতেই successful ( কৃতকাৰ্য ) হয়ে দাড়ায় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর- Luck ( ভাগ্য ) কিন্তু করার উপর নির্ভর করে । যে পারে না , বুঝতে হবে তার করাতেই গণ্ডগোল আছে । অদৃষ্ট মানে , আমার যে - কর্মের ফল পারিপার্শ্বিকে চারিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে আছে । Principle ( আদর্শ ) না থাকলে করাগুলির মধ্যে বিন্যাস আসে না , শৃঙ্খলা ফুটে ওঠে না , iudividuality ( ব্যক্তিত্ব ) -ই grow করে ( বাড়ে ) না , personality ( ব্যক্তিত্ব ) integrated ( সংহত ) হয় না , বৃত্তিই তাকে guide ( চালিত ) করে । বৃত্তিগুলি গােল তাই ওদের বৃত্তি বলে , মানুষ বৃত্তির বাইরে আর কিছুই দেখতে পায় না । ওই - ই হয় তার universe ( বিশ্ব ) , এর একটার সঙ্গে আর - একটার কোন যোগ নেই । যখন যেটার মধ্যে যায় তার মধ্যেই ঢুকে পড়ে থাকে । কতজনেই তাে কত খাটে , কিন্তু একটা চাষার ছেলে দেখতে - দেখতে হয়তাে minister ( মন্ত্রী ) হ'য়ে গেল — তা ’ হয় কি করে ? ওই টান । টানই সব । পৃথিবীতে এমন মানুষ দেখতে পাবেন না , ঠিক এ - কথা বলতে পারি না , যা - হোক , খুব কম মানুষই দেখতে পাবেন — যারা প্রকৃত বড় হয়েছে অথচ কোন superior beloved ( প্রেষ্ঠ ) -এর উপর active attachment সক্রিয় অনুরাগ ) নেই । অামরা history ( ইতিহাস ) পড়ি , কিন্তু একটা life ( জীবন ) -এর glowing point . ( দীপন - কেন্দ্র ) আমাদের চোখে পড়ে না — তাহলে দেখতে পেতাম যে , শ্রেয়ে অনুরাগ ছাড়া কেউ প্রকৃত বড় হয়নি ।
ভদ্রলােক — আমি একজনের উপর depend ( নির্ভর করতে যাব কেন ? আমি নিজেই তাে পারি ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — মানুষের existence ( অস্তিত্ব ) যে depend (নির্ভর) করে অন্যের উপর । আমি কিছুদিন ‘ সোহহং সােহহং ’ করতাম — ওটা যেন মানুষের ধাতে খাপ খায় না , ওতে সবকিছু নিজের উপর recoil ( প্রত্যাবর্তন ) করে । আমি ‘ সোহহং ’ তখনই বলতে পারি — যখন আর সবাইকে সেই সােহহং - এর রূপে দেখতে পারি — তা না হলে আমি ‘ সোহহং ’ আর ও - শালার কিছু না — এমন বােধ থাকলে উন্নতি হয় না । আমি বুঝি ‘ তুহং ' — তুমি বলে একজন যদি থাকে তাকে fulfil ( পূরণ ) করার urge ( আকুতি ) -এর দরুন tension ( টান ) যদি থাকে , তা থেকেই আমাদের sensitiveness ( সাড়াপ্রবণতা ) ও recepti vity ( গ্রহণক্ষমতা ) grow করে ( বাড়ে ) , তার ফলেই আমরা বড় হ'তে পারি নচেৎ সবকিছু নিজেদের উপর recoil ( প্রত্যাবর্তন করে । মোট কথা , মানুষের মধ্যে আছে libido বা সুরত । আমি ইংরাজী জানিনে , মুখ মানুষ , তবু আবার ইংরাজী কই — এই সুরত চায় যুক্ত হ'তে , এই সুরত মা , বাবা , গুরু ইত্যাদিতে ঠিকভাবে যুক্ত হবার ফলে যে - মানুষ active ( কর্মঠ ) হয়ে ওঠে , তার উন্নতি হবেই । গীতায় আছে— “ নাস্তিবুদ্ধিরযুক্তস্য , নচাযুক্তস্য ভাবনা , নচাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্ । ” আরো কী আছে তাে ? — “ যোগঃ কর্মসুকৌশলম । ” তাই না ? এই হ'লো কথা । আবার ঠাকুর কথার মানে — তিনি ঠকুর অর্থাৎ আমাদের বৃত্তির সঙ্গে আর তার সঙ্গে conflict ( সংঘাত ) বাধে ; এই conflict ( সংঘাত ) -এর ফলে আসে adjustment ( নিয়ন্ত্রণ ) ।
ভদ্রলোেক — হিটলারমুসােলিনীর মাতৃভক্তি তো বুঝি , কিন্তু গুরুভক্তি তাে দেখি না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — তেমনভাবে মাতৃভক্ত হলে তারই ঠেলা সামলান দায় তারপর তাে গুরুভক্তি । গুরুর প্রয়ােজন এইজন্য যে তিনি সব stage- এই ( স্তরেই ) guide ( পরিচালিত ) করতে পারেন , যা ’ অনন্যর দ্বারা সম্ভব নয় , —আর তাকে ভালবেসে , অনুসরণ করে আমরা দিন - দিন বড় হই । গুরুভক্তি বা মাতৃভক্তি থাকলে আপনা থেকেই motor - sensory coordination ( কর্ম ও বোধ স্নায়ুর সঙ্গতি ) আসে । এই আদিত্যকে (মুখােপাধ্যায়) দেখলে হয় ।
শ্রীকৃষ্ণের প্রসঙ্গে ভদ্রলােক বলছিলেন — তাকে বড় জোর superman ( অতিমানব ) বলতে পারি , ভগবান বলতে পারি না , হাজার হলেও তিনি মানুষ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমি কিন্তু ভগবান বলতে মানুষ বাদ দিয়ে কিছু বুঝি না— তেমন ভগবান যদি থাকেনও তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী ? তিনি আমাকে একটা তিলের নাড়ু পর্যন্ত জুটিয়ে দেন না । ভগবান বলতে বুঝি সেই মানুষ , যাঁর ভিতর ষড়ৈশ্বৰ্য্য জাগ্রত । রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে তার কবিত্ব বুঝি না — আগে মনে হয় রবীন্দ্রনাথের কথা , তারপর তার কবিত্ব । দয়া বলতে দয়াবান লোকের কথাই মনে পড়ে — দয়াবান ছাড়া দয়া থাকে কোথায় ? তা বোধ করি কেমন করে ?
পূজোর ছুটি হয়ে গেছে । আজ ষষ্ঠী । বহু লোকজন বাইরে থেকে এসেছেন — আসছেন । সুধামা’র উপর আনন্দবাজারের ভার , তার শরীর অসুস্থ । শ্রীশ্রীঠাকুরের কত চিন্তা , একবার অমর - ভাইকে ( ঘোষ ) , একবার ভূষণদাকে ( চক্রবত্তী ) , একবার গােপালদাকে ( মুখােপাধ্যায় ) , একবার এক দাসদাকে খোঁজ নিতে বলছেন , আবার টাকা যোগাড়ের চেষ্টা করছেন ।
ভূষণদা এসে বললেন - তরকারীতে কম পড়বে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর অস্থির হয়ে উঠলেন , বলতে লাগলেন — তাহ'লে কত রাত্রে খেতে দিবি । কতজন গাড়ীতে এসেছে , সারাদিন কিছু খায়নি ।
এত ব্যাপারের মধ্যে আবার প্যারীদাকে ডেকে বলছেন — প্যারী ! বড়বোঁকে (শ্রীশ্রীবড়মা ) একটা বেড - পিল দিও কিন্তু ।
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
#ষষ্ঠ সংস্করণ
https://www.amritokatha.in/
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10