[ P - 8 ] 🎗️ স্ত্রীই স্বামীর জন্য সব-কিছু করবে—তার চাইবার-পাইবার কিছুই নাই ? 🎗️ স্ত্রী-পুরুষের মিলন কি একটা physical enjoyment..? 🎗️ পুরুষের স্ত্রী-সম্বন্ধে মনের ভাব (attitude) কিরূপ হ'লে নারী হ'তে সে আহত না হ'য়ে পারে ?

 

🎗️ স্ত্রীই স্বামীর জন্য সব-কিছু করবে—তার চাইবার-পাইবার কিছুই নাই ?
🎗️ স্ত্রী-পুরুষের মিলন কি একটা physical enjoyment..? 
🎗️ পুরুষের স্ত্রী-সম্বন্ধে মনের ভাব (attitude) কিরূপ হ'লে নারী হ'তে সে আহত না হ'য়ে পারে ?
🎗️ বিবাহের পরই তিন-চার বছরের মধ্যে স্বামী ও স্ত্রী দুইজনেরই শরীর,মন ভেঙ্গে যায়, কেন..?

   ১৮ই এপ্রিল,  ১৯৩৯ 

 [P 64-74]    

      প্রশ্ন । আজকাল প্রায় দেখতে পাওয়া যায়—বিবাহের পরই তিন-চার বছরের মধ্যে স্বামী ও স্ত্রী দুইজনেরই শরীর ভেঙ্গে যায়, মনও ভাঙ্গে, আর উভয়েই উভয়ের নিকট নীরস হয়ে পড়ে। এর মূল কারণ কোথায় ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । অস্বাভাবিক মিলনই ইহার প্রধান কারণ । স্ত্রী হইতে পুরুষ পুষ্টি পায় না—তুষ্টির অপলাপ ঘটে; তাই পুরুষ ও স্ত্রীর মনোরঞ্জনে অসমর্থ হয় ! দুইজনের ভিতরেই 'will-to-illness' – অসুস্থতার ইচ্ছা আর ‘will-to-ugliness’*, অর্থাৎ নোংরা থাকিবার ইচ্ছা আশ্রয় করে,—তার ফলেই এই জাতীয় বিপৎপাতের সূত্রপাত হয়। তাহা যদি না হইত, পারিপার্শ্বিক অবস্থার দরুণ স্বাস্থ্যহানি ঘটিলেও resisting capacity বা প্রতিরোধ ক্ষমতা এতই বৰ্দ্ধিত হইত, যাহার দরুণ

________________________________________

"Every neurosis is the result of a mental conflict........the neurosis is to him a convenience in life, a protective against the evil world and has come to represent a part-fulfilment of his phantastic wishes...

"The patient is enamoured of his illness. He is proud of his ailment and makes use of it as a means of insuring his power over his environment or of avoiding some unpleasant duty.

....."The neurosis is to him a convenience in life, a protection enabling the patient to dominate his environment and to carry out his will, though at great cost to himself." 

'Beloved Ego-Dr. Wilhelm Stekel

প্রত্যেক স্নায়ুবিকারই মনের দ্বন্দ্বের থেকে জন্ম । আর, স্নায়ুবিকার তার জীবনের পক্ষে যেন সুবিধাজনক দুঃখদুর্দশাময় পৃথিবীর কঠোর স্পর্শ হইতে রক্ষার বর্ম্মস্বরূপ । এবং ইহা হইতে তাহার কাল্পনিক আকাঙ্ক্ষাগুলির আংশিক চরিতার্থতা আসে—তাই উহা তার প্রিয়।...

রোগীর তাহার পীড়ায় গভীর অনুরাগ। তাহার অসুস্থতা যেন তাহার একটা গৰ্ব্ব । পারিপার্শ্বিকের প্রতিক্রিয়া হইতে আত্মগোপনের একমাত্র অবলম্বন অথবা অপ্রীতিকর কর্তব্যের দায় এড়াইবার উপায়স্বরূপ ।পারিপার্শ্বিককে জব্দ রাখিবার এবং নিজের মতলব বাগাইবার স্পষ্ট অভিপ্রায়েই রোগের সৃষ্টি করা হয়—যদিও তাহাকে কঠিন মূল্য দিয়া ইহা ক্রয় করিতে হয়। 

        — উইলহেলম ষ্টেকেল

    উভয়ের এই ক্ষয় অনেক পরিমাণে restricted (ব্যাহত) হইত।

 প্রশ্ন । আজকাল যেমন-ধরণের বিবাহ-বিভ্রাট সব দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রায়ই ঠিক-ঠিক বিবাহ হয়েছে ব'লে মনে হয় না। এমন অবস্থায় divorce-ই (বিবাহ-বিচ্ছেদই তো এর একমাত্র প্রতিকার । Russell ও তো বলেছেন—“Although life-long monogamy is best when it is successful, the increasing complexity of our needs makes it increasingly often a failure, for which divorce is the best preventive"*

