★অবতারকে গ্রহণ করতে পারে কারা ও কেন-৩৬
★কর্মে সাফল্যলাভের তুক-৩৭,
[p-35-38]
আশ্রমের একটি মা বাড়ীতে খুব রাগ ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসেছেন নালিশ করতে, এসে এত লােকের মধ্যেই বললেন - ঠাকুর ! আমার একটা প্রাইভেট আছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর হেসে বললেন --- তুই আগে আমাকে ১০ ( দশটা টাকা ) এনে দে , তারপর প্রাইভেট পরে শনবােনে । দে , এক্ষুণি দে , এক দৌড়ে নিয়ে আয় , দেরী হয় না যেন ।
মাটি বললেন -- জোগাড় করতে হবে । খুব তাড়াতাড়ি দেওয়া তাে সম্ভব হবে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — তুই ধ'রেই নিছিস যে তাড়াতাড়ি পারবি না । আমি যেখানে বলছি তাড়াতাড়ি দেবার কথা , সেখানে তার উল্টো চিন্তাকে প্রশ্রয় দেবার এখতিয়ার কোথায় তাের ? তুই যদি দিতে চাস , তাহলে আমার সুবিধা যা'তে হয় , সেইভাবেই তাে দিবি , আর চিন্তা যা করবি , তার অনুকূলেই করবি তাে ? ঐ চিন্তা ও সঙ্কল্প তাের মধ্যে এমন সম্বেগ , ইচ্ছাশক্তি ও বুদ্ধির সৃষ্টি করবে , যাতে লহমায় কার্যসিদ্ধি হয়ে যাবে । যা ! এখনই বেরিয়ে পড় !
মা’টি রওনা হলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তাড়া দিয়ে বললেন বুকে বল ক’রে নিয়ে জোর পায়ে হাঁট ।
এক দাদা দুটি ওলকপি নিয়ে আসলেন । এরপর বিভিন্ন স্থানের নানা প্রকার খাদ্যদ্রব্যের কথা উঠলাে । কথায় - কথায় শ্রীশ্রীঠাকুর মজঃফরপুরের যতীনদাকে ( মুখােপাধ্যায় ) বললেন --- আপনি কচু সিঙ্গড়ি খাইছেন ?
যতীনদা–না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তখনই যজ্ঞেশ্বরকে ডাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , কচুর সিঙ্গড়ি খাওয়াবার ব্যবস্থা করতে পারিস ?
যজ্ঞেশ্বর - আজকাল তাে কচু পাওয়া যায় না , আর ঘরেও নেই । যাক্ তবু , মা'র কাছে শুনে আসি ।
শ্রীশ্রীবড়মার কাছ থেকে শুনে এসে যজ্ঞেশ্বর বললাে -- কিছুদিন আগে পৰ্য্যন্তও ছিল , এখন আর নেই । পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই ।
শ্রীশ্রীঠাকুর মজিরদ্দিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন - শােলাকচু জোগাড় ক'রে দিবির পারিস ?
মজিরদ্দি — এখন তো পাওয়া যাবে না ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - বর্ষাকালে বা পুজোর সময় যদি আসেন , আর আমার মনে যদি থাকে , দেখি যদি আপনাকে কচুর সিঙ্গড়ি খাওয়াবার ব্যবস্থা করতে পারি , একটা খাওয়ার মতাে জিনিস বটে ।
পরক্ষণে শ্রীশ্রীঠাকুর সুধামাকে ডেকে বললেন - যখনই সুবিধা পাও , যতীনদাকে একবার কচুর সিঙ্গড়ি ক'রে খাইয়ে দিও । মনে থাকে যেন ।
সুধামা সানন্দে সম্মতি জানিয়ে বিদায় নিলেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর এইবার ওখান থেকে উঠে খেপুদার বারান্দায় এসে বসলেন । সেখানেও অনেকে এসে হাজির হলেন । নানারকম কথাবার্ত্তা চলতে লাগল ।
ত্রৈলােক্যদা ( চক্রবর্ত্তী ) -অবতার - মহাপুরুষ যখন আসেন তখন প্রতিষ্ঠাবান যাঁরা , সৎ ও সাধুলােক বলে পরিচিত যারা , তাঁরা অনেকেই তো তাঁকে ধরেন না , এর কারণ কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর --- যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে , তাংস্তথৈব ভজাম্যহম ।’ যারা প্রতিষ্ঠা নিয়ে খুশি থাকে , সৎ ও সাধুলোক বলে খ্যাতিলাভ ক’রে যাদের প্রাণের ক্ষুধা মিটে যায় তাদের আর অবতার - মহাপুরযের দরকার কী ? তাঁকে পেতে অনেকখানি সুকৃতি লাগে । অগণ্য , নগণ্য হ'য়েও তাকে মানুষ পেতে পারে , আবার মহা - অগ্রগণ্য হয়েও অনেকে তাঁকে পাবার সৌভাগ্য লাভ করে না । হীনম্মন্য অহং তাঁকে ধরার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে । দুইরকম আমি আছে , এক ছোট আমি আর বড় আমি । ছোট আমি নিজের অহমিকা নিয়ে মত্ত হয় , আর বড় আমি ইষ্ট , কৃষ্টি ও পিতৃপুরযের মহান্ ঐতিহ্যে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করে ও তার সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে চলতে চায় । বড় আমি যাদের , তারাই অবতার - মহাপুরুষকে নিষ্ঠাসহকারে ধ'রে থাকে প্রায়শঃ । তারা,যদি অতি সাধারণও হয় , তারাই একদিন দুনিয়ায় অসাধারণ হ’য়ে ওঠে । যীশুখ্রটের ১২ জন জেলেমালে শিষ্য সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিল । তৎকালীন কত খ্যাতিমান লােককে মানুষ ভুলে গেছে । কিন্তু ভুলতে পারেনি এঁদের । অন্যান্য অবতার - মহাপুরুষদের পার্ষদদের সম্বন্ধেও এ - কথা খাটে । মানুষ চায় বাঁচতে , বাড়তে , অমরত্বের অধিকারী হতে । এই চাহিদা যাকে দিয়ে যতখানি পূরণ হয় , সেই তার কাছে তত প্রিয় ও পূজ্য হয়ে ওঠে । ঐ চাহিদার খােরাক নিয়ে আসেন অবতার - মহাপুরুষরা , তাই সেই খাদ্য যারা পরিবেষণ করে দুনিয়ায় তারা অমর হয়ে থাকে । আবার , ঐ সত্যিকার ক্ষুধাসম্পন্ন যারা , তারা তাঁর কাছে এসে কেমন ক'রে যেন জুটে যায় । তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে কেউ তাে জানে না । তাঁর ডাক কেমন করে যেন তাদের কানে পৌছে যায় । তারা তাঁ'তে আত্মােৎসর্গ না করে স্বস্তি পায় না ।
হীরালালদা( চক্রবর্ত্তী ) আজ চ'লে যাবেন , তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের অনুমতি নিতে এসেছেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর --- আচ্ছা । স্ফূর্ত্তিসে কাম - টাম করাে , আর শরীর ঠিক রেখে চ'লাে । কেষ্টদার সঙ্গে ভাল করে কথাবাত্তা কইছ তাে ?
হীরালালদা — হ্যাঁ ।
শ্রীশ্রীঠাকুর — যেভাবে শুনে গেলে ঐভাবে জোর push ( ঠেলা ) দাও , আর কেষ্টদার সঙ্গে সব সময় চিঠিপত্রে যােগাযােগ রেখ । আর , হরিপদর কাছে শুনে যাও , কিছু পাঠান লাগবে নাকি ।
হীরালালদা - কেষ্টদা ব’লে দিয়েছেন , আপনার জন্য মাঝে - মাঝে আপেল পাঠাতে ।
শ্রীশ্রীঠাকুর - তাহ'লেও হরিপদ বা কালিদাসীর কাছে শুনে যেও ।
হীরালালদা – আচ্ছা ।
ক্ষেত্রদা ( বন্দ্যোপাধ্যায় ) -ঠাকুর ! আপনার এখানে এসে শুনেমিলে কাজের যা পরিকল্পনা মাথায় আঁটি , প্রায়ই তা ' ক'রে উঠতে পারি না , এর কারণ কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর -- কারণ কী , তা তুমি নিজেই যদি খুঁজে বের কর , তাহ'লেই সব থেকে ভাল হয় । প্রায়ই দেখা যায় , আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাই । তা'ছাড়া আমরা সবটা দিক নিয়ে ভাল করে ধ্যান করি না এবং যেমন - যেমন প্রস্তুত হওয়ার তা'ও হই না । একটা কাজ করতে step by step ( ধাপের পর ধাপ ) কী - কী করা লাগবে , তার মধ্যে কতটা বা কতটুকু আমার আয়ত্তে আছে এবং তার কিসের ব্যবস্থা করা লাগবে , এর অন্তরায় কী হ'তে পারে , এবং তার প্রতিকারই বা কোন পথে করতে হবে সব ভেবে নিয়ে যথাসম্ভব প্রস্তুত হতে হয় । আর , ক্রমাগতি নিয়ে কাজের পথে চলতে হয় । কয়েকদিন হয়তো হুড়মুড় করে খুব কাজ করলাম , তারপর ঢিল মারলাম বা ছেড়ে দিলাম , তা'তে হবে না । আর , চাই মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তােমার কাজের সহায়ক ক'রে তাে । নিজের কয়েকগুন assistant ( সহকারী ) সৃটি করাই চাই । সঙ্গে –সঙ্গে চাই অর্জন পটুত্ব । যে - কাজ করবে , তার ও মানুষ , টাকাপয়সা , লওয়াজিমা যা - কিছু লাগে , তা সংগ্রহ করার দায়িত্ব কিন্তু তােমাকেই নিতে হবে । অন্য কাউকে দায়ী করেছ বা অন্য কারও উপর নির্ভরশীল হয়েছ কি কাজ পণ্ড হবার সম্ভানাই বেশী । অন্যের সহযােগিতা তােমার দরকার হবে , কিন্তু সে সহযােগিতা আহরণের দায়িত্বও কিন্তু তােমার । আর , কাজ হাসিল করতে যত কষ্টই হােক , সে - কষ্টটাও তােমার কাছে উপভােগ্য হওয়া চাই । করার পথে ভুলভ্রান্তি যাই হােক , বিচার - বিশ্লেষণ করে নিজেকে শুধরে নেবে , ভুলত্রটি হতেই পারে , কিন্তু তাতে ঘাবড়ে যেও না । এইভাবে যদি চল , তােমার অসাধ্য কিছুই নেই।
10