🔲 শারীরিক সুস্থতা-বিধান সম্বন্ধে- ৪৪
🔲 ঋত্বিকদের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ-৪৫
🔲 ঋত্বিকের দায়িত্ব-৪৫
🔲 ওষধি গাছ-গাছড়া এনে লাগাতে হয়-৪৫
🔲 কাজে ঢিলেমি প্রশ্রয় না পায় - ৪৫
[p44-46]
আলোচনা প্রসঙ্গে তৃতীয় খন্ড
শ্রীশ্রীঠাকুর একটু পাশ ফিরে বসলেন — জানলার ফাঁক দিয়ে আনমনাভাবে দূর আকাশের দিকে চেয়ে রইলেন — দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর এবং সীমাহীন অম্বর ভেদ ক'রে দূরে , বহুদূরে , আরাে দুরে কী যেন দেখছেন । হয়তাে বা জন্মজন্মান্তরের স্মৃতি ভেসে আসছে তাঁর চোখের সামনে । জন্ম - জন্ম ধ'রে তিনি ভালবেসেছেন মানুষকে , দিয়েছেন তাদের আমৃতের পরশ , আর মানুষ অকথ্য অত্যাচার করেছে তাঁর উপর , তবু , তাঁর প্রেম হার মানেনি কোনদিন । শত আঘাতে অটল থেকে তা কল্যাণ - কলনিনাদে ছুটে চলেছে জগতের প্রত্যেকটি জীবনকে সার্থক করে তুলতে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার উঠে কাজল - ভাইয়ের ঘরের বারান্দায় একটা মােড়র উপর এসে পূর্ব্বস্য হ'য়ে বসলেন ।
পুজনীয়া ছােটমা কাজলকে সঙ্গে নিয়ে এসে পাশে দাঁড়ালেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - কাজলরাজা কী কয় ?
ছােটমা হেসে বললেন — দুষ্টুমি করে , আর কেবল বুদ্ধি , আপনার কাছে যেয়ে ‘ রাধাবােল ' ‘ রাধাবােল ’ করবে । ওতে খুব স্ফূর্ত্তি পায় ।
শ্রীশ্রীঠাকুর --এখন করবি নাকি ?
কাজলভাই এগিয়ে আসলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর হাত ধরে কিছু সময় ‘ রাধাবােল ' ‘ রাধাবােল ' বলতে লাগলেন , কাজলভাইও দুলতে - দুলতে সঙ্গে - সঙ্গে বলছেন , “ রাধাবোল ’ ‘ রাধাবোল ।’
শ্রীশ্রীঠাকুর পরে বলছেন , এ হ'লাে vigot ( বীজ ) -এর কাজ । ভিতরে ঐ জিনিস আছে কিনা , তাই এত নেশা ।
আস্তে - আস্তে চতুর্ভুজদা ( উপাধ্যায় ) , যােগেশদা ( চক্রবর্ত্তী ) , গুরদাসদা ( বন্দ্যোপাধ্যায় ) , শৈলেনদা ( ভট্টাচার্য ) , কেদারদা । ( ভট্টাচাৰ্য্য ) , গোপেনদা ( রায় ) , নিবারণদা ( বাগচী ) , চারুদা ( সরকার ) প্রভৃতি অনেকে এসে উপস্থিত হলেন , মায়েদের মধ্যেও অনেকে আসলো ।
শ্রীশ্রীঠাকুর চারু , দাকে জিজ্ঞাসা করলেন - এখন পেট কেমন ?
চারুদ । পেটের অবস্থা আগের থেকে ভাল । এখন খুব ক্ষিদে হয় , খুব খেতে ইচ্ছা করে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর একরকম আছে লােভের খিদে , তা ' কিন্তু ভাল নয় । আর , খাওয়া দাওয়া খুব সাবধানে করবেন । মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে না । আপাতঃ ঝােলভাত চালিয়ে যান ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তখন হরিপদদাকে ( সাহা ) ডেকে— Indian Materia Medica , ভারতীয় ভৈষজ্য তত্ত্ব , বনৌষধিদর্পণ প্রভৃতি বই থেকে কয়েকটি জিনিসের গুণাগুণ দেখতে বললেন ।
হরিপদদা পরে দেখলে হয় না ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — পরে আবার কী ? এখনই দেখে দে । তড়িৎ - ঘড়িত না করলে কি কাম হয় ? তুই দেখে এগুলির ভিতর থেকে একটা জায় ক'রে ফেল–ফলকথা লিভার , বায়ু , অম্বল , আম , অজীর্ণ সবগুলি দিক দেখা চাই । একেবারে মােক্ষম ওষধ ক’রে দিবি । চারুদা খেয়ে কবে ধন্বন্তরি ।............ আর দ্যাখ , আমার ইচ্ছা করে , ওষধি গাছ - গাছড়া সব যদি নানান জায়গা থেকে এনে এখানে লাগস , তাহলে খুব ভাল হয় । এরা তাে সব নানা - জায়গায় ঘােরে , আর সৎসঙ্গীও আছে সব জায়গায় । একটু চেষ্টা করলেই এটা করা যায় । এ জায়গায় এমন ক'রে ফেলবি , যাহা নাই ভারতে , তাহা নাই ভারতে’ অর্থাৎ যাহা নাই সৎসঙ্গে , তাহা নাই জগতে ।’ যে ব্যাপার ধরবি , তার একেবারে চরম ক'রে ছেড়ে দিবি । কী তাে কয় ? ' ভূমৈব সখং নাল্পে সুখমস্তি ’ না - কি জানি ?