    শ্রীশ্রীঠাকুর । যেমন করিয়া বিবাহ হওয়া উচিত, তেমনভাবে বিবাহ হইলে divorce বা বিবাহ-বিচ্ছেদ তো দূরের কথা— স্বামীর জীবনের অবসানের সঙ্গে-সঙ্গে স্ত্রীর অবসানও আশ্চর্য্য নয়। আর, ঠিক-ঠিক বিবাহ যদি না হয়, অথচ মানসিক দ্বন্দ্ব, অবসাদ ও অপকর্ষ সত্ত্বেও যৌন-সম্মিলন ঘটে, —তাহা হইলে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, অতি অল্পস্থলেই তাহার আরোগ্য সম্ভব, – কোথাও কোথাও ক্বচিৎ হইতে পারে ।

    প্রশ্ন। ঐ রকম যৌন-সম্মিলনে ক্ষত হয় কেমন ক'রে ? 'ক্ষত' কী ? 

    শ্রীশ্রীঠাকুর । ক্ষত হ'ল inclination despair and to despondency — নৈরাশ্য ও অবসাদপ্রবণতা— যাহার ফলে deterioration (ক্ষয়) অবশ্যম্ভাবী ; তাহার প্রথমেই character—খিট্‌খিটে মেজাজ । মুখ্য লক্ষণ peevish পুরুষ যখন তাহার বৃত্তিগুলি নিয়ে স্ত্রীকে আশ্রয় করে, আর, সে আশ্রয় করাটা স্ত্রীর নিকট যন্ত্রণাপ্রদ হয়,— তখনই তাহার (স্ত্রীর) প্রকৃতি তাহাকে উপেক্ষা করিতে থাকে অর্থাৎ স্বাভাবিক aversion (বিদ্বেষ, বিরাগ) আসে। আর, এই aversion-এ বিক্ষুব্ধ পুরুষ যন্ত্রণা-মলিন হইয়া নানারকমে স্ত্রীতে পুষ্টি ও তুষ্টির আশায় আশ্রয় খুঁজিতে থাকে, – আর, পুরুষ যতই এমনতর করিতে

_______________________________

 * অর্থাৎ, যদি ঠিক থাকা সম্ভব হয়, তবে আজীবন একবিবাহী থাকাই উৎকৃষ্ট। কিন্তু জীবনের জটিলতার মধ্যে পড়িয়া আমাদের প্রায়ই অকৃতকাৰ্য্য হইতে হয় বলিয়া ডিভোর্স বা বিবাহ-বিচ্ছেদই একমাত্র প্রতিষেধক।

থাকে, স্ত্রীর প্রকৃতি ততই তাহাকে আঘাত করিতে থাকে ;– আর, এই আঘাত হইতেই হয় ক্ষতের উৎপত্তি*। আর, এই ক্ষত লইয়া সে সহজভাবে কোন স্ত্রীতেই বিশ্রাম পায় না—সর্বদা সন্দিহান থাকে—কষ্ট করিয়া স্ত্রীর তুষ্টির অনুসন্ধান করে,—তাহার ফলে জীবনে বঞ্চিত হয়। আর, স্ত্রীর বেলায়ও উল্টা রকমের তাহাই ৷

    প্রশ্ন । ক্ষতের আরোগ্য বা শান্তির আশা যদি না-ই থাকে, তবে divorce-এর সার্থকতা বা সুবিধা কী ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। Divorce-এর সুবিধা a little aloof from those calamities, অর্থাৎ, ঐ সমস্ত বিপৎপাত হইতে একটু দূরে থাকা। কিন্তু স্ত্রীর পুনর্বিবাহে সমাজকে কিছু-না-কিছু বিকৃত করেই।

   প্রশ্ন । তাহ'লে কোনো unlucky marriage (অসঙ্গত বিবাহ) হ'লে বিনা divorce-এ তার কী solution (সমাধান) হ'তে পারে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তাই, ঋষিরা নেহাৎ-বিকৃতিতে উপদেশ দিয়েছেন—

________________________________

         “তৈস্তৈর্ভাবৈরহৃদ্যৈস্তু রিরংসোমনসি ক্ষতে ।

           দ্বেষ্যাস্ত্রী-সম্প্ৰয়োগাচ্চ ক্লৈব্যং তন্মানসং স্মৃতম্ ।।”  

