নীতি :-
না ক'রে যে পেতে চায়
দুঃখ তা'র পিছে ধায় ৷ ১৷
ভাবে বলে করে না
তা'র কেউ ধারে না । ২।
'হাঁ' বলাকে এড়িয়ে চলে
পারার ঝোঁকটি পড়েই ঢ'লে । ৩।
‘না’র সাথে যা’র কোলাকুলি
‘ না’র বুকেতে পড়েই ঢুলি' । ৪।
ভাবে কয় করে না
আশা তা’র ফলে না । ৫।
শূন্যে যা’রা ঝোলে
পড়েই মাটির কোলে । ৭।
বলায় পটু কাজে কম
নিজেই হয় নিজের যম । ৮।
স্বভাব-দোষেই অভাব ঘটে
সৎক্রিয়তায় বিভব বটে । ৯।
সৎক্রিয়তার বাড়া ঝোঁক
নিপাত যাক্ অভাব-রোগ । ১০।
কৰ্জ্জে দান সঙ্গতি নাই
বাড়বে শুধু ব্যর্থতাই । ১১।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ লোভী নয় বিচক্ষণ । ১২।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ হারায় চক্ষী চলন । ১৩।
ভাল কয়, ধরে না
দুৰ্দ্দশা ছাড়ে না । ১৪।
মান ভয়ে যা'র কপট চলন
থামেই কিন্তু তা'র উন্নয়ন । ১৫।
বিপদ-কালেই আপদ-নীতি
তা' বিনে সে মরণ-নীতি । ১৬।
পেতে চাস্ তো দিতে থাকিস্
যে-অবস্থায় যেমন পারিস্ । ১৭।
বিপদ্ ভেবেই ঘাবড়ে যায়
জানিস্ আপদ্ তা’রেই খায় । ১৮।
যেটা নাই পেতে চায়
লোকে বেশী কয় তা'য় । ১৯।
অপাত্রে অযোগ্যে দান
দাতা গ্রহীতা দুই-ই ম্লান । ২০।
কৰ্ম্মহীন চিন্তা সৎ
পাথর-বাঁধা নরক-পথ । ২১।
শ্রদ্ধা-তপে যোগ্য যা’রা
দাবীর পূরণ পাবেই তা’রা । ২২।
অকৃতজ্ঞ দুর্ব্বলের
সমর্থনই হয় পাপের । ২৩।
মননে করণে মিতালি নাই
খাঁকতি জ্ঞানের সৰ্ব্বদাই । ২৪।
পণ ক'রে নেয়, দেয় না
শতেক দিলেও পায় না । ২৫।
বৃদ্ধিতে যা' হানি আনে
টেনে নেয় তা' নরক পানে । ২৬।
অপাত্রে দান সিদ্ধ নয
ওতে কিন্তু বাড়ায় ভয় । ২৭।
লাভ না দিয়ে চাওয়ার দাবী
খাওয়ায়, খায় সে স্বতঃই খাবি । ২৮।
কথায় নীতি, কাজে নয়
ভণ্ডামিতেই তা’র ক্ষয় । ২৯।
না ভজালে নিন্দা-ঘোঁট
ধরে বিপাক, করে জোট । ৩০।
স্বভাব-গুণেই অভাব নষ্ট
এটা কিন্তু খাঁটি স্পষ্ট ৷ ৩১।
পারাতে সন্দেহ যার
সে কি কভু করে?
পারগতা দূরে যায়
পথ যায় স'রে । ৩২।
বিপদে যদি বাঞ্ছা থাকে
বিপন্নতায় টান,
ভাল দেখে কাতর হ’তে
হ'য়ো রে আপ্রাণ । ৩৩।
যে-সংস্রবে শরীর-মনে
তোমার যেমন হয়,
অপরেরও ঠিক তেমনই
জেনো তা' নিশ্চয় । ৩৪।
অর্জ্জী যদি নাই হ'লি তুই
ভালমন্দ কী?
