* পারিপার্শ্বিকে সেবা করার কৌশল...
* মেয়েদের পুরুষ কে আমন্ত্রণ...
* গবেষনায় মানুষের উন্নতি....
২৭ শে আশ্বিন , শনিবার , ১৩৫৬ ( ইং ১৪/১০/১৯৩৯ )
সূৰ্য্য
ডুবে গেছে পদ্মাপারের আকাশের বুকে — শরতের সন্ধ্যা তার স্নিগ্ধ ছায়া
বিছিয়ে দিয়েছে আশ্রমের আঙ্গিনায় — শ্রীশ্রীঠাকুর বাঁধের ধারে তাবুতে
লােকজনের সঙ্গে কথাবার্তা কইছেন — এমন সময় কণামার জন্য হরেনদা ( ভদ্র )
রান্নার সমস্ত সরঞ্জাম কিনে এনেছেন , শ্রীশ্রীঠাকুর কাকে দিয়ে কণামাকে
ডাকতে পাঠাবেন ভাবছেন — তিনি সর্বসমক্ষে দান গ্রহণ করতে লজ্জা ও সঙ্কোচ
বােধ করবেন , তা বুঝতে পারছেন । তিনি যা’তে লজ্জার মধ্যে না পড়েন ,
শ্রীশ্রীঠাকুর সেজন্য চিন্তা করছেন । শেষটা যজ্ঞেশ্বরকে ( ঝ ) দিয়ে ডাকতে
পাঠালেন । রাত্রে আবার বীরেনদাকে ( ভট্টাচাৰ্য ) অনুরোধ জানাচ্ছেন -
বীরেনদা । আপনি কণার ওষুধপত্র ও পথ্যাপথ্যের ভার নেবেন ? রােজ এক সের করে
দুধ খাওয়াবেন । ( হাত দিয়ে দেখিয়ে ) এইয়্যা মােটাসোটা করে দেওয়া চাই ।
পারবেন না বীরেনদা ?
বীরেনদা বললেন — হ্যা !
শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের রাজভিখারী । বিশ্বের কল্যাণের জন্য তিনি ভিক্ষা
করে বেড়ান । যাদের জন্য ভিক্ষা করেন শুধু তাদের উপকারই তার লক্ষ্য নয় ,
যাদের কাছ থেকে ভিক্ষা করেন — ভিক্ষা গ্রহণ করেই তাদেরও মঙ্গলসাধন করেন ।
তাঁর খুটিনাটি কাজ পৰ্যন্ত সৰ্ব্বজনের সর্বতােমুখী কল্যাণের আমন্ত্রক ।
আমরা একটা দিক সামাল দিতে গিয়ে দশটা দিক বেঠিক করে ফেলি — আমাদের দৃষ্টি
সঙ্কীর্ণ , সবটা দিক আমাদের দৃষ্টির সামনে ফুটে ওঠে না । তাই স-ইষ্ট
পারিপার্শ্বিক সমগ্র জীবন সুবিন্যস্ত হয়ে ওঠে না , শত চেষ্টার তরতরাণি
নিরর্থক হয়ে দাড়ায় — কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের চিন্তা , কল্পনা , আহার ,
নিদ্রা , শোয়া , বসা , দাড়ান , চলা , কথা , চাউনি , হাসি , মস্কর ,
ভাবভঙ্গী — যাবতীয় যা - কিছুই । নিয়ন্ত্রণ - সামঞ্জস্য - সমাধানমুখর —
তাই তা সার্থক ও অব্যর্থ ।
২৮ শে আশ্বিন , রবিবার , ১৩৪৬ ( ইং ১৫/১০/১৯৩৯ )
শ্রীশ্রীঠাকুর বিকালে বাঁধের পাশে তাবুতে এসে বসেছেন । কলকাতা থেকে
কয়েকটি ভাই এসেছেন । তাদের মধ্যে একজন পারিপার্শ্বিকের সহানুভূতিহীনতা
সম্বন্ধে কথা উত্থাপন করলেন । শ্রীশ্রীঠাকুর — অনন্য কী করল না - করল , তুই
তা দেখতে যাবি কেন ? তুই ভাববি , তুই কী করেছিস না - করেছিস । তাের এতটুকু
অসুবিধায় যদি লাখ " মানুষের মাথার টনক নড়ে না যায় তবে তুই একটা কেমন
মানুষ ? তুই যদি মানুষের তেমনতর নিত্যপ্রয়ােজনীয় হয়ে দাড়াতে পারিস —
মানুষ বাপ - বাপ । ব’লে আপন দায়ে তাের জন্য ছুটে আসবে । তুই এতটুকু সরে
দাঁড়ালে অসমর্থ হলে লাখ মানুষের পেটের ভাতে টান পড়বে , চোখ থেকে রাত্রির
ঘুম চলে যাবে । ততখানি না করে পারিপার্শ্বিকের সেবা দাবী করা তাে সমীচীন
নয় । পারিপার্শ্বিক তাের সেবা না করে পারে এমন অবস্থায় পারিপার্শ্বিককে
রাখিস কেন ? সেবার সাহায্যে তুই হ'য়ে উঠবি লাখ লােকের ক্ষুধার অন্ন ,
তৃষ্ণার জল , বিলাসের সামগ্রী , ভালবাসার চেতনা ।
প্রফুল্ল -
অনেক মানুষ এতই self - sufficient ( স্বয়ংসম্পূর্ণ ) , তাদের অর্থ
সামর্থ্য এই আছে যে তারা হয়তাে অন্যের সেবার ধার ধারে না — তাদের কাছে
এগোনই তাে মুশকিল হয়ে দাড়ায় , তাদের সম্বন্ধে কী করণীয় ?