 সুশ্রুত— ষড়বিংশতিতমোহধ্যায় ৪, ৫ 

                 ক্ষীণবলীয় বাজীকরণ চিকিৎসিতম্

    অর্থাৎ, পূর্ব-বর্ণিত অহৃদ্য (চিত্তামোদনাশক) ভাবদ্বারা রমণেচ্ছু ব্যক্তির মনে ক্ষত হইলে ও দ্বেষ্যা (অর্থাৎ স্বামীবিদ্বেষী) স্ত্রীতে রত হওয়ার ফলে যে ক্লীবত্ব হয় তাহাকে মানস ক্লৈব্য বলে । "I now know that the chief cause of temptation is not that people cannot refrain from fornication; but that most men and women have been deserted by those with whom they first came together, I now know that every desertion of a man or woman by him or her with whom they first had connection is that very divorce which Christ forbids."

 'What I Believe'-Leo Tolstoy 

অর্থাৎ, টলষ্টয় বলেছেন—“ আমি এখন জানিয়াছি মানুষ (পুরুষ বা স্ত্রী) যে অন্যসহবাসে লিপ্ত হয়, মানুষের আত্মসংযমে অপারগতা ইহার কারণ নহে । খোঁজ করিলে জানা যাইবে – উহার মূলে আছে পুরুষ বা নারীর প্রথম-প্রণয়ের বিচ্ছেদ। এক স্থানে প্রণয় সার্থক না হওয়াই মানুষের জীবনকে এইরূপ বিপৎসঙ্কুল করিয়া তোলে, এবং এই প্রথম-প্রণয়ের বিচ্ছেদই প্রকৃত বিচ্ছেদ যাহা যীশু অমন করিয়া নিষেধ করিয়াছেন।”

     “নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ। 

     পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরন্যো বিধীয়তে ।।”

    প্রশ্ন । সাধারণ case-এ (স্থলে) এ-দ্বন্দ্বের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উপায় কি কিছু নাই ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। সাধারণতঃ এই-জাতীয় অল্প-বিস্তর দ্বন্দ্বের সমাধান—উভয়ে যদি একই আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকে তবে —হ'তে পারে।

    প্রশ্ন । পূর্ণ মিলন প্রতিষ্ঠিত হ'তে পারে ? শ্রীশ্রীঠাকুর। মোটের উপর মিল হ'তে পারে ।

    প্রশ্ন । মেয়েরা অনেক সময় অভিযোগ ক'রে থাকে—“স্ত্রীই স্বামীর জন্য সব-কিছু করবে—স্বামী কি কিছুই করবে না ? স্বামীর নিকট কি তার চাইবার-পাইবার কিছুই নাই ?—তারা বুঝি মানুষই নয়” ইত্যাদি ।

    শ্রীশ্রীঠাকুর। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির ভিতর নারীর পুরুষের কাছে চাইবার কিছুই নাই । নারী তার প্রকৃতি দিয়ে পুরুষকে যেমনতরভাবে nourish করে (পুষ্ট করে), পুরুষ স্বভাবতঃ তা' সে-নারীতে ত্যাগ করে—এই তার প্রকৃতি । নারী যদি পুরুষকে তার ব্যবহার, বাক্য, চাল-চলন ইত্যাদি দ্বারা অবসন্ন ক'রে তোলে, নিরাশ ক'রে তোলে, দুর্বল ক'রে তোলে, — তখন পুরুষ তার জগতে উপযুক্ত nourishment-অভাবে (পুষ্টির অভাবে) encouragement বা উৎসাহের অভাবে বিক্ষুব্ধ হ'য়ে, অবশ হ'য়ে, হতাশ হ'য়ে, ফিরে আসে নারীর কাছে, আর, সে ত্যাগ করেও তাই, ফলে নারী পায়ও তাই; তখন নারীর পুষ্টি এবং তুষ্টি স্বভাবতঃ খিন্ন হ'য়ে ওঠে—আর, এমনই ক'রে উভয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে । পক্ষান্তরে নারী যদি—পুরুষ যে-সকল বৃত্তি নিয়ে তার জগৎকে আলিঙ্গন করে—তাদের রঞ্জন ক'রে দেয়, পোষণ ক'রে দেয়, – তোষণ ক'রে দেয়, তখন পুরুষ তার জগৎ থেকে বয়ে আনে তুষ্টি, পুষ্টি, সার্থকতা, – আর ত্যাগও করে তাই, নারী পায়ও তাই ; ফলে উভয়েই উন্নতি ও জীবনের পথে অগ্রসর হয় * ।

___________________________________

       *সেক্সপীয়র তাহার নাটকে দেখাইয়াছেন— 

"The redemption, if there be any, is by the wisdom and virtue of at woman; failing that, there is none."