বিদ্যাবুদ্ধি লাখ থাকুক না
ছাইয়ে ঢালা ঘি । ৩৫।
হয় না যা'র—
পায় না সে,
ব্যর্থ জীবন হা-হুতাশে । ৩৬।
অভাব যদি সুভাব ভাঙ্গে
ভাবটা হ'ল কী?
ভাবের নামে করলি যা' তুই
ঢাললি ছাইয়ে ঘি । ৩৭ ৷
যেথায় যেটুক বললে তুমি
ফল পাবে সুন্দর,
সেইটুকুই তো ন্যায্য বলা
নইলে অবান্তর । ৩৮।
কী চাস্ আগে ঠিক করে নে
দ্যাখ্ সোজা পাস্ কী করে,
ওরে পাগল, বৃত্তি-মাতাল !
সৎভাবে চল্ তাই ধ'রে । ৩৯।
পথ খুঁজে তুই কাল হারালি
অনুষ্ঠানের মহড়ায়,
অনুষ্ঠানই বসলো পেয়ে
পাওয়া গেল গোল্লায় । ৪০।
বিধির নিয়ম পালবি যেমন
যতটা বা যতটুকু,
কেটে-ছেঁটে সব মিলিয়ে
পাবিও ফল ততটুকু । ৪১।
হিতের পথে মিষ্টি বোল
সুকৌশলী সমাধান,
সহ্য করে কৃতী হওয়াই
কর্ম্মফলের অবসান । ৪২।
কারু স্তুতি করবে না যে
আপন কথায় ব্যস্ত,
হামবড়ায়ী আহম্মক সে
সকল সময় ত্রস্ত । ৪৩
যা'-যা' করে চললে ভাল
সেই চলনে ধা’—
অমনতর ঠিক চলনে
আসেই সুবিধা । ৪৪।
প্রতিযোগিতায় ইতর অহং
মাথা তুলেই রয়,
প্রতিপূরণে আত্মপ্রসাদ
চিত্তপ্রসার হয় । ৪৫ ৷
তালিম মত তাল মিলিয়ে
না চললে কোন তালে,
করার ফলটি শুকিয়ে ওঠে
'না-পাওয়া ঘটে ভালে । ৪৬।
আগের করা কর্ম্ম যত
প্রসব করে ফল,
ধায়ই জানিস্ জীবের পিছু
দিয়ে বলাবল । ৪৭।
আলোচনায় বুঝ-মীমাংসা
চাহিদা ওঠে জেগে,—
পাওয়ার মতন কৰ্ম্ম করায়
আগ্রহ ছোটে বেগে । ৪৮।
পাওয়ার ধ্যান তুই যতই করিস্
করার তপটি বাদ দিয়ে,
পাওয়ার আশা বন্ধ্যা ততই
নাকাল হ'বি খেদ নিয়ে। ৪৯।
সব সময়েই ভাল কথায়
হয় না সবার আনতি,
যদি তা’দের নাই রে থাকে
মন-অবস্থার সঙ্গতি । ৫০।
প্রয়োজনে সুবিধা নেয়
স্বার্থে ক্ষতি করে,
অকৃতজ্ঞ এমন হ’তে
থাকিস্ দূরেই স’রে । ৫১।
পাওয়ার দিকে ঝোঁক দিলে তোর
করার নেশা টুটবে,
করার দিকে ঝোঁক দিলে তোর
আপনি পাওয়া ফুটবে। ৫২।
আপদ্-ধর্ম্মে বইলে জীবন
বিপদ-পায়েই থাকতে হয়,
সুপথ থাকে দূরেই স’রে
মরণ গাহে যমের জয় । ৫৩।
করার রোখটি বৃত্তি-মায়ায়
রুদ্ধ হ'য়ে পড়ে,
অভীষ্ট তা’র হয় না পূরণ
দুঃখ তারেই ধরে । ৫৪৷
তা’তেই শুধু অবাধ তুমি
যা'তেই ভাল হয়,