শ্রীশ্রীঠাকুর — সে যদি তার বাড়ীর পাশে দশহাত প্রাচীর দেয় — তোর সেবা
বুদ্ধি এতখানি keen ( তীব্র ) হওয়া চাই , যা'তে তুই ও - সব ডিঙ্গিয়ে
molecular form- এ ( অণুরূপে ) তার কাছে গিয়ে পড়তে পারিস ! অন্য কে কী
করল দেখবি না , নিজের দিকে চাইবি । আর জানবি , যত সব বাণী , নিয়ম - কানুন
তা অন্যের জন্য নয় , তাের নিজেরই জন্য , তাই নিজেকে আগে ঠিক করবি ।
একটি ভাই নিজে চুরি না - করা সত্ত্বেও অবস্থার চাপে পড়ে রেহাই পাবার
জন্য বলেছিল যে সে চুরি করেছে — সেই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর তাকে বললেন —
তুই চুরি করিসনি , অথচ সবার ভয়ে স্বীকার করলি যে , চুরি করেছিস — এটা ভাল
নয় । এর থেকে অনেক সময় principle betray ( আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ) করবার
tendency ( প্রবণতা ) আসে । তবে যদি দেখিস , তোর একটা কাজের জন্য আর
একজনের উপকার হয় , তখন করতে পারিস তুই সইতে পারিস , আর একজন সইতে পারে না ,
তেমন অবস্থায় তা ’ করা চলে ।
রাত্রে শ্রীশ্রীঠাকুর
বলছিলেন— Animal life- এও ( পশুজীবনেও ) আমরা দেখতে পাই , female ( মেয়ে )
male ( পুরুষ কে woo ( আমন্ত্রণ ) করে এমনি হয়তাে male ( পুরুষ )
indifferent ( উদাসীন ) , কিন্তু female ( মেয়েছেলে ) যেই গরম হ'লো , male
( পুরুষ ) অমনি পাগল হয়ে ওঠে । মানুষের বেলায় female ( মেয়ে ) woo (
আমন্ত্রণ ) না করতেই যদি male sexually engaged ( পুরুষ যৌনসম্পর্কে লিপ্ত
হতে চায)় , female ( মেয়েছেলে ) তা পছন্দ করে না , অন্তরে - অন্তরে (
repel) প্রত্যাখ্যান করে , তেমন পুরুষকে অশ্রদ্ধা করে , ভাবে — ওইজন্যই
তুমি আমার পাছে - পাছে ঘরো ' । এতে পুরুষ ও নারী উভয়েই mentally ও
physically deteriorate ( শারীরিক ও মানসিক অধোগমন ) করে , সন্তানাদিও
vitally weak ( প্রাণ সম্পদে দুর্বল ) হয় — আর , এমনতর সঙ্গমের ফলে
প্রায়ই ছেলে না - হয়ে মেয়ে হয় — অবশ্য এটা আমার মত । Male must be
worshipped from the side of the female . ( পুরুষ মেয়েদের দ্বারা পূজিত
হওয়া চাই - ই । )
বৈজ্ঞানিক গবেষণা - সম্পর্কে কথাপ্রসঙ্গে
শ্রীশ্রীঠাকুর বলছিলেন — প্রেষ্ঠপ্রাণতা থাকলে research ( গবেষণা ) হয় না ।
Research ( গবেষণা ) করতে গেলে বিশেষ কতকগুলি চারিত্রিক গুণের প্রয়ােজন
হয় । প্রেষ্ঠপ্রাণতার ভিতর দিয়ে সেগুলির উদ্ভব হয় । আবার একটা জায়গায়
যথাযথভাবে research ( গবেষণা ) ও তৎ - সম্বন্ধীয় যাজন হতে লাগলে সেই
research spirit ( গবেষণার মনোভাব ) দেশে চারিয়ে যায় — আর , research- এর
( গবেষণার ফলে যে fine delicate instrument ( সূক্ষ্ম যন্ত্র ) বের হয় ,
তা ’ use ( ব্যবহার ) করতে করতেও মানুষের উন্নতি হয় — একটা মানুষ যদি দশ
বছর ধরে microscope use ( মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে , তার চোখের
sensitiveness ( শক্তি ) -ও keen ( তীব্র ) হয় । )
#Alochona_prosonge_part_1
#আলোচনা_প্রসঙ্গেপ্রথম_খণ্ড
ষষ্ঠ সংস্করণ
10