 ....... “Take lastly the evidence of facts given by the human heart itself. In all the Christian ages which have been remarkable for their purity or progress, there has been an absolute yielding of obedient devotion by the lover to his mistresss. I say obedient-entirely subject, receiving from the beloved woman, however young, not only the encouragement, the praise and the reward of all toil, but....the direction of all toil."

অবশ্য সমস্ত Knight-দের জীবনে দেখিতে পাওয়া যায় 

....“But where that true faith and captivity are not all wayward and wicked passion must be, and that in this rapturous obedience to the single love of his youth, is the sanctification of all man's strength and the continuance of all his purposes."

......“It is the type of an eternal truth that the soul's armour is never well set to the heart unless a woman's hand has braced it; and it is only when she braces it loosely that the honour of manhood fails."

-John Ruskin 

পুরুষের যদি রক্ষার কোন পন্থা থাকে, তা নারীর প্রজ্ঞা ও গুণের দ্বারাই। তা না-হ'লে রক্ষার নান্যঃ পন্থা।

অর্থাৎ, মানবের জীবনের ইতিহাসে.... হৃদয়ের সাক্ষ্য লও। দেখিবে সমস্ত খৃষ্টীয় যুগেই—পবিত্রতা ও উৎকর্ষে যে সমস্ত যুগ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে সে-সকল যুগেই—পুরুষ নারীর নিকট পাইয়াছে উৎসাহ, সম্বৰ্দ্ধনা; তার সমস্ত শ্রমের পারিতোষিকস্বরূপ—নারীর উদ্দেশ্যই, নারীর প্রেরণাতেই তার যত-কিছু শ্রম সে সার্থক করিয়া তুলিয়াছে।

আর, যেখানেই এই সত্যিকারের বিশ্বাস ও মনের আকর্ষণ নাই, সেখানেই একগুঁয়ে দুষ্ট কুবৃত্তিগুলি জাগ্রত হ'য়ে ওঠে; আর পরস্পরের অনুবর্ত্তী প্রেম যেখানে হৃদয়ের উৎসবের মত বিরাজমান, সেখানে পুরুষ তার শক্তি ও উদ্দেশ্য নিয়ে অটুট থাকে, দৃঢ় থাকে । এ একটা চিরন্তন সত্য যে মানবাত্মা তার বর্ম্ম কখনও সম্যক্ পরিধান করিতে পারে না—যদি না নারীর স্নেহহস্ত তাকে আলিঙ্গন করে। আর, নারী সম্বর্দ্ধনায় শিথিল হইলেই পুরুষের সম্মান, আদর্শ, যাহা কিছু সমস্তই অন্তর্হিত হয় ।

–রাকিন

যুধিষ্ঠির উবাচ—

            ‘যদা ধৰ্ম্মশ্চ ভাৰ্য্যা চ পরস্পরবশানুগৌ।

            তদা ধৰ্ম্মার্থকামানাং ত্রয়াণামপি সঙ্গমঃ ।। —মহাভারত, বনপর্ব্ব 

           যক্ষ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, –ধর্ম্ম, অর্থ, কাম ইহারা পরস্পরবিরোধী — কি হইলে এই পরস্পর-বিরোধী ত্রিবর্গের মিলন হয় ?

       তদুত্তরে যুধিষ্ঠির বলিলেন— যখন ধর্ম্ম ও ভার্য্যা পরস্পর বশানুগ, তখন—কেবল তখনই ত্রিবর্গের একত্র মিলন হয় ।

          “অপত্যং ধৰ্ম্মকার্য্যাণি শুশ্রূষা রতিরুত্তমা। 

            দারাধীনস্তথা স্বর্গঃ পিতৃণামাত্মনশ্চ হ ৷৷”

                   —মনু, ৯/২৮ 

অপত্য, ধর্ম্মকাৰ্য্য, শুশ্রূষা, উত্তম রতি এবং নিজের ও পিতৃগণের স্বর্গ সকলই দারাধীন অর্থাৎ স্ত্রীর উপর নির্ভর করে ।

Cf. “The man and the woman are each organs, parts of the other. And

    প্রশ্ন । Bernard Shaw বলেন, economic emancipation (অর্থনৈতিক স্বাধীনতা) না হইলে real marriage-ও (প্রকৃত বিবাহও সম্ভব হইতে পারে না—real love-ও (প্রকৃত ভালবাসাও) সম্ভব নয় ।