পারই না তা' করতে যা’তে
পরের আনে ক্ষয় । ৫৫ ৷
শুনেই বুঝিস্ করলে কিবা
হয় বেদনার ক্ষয়,
মন না বুঝে করলে সেবা
সবই ব্যর্থ হয় । ৫৬৷
লাখ ধান্দায় মনটি ব্যস্ত
ইষ্ট-ধান্দাই বইলি না,
তবুও চাস্ বিধির দয়া
মতিচ্ছন্ন বুঝলি না ! ৫৭ ৷
বেকুব বিবেচনার ফলে
অশুভ পণ করিস্ যদি
করিস্ নে তা’, বিনিয়ে বলিস্—
রাখিস্ মনে নিরবধি ৷ ৫৮।
কথাই দাও আর পণই কর
বুঝেই ক'র তা’,
বেচাল কওয়া, বেকুবী পণ
আনেই শঠতা । ৫৯।
প্রতিজ্ঞা যদি ক'রেই থাকিস্য
যদি তা' সৎ হয়,
প্রাণপণেতে পালবি সেটা
পাবি ওতেই জয় । ৬০ ।
সামর্থ্যে তোর সজাগ থেকে
দায়িত্ব নিবি যত,
জীবন হবে সহনপটু
হবিই রে উন্নত । ৬১।
দোষদৃষ্টি রাখলে পুষে
ভাবনা কিসের আর?
সত্বরই তুই শিকার হবি
ব্যর্থ প্রহেলিকার । ৬২।
কৰ্ম্মকে যে খেলিয়ে নিয়ে
ফলেই করে সমাহার,
এই ঝোঁকেতে চলন যাহার
ফলই ধারে তাহার ধার । ৬৩।
পারবি রে তুই কী?
কারু ভাল করবি না তুই
কথার চকমকি —
পাওয়ার বেলায় ন্যায়পরতা
কেবল ঝক্ঝকি ! ৬৪।
যা' ইচ্ছা তাই করবে তুমি
তা' কিন্তু রে চলবে না,
ভাল ছাড়া মন্দ করলে
পরিস্থিতি ছাড়বে না। ৬৫ ৷
সাশ্রয়ে যে কাজ করে দেয়
সুষ্ঠু সমাপন,
মন্দ দলি' খ্যাতি রটায়
হিতার্থী সে-জন। ৬৬।
সন্দেহেতে দোদুল চিত্ত
ভেবেই দেখে দোষ,
আপদ-বিপদ আনেই ডেকে
কী আছে আপসোস? । ৬৭ ।
বিপদ বাধা অন্তরায়ের
কাঁটায় ভরা ভেবেই পথ,
থেমেই যদি যাস্ রে ওরে
ভাবিস্ পূরবে মনোরথ? ৬৮।
শোনা কথায় চললে শুধু
তবেই কিন্তু ঠকবি,
কাজ-কর্ম্মে দেখবি যাহা
বুঝলি, সেটাই ধরবি । ৬৯।
মরণ-সমর মথন করে
সামাল দিয়ে সকল দিক,
দ্রষ্টা ঋষিই বক্তা নীতির—
নীতিই জাতির বাঁধন ঠিক । ৭০।
উচিত-বাদের দম্ভ কর
হিতের ধারটি ধারছ না,
এমন চলায় চললে জেনো
পাবেই পাপের লাঞ্ছনা। ৭১।
দিতে চেয়ে স্বার্থ-নেশায়
করে প্রবঞ্চনা,
দুঃখ তাহার দারুণ বেগে
আনেই লাঞ্ছনা । ৭২।
পালক যে তোর সাশ্রয়ে সে
উপচে ওঠে সেইটে কর্,
না করলে তোর বাঁচা-বাড়া
ক্রমেই যাবে যমের ঘর । ৭৩।
লোকের করায় চ'লছ বেঁচে
এটাও যেমন সত্য,
তোমার করাও তেমনি তা'দের