যােগেশদা — হ্যাঁ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — আমার ঐ নেশা । যা ’ করব , তাই - ই perfectly (নিখুঁতভাবে ) করব , তার কোন দিক বাকী রাখব না , কোন দিকে ফাঁকি দেব না , half - hcartcdly ( আধা অন্তর নিয়ে) কিছুই করব না , নিজেকে sparc ( ক্ষমা ) করব না কিছুতেই । আপনারাও ঐরকম অভ্যাস ক'রে ফেলেন । তাহলে দেখবেন , জীবনের মধ্যে মস্ত একটা মজা পাবেন । ঢিমে - তেতালা ভাব আমার মােটেই ভাল লাগে না । ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেই ফাঁকিতে পড়া । আপনাদের এই যে ঋত্বিকতার কাজ , এ হ'লাে দেবতার কাজ । নিরন্তর অনুশীলনের উপর যদি না থাকেন , তাহ'লে চরিত্রের দীপ্তি থাকবে না । নিজের ভিতরে যদি দীপ্তি না থাকে , তবে মানুষের অন্তরের আঁধার দূর করতে পারবেন না , সে আপনি মুখে যত ভাল কথাই কন।_xample is better than prccept ( দৃষ্টান্ত উপদেশের চেয়ে ভাল ) । আপনাদের চলা , বলা , অভ্যাস ব্যবহার দেখে যেন মানুষে educated ( শিক্ষিত ) হ'য়ে উঠতে পারে । আপনারা হলেন লােক - শিক্ষক । আপনাদের কত জিনিস আয়ত্ত করতে হবে । I.C. S. দের চাইতেও আপনাদের বেশী চৌকস হওয়া লাগবে । বলা , কওয়া , লেখা , নাচ , গান , বক্তৃতা , আহরণ - পটুত্ব , সাধন - ভজন , কষ্টসহিষ্ণুতা -- কোন দিক দিয়ে আপনারা কম যাবেন না --তার তা সবই ধর্ম্মার্থে - সত্তাপােষণ - পালনে । যে যে কাজ নিয়ে থাক , তাকে সেই কাজে যেন আরাের দিকে এগিয়ে দিতে পারেন । কৃষক আপনাদের কাছে এসে দেখবে , কৃষি - সম্বন্ধেও তার অনেক কিছু জানবার আছে আপনাদের কাছে । এমনি উকিল , মােক্তার , ডাক্তার , ব্যবসায়ী , শিক্ষক , জমিদার , চাকরে , নেতা — প্রত্যেককেই যেন আপনারা আরােতর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারেন । এখানকার এই university- তে ( বিশ্ববিদ্যালয়ে ) আপনাদের শেখার সুযোগ অনন্ত । আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা থাকলেই হয় । হাতের কাজ যত পারেন শিখবেন — সাঁতার কাটা , সাইকেল চালান , ঘােড়ায় চড়া , মােটর চালান , টাইপরাইটিং , ফটোগ্রাফি , ছতোরমিস্ত্রীর কাজ , রাজমিস্ত্রীর কাজ , কর্ম্মকারের কাজ , কোদাল চালান , কাঠফাড়া , ঘরবাঁধা , লাঙ্গল চালান , রান্না করা , কেনা - বেচা করা , ল্যাবরেটরির এক্সপেরিমেন্ট ইত্যাদি যে - সব কাজ হামেশা লাগে , তা যত জানা যায় ততই ভাল । হাতের কাজে চোস্ত হ'লে এ সব থেকে একটা অভিজ্ঞতা হয় , তখন কথাগুলির মধ্যেও তার একটা ছাপ থাকে , তা ’ মানুষের মাথায় গেথে যায় , সেগুলি ফাঁকা কথা হয় না । আর , বাইরে নতুন জায়গায় যেখানে যাবে তােমরা , সেখানে শীর্ষস্থানীয় যারা তাদের বাড়ীতে অতিথি হবে। তােমাদের প্রতিমুহূর্ত্তের চলন যেন এমন হয় , যাতে মানুষ তোমাদের শ্রদ্ধা না ক'রেই পারে না । এইভাবে মাথা - মাথা লােকগুলির মধ্যে ঢুকবে । আর , সব সময় লক্ষ্য রাখবে , ইষ্টস্বার্থ ও ইষ্টপ্রতিষ্ঠা ছাড়া , আত্মস্বার্থ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার দিকে যেন কিছুতেই মন না যায় । তােমরা তৈরী হলে সব ঠিক করে ফেলতে পারবে ।
10