    শ্রীশ্রীঠাকুর। একের বৃত্তিগুলি যদি অন্যে সার্থক হয়, একজনের development in all respects (সর্বপ্রকারে বিকাশ) যদি অন্যের development in all respects (সর্ব্বপ্রকারে বিকাশ) হয়, একজনকে সুখী করাই যদি অন্যের সুখের কারণ হয়—তখনই সত্যিকারের economic emancipation (অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য) হওয়ার সম্ভব। ভালবাসা প্রিয়কে সমৃদ্ধ করিতে চায়, আর, সেই চিন্তা তাহার ভিতর মুখর হইয়া ওঠে ; আর, তাহার এই tendency (মনোবৃত্তি) হইতেই evolve করে (ফুটিয়া ওঠে) activity (কর্ম্মপ্রবণতা) ও দক্ষতা। তাই economic emancipation (অর্থনৈতিক স্বাধীনতা) create (সৃষ্টি) করে।

তাহা-না হইলে—কোনো একটা aspect of life (জীবনের কোনো-একটা দিক্) যদি কোনো-একটা aspect of life-কে (জীবনের দিকে) nourish (পুষ্ট) করে, তাহা হইলেও তাহা সর্ব্বতোভাবে হয় বলিয়া মনে হয় না; যেমন, একজন যদি কেবল অন্যকে উপায় করিয়া খাওয়ায় কিংবা উভয়ে উভয়কে উপায় করিয়া খাওয়ায়, তাহা হইলেও যে total ecomomic emancipation (পূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য্য) হইল তাহা বলিয়া মনে হয় না।

    প্রশ্ন । স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ঠিক-ঠিক ভাব হয় নাই বা হয় না—এ দায়িত্ব কার ?—নারীরই, না পুরুষের ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রী যদি নিজে স্বামীকে offer দেয় অর্থাৎ বরণ করে, আর তাহাতে স্বামী যদি তাহাকে গ্রহণ করে তবে স্ত্রীই দায়ী। আর, পুরুষ যদি offer দেয়, তা' স্ত্রী গ্রহণ করে তবে পুরুষ । আর, তা-ও যদি না হয়, তবে ব্যবস্থা বা সমাজ ।

___________________________________

in the strictest scientific, as well as in a mystical sense, they together are a single unit, an individual entity. There is a physiological as well as a spiritual truth in the words. They twain shall be one flesh. " -Marie Stopes  

নারী-নর দুইজনের মধ্যে পরস্পর অঙ্গাঙ্গিসম্বন্ধ, — দুইজন মিলে একটি সম্পূর্ণ দেহ।—

 —মেরী স্টোপস্

   প্রশ্ন। আচ্ছা, ‘ভাব' মানে কী ?

   শ্রীশ্রীঠাকুর। ‘ভাব’ মানে তৎ-স্থ হওয়া অর্থাৎ কাহারও সাথে এমনতর attachment (আসক্তি) থাকে যাহাতে তাহার দ্বারা সে রঞ্জিত হইয়া থাকে,—তাহারই ভাবে ভাবিত হইয়া থাকে— তাহার psychical এবং physical—মানসিক ও শারীরিক attitude (রকম)-গুলির দ্বারা।

    প্রশ্ন। একজনের অনেকের সঙ্গে তো ভাব হইতে পারে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । সাধারণতঃ নয়। একজনের ভাবদ্বারা রঞ্জিত হইলে অন্য কেহ তাহাকে রঞ্জিত করিতে পারে না—যেমন, সতী স্ত্রীর পতি, সাধকের ইষ্ট। 

    প্রশ্ন । স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে ভাব থাকে না, তাতে স্বামীও তো দায়ী হ'তে পারে ? স্বামীও তো নিজের ব্যবহারের ভুলে স্ত্রীর নিকটে light (হাল্কা — খেলো) হ'য়ে যায় !

    শ্রীশ্রীঠাকুর। স্বামী যদি স্ত্রীর নিকট সহজ (cheap) হয়, আর তার সংস্পর্শে যদি স্ত্রী উদ্দীপ্ত না হয়, তবে এইরকম হ'লে অনেক সময় গণ্ডগোলের আশঙ্কা অর্থাৎ, wife-এর regardful attitude ( সশ্রদ্ধ ভাব ) – break করে (ভেঙ্গে যায়) এমনতর ব্যবহার ও সান্নিধ্য ইত্যাদি যদি ঘটে তবে * ।

তাই সাধারণতঃ পুরুষের duty (উচিত) তার স্ত্রী যাতে তার বাপ-মা, ভাই-বোন ইত্যাদির প্রতি serviceable (সেবাপরায়ণ) এবং regardful অর্থাৎ শ্রদ্ধাপরায়ণ হয়, তেমনতরভাবে তাকে push করা। এর ফলে, পারিবারিক শান্তি তো বজায় থাকেই, সে নিজে স্ত্রীর কাছে দেবতা হ'য়ে দাঁড়ায়—স্ত্রীর নিকট লক্ষ আত্ম-সুখ্যাতি এ ফল আনিতে পারে না ।