বাঁচা বাড়ার পথ্য। ৭৪।
যা’রই রে তুই খেয়ে মানুষ
ধারিস সদাই তাহার ধার,
দুৰ্ব্বিপাকে অমনি যাবি
চাওয়ার আগেই করবি তা’র । ৭৫।
জীবন-চলায় স্বাধীন তুমি
মরণে কিন্তু নয়,
মরণ-চলন সংক্রমণে
অন্যেরও হয় ক্ষয় । ৭৬ ৷
কামিনী-কাঞ্চন নয় রে দোষের
প্রেষ্ঠ-স্বার্থী যদি হয়,
প্রেষ্ঠ-স্বার্থে আনলে ব্যাঘাত
ত্যাগই কি তা'র উচিত নয়? । ৭৭।
বিশিষ্টকে করলে বাতিল
যম-বাঘা সব পিছু ধায়,
চলার পথে বিনা বাধায়
ঘাড় মট্কে রক্ত খায়। ৭৮।
হোস্না রে তুই কৃপণ- স্বভাব
করায় করবি পণ,
কৃপণতায় কাছিম করে
পড়শী-বিরাগ-মন । ৭৯।
ফলের নেশায় করলে রে কাজ
করার ঝোঁকটা হয় শিথিল,
নিষ্ফলতা মুচকে হেসে
বেকুব বুদ্ধি করে হাসিল । ৮০।
গণকে যদি গুরুর পূজায়
বাড়িয়ে তুলতে পারিস্,
সাফল্য তোর সামগানেতে
ভ'রেই তুলবে দিশ্ । ৮১।
হামবড়ায়ী স্পর্দ্দী নেশার
যখনই যে ব্যাঘাত হানে,
তখনই তা' মুষড়ে গিয়ে
ফোলেই ক্রোধে অভিমানে । ৮২।
ভাল-প্রয়াসী মন্দ যা'
সেও তো ভাল ঢের,
ভাল-মুখোসে মন্দ ঘৃণ্য,-
লোকে পায় না টের । ৮৩।
অর্থ যখন সবার স্বার্থ
বিশিষ্টতায় করে পূরণ,
সাম্যে ভরা সেই নীতিটা
সাম্য-নাচেই নাচে তখন । ৮৪।
উদ্ভাবনী বুদ্ধি-হারা
একঘেয়ে যা'র উপার্জ্জন
যোগ্যতাহীন বুদ্ধি বেকুব
সেই মানুষই হয় কৃপণ । ৮৫।
চিন্তা যদি একপেশে হয়
সঙ্গতি সব বাদ দিয়ে,
বুঝের মাথা ঘায়েল ক'রে
আসবে দম্ভ অবুঝ নিয়ে । ৮৬।
রোগ বা বিশেষ কারণ ছাড়া
কর্তা, চাকর আর স্বজনে
সমান খাবার, ন্যায্য তোষণ—
চলেই এমন শ্রেষ্ঠগণে। ৮৭।
একের স্থিতি অন্যের টানে
অন্যে একের পানে,
এমনি করেই সত্তা সকল
চলছে র'য়ে স্থানে। ৮৮।
যা' পেয়ে যে বাঁচাবাড়ার
চলায় যত উন্নত,
তাই বুঝে তা' করলে রে দান
সার্থক সে দান হয় তত। ৮৯।
বড়র মত চাল মারিস্ তুই
চালিয়াতি চাল ধ'রে,
অভ্যাস, ব্যবহার, দক্ষতা আন্—
নইলে বড় কী করে? । ৯০ ।
এক লহমার বেফাঁস কথা
চিন্তা, কৰ্ম্ম, আলোচনা,
ছোটেই নিয়ে পিছু-পিছু
দুরদৃষ্টের কী লাঞ্ছনা!। ৯১।
বিধির নীতির একটু ব্যাঘাত
একটু অবহেলা তা'র,
আকাশ-পাতাল তফাৎ করে,
দুঃস্থি আনে অবস্থার। ৯২।
শ্রেষ্ঠ জনে করলে প্ৰণাম
নিয়ত মাথা ঠেকিয়ে পায়,
নিজের ভাল হ'লেও কিন্তু
তাঁ'র আয়ুটি ক্ষয়েই যায়। ৯৩।
এমন তাপের করবি সৃজন
অত্যাচারের হয় নিকেশ,
অনুতপ্ত অত্যাচারীর
রয় না যা'তে পাপের লেশ। ৯৪।
যে দায়িত্ব নেবে যাহার
ঝটিতি কর তা’,
কথা দিলেই করবে যা’তে
রয় না কৃতঘ্নতা। ৯৫।
যুক্তি-কারণ না বাতলে তুই
উড়িয়ে দিস্ না কারু কিছু,
বাতলে শুভ মন্দে বাতিল
করলে আসে শুভই পিছু। ৯৬।
পুরাতনের চর্য্যা নিয়ে
নূতনে ক'রে স্থিতি,
আদর্শেতে চলবি সাধু—
এই তো চলার নীতি। ৯৭।
দান ক'রে যে হরণ করে
কিংবা বেশী লয়,
কুহক-ঝরা কুদিন এসে
সকলই করে ক্ষয়। ৯৮।
বিধি কিন্তু নয়কো জ্ঞানী,
নয়কো জ্যান্ত, নয় চেতন—
ইষ্টানুগ বেত্তা-জ্ঞানীর
জ্ঞানেই বিধির নিয়ন্ত্রণ। ৯৯।
বিধির নীতির একটু বেচাল
একটু বেসামাল,
দক্ষতাহীন শিথিল চলন
ভাঙ্গেই জীবন-তাল। ১০০।
নিন্দা-কথায় কান দেয় যে
মোকাবিলায় মিলায় না,
অনাহৃত পাতিত্য পায়
শুভ তা'রে চালায় না। ১০১।
জীবনধারার সহজ ঝোঁকেই
ধ'রে চলা নীতির পথ,
বৃত্তিমুখর প্ররোচনা
বাঁকিয়ে ধরায় নীতি অসৎ। ১০২।
অসৎ কর্ম্ম করবি না আর
প্রায়শ্চিত্তে শুদ্ধ হ’বি,
এই নীতিতে অপকৰ্ম্মীর
পরিত্রাণে যত্ন ল’বি। ১০৩।
কারু বিষয় ভালমন্দ
বুঝলেও কিন্তু মনে বেশ,
বলতে বলিস্ হিসেব ক'রে
নইলে পাবি শুধুই দ্বেষ। ১০৪।
কাজ ও কথায় অমিল যেথায়
লোক-ভাঁড়ান গোপন চলন,
এমন চলায় নিছক জানিস্লু
কিয়ে আছে কুটিল পতন। ১০৫।
ভাল বললেও উল্টো বোঝে
রূঢ় ভাষায় প্রতিদান,
স্বর্গও যদি মৰ্ত্তে আসে
তৃপ্তিতে তা'র নাইকো স্থান। ১০৬।
কুহক-বিধুর কৃতজ্ঞতা,
ন্যায়পরতা, নীতির টান,
ইষ্টহারা অনর্থেতে
করেই জীবন অবসান। ১০৭ ।
মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন যে
বিশ্বাসঘাতক,
তা'র সঙ্গ সাহচর্য্য
অনন্ত নরক। ১০৮।
যেমন করায় যা' ফল মেলে
তেমনি যদি না কর তা’,
প্রাপ্তিপথে ব্যাঘাত আসে
দুঃখ-সহ ব্যর্থতা। ১০৯।
চিন্তাগুলি কৰ্ম্মে যতই
বিচ্ছুরিয়ে মূর্ত্ত হয়,
মগজটা তোর অমনি হ’লেই
উত্তেজনা-মুক্ত রয়। ১১০।