   প্রশ্ন । লোকের নিকট বিশেষতঃ স্ত্রীর নিকট আত্মপ্রশংসা তো অনেকেই ক'রে থাকে।

_____________________________________

*"So great is the human soul that some of its beauty is hidden by

nearness; it needs distance between it and the beholder to be perceived in its true perspective."   —Marie Carmichael Stopes 

মানুষের আত্মা এত বৃহৎ জিনিস যে অতিশয় নিকট হইতে দেখিলে ইহার সৌন্দর্য্যের অল্পই দেখা যায়। ইহাকে ঠিক-ঠিক দেখিতে হইলে দ্রষ্টা ও দৃষ্টের মধ্যে দূরত্বের প্রয়োজন ।

— মেরী স্টোপস

    শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রীর কাছে আত্মপ্রশংসা স্ত্রীর নিকট ভক্তি বা ভালবাসা পাওয়ার ঘোর অন্তরায়।

    প্রশ্ন । আবার, গৃহবিবাদ-স্থলে অনেকেই স্ত্রীকে support (পক্ষসমর্থন) করে।

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তাহ'লে তো সৰ্ব্বনাশ । 

    প্রশ্ন । কেন ?—স্ত্রী যদি উচিত পক্ষ হয় ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তাহ'লেও এই কথা বলা— “আমার বাপ-মা লক্ষ অন্যায় করতে পারেন, কিন্তু তা' তুমি সহ্য করবে না কেন—যদি আমায় ভালোই বেসে থাকো ?”

    প্রশ্ন। উচিত পক্ষ সমর্থন করা তো duty (কৰ্ত্তব্যই ) — duty-কে যদি ভালোবাসার কাছে বলি দি', তাহ'লেও তো সর্বনাশ।

   শ্রীশ্রীঠাকুর। ভালোবাসা-ই duty-কে (কর্তব্যকে) নিয়ন্ত্রিত করে* !

যেখানে ভালোবাসা নাই—duty (কৰ্ত্তব্য) সেখানে সার্থক হয়েছে এমনতর দেখা যায়নি। আমার ভালবাসার কেন্দ্রে—আমার ভক্তির কেন্দ্রে আমি যদি অন্যায়

________________________________

Cf. "Impulse is at the basis of our activity......Each impulse produces a whole harvest of attendant beliefs. A life governed by purposes and desires to the exclusion of impulse, is a tiring life; it exhausts vitality and leaves a man, in the end, indifferent to the very purposes which he has been trying to achieve."

  'Essay on the Principle of Growth-Russell 

অর্থাৎ, প্রেরণাই আমাদের কর্ম্মের ভিত্তি। প্রত্যেকটি প্রেরণাই বহু প্রত্যয়ের জনক । প্রেরণাহীন শুধু আকাঙ্ক্ষা আর উদ্দেশ্যে পূর্ণ জীবন আনে শ্রান্তি আর ক্লান্তি । তাতে জীবনীশক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, আর তাতে মানুষ অবশেষে তার জীবনের উদ্দেশ্যেই উদাসীন হ'য়ে পড়ে ।

   —রাসেল 

ফ্রাঙ্ক সেওয়াল সুইডেনবোর্গ নামক পুস্তিকার একস্থানে লিখিয়াছেন, – সুইডেনবোর্গ বলছেন—

"As life is essentially love, so a man's life is what his love is: his intellect and his thoughts are the servants of this master."

   'Swedenborg'-Frank Sewell 

অর্থাৎ, জীবনের মূলেই প্রেম। মানুষের ভালবাসা যেমনতর তার জীবনও তেমনতর । প্রেমই প্রভু আর বুদ্ধি, চিন্তা প্রভৃতি ঐ প্রভুরই ভৃত্য মাত্র ।  —সুইডেনবোর্গ

জানিয়াও নিজেকে sacrifice করি (বলি দিই), আমার সহধর্মিণীরও তাই করা উচিত। এতে অন্যায়কে support (সমর্থন) করা হয় না, বরং ভক্তিরই ইন্ধন জোগানো হয় ।