উপদেশ আর বুদ্ধিদানই
আত্মপ্রসাদ যা'র আনে,
রিক্ত-কর্ম্মা এমন জনার
সার্থকতা নাই প্রাণে। ১১১।
যে সময়ে লাগবে যা’-যা’
গুছিয়ে আগেই ব্যবস্থিতি,
করে সদা তৈরী থাকা
দক্ষকৃতীর স্বভাব-নীতি। ১১২।
অর্জ্জনাকে বাড়তি রেখে
ব্যয়টাকে কর নিয়ন্ত্রণ,
এমনতর চলিস্ যদি
চলনা পাবে স্থিত-চলন। ১১৩।
বুকের পাঁজর চূর্ণ ক'রেও
সুখী করার সব প্রয়াস,
এক লহমার চলা-বলা
ঘৃণ্য হ'লেই সব নিকাশ। ১১৪
সজাগ সন্ধিৎসা নিয়ে
চলাই ভাল সৰ্ব্বদাই'
কোন্ অবস্থায় কীই বা ভাল
আগাম ভেবে করবি তাই। ১১৫।
শাস্তি দেওয়ায় শান্তি যদি
নাই আনতে পারে,
মাছি-বওয়া সংক্রমণায়
শাস্তি ছিটবে না রে ? ১১৬।
তাচ্ছিল্যই যদি থাকে—
অবুঝ হ'তে ভাবনা কিসের?
ব'সে পাবি তুই তা’কে ! ১১৭।
যে-ভাব নিয়েই থাকিস্ না—
সেই ভাবেরই দক্ষতাতে
চবি রে তুই জানিস্ না? ১১৮।
স্মৃতির বুকে অযুত নীতির
হীরক-মাণিক জ্বলে
সেইটি বুঝে কুড়িয়ে পড়িস্
সুফল যাতে ফলে। ১১৯।
অস্তিত্ব সহ আদর্শকে
সার্থক পূরণ করে,
এইটি বুঝে কহিস্ করিস্
ঠকবি নাকো পরে। ১২০।
পাওয়া-দেওয়ার মাঝখানে—
চলে জীবন পুষ্টি পেয়ে
স্বস্তি-পায়ে-সাবধানে। ১২১।
শোক যদি রে তুলতে পারে
করায় বলায় স্বর্গপানে,
তবেই তা’কে রাখবি ধ'রে—
নইলে ছিঁড়িস্ সটান টানে। ১২২।
‘না’ সুন্দরী বধূ যা’র
‘হয় না' যা’র শালা,
অলক্ষ্মী তা’র ঘরে গিয়ে
সব করেছে কালা। ১২৩।
তামিলদারী বুদ্ধি যাহার
পুষ্টপ্রখর ক্ষিপ্র হয়,
হুকুমদারী তা’রই সাজে
শক্তি গাহে তা'রই জয়। ১২৪।
গুণগ্রাহিতা-মুখর হয়ে
স্নেহপূর্ণ শাসন সেবায়,
সুফল চলায় জীবন চলে
দাঁড়িয়ে দীপন প্রতিষ্ঠায়। ১২৫।
ভাবের আবেগ রুদ্ধ হ'য়ে
অভিব্যক্ত নাই হ'লে,
ভাবটা যে তোর নিথর হবে
উঠবে না স্বভাব ফলে। ১২৬।
লোক-ক্ষুধা মিটল রে যেই
আদর-সেবা করলি না,
মর্য্যাদা যে ডুবল রে তোর
সম্পদে পা ফেললি না। ১২৭।
উৎস যা’ তোর রক্ষণা তা’র
সুখ-সুবিধার চেষ্টা
যেই হারালি, ভর-জীবনে
ঘুচবে না তোর তেষ্টা। ১২৮।
ইষ্টাদর্শে পায়ে দ’লে
যেই গোলামী ভজে—
জীবনপথে হরেক কাঁটা
লোভে বংশ মজে। ১২৯।
সুচিন্তাতেই বিভোর র’লি
করলি না তো কাজে—
নরক-পথটি শ্বেত পাথরে
বাঁধলি ব’সে বাজে! ১৩০।
কোন-কিছুর ভারটি নিয়ে
যদিই তা' শেষ করতে নারিস,
না-পারায় তুই বিবশ হ'য়ে
ভূতের মত ছুটবি জানিস্। ১৩১।
নীতি দাবী করে না কারু
স্বস্তি-নেশাই নীতিকে ডাকে,
নীতি ধ’রেই বাঁচা, বাড়া
ওঠেই বেড়ে বাধার ফাঁকে। ১৩২।
ইষ্টস্বার্থ অটুট রেখে
যে-কৰ্ম্মেই না জুটলি,
সেবার পরশ পেয়েই তেমনি
গোলামিত্বে টুটলি। ১৩৩।
জন্ম নেছ একা কিন্তু
পরিস্থিতির মধ্যে,
বাঁচা-বাড়া রয়েছে তাই
তাহাদেরই সাধ্যে। ১৩৪।
ভৃত্যেরে তুই ভাবলি আপন
ভর্তারে বাদ দিয়ে?
ভর্তারই দান ভৃত্যে জোগায়
দেখ্ কৃতঘ্ন চেয়ে! ১৩৫।
যা' ব'লে কিছু নিবি কারু
করবি হ’য়ে অকপট,
না করলে তুই ঝুলিয়ে দিলি
লাভের পথে অন্ধপট। ১৩৬।
অসৎত্তরা অন্যায় যা'
উৎখাতে তা'র পুণ্য তোর !
প্রশ্রয় বা ঔদাসীন্যে
জানিস্ কিন্তু নরক ঘোর। ১৩৭।
কসরতেতে সংযমী যেই
হ'তেই যাবি তুই,
কোন্ ফাঁকে তা’র বাঁধন ভেঙ্গে
ফেলবে তোরে নুই'। ১৩৮।
কৃতজ্ঞতা ভুল হ'য়ে যায়
স্বার্থে অন্যায় দাবী,
উপকারীতে নাই অনুকম্পা
মিত্রে সন্দেহ-ভাবী,
বৃত্তিস্বার্থ ফুরিয়ে গেলে
সম্বন্ধ মিটে যায়—
এমন দেখলে বুঝে চলিস্
ছোঁয়াচ না লাগে গায়। ১৩৯।
যে-চাহিদায় ঝুঁকবি রে তুই
সেইটিই মন ভাবে,
যা' ক’রে তা' পেতে পারিস্
তা' থেকে কিন্তু সরবে,
পেতেই যদি চাস্ রে পাগল
সেইটি তবে কর্,
যে-করাতে ঝোঁক দিলে তোর
পাওয়াই হবে বর। ১৪০।
খুঁজিয়া জীবনী যত পাঁতি-পাঁতি করি’
সুবিচারে ভাল-মন্দ করিয়া বিচার,
নিজের জীবনটাকে উপযুক্ত করি’
প্রস্তুত থাকিও ভ্রমে পাইতে নিস্তার। ১৪১।
ভাবা যা' তা’ ফুটলে করায়
প্রকৃত তখন হয়,
প্রকৃত হ'লেই জানিস্ ওরে
পাওয়ার উপচয়;
প্রকৃত যদি নাই হ'লি তুই
পাওয়া হবে না তোর,
ভাবের জলে তৃষ্ণা কি যায় ?
তৃষ্ণায় রইবি ভোর! ১৪২।
#নীতি#অনুশ্রুতি_১ম#অনুশ্রুতি_প্রথম_খণ্ড#ষষ্ঠ_সংস্করণ#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ
🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈
https://www.facebook.com/Amritokathaa
10