    প্রশ্ন । নারী হয়তো স্বামীর খুব সেবাপরায়ণা—স্বামী ভিন্ন কাউকে জানে না—কাউকে চায় না ; অথচ স্বামীর সম্বন্ধে অনেক অভিযোগও আছে– স্বামীর জন্যে কতদিন কত কষ্ট করেছে তার হিসাব আছে—স্বামী কত অবহেলা করেছে তার account (হিসাব) বা জাবেদা খাতা আছে ; তাই সর্ব্বদা দুঃখিত—নিজেকে হতভাগিনী মনে করে—অনাদরে বা অনাদর ভেবে-নিয়ে কত যাতনাগ্রস্ত হয়,—আবার স্বামীর সেবাও করে। এ কী-রকম ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তাতে বুঝতে হবে, স্বামীর বেঁচে থাকাটা তার interest (স্বার্থ)— স্বামী the person-এ (ব্যক্তিতে) তার কোনো attachment (আসক্তি) নাই, কিংবা কমই আছে।

  প্রশ্ন । অথচ সে ভাবে, সে স্বামীকে খুবই ভালবাসে— sincerely-ই (এইপ্রকৃতই) ভালবাসে ।   

  শ্রীশ্রীঠাকুর। কারণ, তা'র (স্ত্রীর) existence (অস্তিত্ব) তা'র interest (স্বার্থ), আর স্বার্থকে সে sincerely - ই (ঠিকঠিকই) ভালবাসে হয়তো । 

    প্রশ্ন । এ-হেন দাম্পত্য জীবন হতে বাঁচবার উপায় কী ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। অতিরিক্ত contact-এ (সন্নিধানে—কাছাকাছি) না থাকা, মিষ্টি ব্যবহার ক'রে যাওয়া, বিরক্তিকে অগ্রাহ্য করা ও আদর্শে (Ideal-এ ) engaged হ'য়ে (যুক্ত হয়ে) থাকা—এককথায়, ignore ক'রে (উপেক্ষা ক'রে ) চলা—materially painful না হ'য়ে অর্থাৎ সাংসারিক সাধারণ বিষয়ে কষ্ট না দিয়ে ।

    প্রশ্ন। Ignore করা মানে কী ? 

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তাতে কর্ণপাত না করা,—যতদূর সম্ভব কুভাষা ব্যবহার না করা !

    প্রশ্ন । উপদেশ দিলে বা বুঝালে ফল হ'তে পারে না ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। তা' করতে গেলে প্রায়শঃ আরো বেড়েই যায়,— উপদেশ দিয়ে নিজের প্রতি ভক্তি শেখানো যায় না, তা'তে repulsion (বিদ্বেষ) আরও বেড়েই যায়। Ignore করা ছাড়া উপায় নাই !

    প্রশ্ন । Ignore করলে হয়তো furious হ'য়ে উঠতে পারে ;—তখন ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। চলুক্—নজর ক'রো না, কিছুদিন পরে আপনি নিভে যাবে। যদি না-ও নেভে, তুমি স'রে যাও,—জ্বলুক, কোনোক্রমেই ইন্ধন জুগিও না ।

   প্রশ্ন । আচ্ছা, পুরুষের স্ত্রী-সম্বন্ধে মনের ভাব (attitude) কিরূপ হ'লে নারী হ'তে সে আহত না হ'য়ে পারে ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর । পুরুষের আদর্শে প্রাণপণ হওয়া উচিত* । যদি নারী তাহার অনুসরণ করে, উত্তম ! —যদি না করে, তবে পুরুষ হইতে সে-নারী যাহাতে material বেদনা না পায় অর্থাৎ কাৰ্য্যতঃ ব্যথিত না হইতে পারে তৎপ্রতি দৃষ্টি রাখিয়া চলা । আর, স্ত্রীর যে-ব্যবহার পুরুষকে ব্যথিত করিয়া তোলে তাহা যতদূর সম্ভব ignore (উপেক্ষা) করা, অথচ তাহার (স্ত্রীর) necessity-গুলি (প্রয়োজনগুলি) যতদূর সম্ভব supply করিয়া (জুগিয়ে) চলাই সমীচীন । এরূপভাবে চলিলে হয়তো কখনও সার্থকতার পথেও চলিতে পারা যাইতে পারে ।

    প্রশ্ন। স্ত্রী-পুরুষের মিলন কি একটা physical enjoyment — দৈহিক উপভোগ,—একটা সাময়িক ক্ষুন্নিবৃত্তিমাত্র ?

    শ্রীশ্রীঠাকুর। স্ত্রীর সম্বর্দ্ধনায় পুরুষ এমনতরভাবে elevated (উন্নত) এবং তাহার দিকে inclined ( উন্মুখ) হয়, যাহাতে নাকি পুরুষের এমনতর একটা প্রবৃত্তি জন্মে যেন সে তাহাকে একদম আত্মসাৎ করিতে চায়,—এমনতর হয় তাহাদের দুইজনের existence (অস্তিত্ব) আলাদা এমন ভাবিতেও কষ্ট হয় ; আর, স্ত্রী তাহার গুণমুগ্ধ স্বামিদেবতাকে গ্রহণ করিতে এতই উন্মুখ হইয়া

__________________________________

* "Onward, onward, নামের সময় নাই, যশের সময় নাই, মুক্তির সময় নাই, ভক্তির সময় নাই—দেখা যাবে পরে। এখন এ জন্মে অনন্ত বিস্তার, তাঁর মহান চরিত্রের, তাঁর মহান জীবনের, তাঁর অনন্ত আত্মার। এই কার্য্য—আর কিছুই নাই। যেখানে তাঁর নাম যাবে কীট-পতঙ্গ পৰ্য্যন্ত দেবতা হ'য়ে যাবে, হ'য়ে যাচ্ছে, – দেখেও দেখছ না ? এ কি ছেলেখেলা, এ কি জ্যেঠামি, এ কি চেঙ্গড়ামি, – ‘উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত’– হরে হরে। তিনি পিছে আছেন।”

      — বিবেকানন্দ

পড়ে—এতই বিনীত হয়, যেন সে তাহাকে সর্ব্বতোভাবে নিবেদন না করিতে পারিলে অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হইয়া ওঠে। এইরকম একটা সর্বাঙ্গিক উভয়ের যুক্ত হইবার ঐকান্তিক ক্ষুধার ফলে যে মিলন ঘটে, তাহাই সার্থক মিলন এবং ঐ মিলনই সুসন্তান প্রসব করে । Diseased sexuality অর্থাৎ কামরোগগ্রস্ত ব্যক্তি কখনই এমনতর আনন্দ উপভোগ করে না বা করিতে পারে না* ।

________________________________

* "Large numbers of men and women are condemned to the society of an utterly uncongenial companion-with the embittering consciousness that escape is practically impossible. In these cirscumstances happier relations with others are sought....Such relations have some almost inevitable drawbacks, they are liable to emphasise sex unduly to be exciting and disturbing and it is hardly possible that they should bring any real satisfaction of the instinct. "

   —Russell on the 'Principle of Growth' 

যাহার সঙ্গ মনের পক্ষে অপ্রীতিকর এবং বৃত্তির অপ্রমোদকারী তাহার সঙ্গে বাস করিতে বাধ্য হইলে নানাপ্রকার তিক্ত অভিজ্ঞতা হইতে থাকে—এইরূপ অবস্থায় যাহার সহবাস এর চেয়ে বেশী সুখের বলিয়া বিবেচিত হয়, তাহারই দিকে মন যায়, আরও অনেক দোষ ঘটে – কামপ্রবৃত্তিরই বেগ অত্যধিক বৰ্দ্ধিত হইয়া অত্যন্ত উত্তেজনা ও চাঞ্চল্যের কারণ ঘটে, ইহাতে মনোবৃত্তির প্রকৃত তৃপ্তি আসিতে পারে না ।   —রাসেল

"How intoxicating indeed, how penetrating-like a most precious wine is that love which is the sexual transformed.......into the emotional and spiritual! And what a loss......is its unbridled waste along physical channels! So nothing is so much to be dreaded between lovers as the vulgarisation of love-and that is the rock upon which marriage so often splits."

  —Edward Carpenter

অর্থাৎ, নরনারীর পরস্পর যৌন আসক্তি পবিত্র প্রেমে পর্যবসিত হইলে কত গভীর উত্তেজনা ও প্রেরণা নিয়ে আসে – আর অসংযত দৈহিক উপভোগমাত্রে এই আসক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিলে জীবনের পক্ষে কতটা লোকসান ও পরিতাপের কথা। ভালবাসার এই শোচনীয় পরিণামই সৰ্ব্বাপেক্ষা ভয়াবহ —ইহাতেই প্রায়শঃ ভালবাসার বিচ্ছেদ ঘটিয়া থাকে।

   —এডওয়ার্ড কারপেন্টার

নারীর পথে শ্রীশ্রী ঠাকুরঅনুকূল চন্দ্র 

প্রশ্নকর্তা ও পাদটীকা সংযোজক :-

শ্রীপঞ্চানন সরকার, এম-এ

#narir_pothe 

#নারীর_পথে

#দশম_সংস্করণ 

#শ্রীশ্রীঠাকুর_অনুকূলচন্দ্ৰ

🪔 https://www.amritokatha.in/ 🪔 👈

Telelegram https://t.me/amritokatha

https://www.facebook.com/Amritokatha.in1?

         face book